সরকার দায়বদ্ধ কার কাছে?
১৫ জুন ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩, ১১:৫০ পিএম
ভাবছিলাম ছোটবেলা থেকে সংবাদপত্র পাঠের অভ্যেসটা কেন করিয়েছিলেন আমার অভিভাবকরা? এখন মনে হয়, এই অভ্যেসটার কারণে আমি সবসময়ই একটা অস্বস্তি ও মানসিক অশান্তির মধ্যে ডুবে থাকি। আমার ঘর, আমার পরিবার নিয়ে যতই শান্তিতে থাকি না কেন পারিপার্শ্বিক অবস্থা, প্রতিদিনের দুঃসংবাদ আমার ব্যক্তিগত শান্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শান্তিপ্রিয় প্রতিটি নাগরিককেই তাই করে বলে আমার বিশ্বাস। জাতীয় দুঃসংবাদগুলো আমার মগজে, আমার মননে এক ধরনের কষ্ট ভরে দিয়ে যায়। হতবিহŸল করে দেয়। এর থেকে বেরিয়ে আসা মোটেও সহজ নয়।
সৃষ্টির শুরু থেকে নারী শারীরিক দুর্বলতার কারণে শক্তিধর পুরুষের কাছে নির্যাতিত হয়ে চলেছে। পৃথিবীর সর্বত্রই নারীরা নির্যাতিত হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তার অনুপাত নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে তার সুবিচার নিয়ে, প্রশ্ন হচ্ছে অপরাধী ও নির্যাতকদের ক্ষমতার উৎস নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে। প্রশ্ন সরকারের অবস্থান নিয়ে, সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ক্ষমতার দাপট নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক পতন নিয়ে, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে। দেশ ও নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সরকার কোন কাজে ব্যস্ত আমাদের ঠিক জানা নেই। দেশে এখন কোনো বিরোধী দল নেই; তাদের কোনো কর্মসূচি আমরা দেখতে পাই না। কোন সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চর্চা নেই। সরকার যেন ক্রমশ স্বৈরশাসক হয়ে উঠছে। জনগণের সামনে দৃশ্যপটে ভেসে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের তান্ডব, সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকা প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মী এখন খল নায়কের ভূমিকায়।
ক্ষমতার দাপট মানুষ কখনোই পছন্দ করে না। ক্ষমতাসীন দলকে এটা বুঝতে হবে। শুধু বগুড়ার ধর্ষক তুফান নয়। ক্ষমতার গর্ভে পয়দা হওয়া হাজারও তুফান দেশের সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নারী নির্যাতনের দেশ হিসাবে তালিকার শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার টের পাচ্ছে না। অন্য প্রাণীদের কথা বাদ দিলে বাংলাদেশে সবচেয়ে নাজুক প্রাণী হলো নারী আর শিশু। নারী ও শিশু নির্যাতনের যে সব ঘটনা ইদানীং মিডিয়াতে ঝড় তুলে যাচ্ছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ নেই। এটা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। অর্থে-বিত্তে-ক্ষমতায় পুষ্ট মানুষ নামের পশুগুলো আমাদের চারপাশকে নরকে পরিণত করেছে। ধর্ষণ এখন বাংলাদেশে খুব সহজ ব্যাপার। ধর্ষণ এবং খুনই ক্ষমতা প্রদর্শনের এক উন্মুক্ত পথ। নারী নির্যাতন কখনও বন্ধ ছিল না। প্রকাশ্য কিংবা গোপনে তা চলে আসছে। দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, ক্ষমতায় ভর করে এসব অনাচার চলছে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নারীর শাসন চললেও এদেশে নারীর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নারীর সনাতন নিয়তি নারীকে ছেড়ে যায়নি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধর্ষকদের বসবাস। এদের মুখোশ উন্মোচিত হয় না। আমাদের শহর কিংবা গ্রাম, বাস, ট্রাক রিকশা সবখানে জাল বিছিয়ে রেখেছে তুফানেরা। কোনো কোনো সময় ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে নারীরাও পুরুষ হয়ে উঠছে। নিজের বিপক্ষে নিজেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। পুরুষকে সাহায্য করছে। ক্ষতিগ্রস্ত করছে নারীকে।
শিশু খুনের প্রবণতাও বাড়ছে। আরও বেশি ভয়ংকর কথা হচ্ছে, শিশুরা খুন হচ্ছে আপন মা বাবার হাতেও। এছাড়া পারিবারিক জটিলতা, যৌতুক, মা-বাবার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জটিলতার নির্মম শিকার হচ্ছে শিশু। এক শ্রেণির পাষÐ প্রকৃতির মানুষ পূর্ণ বয়স্ক শত্রæর ওপর হিংসা-ক্রোধ চরিতার্থ করতে বেছে নিচ্ছে শত্রæর শিশু সন্তানকে হত্যা করার পৈশাচিক পন্থা। শিশু ধর্ষণের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে আঁতকে উঠতে হয়। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, গত বছর সারাদেশে চারশ’র বেশি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ৬৪ শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। স্তম্ভিত হতে হয় যখন দেখা যায়, গণধর্ষরেণর শিকার শিশুদের অধিকাংশের বয়স চার থেকে নয় বছর। গণধর্ষণের শিকার শিশুদের ধর্ষণ করার পর খুন করে লাশ পুঁতে রাখা কিংবা কোথাও ফেলে দেওয়াÑ এ কোন সমাজে আমাদের বসবাস? কী করে ঘটতে পারে এমন সব বিকৃত পৈশাচিকতা? সাধারণভাবে মনে করা হয়, বিচারহীনতার পরিবেশ সব ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় অপরাধীরা মনে করে, অপরাধ করে পার পাওয়া সম্ভব। ক্ষমতাশ্রয়ীদের বিচার হয় না, এই বোধ এই বিশ্বাস আমাদেরকে অসহায় করে তুলছে অনেক নৃশংস ঘটনার বিচার না দেখে দেখে। দরিদ্র পরিবার হলে তো আর কথাই নেই, বিচার চাইতে গিয়ে কত পরিবার যে সর্বহারা হয়েছে, দেশ ছাড়া হয়েছে তার কতটুকুই বা আমরা জানি?
অস্বীকার করব না, এ সরকারের অনেক ভালো কাজ আছে। পাশাপাশি যখন আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠে ত্বকী নামক এক প্রতিভাবান কিশোরের থেঁতলানো শরীর, তনু নামের এক ছাত্রীর লাশ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ক্ষতবিক্ষত পড়ে থাকার কথা। যখন মনে আসে সাগর-রুনীর বীভৎস হত্যাকাÐের কথা, তখন মনে হয় এ সরকার বড় নিষ্ঠুর। কেন এসবের বিচার হয় না? কেন সরকার খুনীদের ভার বয়ে বেড়াচ্ছে? তখন আমার কাছে সরকারের ভালো কাজগুলো অর্থহীন হয়ে যায়। আমার আর কিছুই মনে থাকে না। সরকারের চোখ ধাঁধানো উন্নয়নে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সাধারণ মানুষ কার কাছে যাবে? কী করবে?
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক
সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা
সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস