ঢাকা আর কবে বসবাসযোগ্য নগরী হবে?
০৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৩ এএম
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকার ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রতি বছরের মতোই গ্লোবাল লাইভএবেলিটি ইনডেক্স ২০২৩ বা বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে। ১৭২টি দেশের রাজধানীর বাসযোগ্যতা নিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ঢাকার অবস্থান ১৬৬। অর্থাৎ ঢাকা অবাসযোগ্যতার দিক থেকে ৭ নম্বরে রয়েছে। গত বছরও একই অবস্থানে ছিল। অবস্থানের কোনো হেরফের হয়নি। বহুদিন ধরেই ঢাকা অবাসযোগ্য হয়ে আছে। এ নিয়ে কম বদনাম শুনতে হচ্ছে না। কখনো অসভ্য নগরী, কখনো বসবাস অনুপযোগী শহরের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। অথচ আমরা বলি, দেশ প্রভূত উন্নয়ন করেছে। উন্নয়নের সাগরে ভাসছি। যদি তাই হয়, তাহলে ঢাকা অবাসযোগ্য শহরের তালিকায় থাকবে কেন? একটি উন্নয়নশীল দেশের রাজধানীও উন্নতির দিকে ধাবিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা উন্নয়নশীল দেশ বলছি ঠিকই, তবে রাজধানী ঢাকাকে দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। দালান-কোঠার ঠাঁসাঠাঁসি ছাড়া ঢাকার কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। একটি সুন্দর, পরিপাটি ও পরিকল্পিত শহরই রাজধানী হতে পারে। তা ঢাকাকে দেখে বলা যায় না। ঢাকার বর্তমান লোকসংখ্যা দুই কোটির উপরে। সরকারি হিসাবে, ১ কোটি ৭০ লাখ। জাতিসংঘের ইউএনএফপি’র হিসাবে, পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা ১১তম। তবে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর এক নম্বর জনঘনত্বের শহর। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ বসবাস করে। এক বর্গকিলোমিটারে বিশ্বের আর কোনো শহরে এত মানুষ বসবাস করে না। নগরবিদরা বলেছেন, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা আস্ত থাকাবে না। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হবে। এর বেশিরভাগ সুউচ্চ ভবন ভেঙ্গে পড়বে, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে, এমনকি কোনো কোনো এলাকা দেবে যেতে পারে। এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা নিয়েই রাজধানী চলছে। একে বাসযোগ্য কিংবা ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত করার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ঢাকার মধ্যেই সকল সুযোগ-সুবিধা কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-আদালত, প্রশাসন, কলকারখানা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা। ঢাকা বাসযোগ্য না হওয়ার এটি অন্যতম কারণ।
দুই.
ঢাকাকে বলা হয় মেগাসিটি। সাধারণত যে শহরের লোকসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়, সেই শহর মেগাসিটি হিসেবে আখ্যায়িত হয়। জনসংখ্যার দিক থেকে ঢাকা এখন ডাবল মেগাসিটিতে পরিণত হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক রাজধানীবাসী ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে, এ নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা আমরা শুনিনা। বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকায় যারা থাকেন এবং আসেন, তারা নিজেরাই নিজেদের বসবাসের জায়গা করে নেন। এতে পরিকল্পনার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ যে কোনো রাজধানী গড়ে তোলা হয় পরিকল্পিতভাবে। এজন্য কর্তৃপক্ষ থাকে। যে কেউ চাইলেই ইচ্ছামতো ঘর-বাড়ি বা ছাপড়া তুলে বসবাস করতে পারে না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণের কাজটি করে। ঢাকার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যেন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। যে যেভাবে যেদিকে পারছে ঢাকাকে এগিয়ে নিচ্ছে। এই সম্প্রসারণ করতে গিয়ে নগরীর প্রাকৃতিক যে বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন, তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা পরিণত হচ্ছে ইট, কাঠ, পাথরের নগরীতে। উচ্চ তাপমাত্রার নগরীতে পরিণত হয়েছে। বলা হয়, ঢাকার মতো প্রাকৃতিক সুষমামন্ডিত রাজধানী বিশ্বে খুব কম ছিল। এটি এমন এক শহর, যার ভেতর দিয়ে এক সময় স্বচ্ছ প্র¯্রবণ বহমান ছিল। জালের মতো খাল আর চতুর্দিকে নদী। ঘর-বাড়ি, অফিস-আদালতের পাশ দিয়ে স্বচ্ছ বারিধারা বয়ে যেত। পানিতে ভবনের ছায়া ও বিদ্যুতের আলো ঢেউ খেলে যেত। এসব এখন কল্পনায় ঠাঁই নিয়েছে। এখন কেউ কি কল্পনা করতে পারে, যেখানে সুউচ্চ ভবন দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে একসময় খাল ছিল? ঢাকায় একসময় এমন খাল ছিল প্রায় ৫২টির মতো। এ প্রজন্মকে বিশ্বাস করানো যাবে না, এক সময় বাড্ডা এলাকা দিয়ে গুলশানে নৌকা ভিড়ত। আজকের যে সুরম্য বসুন্ধরা সিটি মার্কেট, এ জায়গাটি ছিল বিশাল একটি ঝিল? সেখানে শাপলা ফুটত, নৌকা চলত। এখন ঢাকা শহরে যেসব লেক দেখা যায়, এগুলো মূলত সেসব খাল বা নদীর রেপ্লিকা মাত্র। এগুলো কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা হয়নি। প্রাকৃতিকভাবেই ছিল। এগুলোর গন্তব্য ছিল শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষা ও বালু নদী। এসব খাল থাকলে ঢাকা শহরের মতো নান্দনিক শহর বিশ্বে খুব কমই দেখা যেত। কাচ ঘেরা সুউচ্চ ভবন এবং এলইডি লাইটের আলোয় এসব খাল ঝলমল করত। মানুষ বুক ভরে সতেজ নিঃশ্বাস নিতে পারত। মানুষকে শীসা, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড মিশ্রিত বিষাক্ত বায়ু সেবন করে হৃদরোগ, শ্বাস কষ্ট, ডায়বেটিসসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে হতো না। খুব স্বাভাবিক হিসেবে যদি ধরা হয়, প্রায় দুই কোটি মানুষ নিঃশ্বাসের সাথে যে কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ছে, এই বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড শুঁষে নেয়ার মতো সবুজ গাছ-গাছালি রাজধানীতে নেই। এর সাথে গাড়ির বিষাক্ত ধোঁয়া যুক্ত হয়ে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়া পয়োনিষ্কাশন, বর্জ্যব্যবস্থাপনার দুর্দশা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলছে। এসব সমস্যা সমাধানে যেধরনের কর্তৃপক্ষ এবং পরিকল্পনা থাকা দরকার, তা ঢাকা শহরে নেই। যারা আছে, তাদের সক্ষমতা আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। নিজেরাই নানা অপরিকল্পনা ও সমস্যার মধ্যে জড়িয়ে আছে। তাদের অজুহাতের শেষ নেই। এই সক্ষমতার অভাব এবং অজুহাত দিয়েই বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানগুলো পার করে দিচ্ছে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি তাদের কাজটুকু যথাযথভাবে করত, তাহলেও অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হতো। বিশেষ করে দুই সিটি করপোরেশন, যাদের উপর ঢাকার অধিকাংশ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব, তারা একটু তৎপর ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে ঢাকার দুরবস্থা কিছুটা হলেও উন্নতি হতো। প্রতিবার বিশ্বের অবাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঠাঁই পেতে হতো না। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরটির মতো যদি কিছুটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যেত, তবে ঢাকা শহরের চেহারা অনেকটাই বদলে যেত। কলকাতায় সমস্যার অন্ত নেই, তবে সেখানে সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। এ আন্তরিকতার প্রমাণ পাওয়া যায়, শহরটির পরিবর্তনের দৃশ্যমান কর্মকা-ের মাধ্যমে। ঢাকাবাসীর চোখে এ ধরনের পরিবর্তনের কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত ধরা পড়েনি। একটি আধুনিক রাজধানীর কি সুযোগ-সুবিধা থাকে, তা তারা যেমন জানেন না, তেমনি সমস্যাকে নিত্যসঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়েই তারা বসবাস করছেন।
তিন.
ঢাকার অসংখ্য সমস্যার মধ্যে যেটি প্রধান হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে যানজট। প্রতি মুহূর্তে এ সমস্যায় পড়ছে না, এমন মানুষ নেই। যানজটে মানুষের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার হিসাব বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময়ে দিয়েছে। বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যানজটের কারণে বছরে ২২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি বলেছে ২০ হাজার কোটি টাকার কথা। জাতিসংঘের ইউএনডিপি এক গবেষণায় বলেছে, যানজটে বছরে ক্ষতি হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। ইউএনডিপি এ হিসাবের মধ্যে দেখিয়েছে, যানজটের কারণে দৈনিক ৪০ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হওয়ায় আর্থিক ক্ষতি হয় ৩০০ কোটি টাকা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে যানবাহনের পুড়ে যাওয়া বাড়তি জ্বালানির মূল্য (যানজটে বাসে ৩ গুণ তেল পোড়ে) এবং নগরবাসীর স্বাস্থ্যহানির আর্থিক মূল্য। যানজটে বছরে যে ক্ষতি হয় তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর একটি করে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেও অতিরিক্ত অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। এভাবে বছরের পর বছর ধরে যে ক্ষতি হচ্ছে, এ ক্ষতি যদি অর্ধেকেও নামিয়ে আনা যায়, তবে প্রতি দুই বছরে একটি করে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা সম্ভব। এ অর্থ দিয়ে যদি যানজট নিরসনের দিকে মনোযোগ দেয়া হতে, তাহলে ঢাকার চেহারাই বদলে যেত। যদি যানজটের ক্ষতি অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে চার বছরের মধ্যে ঘাটতিবিহীন একটি বাজেট ঘোষণা দেয়া সম্ভব হতো। যানজটের কারণে কর্মজীবী মানুষ থেকে শুরু করে প্রত্যেকের স্বাভাবিক জীবন ও কর্মকা- প্রতিদিনই ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, তারা জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যারা ঢাকায় আসেন, তাদের জীবনযাত্রা অনিবার্যভাবেই পরিবর্তন করতে হয়। যেখানে কর্মস্থলে যাওয়ার স্বাভাবিক সময় আধাঘন্টা, সেখানে তাকে দুই ঘন্টা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তা নাহলে, কোনোভাবেই চাকরি-বাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমতো চালানো সম্ভব নয়। যানজটের কারণ মোটামুটি সবারই জানা। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ১৯টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ট্র্যাফিক আইন না মানা ও সঠিকভাবে প্রতিপালন না করা, যত্রতত্র কার পার্কিং এবং কার পার্কিংয়ের জায়গায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করা, রাস্তা ও ফুটপাথ দখল, ট্র্যাফিক পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি। এর বাইরে মূল যে সমস্যা তা হচ্ছে, রাজধানীর রাস্তার তুলনায় অধিক সংখ্যক গাড়ি চলাচল। একটি আদর্শ শহরে সাধারণত ২৫ ভাগ সড়ক থাকে, সেখানে ঢাকা শহরে রয়েছে মাত্র ৭ ভাগ। এই ৭ ভাগের মধ্যে কার্যকর রাস্তা হচ্ছে আড়াই ভাগ। এই রাস্তা দিয়ে সোয়া দুই লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারলেও এখানে চলছে ৯ লাখ। তার উপর প্রতিদিন ৩ শতাধিক গাড়ি রাস্তায় নামছে। এমন পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনের সম্ভাবনা নেই। যদিও মেট্রোরেল নানা উড়াল সড়ক নির্মিত হচ্ছে, তথাপি পরিকল্পনা না থাকলে যানজট নিরসন করা যাবে না। যেমন ফ্লাইওভার দিয়েও যানজট নিরসন করা যায়নি। অন্যদিকে, গণপরিবহনে চলছে বিশৃঙ্খলা। যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত গণপরিবহণের বিকল্প নেই। সারাবিশ্বেই গণপরিবহণের উপর বেশি জোর দেয়া হয়। বাংলাদেশই কেবল ব্যতিক্রম। এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, নগরীতে ৬০ ভাগ মানুষ হেঁটে চলেন। রিকশায় চলেন ১৯ ভাগ। বাস ও অটোরিকশায় চলেন ১৬ ভাগ। আর প্রাইভেট কারে চড়েন মাত্র ৫ ভাগ। অর্থাৎ ৫ ভাগ মানুষের প্রাইভেট কারের জন্য ঢাকার যানজট তীব্র হয়ে রয়েছে এবং প্রাইভেট কারেরই অনুমোদন দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। একটি প্রাইভেট কারে ড্রাইভারসহ দুইজন থেকে পাঁচজন চড়তে পারে। বেশিরভাগ সময় শুধু দুইজনই চড়েন। বাকি তিনজনের জায়গা খালিই পড়ে থাকে এবং রাস্তার বিরাট একটা অংশ দখলে চলে যায়। আবার এসব গাড়ি রাস্তার উপর পার্কিং করার কারণেও যানজট সৃষ্টি করে চলেছে। ঢাকার যানজট কমাতে হলে প্রাইভেট কারের অনুমোদনের সংখ্যা কমাতে হবে। যাদের একাধিক প্রাইভেট কার রয়েছে, তাদেরকে একটির মধ্যে সীমাবদ্ধ করা প্রয়োজন এবং তার জায়গায় আধুনিক, আরামদায়ক ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গণপরিবহণ সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি।
চার.
ঢাকাকে মানুষের চাপমুক্ত রাখতে এবং ঢাকাগামী মানুষের ¯্রােত ঠেকাতে বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং সেবাসহ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের কথা বহুদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন। এসব সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সরকার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কিছুই করেছে। আমরা মনে করি, ঢাকাকে হালকা এবং আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে হলে সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও প্রধান প্রধান জেলা শহরে ঢাকার মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকায় আর কোনো কলকারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেয়া যাবে না। বিভিন্ন আঞ্চলিক শহলে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে হবে, যাতে ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থান সৃর্ষ্টি হয় এবং জীবিকার সন্ধানে মানুষকে ঢাকামুখী না হতে হয়। এজন্য ব্যাপক পরিকল্পনা করতে হবে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুত কাজ শুরু করতে হবে। জেলা-উপজেলার মানুষ যদি তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সেখানে পান, তবে তাদের ঢাকামুখী হওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। ঢাকার মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। ঢাকার সাথে জেলাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ করা প্রয়োজন, যাতে মানুষ ঢাকা এসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে দিনে দিনে নিজ অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-আদালতের সুবিধা, জেলা-উপজেলায় এমনভাবে পৌঁছে দেয়া, যাতে সেখানের মানুষকে ঢাকামুখী হতে না হয়। যদি এমন হয়, একজন রুগীকে উন্নত চিকিৎসা, শিক্ষার্থীকে উন্নত শিক্ষা, বেকারকে চাকরি, দিনমজুরকে কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় ছুটে আসতে হয়, তবে ঢাকাকে কোনভাবেই নির্ভার ও সুষমভাবে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। নিউইয়র্ক শহর থেকে মানুষ ২০০ কিলোমিটার কিংবা তার চেয়েও বেশি দূরে বসবাস করা মানুষ প্রতিদিন অফিস শেষে বাড়ি ফিরে যেতে পারছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেও কলকাতায় অফিস-আদালত ও নিত্যদিনের কাজ করে তারা ফিরে যেতে পারছে। ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও এমন করতে হবে যাতে, দূর দূরান্তের মানুষ ঢাকায় অফিস করে বাড়ি ফিরে যেতে পারে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড বা বাসযোগ্য নগরীর যে মানদ- তুলে ধরা হয়, ঢাকা তা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। স্থিতিশিলতা, স্বাস্থ্যসেবার মান, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা এবং অবকাঠামো-এই পাঁচটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে ঢাকার স্কোর গড়ে ৪০-এর নিচে। উন্নয়নশীল দেশের রাজধানী হিসেবে এই স্কোর কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এই স্কোর ধাপে ধাপে উন্নীত করতে হবে। নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট বিভাগ, সর্বোপরি সরকারকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত