প্রধানমন্ত্রীর সঠিক সিদ্ধান্ত
০১ জুন ২০২৩, ০৮:৩৩ পিএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৩, ১২:০৫ এএম
রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশ এক ক্রান্তিকালে রয়েছে। বিশেষত আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন যখন দুর্বিষহ তখন সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহীত কিছু উদ্যোগের ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে বা যাচ্ছে। গত বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয়-অপব্যয় কমিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে যে সব নির্দেশনা ইতিপূর্বে দিয়েছিলেন, তা পুর্নব্যক্ত করেন এবং সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ বেশকিছু সংকট থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রতিয়মান হয়েছে। করোনাকালীন বিশ্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের কৃচ্ছ্রতার নীতি এবং অনাবশ্যক আমদানি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা এখনো বলবৎ রাখার পাশাপাশি সরকারের আমলাদের যত্রতত্র বিদেশ সফর এবং বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ খুবই ইতিবাচক ও জনবান্ধব। করোনাকালে কিছু কিছু সেক্টরে উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং সরকারি ব্যয় সঙ্কোচন নীতির কারণে সেই কঠিন সময়েও আমাদের অর্থনীতি প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। অত:পর করোনাত্তোরকালে দ্রুততম সময়ে আগের মত উচ্চ প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
সরকারি কেনাকাটা ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে লাগামহীন দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, অপচয়ের মচ্ছব থেকে বের হতে না পারলে জনবান্ধব বাজেট ও অর্থনীতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই সোচ্চার ও দৃঢ়কণ্ঠ। অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগগুলোর বেশিরভাগই প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত নির্দেশনার ফসল। এ কারণেই করোনাত্তোর ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ৬.৯৪ শতাংশ এবং ৭.১০ শতাংশ। ব্যবসায়বান্ধব মূদ্রানীতি, কৃষি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি, রেমিটেন্স ও রফতানিতে প্রণোদনা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল দিয়েছে। ডলার সংকটের প্রেক্ষাপটে রির্জাভের উপর চাপ কমাতে সরকারের কৃচ্ছ্রতা নীতির অংশ হিসেবে গত বছর মে মাসে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখার যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। একবছর পেরিয়ে এসে নতুন নির্দেশনায় বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ফার্ষ্টক্লাস ও বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ না করতে বলা হয়েছে। শুধু এই নির্দেশনার ক্ষেত্রেই নয়, জনগণের রাজস্বে প্রতিপালিত সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের জনগণের অধিকর্তা ভাবতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন। আদতে তারা পাবলিক সার্ভেন্ট বা জনগণের চাকর। দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষকে চরম দুর্বিষহ অবস্থায় রেখে সরকারি কর্মকর্তারা অনাবশ্যক বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসী জীবন ব্যসনে গা ভাসিয়ে চলবেন, এটা হতে পারে না।
দীর্ঘদিন ধরে দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নেই । দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি দেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবনকে দুর্বহ করে তুলেছে। এহেন বাস্তবতায় দেশের হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের সুযোগ সুবিধা এতটুকুও কমেনি, বরং বেড়েছে। জনগণের সেবকদের সেবাতেই রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। জাতির ক্রান্তিকালে তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দেয়ার দাবি না থাকলেও অনাবশ্যক ব্যয় ও বিলাসিতা রোধে সরকারের কঠোর অবস্থান থাকা জরুরি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমনের বেশকিছু দৃষ্টান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ট্রল ভাইরাল হতে দেখা গেছে। পুকুর কাটা দেখতে, স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের রান্না দেখতে বিশাল বহর নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে কোটি কোটি টাকা খরচের মচ্ছব সাধারণ মানুষকে বিষ্মিত ও বিক্ষুব্ধ করেছে। সরকার কৃচ্ছ্রতা নীতি গ্রহণ করলেও সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফ্ট কিনতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্যের নেতৃত্বে ৬ কর্মকর্তার তুরস্কে যাওয়ার উদ্যোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মত দেশের স্বায়ত্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ও উন্নয়ন খরচের সংস্থানও জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী যখন নতুন গাড়ি ক্রয় বন্ধ, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ও ব্যয় সঙ্কোচনের নির্দেশনা পুর্নব্যক্ত করছেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফ্ট কেনার অজুহাতে অর্ধডজন শিক্ষক কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের উদ্যোগ অনভিপ্রেত। জনগণের রাজস্বের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নির্দেশনা ও পরিপত্র যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাগুরার মহম্মদপুরে বজ্রপাতে এক হাফেজ নিহত
সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. ইউনুস এর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারসহ ভারত ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণে
কুবি প্রশাসনের সেচ্ছাচারীতার অভিযোগ এনে ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়কের পদত্যাগ
ঈদে ১৫টি ফেরি ২০টি লঞ্চ চলবে ৭ দিন বন্ধ থাকবে ট্রাক পারাপার
ব্রাহ্মণপাড়ায় বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, তীব্র যানজট
আরও চার দিন বাড়ল কেজরিওয়ালের রিমান্ডের মেয়াদ
প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাতিলের মোকাবেলা করতে হবে
ভুটানের রাজাকে বিদায় জানালেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
উলিপুরে সরকারি খাদ্য গুদামে কর্মরত অবস্থায় কুলির মৃত্যু
মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ ভারত বিরোধীতা : নাছিম
মসজিদে নববীতে প্রতিদিন ৩০ টন সুগন্ধি ব্যবহৃত হয়
‘দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মহাপরিচালক করে পটিয়া মাদরাসাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে’
চার বছরে মাধ্যমিকে ১০ লাখ শিক্ষার্থী কমেছে
মোরেলগঞ্জে গৃহিনীকে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তায় ফেলে মারধরের ঘটনায় মসজিদের ঈমাম গ্রেফতার
ছিনতাই করতে এসে গ্রেফতার হওয়া দুই পুলিশ কনস্টেবলকে কারাগারে প্রেরণ
যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে ৪ জন নিহত, আহত ৭
ময়মনসিংহে বাসচাপায় নিহত হলো অটোরিকশার তিন যাত্রী
সারা দেশে আ.লীগের ২১ হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল: ওবায়দুল কাদের
আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে বাংলাদেশের প্রথম শরফুদ্দৌলা