ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

সীমান্তের ওপার থেকে একটি গরুও যেন না আসে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৯ জুন ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম | আপডেট: ২০ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

পবিত্র ঈদুল আজহা সমাগত। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে কোরবানীর পশু উঠতে শুরু করেছে। বেচাকেনা আস্তে আস্তে বাড়ছে। কোরবানী উপলক্ষে অস্থায়ী পশুর হাটের প্রস্তুতিও চলছে দেশজুড়ে। এবার কোরবানীর পশুর দাম কিছুটা বাড়তে পারে। সে আলামত পাওয়া যাচ্ছে। পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও পশু লালন-পালনের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পশুর দাম বাড়ার ব্যাপারটি অস্বাভাবিক মনে করা যায় না। গত বছর ঈদের দু’য়েকদিন আগে কোথাও কোথাও পশুর সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছিল। এবার তেমন পরিস্থিতি দেখা দেবে কিনা, এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দিচ্ছে। অবশ্য মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় আশ্বস্থ করেছে, কোরবানীযোগ্য পশুর কোনো অভাব নেই। চাহিদার তুলনায় বরং বেশিই আছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে কোরবানীর জন্য ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানীর জন্য পশুর মোট চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। এই হিসাবে পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি। স্মরণ করা যেতে পারে, আগে কোরবানীর জন্য ভারত ও মিয়ানমার থেকে বিপুল সংখ্যক পশু আমদানি করা হতো। চোরাই পথেও ওই দু’ দেশ থেকে আসতো লাখ লাখ পশু। হঠাৎ ভারত বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয় এবং গরু চোরাচালান ডেড স্টপ করে। এতে বাংলাদেশে কোরবানীর পশুর সংকট দেখা দেয়। তবে দু’য়েক বছরের মধ্যেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। সরকার পশু পালন ও খামার প্রতিষ্ঠায় জনগণের প্রতি আহ্বান জানায় এবং জনগণ তাতে আশাতীত সাড়া দেয়। তারপর থেকে দেশের পশু দিয়েই কোরবানী হচ্ছে। এখন গবাদী পশুসম্পদ ও গোশতে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ ও দুগ্ধজাতপণ্যের উৎপাদনও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এজন্য দেশের কৃষক ও খামারীরা অকুণ্ঠ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
গবাদী পশুর আমদানি বন্ধ। চোরাচালান বন্ধ। এটাই স্বাভাবিক। আমদানি ও চোরাচালান দেশের কৃষক ও খামারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। তারপরও কোরবানীর ঈদের সময় সীমান্তের ফাঁকফোকড় গলিয়ে পশু অনুপ্রবেশ করে। এবারও এরকম খবর পাওয়া গেছে। খবরে বলা হয়েছে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গরু ঢুকছে। অবৈধভাবে আসা গরু সীমান্তের হাটগুলোতে বিক্রী হচ্ছে। যারা এই অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এতে কৃষক ও খামারিরা অতিশয় উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। এর মধ্যে তাদের বিড়ম্বিত ও বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চোরাইপথে অবৈধভাবে গবাদিপশু দেশে প্রবেশ কঠোরভাবে বন্ধ করা এবং দেশের সীমান্তে গবাদিপশুর বিট খাটাল স্থাপন বিগত কয়েক বছর যাবৎ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জননিরাপত্তা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে, নকল ও জাল পত্র ইস্যু করে একাজ করার চেষ্টা করছে। অতি সম্প্রতি এ সংক্রান্ত কিছু জাল বা নকল পত্র জননিরাপত্তা বিভাগের গোচরীভূত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে স্পষ্ট, কিছু অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশ-নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গবাদী পশু আনার ও খাটাল স্থাপনের অপচেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ করে দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, ভারত ও মিয়ানমার থেকে বৈধ-অবৈধ কোনো পথেই আমাদের গবাদি পশু আনার প্রয়োজন নেই। পরিসংখ্যান এও সাক্ষ্য দিচ্ছে, প্রতিবছর কোরবানীযোগ্য লাখ লাখ গরু অবিক্রীত থেকে যায়। যেমন, গত বছর ২০ লক্ষাধিক গরু অবিক্রীত থাকে বলে খবরে প্রকাশ। দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। মূল্যস্ফীতি তাদের জীবনযাত্রাকে দুর্বহ করে তুলেছে। এর মধ্যেই যারা কোরবানীকে উপলক্ষ করে দু’চারটি গরু পালন করেছে, তারা যদি ন্যায্য দামে তা বিক্রী করতে না পারে তবে তাদের লক্ষ্য ও শ্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। খামারীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এভাবে তারা হতাশ ও বঞ্চিত হলে গরু লালন-পালন ও খামারের বিষয়ে তাদের মধ্যে অনীহ দেখা দিতে পারে, যা দেশের জন্য মোটেই মঙ্গলজনক হবে না। অতএব, সীমান্তের ওপার থেকে একটি গরুও যাতে দেশে ঢুকতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, সীমান্তরক্ষী বাহিনীÑ সবাইকেই সর্তক, সচেতন ও দায়িত্বনিষ্ঠ হতে হবে। যারা বিধি-নিষেধ বেতোয়াক্কা করে দেশ ও মানুষের ক্ষতি সাধন করবে, তারা কোনোরূপ অনুকম্পা পাওয়ার উপযুক্ত নয়। তাদের দমন ও প্রতিহত করতে হবে। যারা কোরবানী করবে, তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। ‘দেশের গরুতেই কোরবানী,’ এই প্রতিজ্ঞায় তাদের অটল থাকতে হবে। চোরাইপথে গরু না এলে দেশের কৃষক ও খামারীরা ন্যায্য দাম পাবে, যা তাদের জন্য হবে অনুপ্রেরণাদায়ক। দেশের জন্যও কল্যাণকর।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল