বাপেক্সের সক্ষমতা-অক্ষমতা ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি
০৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৩ এএম
অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এক নজিরবিহীন সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকটের পেছনে বহুবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আত্মনির্ভরতার প্রয়াসের বদলে আমদানি ও পরনির্ভরতার রেডিমেড প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তের ঝোঁক। দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে এ খাতের উন্নয়নে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সকে শক্তিশালী করে তোলার কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের সামনে প্রকৃষ্ট সাফল্যের বেশ কিছু উদাহরণ থাকলেও সে সবের তোয়াক্কা না করে গ্যাস, বিদ্যুৎ, এলএনজি খাতে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আমদানি ও বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তির ধারাবাহিক তৎপরতা দেখা গেছে। বাপেক্স, পেট্রোবাংলার কার্যক্রমে নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও সে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতেও সরকারের সংশ্লিষ্টদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বাপেক্সের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক সম্ভাবনার জানান দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সাম্প্রতিক সময়ের পেট্রোবাংলার দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার এক বিস্ময়কর উদাহরণ তৈরি করেছে। দেশের গ্যাসফিল্ডগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও গ্যাস উত্তোলনের কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরিবর্তে ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে পেট্রোবাংলা তার সঞ্চিত তহবিল খুইয়ে লোকাসানি ও দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পেট্রোবাংলার গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে ১৯ হাজার কোটি টাকার আমানত হিসেবে মজুদ থাকলেও এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে গত ৫ বছরে সরকারের কাছ থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নেয়ার পরও ২৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অস্বচ্ছতা, ভুলনীতি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে সম্ভাবনাময় পেট্রোবাংলা দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির সাথে পাল্লা দিয়ে বার বার জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তোলা হলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎখাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও বিশাল সাফল্য দাবির পরও গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণে সারাদেশে এখন রুটিন করে লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। এক প্রকার শূন্য থেকে শুরু করে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম চার দশকে পেট্রোবাংলা আর্থিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ ও সক্ষম হয়ে উঠলেও গত এক দশকের মধ্যে সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠানটি অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত ও দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার বাস্তবতা অত্যন্ত দুঃখজনক, হতাশাজনক। বিশেষত এলএনজি আমদানির ব্যয়ভার মেটাতে গিয়েই পেট্রোবাংলাকে এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে। গ্যাস আমদানির বকেয়া বিল হিসেবে এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রায় ৭০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। এরই মধ্যে এলএনজি আমদানির জন্য সরকারের কাছে ৭ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ঋণ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়।
একমাত্র রাষ্ট্রীয় তেলগ্যাস কোম্পানি বাপেক্সকে শক্তিশালী করে জ্বালানি খাতে বিদেশি কোম্পানির উপর অতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার তাগিদ দেশের জ্বালানি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বাপেক্সের ঝুঁড়িতে রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য গাঁথা। গত ২০২১ সালের আগস্টে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে সিলেটের জকিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাপেক্স। এ ক্ষেত্রে বাপেক্সের মোট খরচ হয়েছিল ৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ভোলায় ২৯তম গ্যাসকূপ খননে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রমকে দিতে হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা। দেশের গ্যাস আবিষ্কার ও উন্নয়নে বাপেক্স নিয়মিত সাফল্য বজায় রাখতে সক্ষম হলেও এ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রকারান্তরে ঠুটো জগন্নাথ করে রেখে বিদেশি কোম্পানির উপর নির্ভরতা ও হাজার হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির পেছনে বিশাল এক দুর্নীতির দুষ্ট চক্র সক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ রয়েছে। বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে লাখ লাখ টন কয়লা লাপাত্তা হয়ে যাওয়া, কিংবা সমুদ্রের ব্লকগুলোর ত্রিমাত্রিক জরিপ ও কাজ শুরুর উদ্যোগে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত রয়েছে। এমনকি স্থলভাগে গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে বাপেক্সের কর্তৃত্ব খর্ব করে বেশি মূল্য দিয়ে গ্যাজপ্রমের মতো বিদেশি কোম্পানিকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার অভিযোগে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা দায় এড়াতে পারেন না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও সাফল্যের পরও এ খাতে চলমান দুর্দশা, অনিশ্চয়তা ও দেউলিয়াত্বের ধারা বন্ধে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রতিবেশী দেশ ভারত-মিয়ানমার সমুদ্রের ব্লকগুলো থেকে জ্বালানি সম্পদ উত্তোলন করলেও আমাদের পিছিয়ে পড়া মেনে নেয়া যায় না। বাপেক্সকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পেট্রোবাংলা, তিতাসসহ জ্বালানি খাতের সব কোম্পানির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত