ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ঋণের কাঁটা সরবে কীভাবে?

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

০৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

দেশে অর্থনৈতিক ও ঋণ সংকট ভয়াবহ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে! অর্থনৈতিক সংকটের প্রধান হচ্ছে ডলার সংকট, রিজার্ভ সংকট, লেনদেনের ব্যাপক ঘাটতি (বিওপি), পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্বল পুঁজিবাজার, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, টাকার মানের অবনমন, বিপুল খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকের তারল্য সংকট ইত্যাদি। ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে। ফলে পণ্যমূল্য অনেক বেড়েছে। এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতে না পারায় অনেক বিদ্যুৎ প্লান্ট বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, চাহিদা মাফিক বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। ফলে লোডশেডিং চলছে ব্যাপক। তাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়া ছাড়াও শিল্প-কারখানার উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, যা সরকারের ভুল নীতি তথা দেশীয় জ্বালানি আহরণে গুরুত্ব না দিয়ে আমদানির দিকে গুরুত্ব বেশি দেওয়ার কারণেই হচ্ছে। সহসাই এটা দূর হবে না। সিপিডি বলেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি করতে বছরে এখন ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেছেন, ২০২৫ সালে এই ব্যয় ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০% হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে পারছে না। তারা চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতীয় সংসদেও পণ্যমূল্য ব্যাপক বৃদ্ধির জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের এমপিরা। তাঁরা বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১,৩১,৬২০ কোটি টাকা। আইএমএফ’র মতে, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ ব্যাপক হওয়ায় অনেক ব্যাংক প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তবুও খেলাপিদের সুবিধা বাড়ানো হয়েছে সম্প্রতি, ইতোপূর্বেও তা করা হয়েছে বহুবার! নতুন ব্যাংক আইনও খেলাপি বান্ধব হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত। জাতীয় সংসদে কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি বলেছেন, ব্যাংকে লুটপাট চলছে। ব্যাংক খালি হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। সরকারও নিশ্চুপ। ঋণ খেলাপি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে টিআইবি, আইএমএফ এর লাগাম টেনে ধরার তাগিদ দিয়েছে। ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সংসদে জিএম কাদের, এমপি বলেছেন, সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। সরকার টাকা ছাপিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছে। যদিও এতে সমস্যা আরও বাড়বে। বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ব্যাংক খাতে লুটতরাজ চলছে!

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৮ জুন ৬ মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। তাতে ব্যাংকের সুদহার ও ডলারের রেট ফ্রি এবং রিজার্ভের হিসাবায়নে বিপিএম-৬ ফর্মুলা তথা নিট হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করার ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কার্যকর হয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। আইএমএফ’র ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে এসব শর্ত ছিল। ব্যাংকের সুদের হার ও ডলারের রেট ফ্রি করার কারণে সুদের হার ও ডলারের মান বাড়বে। এতে পণ্যমূল্য আরো বাড়বে। তবে ব্যাংকের তারল্য বাড়বে। গত ২ জুলাই খবরে প্রকাশ, বর্তমানে পুরানো পদ্ধতিতে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের অধিক। কিন্তু সম্প্রতি গত ২ মাসের আকুর দেনা ১১৮ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করার পর রিজার্ভ আবার ২৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি হয়েছে। রিজার্ভের নিট হিসাবায়ন করতে গেলে রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও ইডিএফ বাদ দিতে হবে। বর্তমানে যার মোট পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলার। উপরন্তু এক বছরের বৈদেশিক ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধের অর্থ বাদ দিতে হবে। বর্তমানে যার পরিমাণ অনেক। এসব বাদ দিলে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২০ বিলিয়নের ডলারের কিছু বেশি হবে। রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার থাকার শর্ত রয়েছে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, গত অর্থবছরে ব্যাল্যান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। মুডি’স রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবনমন করে ‘বিএ৩’ থেকে ‘বি১’ নির্ধারণ করেছে গত ৩০ মে। এতে বিদেশি ঋণের সুদহার ও আনুষঙ্গিক ফি বৃদ্ধি, ঋণ নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ হ্রাস ও কিছু প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে পারে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ক্রেডিট লাইন বন্ধ করতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলো। ফলে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে।

গত ২৫ জুন খবরে প্রকাশ, গত মার্চে দেশের মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯,৫৭১.২৮ কোটি ডলার (তন্মধ্যে সরকারি খাতের ৭,৩৫৩ কোটি ডলার ও বেসরকারি খাতের ২,২১৮.১৩ কোটি ডলার), যা ২০০৮ সালে ছিল ২,২৭৯ কোটি ডলার। তবুও ঋণ বাড়ছে। তাই বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে চলতি বছর শেষে ১১৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০২৪ সালের শেষে হবে ১৩০ বিলিয়ন ডলার। এই বিপুল ঋণের ২০% স্বল্পমেয়াদী ঋণ। স্বল্পমেয়াদী ঋণ ৩-৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে ঝুঁকি বেশি। গত বছর ইআরডি বলেছে, বৈদেশিক ঋণের ৩৬% বিশ্বব্যাংক, ২৩% এডিবি, ১৮% জাপান, ৮% চীন, ১% দক্ষিণ কোরিয়া, ১২% আইডিবি এবং ১% অন্যান্য। বর্তমানে এই হারের খুব কম-বেশি হবে বলে মনে হয় না। অপরদিকে, অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের চেয়ে বেশি। গত এপ্রিলে প্রকাশিত সিইআইসি ডাটার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ৭,১৬,১৫৭ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ৭১.৯৩ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে এটা আরো বেড়েছে।

দেশ ঋণের ফাঁদে পড়েছে। বর্তমানে জনপ্রতি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,০৫,২৫২ টাকা। এটা এক বছর পর হবে ১,২০,৪৩৯ টাকা। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের চরম দারিদ্র্য বিষয়ক বিশেষ দূত শ্যুটার গত ২৯ মে ঢাকায় বলেছেন, বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে এ অগ্রগতি এখনও ভঙ্গুর এবং দারিদ্র্য বিমোচনও ভঙ্গুর! দ্য ইকোনোমিস্ট গত মার্চে বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হুমকির মুখে। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ঝুঁকি প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ৫টি ঝুঁকি রয়েছে, যার অন্যতম ঋণ সংকট। মুডি’স গত ৩০ মে বলেছে,২০২৩ থেকে ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে রাজস্ব আহরণের ২৫% হবে, যা ২০১৯ অর্থবছরে ছিল প্রায় ২০%। জিএম কাদের, এমপি বলেছেন, দেশের যে ঋণ হয়েছে, তা ৫০ বছরেও পরিশোধ হবে না। ব্যক্তি পর্যায়েও ঋণের পরিমাণ বিপুল! বিবিএস’র আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২ মতে, দেশের ৩৭% পরিবার ঋণগ্রস্ত। ২০২২ সাল শেষে পরিবার প্রতি গড় ঋণের পরিমাণ ৭০,৫০৬ টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৩৭,৭৪৩ টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কখনো শ্রীলঙ্কা হবে না। বাংলাদেশ এখন ইউরোপ-জাপান-চীন হবে’। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোট জিডিপি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০,০৬,৭৮২ কোটি টাকা। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১৯৭১ সালে ৬.২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালে বেড়ে হয়েছে ৪১৬.৩ বিলিয়ন ডলার। এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই জিডিপির বর্তমান আকার দ্বিগুণ হতে পারে। গত ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের ১৯১টি দেশের মধ্যে ৩৫তম। উল্লেখ্য যে, গত দুই বছর যাবত জিডিপির হিসাবায়নে ভিত্তি বছর ধরা হচ্ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরকে। উপরন্তু জিডিপি নির্ণয়ে আইটেমের সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। সর্বোপরি বিপুল বিদেশি ঋণের প্রকল্প জিডিপিতে যুক্ত হচ্ছে (এর আগে জিডিপি হিসাবায়নে ভিত্তি বছর ধরা হতো ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে)। এসব মিলে সম্প্রতি জিডিপির আকার হু-হু করে বাড়ছে। কিন্তু আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের জিডিপির হিসাব ত্রুটিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাথে মিল নেই। দ্বিতীয়ত: বর্তমানে জিডিপির আকার বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে: দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নীতি সংস্কার হয় নব্বইয়ের দশকে। তাতে অর্থনীতির ভিত্তিগুলোও হয়ে ওঠে বৈচিত্র্যপূর্ণ। কিন্তু পরবর্তীতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ, যা বর্তমানে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হয়েছে। এতে আপাতত উচ্চ প্রবৃদ্ধি মিললেও বৈচিত্র্য হারিয়ে অনেকটাই এককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি। ফলে কর্মসংস্থান তৈরি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন বা প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তাই সামনের দিনগুলোয় দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির টেকসই ধারা ধরে রাখা কঠিন। অন্যদিকে, বেসরকারি বিনিয়োগ শ্লথ হয়েছে। বিএনপির নেতারা বলেছেন, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত গত ২৫ মে বলেছেন, বিদেশি ঋণের বোঝা বাড়ছে, আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ এখন জিডিপির ৪২.১%। চার-পাঁচটি বৃহৎ প্রকল্পের ঋণের সুদ পরিশোধ শুরু হলে দেশের ঋণ পরিশোধ অবস্থা ‘লাল সংকেতবাহী’ হবে। ২০২৭-২৮ সালেই তা হতে পারে। বাংলাদেশে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত কালো টাকা ও অর্থ পাচারের পরিমাণ ১৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তন্মধ্যে অর্থ পাচারের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এদিকে, দেশে উন্নতি যেটুকু হয়েছে, তার ভাগিদার হতে পারেনি সাধারণ মানুষ। কিছু লোক দুর্নীতি করে ধনী হয়েছে। তাই আয় বৈষম্য ব্যাপকতর হয়েছে! যেমন: গিনি সহগের মান ২০২২ সালে ছিল ০.৪৯৯ (যা ছিল ১৯৭৩ সালে ০.৩৬,১৯৮৮ সালে ০.৩৭ ও ২০১০ সালে ০.৪৫৮)। গিনি সহগের মান ০.৫০০ হলে উচ্চ বৈষম্য বলা হয়। বাংলাদেশ এখন প্রায় সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে! গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-২০২২ মতে, ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম।

দেশে ঋণের পরিমাণ বিপুল হলেও ঋণ বেড়েই চলেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের দেনার পরিমাণ জিডিপির প্রায় ৪২%, যা ২০২৪ সাল শেষে ৪৫% ছাড়িয়ে যাবে। এই বিপুল ঋণ পরিশোধ হবে কীভাবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইআরডির সূত্রে খবরে প্রকাশ, ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭৮ কোটি ডলার, যা বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০২ কোটি ডলার ও ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ৫১৫ কোটি ডলার হবে (২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ১১৭ কোটি ডলার)। আইএমএফ কর জিডিপির হার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। এটা এখন শতকরা আট ভাগের নিচে রয়েছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনি¤œ। কর জিডিপির হার বৃদ্ধি করার জন্য করের আওতা বৃদ্ধি ও ভর্তুকি তুলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সেভাবেই জাতীয় বাজেট প্রণীত হয়েছে। উপরন্তু নতুন আয়কর আইন এবং বকেয়া কর আদায়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে সম্প্রতি। নতুন আয়কর আইনে চাকরি, ভাড়া, কৃষি, ব্যবসা, মূলধনি, আর্থিক পরিসম্পদ ও অন্যান্য উৎস থেকে আয়ের উপর কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, কর বকেয়া থাকলে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে কর জিডিপির হার বাড়বে। কিন্তু তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছবে না। কারণ, কর আদায়ের নেট ওয়ার্ক খুব দুর্বল। ফলে রাজস্ব আয় দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ হবে না সরকারের ব্যাপক কৃচ্ছ্রসাধনের পরও। তাই ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্যও ঋণ করতে হবে।

দেশের গলায় ঋণের কাঁটা বিঁধেছে! এ ঋণের কাঁটা সরবে কিভাবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যয় বহুল অনেক মেগা প্রকল্প গ্রহণ, কোন প্রকল্পই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়া, ব্যাপক দুর্নীতি ও বেশিরভাগ প্রকল্পের রিটার্ন ভেরি শ্লো এবং বহু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণেই এটা হয়েছে। প্রকৃত গণতন্ত্র, সুশাসন ও জবাবদিহিতা থাকলে এটা হতো না। অর্থাৎ কম গণতন্ত্র অধিক উন্নতি বর্তমান সরকারের নীতির কারণেই গণতন্ত্র কমায় গেছে, সার্বিক উন্নতিও গাতায় পড়েছে! দ্য ডিপ্লোমেটের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র অবরুদ্ধ’। তাই দেশ-বিদেশের গণতন্ত্রকামীরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক সোচ্চার হয়েছে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।