গণতন্ত্রহীনতায় দেশে দেউলিয়াত্ব ও নীরব দুর্ভিক্ষ
১১ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৩ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
চলমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বাস্তবতার সাথে দ্বিমত থাকতে পারে। এর সবকিছু আমাদের মানবিক মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও সাম্যবোধের অনুকুল নয়, তাও হলফ করেই বলা যায়। পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদের গ্যাড়াকল থেকে বিশ্বকে বের করে এনে নিজেদের সমাজতান্ত্রিক বলয়ে সামিল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে করতে শেষতক নিজেই ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য হয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। আজকের ইউক্রেন যুদ্ধ তারই ফলশ্রুতি। খৃষ্টীয় গ্রীক ও রোমান সভ্যতাত্তোর আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও দীর্ঘস্থায়ী সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল ইসলাম। খৃষ্টীয় সপ্তম শতক থেকে আরব দিগি¦জয়ীরা পুরো মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনসহ ইউরোপের বিশাল ভূ-ভাগে যে নতুন শাসনব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ তথা সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল, বিংশ শতকের শুরুতে প্রথম মহাযুদ্ধ পর্যন্ত হাজার বছর ধরে তা অটুট ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অটোমান সা¤্রাজ্যের পতন নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ইঙ্গ-মার্কিন নেতৃত্বে যে নতুন পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল এখন তারই চুড়ান্ত পরিনতি দেখা যাচ্ছে। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রাশিয়ান বিপ্লবী নেতা ভøাদিমির ইলিচ লেনিন জার্মান দার্শনিক কার্লমার্ক্সের কমিউনিজমের রাষ্ট্রদর্শনের আলোকে সোভিয়েত ইউনিয়নে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, বিংশ শতক শেষ হওয়ার আগেই তা ভেঙ্গে পড়েছিল। দশকের হিসাবে তা মাত্র ৭০ বছর টিকেছিল। নব্বইয়ের দশক শুরুর আগেই সোভিয়েত সমাজতন্ত্র ভেঙ্গে পড়ার পেছনে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নয়া বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমাদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর জাতিসমুহের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও নির্ভরশীলতার ধারাবাহিক প্রবণতা। সে হিসেবে ঔপনিবেশোত্তর পুঁজিতান্ত্রিক পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বয়েসও ৭০ বছরের বেশী নয়। এরই মধ্যে একচ্ছত্র বৈশ্বিক মূদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারসহ চলমান ইউনিপোলার বিশ্বব্যবস্থা একটি সম্ভাব্য বিকল্প অথবা সমান্তরাল বিশ্বব্যবস্থার কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পশ্চিমা নিয়ন্ত্রনাধীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ব্যবহার করে ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর অনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যুদ্ধের হুমকি ও যত্রতত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের মধ্য দিয়ে দেশে দেশে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির ধারাবাহিক ইতিহাসকে রুখে দিতে একটি স্বচ্ছ ও জনবান্ধব বিকল্প ব্যবস্থা এখনো দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ব্রিক্সের বিকল্প মূদ্রা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিশ্ব স্বাগত জানালেও চীন-রাশিয়ায় একনায়কতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামরত মানুষের জন্য কোনো ভরসার পথ দেখাতে পারছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে উত্তর কোরিয়া কিংবা মিয়ানমারের মত বিচ্ছিন্ন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তিগুলো টিকে থাকতে পারছে। জনগণের ইচ্ছা ও রায়কে অগ্রাহ্য করে একেকটি স্বৈরতান্ত্রিক রিজিমের উপর দাঁড়িয়ে কোনো টেকসই বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন যুদ্ধমান বৈশ্বিক শক্তির প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দিতার প্লেগ্রাউন্ডে পরিনত হতে চলেছে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের তাকিদ, অন্যদিকে রাশিয়া-চীনের গতানুগতিক মার্কিন বিরোধী অবস্থায় কূটনৈতিক রেষারেষির মধ্যে পড়ে গেছে বাংলাদেশের জনগণ। স্বাধীনতাযুদ্ধের কমিটমেন্ট, জনগনের চিরন্তন প্রত্যাশার মূল স্পিরিটের সাথে রয়েছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, সামাজিক সাম্য এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্খা। এ হিসেবে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ দেশের জনগণের তীব্র আবেগ ও দৃঢ় প্রত্যাশার সাথে পশ্চিমাদের প্রত্যাশা ও কমিটমেন্ট একসুত্রে গাঁথা হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্পিরিটকে সামনে রেখে স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ে তিন বছরের মাথায় একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পদার্পণ। আশির দশকে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে নব্বই দশকের শুরুতে গণতন্ত্রের পুর্নযাত্রা টিকিয়ে রাখতে যে রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি টেকসই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কথা ছিল ক্ষমতাসীনরা সে দিকে নজর না দিয়ে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া ও যে কোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকার ধারাবাহিক প্রয়াসের মধ্য দিয়ে দেশকে আজ দুই পরাশক্তির রাজনৈতিক বলয়ের ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিনত করেছে। বাংলাদেশকে ঘিরে দুই পরাশক্তি বলয়ের বিপরীতমুখী অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ সক্রিয় রয়েছে। এ কথা মানতেই হবে, ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ ছাড়া জাগতিক লেনদেনের সম্পর্ক প্রায় অচল। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশে টেকসই অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক লেনদেনের স্বার্থ জড়িত আছে। বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়, গার্মেন্ট, ওষুধ ও হিমায়িত খাদ্যপণ্য রফতানি তথা রফতানি বাণিজ্যের প্রধান বাজার পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে ভারত-চীন ও রাশিয়া আমাদের সম্ভাবনাময় অর্থনীতিকে ভেতর থেকে ফোঁকলা করে দেয়ার নেপথ্য কুশীলব হয়ে উঠেছে। এটা ঘটছে উন্নয়ন কর্মকান্ডের দরপত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব ও অস্বাভাবিক অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের মধ্য দিয়ে, অন্যদিকে দেশে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ক্ষমতাসীনদের দলীয়করণের কারণে গণতন্ত্র, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন না থাকায় জালিয়াতি, লুটপাটে নিয়োজিতরা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়ে দেশের অর্থর্নীতিকে ফোঁকলা ও দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থব্যয় করে সবেচেয় নি¤œ মানের অবকাঠামো নির্মিত হয় বাংলাদেশে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহাসড়ক নির্মাণে বাংলাদেশ ভারত ও চীনের চেয়ে অন্তত ৫গুণ বেশি অর্থ খরচ হয়। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকেও তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় অনেক বেশি। অথচ বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি এবং আনুসঙ্গিক খরচাপাতি সে সব দেশের চেয়ে অনেক কম। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে গরুর গোশত, ডিম ও দুধের মত পণ্যের মূল্য অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি। এ অবস্থার উত্তরণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প পথ নেই।
নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। চাল-ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, পেঁয়াজ, আদা-রসুন থেকে শুরু করে কাঁচামরিচ পর্যন্ত মূল্য তালিকায় রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর মানে হচ্ছে, দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা এখন তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। কোনো কিছুর উপরই সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ জনগণের যেন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সবই যেন লুটেরা-ব্যবসায়ীদের দখলে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে নাকি সংকট দেখা দেবে! দেশে পণ্যের বাজারের উপর সিন্ডিকেটেড নিয়ন্ত্রণ এক প্রকার হাইপার এক্টিভিজমের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন, ক্রমবর্ধমান বাম্পার ধান উৎপাদনের মধ্য দিয়ে সরকার দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করে তোলার কৃতিত্ব জাহির করলেও ধানের ভরা মওসুমেও ভারত থেকে চাল আমদানির সুযোগ দিয়ে বাজারে তার প্রভাব সৃষ্টির মধ্য দিয়ে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করা হয়। রাইসমিল মালিকদের সিন্ডিকেট কৃষকদের জিম্মি করে উৎপাদন খরচেরও কম দামে ধান কিনে সারাবছর উচ্চমূল্যে চাল বিক্রি করে সাধারণ দরিদ্র ভোক্তাদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলছে। দেশে যে পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়, তা দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি হলেও সারা বছর ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ অবারিত রাখা হয়। উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় কৃষক আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে পণ্য পাঠিয়ে ভারতীয় কৃষকরা লাভবান হলেও বাংলাদেশি কৃষকদের এক অসম প্রতিযোগিতার মুখে ঠেলে দেয়া। বাংলাদেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি না থাকলেও স্থল বন্দরে ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানি স্থগিত বা বন্ধের সংবাদ প্রচার করে রাতারাতি প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা থেকে শত টাকা পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির কারসাজি করতে দেখা গেছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশ একই জলবায়ু প্রভাবাধীন। সম্প্রতি কাঁচামরিচের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে তেলেসমাতি কান্ড ঘটেছে, তার সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নানা রকম কথাবার্তা বলেছেন। খরা ও অতিবৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের উৎপাদন ব্যহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে কয়েকদিনের মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম ৮০০-১০০০ টাকায় উঠে যাওয়ার নজিরবিহিন তুলকালামের পর ভারত থেকে শুল্কসহ ৩২টাকা কেজিদরে হাজার হাজার টন কাঁচামরিচ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। ভারতের স্থানীয় বাজারে কাঁচা মরিচের দাম ২০ টাকা কেজির বেশি ছিল না। হাজার হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির পরও দেশের বাজারে এখনো খুচরা ৩০০-৩৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ এখনো আমদানি মূল্যের ১০গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা পেঁয়াজ বা আদার মত কাঁচামরিচ কোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নয়। ভোক্তা অধিকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হলেও সিন্ডিকেটেড কারসাজির মাধ্যমে ১০গুণ মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করা পচনশীল পণ্য সাধারণ ভোক্তারা বর্জন করার ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সিন্ডিকেট ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সত্তুরের দশকে মার্কিন কূটনীতিক ও সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে (বটমলেস বাস্কেট) তলাবিহিন ঝুড়ি আখ্যা দিয়েছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে বেশ উন্নতি করছে, তখন আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কিসিঞ্জারের সেই উক্তিকে তিরস্কারের সুরে সমালোচনা করেছেন। এ দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধা, গার্মেন্ট খাতের বিনিয়োগকারি ও শিল্পোদ্যোক্তারা কিসিঞ্জারের ভবিষ্যদ্বানী ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হলেও দুর্নীতিবাজ আমলা ও লুটেরা রাজনৈতিক-ব্যবসায়ী নেতারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দিয়ে দেশকে আবারো প্রকারান্তরে তলাবিহিন ঝুঁড়িতে পরিনত করেছে। দুই বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা বলা হলেও এখন তা ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে দেশের বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এখন তেল-গ্যাস ও কয়লা কেনার বিল পরিশোধের সামর্থ্য না থাকায় কয়েক ডজন বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ রেখে দেশের জনগণকে লোডশেডিং পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুৎখাতে লুটপাটের রাস্তা খোলা রাখতে এ খাতের উন্নয়ন ও চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে দেশের মানুষকে অন্ধকারে রাখতে প্রথমেই দায়মুক্তির আইন করা হয়েছে। এখন কয়েক ডজন রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে। ভারতীয় কোম্পানি আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ চুক্তি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রের সবচেয়ে বড় স্ক্যান্ডালের উদাহরণ। পর্যাপ্ত রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যপতন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে পণ্যমূল্য বেড়ে চলেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকটের কারণে শিল্পোৎপাদন ব্যহত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় তাদের আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ায় দেশে একটি নিরব দুর্ভীক্ষাবস্থা দেখা দিতে শুরু করেছে। জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আবারো হেনরি কিসিঞ্জারের সেই বিখ্যাত উক্তির কথা প্রাসঙ্গিক বলে মনে হচ্ছে, তিনি বলেছিলেন, ‘ হু কন্ট্রোল দ্য ফুড সাপ্লাই কন্ট্রোলস দ্য পিপল; হু কন্ট্রোলস দি এনার্জি ক্যান কন্ট্রোল হোল কন্টিনেন্টস; হু কন্ট্রোলস মানি ক্যান কন্ট্রোল দ্য ওয়ার্ল্ড’। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার উপর দেশের সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাভাবে জ্বালানি কেনা যাচ্ছে না। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমাদের হাতে। জননিরাপত্তা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো জনপ্রত্যাশার অনুকুলে টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে দেশ এক অনিবার্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ ও নিরাপত্তা ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও দলের স্বার্থের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে দেশের সামগ্রিক ইতিহাসের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার আলোকে তারা এবার গণতন্ত্রের টেকসই উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হলে জাতি চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক