দেশের ভাবমর্যাদা রক্ষা করতে হবে
১৪ জুন ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হরণের প্রশ্নে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ফোর্স ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের উপর চাপ অব্যাহত থাকলেও সরকারের অগ্রাহ্য ও অস্বীকার প্রবণতার কারণে এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুষ্ঠু বিচারের তেমন কোনো দৃষ্টান্ত না থাকায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এলিট ফোর্স র্যাব ও পুলিশের ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেলেও ইতিমধ্যে সংঘটিত গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। উপরন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিধি অনির্ধারিতভাবে বিস্তৃত হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘণ থেকে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচনের শর্ত হিসেবে ভিসা পলিসির আওতায় দেশের প্রায় সব বাহিনী, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা থেকে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা, প্রশাসনের আমলাসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পর্যন্ত মার্কিন ভিসানীতির সম্মুখীন। মে মাসের ৩ তারিখে মার্কিন ভিসানীতির চিঠি পাঠানোর পর গত দেড়মাসে সরকার ও বাহিনীসমুহের উপর পশ্চিমা চাপ ক্রমবর্ধমান বেড়ে চলেছে।
গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান জোসেফ বোরেলের কাছে লেখা এক চিঠিতে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬ কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পাঠানো চিঠিতে সরকারী সংস্থাগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চনে বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণের সর্বোত্তম সুযোগ করে দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জরুরি উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একের পর এক নিষেধাজ্ঞার হুমকিসহ পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগীদের অব্যাহত চাপের প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণ ইতিমধ্যে অস্থির-টালমাটাল হয়ে উঠেছে। বিদ্যমান সংবিধান ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও বিরোধীদলগুলো যার যার অবস্থানে এখনো অনড় রয়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছে। গত সোমবার অনলাইনে পাঠানো বার্তায় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যারোইসের প্রতি এই আহ্বান জানায় এইটআরডাব্লিউ। র্যাবের কর্মকর্তাদের উপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, মার্কিন ভিসা পলিসির পর এইচআরডাব্লিউর এই চিঠি আমাদের সরকার ও বাহিনীগুলোর জন্য মোটেই আত্মমর্যাদার বিষয় নয়।
স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত আমাদের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা ও আত্ম মর্যাদার প্রতীক। পুলিশ বাহিনীও কম গৌরবের অধিকারী নয়। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশসহ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের অধীনে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে শান্তি রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় পেশাদার কর্মনিষ্ঠা, সাহসিকতা ও সাফল্যের কারণে বাংলাদেশের সদস্যরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশে যে কোনো দুর্যোগে এবং বিভিন্ন দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে, সেই বাহিনীর সদস্যরা আজ নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়ার বাস্তবতায় উপনীত হয়েছে, যা দুর্ভাগ্যজনক। বিচারবর্হিভুত হত্যাকান্ড, গুম-খুন, মিথ্যা মামলায় বিরোধীদলের লাখ লা নেতাকর্মীকে হয়রানির মত ঘটনার অভিযোগগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়না। ক্ষমতাসীনদের অধীনে বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তাও অমূলক নয়। এসব বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে সরকার ব্যর্থ হওয়ার কারণেই একের পর এক আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে দেশ। জাতিসংঘ মিশনের সুযোগ পাওয়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা শান্তিরক্ষায় বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজ পরিবার ও দেশের কোটি কোটি ডলারের রেমিটেন্স আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের মানুষের আকাঙ্খা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কমিটমেন্ট রক্ষায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দেশের ভাবমর্যাদা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান সংকট নিরসন অসম্ভব নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা
সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি