ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজধানী। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে মানুষ ছিনতাইকারী, মলম পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর অপরাধীর শিকার হচ্ছে। বাসাবাড়িতেও চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রায় ৬ হাজার ছিনতাইকারী সক্রিয় রয়েছে। গত দেড় বছরে ছিনতাইকারির হামলায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছিনতাইয়ের কবল থেকে পুলিশ সদস্যও বাদ যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে ফার্মগেটে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। কি দিন, কি রাত, সবসময় ছিনতাইকারীদের উৎপাতে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে থাকে। বিশেষ করে মহিলারা বেশি ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। তাদের মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার থেকে শুরু করে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। নগরবাসী মনে করে, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শৈথিল্য ও উদাসীনতা রয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বেকারত্ব। অর্থনৈতিক সংকট, কর্মসংস্থানের অভাব এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দিন দিন বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেকে মাদকাসক্ত এবং ছিনতাই কিংবা অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদক সকল ধরনের অপরাধের উৎস। ছিনতাইকারীদের বেশিরভাগই মাদকাসক্তিতে ভুগছে। মাদকের অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে তারা ছিনতাই কাজে জড়িয়ে পড়ছে। শুধু রাতে নয়, দিনের বেলাও তাদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভারের নিচে কিংবা সড়কের অন্ধকার জায়গায় তারা ঘাপটি মেরে থাকে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে বের হয়ে ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ে বাধা দিলে তারা ছুরিকাঘাত কিংবা গুলি করতে দ্বিধা করে না। এতে অনেকের প্রাণ যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর অনেক এলাকার মূল সড়ক ও অলিগলিতে সড়ক বাতি জ্বলে না। ছিনতাইকারীরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ছিনতাই করছে। ঐসব এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারিরাও আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করে। সড়কবাতি না জ্বলার দায় সিটি করপোরেশনের। কোন এলাকার কোথায় সড়কবাতি জ্বলে না, তা সিটি করপোরেশনকেই দেখতে হয়। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারী, চোর ও বিভিন্ন অপরাধী। দায় রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তা নাহলে, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বৃদ্ধি পেত না, মানুষও আতঙ্কে থাকত না। বহুবার বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের চেয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী গ্রেফতারে এবং দমন-পীড়নে বেশি ব্যবহারের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। সম্প্রতি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাগরিকদের নিরাপত্তায় নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে বলে বলেছেন। এটা কোনো দায়িত্বশীল কথা নয়। এ নিয়ে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, পুলিশ যদি এ কথা বলে, তাহলে ছিনতাইকারীসহ অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক।

অভাব, অনটন এবং বেকারত্ব মানুষের অপরাধপ্রবণ করে তোলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য হুমকি স্বরূপ। এখন দেখা যায়, অনেকে হতাশা থেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। পেশাদার অপরাধীর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এটা শঙ্কার বিষয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভাল করেই জানে, কোন কোন এলকায় কারা ছিনতাই ও অপরাধের সাথে জড়িত। তার কাছে নিশ্চয়ই এর ডাটা রয়েছে। পুলিশের উচিত, রাজধানীতে এখন যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তা দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া। অপরাধপ্রবণতার মূল কারণ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা। তালিকাভুক্ত যেসব ছিনতাইকারী ও অন্যান্য অপরাধী রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় টহল বৃদ্ধি করা। যেসব এলাকায় সড়কবাতি নেই, সেসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের তরফে সড়কবাতি লাগিয়ে আলোকিত করা। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের নিচে যেসব খালি জায়গা অবৈধ দখলে রয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত করা। বলা বাহুল্য, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আতঙ্ক দূর করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।