অবরুদ্ধ গণতন্ত্র কবে মুক্তি পাবে?
০৫ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাঢোলে বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার প্রান্তসীমায় এসে উপনীত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতসহ উপমহাদেশের পশ্চিমা অর্থব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল দেশগুলোর অবস্থা এক চরম ক্রান্তিকালে অবস্থান করছে। এ কথা ঠিক যে, ইউনিপোলার বা এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় দেশে দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে। মার্কিন ডলারের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা এবং এই নির্ভরশীলতাকে পুঁজি করে নিজেদের ইচ্ছামত যে কোনো দেশের উপর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় একটি নতুন বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এসব ব্যবস্থার পরির্বতন কতিপয় শাসক গোষ্ঠির স্বৈরতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য নয়। বিদ্যমান অবস্থায় পরিবর্তনের যে উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে সেখানে মানুষের চেয়ে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক স্বার্থ ও ভূরাজনৈতিক কৌশলগত ক্ষমতার দ্বন্দ্বই যেন বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। মার্কিন ও পশ্চিমা একাধিপত্যের বিপরীতে যে নয়া বিশ্বব্যবস্থার আকাক্সক্ষা জেগে উঠেছে, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার, সুশাসন, মানবাধিকার ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থাকে অবারিত করার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে বিগত দু’টি বিতর্কিত নির্বাচন এবং জনগণের নিরঙ্কুশ আকাক্সক্ষা অনুসারে আগামীতে একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা পূরণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে সুস্পষ্ট ভূমিকা রাখছে, ঠিক একইভাবে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলো জনগণের পক্ষে স্বচ্ছ ভূমিকায় নামলে এদেশের মানুষের সমর্থন হয়তো পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেই থাকবে। তবে একবিংশ শতকে এসে সাবেক ¯œায়ুযুদ্ধ আমলের আবেগি সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই। দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা ও সার্বভৌম রাজনৈতিক-কূটনৈতিক ব্যবস্থায় যাদের ভূমিকা বেশি সহায়ক বলে পরিগণিত হবে, দেশের মানুষের রায় তাদের পক্ষেই থাকবে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে উন্নয়ন অংশীদারিত্বের নামে ঋণের ফাঁদে ফেলার উদাহরণ যেমন আছে, পক্ষান্তরে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। কমিউনিজমের লাল ঝান্ডা বিপরীতে উদারনৈতিক ব্যবস্থার ছদ্মাবরণে গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার খোলসের নিচে বৈষম্য ও শোষনের কালোহাতের বিস্তার বিংশ শতকের শেষধাপে বিশ্বের চিন্তাশীল মানুষের কাছে প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এখন আর কোনো জাতিকে সে সব মায়া-মরীচিকার প্রলোভনে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। বিশ্বের প্রতি প্রান্তের মানুষ এখন অনেক বেশি অধিকার সচেতন এবং আত্মপ্রত্যয়ী।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পরাশক্তিগুলোর আচরণ ও ভূমিকাকে দেশের জনগণ নিজেদের অধিকার(গণতন্ত্র ও মানবাধিকার), স্বাধীনতার চেতনা ও আকাঙ্খা বাস্তবায়নের লিটমাস পেপার হিসেবে গণ্য করবে। গত ১৬ বছরে এ দেশের সচেতন মানুষ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কুশীলবদের অনেক খেলা দেখেছে। সেখানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমাদের নয়া কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রেক্ষাপটে ভারতীয়দের একচ্ছত্র আধিপত্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, উন্নয়ন অংশীদারিত্বের নামে রিজিমের সাথে চীন-রাশিয়ার ঋণের ফাঁদ ও অস্বচ্ছ চুক্তির প্রতিযোগিতা এবং পশ্চিমাদের বাণিজ্যিক নিয়ন্ত্রণবাদের টোপ ইত্যাদি সবকিছুর প্রামাণ্য অবস্থান দৃশ্যমান রয়েছে। তবে চলমান বাস্তবতা ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে দেশের জনগণের আকাক্সক্ষার সাথে পশ্চিমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান, আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, সব ভালো যার শেষ ভালো। যদিও প্রবহমান রাজনৈতিক ধারায় শেষ বলে কিছু নেই। সফল ও ফলপ্রসূ রাজনীতি হচ্ছে, আর্ট অব কম্প্রোমাইজ। তবে অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে, মদমত্ত ক্ষমতার আতিশয্যে বাঘের পিঠে সওয়ার হলে সেই বাঘের পতন না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে আপসের কোনো সুযোগ থাকে না। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে রিকনসিলিয়েশনের বদলে প্রতিহিংসা ও বিভক্তির রাজনীতি জাতির অনেক সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করেছে। জাতির কলঙ্কমুক্তির নামে নতুন করে জাতিকে বিভক্ত ও কালিমালিপ্ত করা হয়েছে। গণতন্ত্র হরণের মধ্য দিয়ে শুধু বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার হরণ, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস ও সুশাসন নির্বাসিত করা হয়নি, গত দেড় দশকে দেশ থেকে অন্তত ১৫ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। মাত্রাহীন, বল্গাহীন অর্থ পাচার ও যথেচ্ছ বৈদেশিক ঋণের ভার জাতির কাঁধে চাপিয়ে আগামীদিনের সম্ভাবনাকে আরো কঠিন ও দুর্বহ করে তোলা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক তথ্যসুত্রে দেখা যায়, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনগণের উপর ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ১৯ লক্ষকোটি টাকা। প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত বিশেষ সরকার পর্যন্ত ৩৬ বছরে ৬ শাসকের ঋণের পরিমাণ ছিল ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা, আর শেখ হাসিনা সরকার ১৪ বছরে ঋণ করেছে ১৬.৫ লক্ষ কোটি টাকা! বর্তমানের সাংবাৎসরিক জাতীয় বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ অর্থ বরাদ্দের পরিমান যে কোনো মন্ত্রণালয়ের বাজেটের চেয়ে বেশি। গত (২০২২-২৩) অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল জাতীয় বাজেটের ১৯.২ শতাংশ বা ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। উন্নয়নের নামে দুর্নীতি, ভর্তুকি ও প্রণোদনার নামে দেশ থেকে অর্থ পাচার না হলে সুদের দায় ও বিপুল ঋণের বোঝা জাতির কাঁধে চাপত না।
গণতন্ত্র না থাকলে, সুশাসন না থাকলে, প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে মানবাধিকার থাকে না, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা থাকেনা। গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে তা আবারো সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয়েছে। একতরফা নির্বাচনে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে যথেচ্ছভাবে সংবিধান পরিবর্তন ও কাঁটাছেড়া করে এখন বলা হচ্ছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই ! সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশের রিজিম ও শাসকশ্রেণীর চরিত্র! হাইব্রিড রিজিমের এই অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধি ভূমিকার সুযোগ নিচ্ছে একদিকে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী বেনিয়া শক্তি, অন্যদিকে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীরা। তবে জনগণের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার সাথে একাত্ম হওয়ায় এবার বাংলাদেশে পশ্চিমাদের ভূমিকা বিশ্বের জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা ইতিমধ্যেই কথাবার্তায় খেই হারিয়ে ফেলেছেন। একবার বলছেন, এই ভিসানীতি বিএনপি’র বিরুদ্ধে, সংবিধান অনুসারে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বাধা দিলে তারা মার্কিন ভিসা পাবে না। তারা প্রথমে বলেছেন, যারা আমাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না। এরপরই আমেরিকা থেকে একাধিক পণ্য আমদানি করার সরকারি সিদ্ধান্তের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আবার বলছেন, বিশ ঘণ্টা প্লেন জার্নি করে আটলিান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকা না গেলে কিছু যায় আসে না। ক্ষমতাসীনরা যখন বুঝে গেছে, আমেরিকাকে আর বাগে আনা সম্ভব নয়, তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের ধারণা, আমেরিকার বিরুদ্ধে একের পর এক হঠকারি, খোলামেলা ও সাহসী বক্তব্য দিয়ে মূলত মার্কিন বিরোধী পরাশক্তি চীন ও রাশিয়ার সমর্থন আরো পাকাপোক্ত করার কৌশল গ্রহণ করেছেন ক্ষমতাসীনরা। জাতিসংঘ, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা, থিঙ্কট্যাঙ্ক ও গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রায় এক দশক ধরে ক্রমশ তাদের অবস্থান জোরালো করেছে। এ সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র অবরুদ্ধ’। বিরোধীদল দমন ও মুক্ত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের নজিরবিহিন ট্র্যাক রেকর্ডের পর বাংলাদেশে আগামি বছরের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে নানামুখী তৎপরতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদনে। আন্তজার্তিক অঙ্গনের প্রধান উন্নয়ন সহযোগী ও বাণিজ্য অংশীদারদের অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অবকাশ থাকতে পারে। তবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে দেশে অন্তত ৮০ ভাগ মানুষের আশা-আকাঙ্খার সাথে পশ্চিমাদের জোরালো সমর্থন অনেক বিতর্ক পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে এক নতুন সম্ভাবনার প্রান্তরে দাঁড় করিয়েছে। সরকার যদি বাস্তবতার উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশে একটি সংঘাতময়, বিশৃঙ্খল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। এ প্রসঙ্গে, ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির চেয়েও সংকটময় অবস্থা সৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী সমর্থিত এক-এগারোর বিশেষ সরকারের সময় মাইনাস টু ফর্মুলার আলোকে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও বিভিন্ন মামলায় আটক দেখিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার ও লাঞ্ছিত করতে দেখে বেগম খালেদা জিয়াকে তার প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। অস্থায়ী কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত একই বাড়িতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া আটক থাকার সময় দুজনের মধ্যে এক ধরনের সৌজন্যমূলক সম্পর্কের কথা জানা যায়। বিএনপি’র সাথে একটি ইনকাম্বেসি ফ্যাক্টর কাজ করায় আওয়ামী লীগের সাথে একটি গোপন সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিল এক-এগারোর ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সরকার। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন, সেই সরকার ছিল তাদের আন্দোলনের ফসল এবং তিনি ক্ষমতায় গেলে তাদের সব কর্মকান্ডের বৈধতা দেবেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সেনাসমর্থিত সরকারের সাথে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সমঝোতায় নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের তৎকালীন শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা পরবর্তীতে এ বিষয়ে তাদের সাক্ষ্য ও ভূমিকার জানান দিয়েছিলেন। একটি অসমতল প্লেইং ফিল্ডে দেশীয় গেইম প্লেয়ার ও আন্তর্জাতিক কুশিলবদের যোগসাজশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অস্বাভাবিক-অকল্পনীয় ফলাফলে আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে এর পর রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের উপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপেই সরকার প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সচল করার পাশাপাশি নতুন মামলা দায়ের করে বিরোধীদলের রাজনৈতিক অঙ্গনকে সর্বক্ষণ তটস্থ রাখার পন্থা গ্রহণ করা হয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা ছিল ৪টি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের তিন কোটি টাকার তহবিল ট্রান্সফারে কথিত অনিয়মের মামলায় খালেদা জিয়াকে এখন সাজা ভোগ করতে হচ্ছে। গত ১৫ বছরে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, দেশের প্রায় সবগুলো ব্যাংকের লক্ষকোটি টাকার তহবিল তছরুপসহ দেশ থেকে অন্তত ১৫ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের সাথে জড়িত কাউকেই শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নারী নেত্রী ও প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র শীর্ষ নেতা, পঁচাত্তর বছর বয়েসী গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ রাখার ঘটনা যেন দেশের গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে রাখারই প্রতীকি ঘটনা হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেখার প্রত্যয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক পদক্ষেপের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্য ৬টি দেশের পক্ষ থেকে কোনো রাখঢাক ছাড়াই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে, অভাবনীয়ভাবে চীনা সরকারের পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে বেশকিছু উপঢৌকন হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ঘটনাকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও লিগ্যাসির ব্যাপারে পশ্চিমা দেশ ও চীনাদের মধ্যে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক ধরনের মতৈক্য বা সমর্থন হিসেবে ধরে নেয়া যায়। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিশ্বমানের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে তার নেতৃত্বের জোরালো অবস্থান নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই কেবল দেশে ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত