মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে
০১ জুন ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৫ এএম
স্বৈরশাসকদের শাসনে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না। মানুষের ‘ফ্রিডম অফ স্পীচ’ বাধাগ্রস্ত হয়। তাদের শাসনামলে ‘গণে’র ইচ্ছা নয়, শাসকের ইচ্ছাই শেষ কথা। কেউ এর ব্যতিক্রম করলেই, তার আর রক্ষা নেই। তাকে শায়েস্তা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সব ধরনের পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়। ইতিহাস হচ্ছে, এ ধরনের শাসন ব্যবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয় না। একটা সময় গণইচ্ছার কাছেই স্বৈর শাসক পরাভূত হয়। আমাদের দেশে এর একাধিক নজির রয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘ফ্রিডম অফ স্পিচে’র বিষয়টি নিয়ে গত প্রায় একদশক ধরে আলোচিত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে আলোচিত হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খুবই সংকুচিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমেরও স্বাধীনতা নেই। তারা সেল্ফ সেন্সরশিপের মাধ্যমে কাজ করছে। এমন অভিযোগও করা হচ্ছে, এক পক্ষের বাকস্বাধীনতা অবারিত, আরেক পক্ষের মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নেহায়েতই যতটুকু প্রকাশ না করলে নয়, ততটুকু প্রকাশ করাকেই বাকস্বাধীনতাধারীরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মাপকাঠি হিসেবে গণ্য করছেন। তবে যারা মতপ্রকাশ করতে পারছেন না, তাদের অবস্থা হয়েছে, প্রখ্যাত দার্শনিক, লেখক জন মিল্টনের মতো। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে মিল্টন বলেছিলেন, ‘গিভ মি দ্য লিবার্টি টু নো, টু আটার অ্যান্ড টু আর্গু ফ্রিলি অ্যাকর্ডিং টু কনসায়েন্স, এভাব অল লিবার্টিজ।’ আমাকে জানার স্বাধীনতা দাও, বলতে দাও এবং সচেতনতার সাথে মুক্তভাবে তর্ক করতে দাও, সর্বোপরি মুক্ত করে দাও। মিল্টন কিন্তু বাকস্বাধীনতার নামে যা খুশি তা বলার অধিকার চাননি। যা সত্য এবং উচিত তাই বলতে দেয়ার দাবী করেছেন। এ কথা সত্য, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অসৌজন্যমূলক ও অশোভন ভাষার ব্যবহার দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বেফাঁস কথাবার্তা শেকড় গেঁড়ে বসেছে। সচেতন জনসাধারণ এ ধরনের কথাবার্তা শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ যে ভাষায় কথা বলেন, তাদের এসব কথা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে কতটা পড়ে, তা জনসাধারণ বোঝে না এমন নয়। তারা বোঝে এবং বোঝে বলেই এসব ভাষা ‘কথার কথা’ বা রাজনীতিকরা এমনই বলে এড়িয়ে যায়। রাজনৈতিক নেতাদের এ ধরনের বাকস্বাধীনতা যে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। সচেতন শ্রেণীর অনেকের মধ্যে রাজনীতিকদের লাগামহীন বক্তব্যকে ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’ বা বাগাড়ম্বরপূর্ণ ও মাঠে-ময়দানের বক্তব্য বলে জায়েজ করার অপচেষ্টা করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, জনসাধারণ যাদের নেতা মানে, ভরসা করে এবং যারা নিজেদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দাবি করেন, তাদের কথা কেন রেটরিক হবে? কেন কথার কথা হবে? তাদের কথার কি কোন দাম থাকবে না?
দুই.
জনসাধারণের বাকস্বাধীনতার বিষয়টি সাধারণত নির্ভর করে রাজনৈতিক দল ও তার নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সচেতন নাগরিক মহলের নির্মোহ সংবাদ পরিবেশন ও মতপ্রকাশের ওপর। তাদের দায়িত্ব জনসাধারণের সামনে উচিত-অনুচিত এবং কল্যাণ-অকল্যাণমূলক ঘটনা ও কথাবার্তা সুবিবেচনাপ্রসূত অথচ অবারিতভাবে প্রকাশ করা। এ দায়িত্ব পালনে তারা কতটা স্বাধীন বা তাদের করতে দেয়া হচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। অথচ ফ্রিডম অফ স্পীচ বা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশনের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালে গৃহীত ‘ইউনিভার্সেল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস’-এর আর্টিক্যাল ১৯-এ বলা হয়েছে, কোন ধরনের বাধা ছাড়া প্রত্যেকেরই মতামত প্রকাশ ও ব্যক্ত করার অধিকার রয়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের তথ্য খোঁজা, গ্রহণ করা এবং তা বলা, লেখা, শিল্পকলাসহ যত ধরনের প্রকাশ মাধ্যম রয়েছে, তার পছন্দমতো মাধ্যমে প্রকাশ করা। তবে এ স্বাধীনতা সতর্কতার সাথে বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে চর্চা করতে হবে, যাতে অন্যের অধিকার ও সম্মানহানি এবং জাতীয় ও জনসাধারণের নিরাপত্তা বিঘিœত না হয়। অর্থাৎ বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রটি নিশ্চিত করতে পারে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ। আমাদের দেশে বাকস্বাধীনতার মৌলিক এই চরিত্রের অনুপস্থিতি দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে। এটিকে রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে, কিছু প্রচার মাধ্যম ও সচেতনমহল তাদের সুবিধামতো ব্যবহার করেছে এবং করছে। আমার জন্য যে কথা সুবিধাজনক সেটাকেই সঠিক, অন্যের কথাটি বেঠিক, তা উড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা বিদ্যমান। অথচ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার নিউক্লিয়াসই হচ্ছে, অন্যের মতামত পছন্দ না হলেও তার গুরুত্ব দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের দার্শনিক ও লেখক নোয়াম চমস্কি বলেছিলেন, তুমি যদি বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করো, তবে তোমাকে ধরেই নিতে হবে তোমার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির বাকস্বাধীনতাকে পছন্দ করতে হবে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্ট্যালিন ও হিটলারের মতো একনায়করাও তাদের বিরুদ্ধবাদীদের মতামত পছন্দ করতেন। আর ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের বিখ্যাত সেই উক্তি তো সকলেরই জানা। তিনি বাকস্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমার মতের সাথে আমি একমত না হতে পারি, তবে তোমার মত প্রতিষ্ঠায় আমি জীবন দিতে পারি।’ তার এই বাণী মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে আছে। তার নির্যাস মুক্তমনের মানুষ সবসময়ই ধারণ করে চলেছে। আমাদের দেশের মতো গণতন্ত্রকামী দেশে যেখানে গণতন্ত্র পুরোপুরি ভিত্তি লাভ করেনি, সেখানে গণতন্ত্র অনেকটা তৈলাক্ত বাঁশে বানরের উঠানামার মতো অবস্থায় রয়েছে। গণতন্ত্রকে একেক দল বা গোষ্ঠী তাদের সুবিধা মতো সংজ্ঞায়িত করেছে এবং করে চলেছে। মুখে মুখে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতের উদাহরণও প্রায়ই তারা দিয়ে থাকে। গণতন্ত্রের এসব উদাহরণ দেখিয়ে জনসাধারণের আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি করলেও কার্যক্ষেত্রে এর চর্চা এবং প্রতিফলন দেখা যায় না বললেই চলে। বলা যায়, গণতন্ত্রের মোড়কে এক ধরনের একনায়কতন্ত্রকে তারা প্রাধান্য দেয়। অথচ গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বেই বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। পরিতাপের বিষয়, যাদের নেতৃত্বে জনগণ সংগ্রাম করেছে, ক্ষমতায় আসার পর তাদের দ্বারাই গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। জনসাধারণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তারা আশাহত হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য তাদের আর কত আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হবে, তাই এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেককে বলতে শোনা যায়, ব্রিটিশ, আমেরিকার গণতন্ত্র ভিত্তি লাভ করতে শত বছর লেগেছে। তাদের দেড়-দুইশ’ বছরের গণতন্ত্র। আর আমাদের যাত্রা তো সবে শুরু। তাদের এসব কথার মধ্যে যে এক ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক ও শাসন-শোষণের মনোভাব রয়েছে, তা সচেতন মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাদের এ কথার অন্তর্গত অর্থ হচ্ছে, শতবর্ষ না পেরুলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না, কাজেই জনসাধারণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এটা গণতন্ত্রকামী মানুষের সাথে এক ধরনের প্রবঞ্চণা ছাড়া কিছুই নয়। যে রাজনৈতিক দল বিরোধীদলে থাকতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়, সেই তারা যখন ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করে, তখন দেশের মানুষের আশ্চর্য হওয়া ও আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। দেশের শাসক গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি এ ধরনের প্রবণতা বজায় থাকে, তবে শত বছর কেন, হাজার বছরেও গণতন্ত্র ভিত্তি লাভ করবে না। মানুষের বাকস্বাধীনতাও নিশ্চিত হবে না। যারা উচিত কথা বলতে যাবে, তাদেরকে পদে পদে হুমকি-ধমকির মধ্যেই থাকতে হবে।
তিন.
দেশ এখন এক অস্বাভাবিক ও অসহনীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এক পক্ষ আন্দোলন করছে, অপর পক্ষ তাদের আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকা- আখ্যা দিয়ে দমন করে চলেছে। সচেতন নাগরিক সমাজ এই পরিস্থিতিকে পলিটিক্যাল অ্যানহিলেশন বা নিশ্চিহ্নকরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। অনেকে বলছেন, ক্ষমতাসীন দল আন্দোলনরত বিরোধীদলকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাদেরকে যে নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করার চেষ্টা করছে, তা বুমেরাং হয়ে তাদের দিকে ফিরে আসতে পারে। ক্ষমতাসীনদের অস্তিত্বের স্বার্থেই কার্যকর বিরোধীদলের প্রয়োজন রয়েছে। তারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল ক্রমেই সরকারের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। তাদের আশঙ্কা, যদি সরকারের পতন হয়, তবে সরকারের সাথে দলের পতন অনিবার্য হয়ে পড়বে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল এ দিকটি বিবেচনায় না নিয়ে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীদল দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে, এসব সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। অভিযোগ রয়েছে, গণমাধ্যমে সরকারের একধরনের প্রচ্ছন্ন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তার ইচ্ছার বাইরে যাওয়া গণমাধ্যমের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। যদিও সরকার বরাবরই বলে আসছে, বাকস্বাধীনতা না থাকলে টকশোতে বিরোধীদলের নেতারা এত কথা বলছে কি করে? এটা জনগণ বোঝে, যেটুকু স্পেস দেয়া হয়, সেটুকুর মধ্যেই বিরোধীদলের নেতা বা বিশ্লেষকরা বলে থাকেন। বেশি বলতে গেলে পরবর্তীতে তাদের আর টকশোতে দেখা যায় না বললেই চলে। চ্যানেলগুলোও চাপের কারণে তাদের আমন্ত্রণ জানাতে সাহস পায় না। অর্থাৎ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে বাকস্বাধীনতার নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি সরকারের হাতে রয়েছে। অথচ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশে প্রতিমুহূর্তে কি হচ্ছে তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। তাদের এ জানানোর কাজটি যেসব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দায়িত্ব তারা যে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় থাকে, তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিতের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে। এই কয়েক বছর আগে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তার এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি ঘটছে। সঙ্কুচিত হয়ে আসছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। অব্যাহত রয়েছে গণমাধ্যম সম্পাদক আর নির্বাহীদের হয়রানি। তাদের উপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করেছে সরকার।’ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারি দলের এক প্রভাবশালী নেতা তখন সংগঠনটিকে বিরোধীদলের দালাল বলে আখ্যায়িত করেন। সরকারি দলের লোকজন দ্বারা যেখানে বিশ্বখ্যাত সংগঠন তোপের মুখে পড়ে, সেখানে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের উপর সরকার প্রচ- চাপ সৃষ্টি করেছে, এ কথা দেশীয় কোন মানবাধিকার সংগঠন বা ব্যক্তি বললে, তাকে কি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে, তা বোধকরি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। যারাই একটু বলতে গেছে, তাদের কি অবস্থা হয়েছে তা বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ ও তাদের মালিকদের পরিণতি ভোগ করার মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে। একইভাবে বলা প্রয়োজন, গণমাধ্যম অত্যন্ত সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল মাধ্যম। এখানে সচেতন, দক্ষ ও পেশাদার ব্যক্তিরাই কাজ করেন। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না, তারাও মানুষ। ভুল তাদেরও হতে পারে। আর তাদের ভুলের প্রতিকারের নানা নিয়মকানুন ও বিধিব্যবস্থা রয়েছে। তার অর্থ এই নয়, ভুলের জন্য মাধ্যমটিকেই বন্ধ করে দিতে হবে।
চার.
আমাদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা মাঝে মাঝে হোঁচট খেলেও, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে যারা এই ব্যবস্থা এগিয়ে নিচ্ছে, তাদের সতর্ক থাকার আবশ্যকতা রয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, তাদের দ্বারাই যদি এ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা জাগ্রত হয়, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। গণতন্ত্রের স্পিরিটটাই এমন যে, জরুরী অবস্থার মধ্যেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা বা দমানো যায় না। কোন না কোনভাবে তা প্রকাশিত হয়। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না। যেমন সরকারের সমালোচনাকারী বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল এখন অবারিতভাবে চলছে। সরকার তা বন্ধ করতে পারছে না। এসব চ্যানেলের কোনো কোনোটা যে প্রপাগান্ডা করছে না, তা নয়। আবার সবগুলোই যে প্রপাগান্ডা করছে তাও নয়। ফলে সরকারের জন্য এটি এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমের কাছে সরকার যেন অসহায় হয়ে রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা সুসংহত থাকলে সরকারবিরোধী এ ধরনের প্রচার বা প্রপাগান্ডা করার সুযোগ খুব কম থাকে। এর একমাত্র উপায় গণতন্ত্রকে অবারিত করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মুক্ত করে দেয়া। এর মাধ্যমে সংকটমোচন এবং বিরুদ্ধবাদীদের প্রশমিত করার উপায় খুঁজে পাওয়া যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ফ্রিডম অফ স্পীচ গণতন্ত্রের ‘সেফটি ভাল্ভ’ বা নিরাপদ কপাট হিসেবে কাজ করে। বিশ্ব ব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড গর্ভনেন্স ইন্ডিকেটরস’ প্রজেক্টের আওতায় কয়েক বছর আগে বিশ্বের ২০০ দেশের উপর করা জরিপে দেখা গেছে, যেসব দেশে বাকস্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া রয়েছে, সেসব দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র সংহত হয়েছে। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে আসা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে সরকারের উচিত গণতান্ত্রিক ধারা ও বাকস্বাধীনতার সংকোচন নীতি থেকে সরে আসা। কারণ, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কখনোই মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অনুমোদন করে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত