রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ : গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের ইতিবৃত্ত
৩০ মে ২০২৩, ০৮:১১ পিএম | আপডেট: ৩১ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধানের নাম বলতে হলে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম অগ্রগণ্য হবে। আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই মতামতের উপর রাজনৈতিক বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে। তবে ইতিহাস একদিন প্রকৃত সত্যকে ধারণ করবেই। দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর নেতৃত্বের ব্যর্থতা, চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চিত সময়ে জাতির এক চরম ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানকে দেশের শাসনভার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল। জাতির ক্রান্তিকালে গুরুদায়িত্ব গ্রহণের যোগ্যতা, সক্ষমতা ও সাহস কোটি মানুষের মধ্যে একজনেরই থাকে। সে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়েই তিনি হয়ে উঠেন ইতিহাসের মহানায়ক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনে যে মুক্তির সংগ্রাম থেকে গণপ্রতিরোধের ডাক দিয়েছিলেন, সেটি একটি পলিটিক্যাল রেটরিক হলেও পশ্চিম পাকিস্তানীদের আলোচনার ফাঁদ এবং ২৫মার্চ রাতে পুলিশ বাহিনী ও নিরস্ত্র মানুষের উপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ‘ক্রাক-ডাউন’র পর ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান আক্ষরিক অর্থে রিভল্টে নেতৃত্ব দিয়ে, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানিয়ে মুক্তিপাগল মানুষের মধ্যে এক প্রদীপ্ত আশা-উদ্দীপনা সঞ্চার করেছিলেন। জেড ফোর্সের কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা বীরোত্তম খেতাবে ভূষিত করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, ব্যক্তিত্ব, দেশ গড়ায় তাঁর নিরলস নেতৃত্ব মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধান এবং দক্ষিণ এশিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের অগ্রগণ্য নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করে তুলেছিল। ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মত নেতার উত্থান তাদেরকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখেছিল। উপমহাদেশের উপনিবেশোত্তর ইতিহাসে বৃটিশদের দ্বারা প্রভাবিত গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে অনেক রাজনৈতিক চড়াই-উৎরাই, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটলেও দুর্বল সময়ের ঘটনাক্রমে স্থানীয় প্রভাবে উঠে আসা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্ষমতার পালাক্রম শেষে অল্পদিনের মধ্যেই নিস্প্রভ হয়ে হারিয়ে যায়। গান্ধী, জিন্নাহ কিংবা শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েকের পর রাজনীতিতে অনেক মুখের দর্শন পাওয়া গেলেও তারা এক সময় নিস্প্রভ হয়ে হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও দেশগড়ার সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের পর তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এরশাদ আটবছরের বেশী সময় ধরে শাসনক্ষমতার আঁকড়ে থাকলেও রাষ্ট্রনায়ক হয়ে উঠার মত ব্যক্তিত্ব, দূরদর্শিতা, যোগ্যতা ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখে তিনি রাজনীতির ইতিহাসে কোন স্থান করে নিতে পারেননি। জাতির মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের স্থান নির্ধারিত হয় প্রথমত: রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণের মধ্য দিয়ে, দ্বিতীয়ত: প্রবল প্রতিকূল সময়ে রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্বে ঐক্য ও সম্মিলিত আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ব্যক্তিত্ব ও ত্যাগের দৃষ্টান্ত আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যে রেখাপাত ঘটিয়েছিল তার ফলে পচাত্তুরের মর্মান্তিক পটপরিবর্তনের ২১ বছর পর আওয়ামীলীগকে পুনর্বার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের পটভূমি তৈরী করেছিল। একইভাবে জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের পর এরশাদের ৮ বছরের সামরিক শাসনের পর যৌথ আন্দোলনের পর দেশের প্রথম অবাধ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসিয়েছিল।
জিয়ার ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকীর প্রাক্কালে জাতি এক চরম রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। পর পর তিনটি বিতর্কিত একপেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ১৪ বছর ধরে আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের দ্বারা শত শত গুম-খুন, হাজার হাজার রাজনৈতিক মামলায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে লাখ লাখ নেতাকর্মীর ধারাবাহিক নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও দু’একদিন বা কয়েক ঘন্টার নোটিশে রাজপথে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত সৃষ্টির সক্ষমতা একটি রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা ও জনভিত্তির স্বাক্ষ্য বহন করে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ অনুসারে, চলতি বছরের শেষদিকে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করতে হাতে সময় আছে মাত্র তিনমাসের মত। নবম জাতীয় নির্বাচনের কথা বাদ দিলেও, ২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচন দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষের কাছে এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে নির্বাচনের নামে রাজনৈতিক প্রহসণের নামান্তর। এসব নির্বাচনের আগে এবং পরে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের তরফ থেকে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য বেশকিছু রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। কাদের অনিচ্ছা, অসহযোগিতা ও বেপরোয়া মনোভাবের কারণে এই ব্যর্থতা তা চিহ্নিত করা খুব কঠিন কিছু নয়। গবেষণামূলক পরিপূর্ণ ইতিহাস রচিত হওয়ার আগে খন্ড খন্ড রাজনৈতিক ঘটনাক্রম মানুষের স্মৃতিতে, অনেকের ব্যক্তিগত রোজনামচায়, লিখিত পুস্তকে জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। একটি একতরফা কর্তৃত্ববাদী শাসনকালে চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতার সত্যিকার চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হয়না। যদিও তথ্যপ্রযুক্তির গ্লোবালাইজেশনের যুগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেপে রাখাও সম্ভব নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিরোধী নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন মিডিয়াকে ভয়ের সংস্কৃতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আর এসবই করা হচ্ছে একের পর এক ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য। সরকারের গণতন্ত্র বিরোধী ধারাবাহিক কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের ক্ষুব্ধতা এবং পশ্চিমা বিশ্বের উষ্মা এখন একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সুপার সাইক্লোনে পরিনতি লাভ করতে শুরু করেছে। গণতন্ত্রহীনতা, বিচারহীনতা, দুর্নীতি, লুটপাট, ব্যাংক জালিয়াতি ও অর্থপাচারের দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন ক্ষমতাসীনদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠেছে। গত দেড় দশকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ-সম্পদ পশ্চিমা বিশ্বের পাচার না করলে এবং বেগম পাড়া গড়ে তুলে সেখানে পতœী-পোষ্যদের নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলা না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পলিসি ক্ষমতাসীনদের জন্য এতটা আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠত না। তথাপি রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে সেইফ এক্সিট এবং অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠ নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ বা কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না।
আশির দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়ার হত্যাকান্ডের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের কাছ থেকে বন্দুকের জোরে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতাগ্রহণ ও ৮ বছরের স্বৈরাচারী শাসনকালে গণতন্ত্রের দাবিতে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে যে জাতীয় ঐক্য সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে কোনো বিদেশি শক্তির নেপথ্য মদত, আহ্বান বা তৎপরতা দৃশ্যমান ছিল না। ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা গণতন্ত্র ও স্বৈরাচার বিরোধী অবস্থান নিশ্চিত করেছিল বলেই ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন সফল হয়েছিল। সেই আন্দোলনের মাঝপথে এরশাদের সাথে শেখ হাসিনার গোপণ সমঝোতা এবং ১৯৮৬’র নির্বাচনে আওয়ামীলীগ অংশগহণ না করলে হয়তো সে বছরই এরশাদের পতন ঘটতে পারত। কোনো কোনো শীর্ষ নেতার সে সময়কার রাজনৈতিক ডিগবাজির ঘটনার বিবরণ এখানে নিস্প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপস-সমঝোতার পথকে বাঁধাগ্রস্ত ও কন্ঠকীত করার ইতিহাসে শেখ হাসিনা বেশকিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি’র চেয়ে আওয়ামীলীগ অনেক বেশী সুসংগঠিত ছিল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী হয়ে তারা সম্ভাব্য সরকারের কাঠামোও দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে অভাবনীয়ভাবে বিএনপি ১৪০ এবং আওয়ামীলীগ ৮৮ আসন পায়। আঠারো আসন পাওয়া জামায়াতে ইসলামির নি:শর্ত সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। কিন্তু সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার সরকারকে একদিনও শান্তি থাকতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সারাদেশে হরতাল-অবরোধের পথ বেছে নেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আন্দোলন করলেও সরকারকে সুযোগ না দিয়ে ১৯৯৫ সালে জাতীয় সংসদ থেকে আওয়ামীলীগের সদস্যদের পদত্যাগ একটি সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়কের দাবি পুরণ করতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা হয়। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাস করেই সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সময় ক্ষেপন না করে যথাযথভাবে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। ১৫৪টি আসনে আওয়ামী জোটের বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত দশম জাতীয় নির্বাচনের সময়ও সরকারের পক্ষ থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিরোধীদলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হলেও সেই আলোচনা, সংলাপ-সমঝোতার উদ্যোগ আর দেখা যায়নি।
৬ষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রশ্নে পশ্চিমাবিশ্ব বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিল। সে সময় কমনওয়েলথের প্রতিনিধি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক স্যার নিনিয়ান স্টিফেন ঢাকায় এসে সরকার ও বিরোধীদলকে এক টেবিলে বসিয়ে সমঝোতার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। স্যার নিনিয়ানের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মেনে নিলেও বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাখ্যানের ফলে অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচনের পটভূমি সৃষ্টি হয়। ১৯৯৪ সালের ২৪ নভেম্বর অষ্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নিনিয়ান স্টিফেনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার বিবরণ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘ব্যক্তিত্বের দ্বন্দের কারণে স্যার নিনিয়ান ঢাকায় কোনো সহজ শান্তিপূর্ণ সমাধান দেখতে পাচ্ছেন না’। বিরোধীদলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অর্šÍভুক্তির পর সে ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এবং অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কোনো ক্ষমতাসীন সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারেনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা এবং সেই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তথা ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত অগণতান্ত্রিক সরকারকে শেখ হাসিনা তাদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছিলেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে দশম জাতীয় নির্বাচনের দাবি নিয়ে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধি সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সমঝেতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শেখ হাসিনা বিএনপিসহ দেশের বেশিরভাগ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে ১৫৪ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার নজিরবিহিন নাটক মঞ্চস্থ করেন। গত ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দেশি-বিদেশি এক সমঝোতার প্রয়াস চলছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মূলত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের গোয়ার্তুমির কারণে তা সম্ভব হয়নি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাতের বেলা বাক্স ভরে রাখার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত এমন নির্বাচনকে বিশ্বে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছেন। তবে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার উইলিয়াম বি মাইলাম সেই নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরে এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হলো বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন।’ তাঁর মতে, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠি নির্বাচনের ফলাফল চুরি করে নিজেদের যে সরকার বলে দাবি করছে, তারা অবৈধ।’ রাষ্ট্রের সবগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়ে, র্যাব-পুলিশ দিয়ে মানবাধিকার হরণ করে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার এই প্রক্রিয়া দেশের মানুষ এবং সারাবিশ্বের কাছে উলঙ্গ হয়ে ধরা পড়লেও ঊটপাখির মত মত নিজেদের ইচ্ছামাফিক পরিবর্তিত সংবিধানের মধ্যে মুখ গুঁজে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার শেষ চেষ্টা হিসেবে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের অপপ্রয়াস দেখা যাচ্ছে। তবে এ ধরণের নির্বাচনের অপচেষ্টা এবার দেশে বড় ধরণের রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে দেশকে একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে ঠেলে দিতে পারে। মার্কিন ভিসা পলিসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সতর্কবার্তায় তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ