ইসরাইলের বর্বর হামলা : বিশ্বের প্রশ্নবিদ্ধ নিষ্ক্রিয়তা
০৫ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
বছরের পর ধরে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকায় সশস্ত্র অভিযান চালালেও জেনিন ও রামাল্লার আশ্রয় শিবিরগুলোতে বড় ধরনের হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসরাইলি বাহিনী এবার জেনিন এবং রামাল্লায় গত ২ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। জুলাই মাসের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনীর ২ দিনের বিমান ও ড্রোন হামলা ও টার্গেটেড কিলিং মিশনে অন্তত ১ ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা ও শতাধিককে আহত করা হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেনিনের আশ্রয় শিবিরে থাকা ১৪ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে ৩ হাজারের বেশি শরনার্থীকে রেডক্রসের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালসহ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইসরাইলি বর্বরতায় নিজ ভূমিতে অধিকার বঞ্চিত, পরবাসী ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় শিবিরেও রক্ত ও জীবন দিতে বাধ্য হচ্ছে। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদীরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে দেশে দেশে রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখলেও ফিলিস্তিনিদের উপর সাত দশক ধরে চলা জায়নবাদীদের সুপরিকল্পিত এথনিক ক্লিনজিং বা গণহত্যায় তারা সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলেছে। এভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ দমানো যায়নি। চরম শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ফিলিস্তিনিরা সবদিক থেকে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। প্রায় দুই দশক ধরে গাজা উপত্যকাকে স্থল, নৌ ও আকাশপথে অবরুদ্ধ রেখে কার্যত একটি বন্দি শিবিরে পরিণত করা হলেও এ সময়ে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক গ্রুপ হামাসের সামরিক শাখার প্রতিরোধ যোদ্ধা ও লেবাননের হেজবুল্লাহর সাথে সম্মুখ সমরে ইসরাইলি বাহিনী অন্তত তিনবার পরাস্ত হয়েছে। জেনিন ও রামাল্লায় সশস্ত্র হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হতাহত করে সেখানে এক উত্তপ্ত, বিক্ষুব্ধ ও সশস্ত্র পরিস্থিতির মুখে ইসরাইলি বাহিনীকে প্রত্যাহার করা হয়। প্রতিবাদে গাজা থেকে ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে রকেট হামলার জবাবে মঙ্গলবার গাজার কয়েকটি স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে আইডিএফ।
পশ্চিমা অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সমর্থনে এত সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে চরম আধিপত্যবাদী বর্বরতা চালাচ্ছে জায়নবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল। ১৯৪৮ সালে হাজার বছরের জাতিগত উত্তরাধিকার লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল ও বাড়িঘর উচ্ছেদ করে গড়ে তোলা ইসরাইল রাষ্ট্রের পাশে ফিলিস্তিনিদের অবশিষ্ট ভূমি ও আশ্রয় শিবিরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। বায়তুল মোকাদ্দাসসহ ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে দখল করা ভূমি ফেরত দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের নিরবতা ও দ্বিচারিতা এখন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে স্পষ্ট। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও স্বাধীনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে থাকলেও ¯œায়ুযুদ্ধকালের ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্বব্যবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর জোরালো ভূমিকা থাকলে এতদিনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা তথা আরব-ইসরাইল ইস্যুতে দ্বিরাষ্ট্রকেন্ত্রিক সমাধান অসম্ভব ছিল না। উপরন্তু, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তির পথে প্রধান অন্তরায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রাজনৈতিক গ্রুপগুলোকে পশ্চিমারা সন্ত্রাসী আখ্যা দিচ্ছে। নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর বর্বর ইসরাইলিদের হামলাকে আন্তর্জাতিক তদন্তে যুদ্ধাপরাধ ও শক্তির ডিসপ্রোর্পশনেট বা অসম ব্যবহার হিসেবে গণ্য করা হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর আগ্রাসনকে বরাবরই ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার বলে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছে।
জেনিন শরনার্থী শিবিরে ইসরাইলি ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ফিলিস্তিনি গেরিলা সদস্যরা তেল আবিবে গাড়ি ও ছুরি হামলা চালিয়ে অন্তত ৭ ইসরাইলিকে আহত করেছে বলে জানা যায়। এভাবেই চলছে দশকের পর দশক ধরে। যেখানে ন্যূনতম জাতিগত মতপার্থক্যের কারণে মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ায় পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের খৃষ্টান অধ্যুষিত ক্ষুদ্র অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে পশ্চিমারা তাদের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক সক্ষমতা ব্যবহার করেছে, সেখানে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের হাতে প্রতি বছর শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা তুলে দিয়ে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে পশ্চিমারা। পরিবর্তীত বৈশ্বিক বাস্তবতায় ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলি বর্বরতা নিরসন এবং দ্বিরাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানের পক্ষে ওআইসি, চীন-রাশিয়াসহ বিশ্বশক্তির মধ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত ঐক্য গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। জেনিন-রামাল্লার আশ্রয় শিবিরে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলি ড্রোন হামলা চরম বর্বরতা ও উস্কানিমূলক। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিরঙ্কুশ সমর্থনের প্রেক্ষাপটে ওআইসি, আরবলীগসহ জাতিসংঘ একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত