সউদী প্রবাসি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রসঙ্গে
১১ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৩ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সংকট মূলত নাগরিকত্বের সংকট। রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে আরাকান বা রাখাইনে বসবাস করলেও বৃটিশ ঔপনিবেশোত্তরকালে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র শুরু হয়। অবশেষে মিয়ানমারের জান্তা সরকার আশির দশকে নতুন নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে জাতিগত সংখ্যালঘুর তালিকা থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে দেয় এবং রোহিঙ্গা সংকটের জন্ম দেয়া হয়। মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বৈষম্যের শিকার হতে শুরু করলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তারা প্রথমে ষাটের দশকে বাংলাদেশের কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করে। সেই সাথে ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং সউদি আরবেও পাড়ি জমায়। গত দশকে রাখাইনে সামরিক জান্তার রোহিঙ্গা এথনিক ক্লিনজিং বা গণহত্যার প্রেক্ষাপটে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। বাংলাদেশের বাইরে সউদী আরবে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এদের অনেকেই অবৈধভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে গেছে। অনেক রোহিঙ্গা পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সউদি আরব গিয়ে বংশানুক্রমে সে দেশে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সউদী প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা সেখানকার নতুন আইন অনুসারে বৈধতার সংকট ও জটিলতার সম্মুখীন হয়। লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি হাজার হাজার রোহিঙ্গা নাগরিকও বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অথবা অবৈধভাবে সউদি আরবে গিয়ে পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বৈধতার সংকটে পড়ে। এদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পর্যালোচনা সাপেক্ষে নাগরিকত্বের অমিমাংসিত ইস্যুকে পাস কাটিয়ে এবার সউদি প্রবাসি হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছে বলে গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সউদী আরবে বসবাসরত অবৈধ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের প্রশ্নে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে। সউদি আরব ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিককে পাসপোর্ট দেয়া হতে পারে বলে জানা যায়। যে ধরণের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চাপ ও মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল, ঠিক একইভাবে সউদী সরকারের চাপে অবৈধ পন্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের জন্য বিশেষ পাসপোর্ট(এমআরপি) ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এ উপলক্ষে গত বছর নভেম্বরে সউদী আরবের সাথে সম্মতিপত্রে সই করেছিল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে চলমান কার্যক্রমের গোপনীয়তা এবং এখনো অনিশ্চয়তা ও অস্বচ্ছতার প্রসঙ্গটিও প্রকাশিত রিপোর্টে উঠে এসেছে। কাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেয়া হবে, তার তালিকা সউদী আরব এখনো দেয়নি। সম্ভাব্য পাসপোর্ট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাদের জাতীয়তার প্রশ্নটি এখনো অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আরো পর্যালোচনাসহ সবদিক বিচার-বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
একটি অনিবার্য মানবিক বিপর্যয়ের মুখে আশ্রয় গ্রহণকারী দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিকের বোঝা বহন করা বাংলাদেশের জন দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে অনেক রোহিঙ্গার বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণের পেছনে দেশের একটি সংঘবদ্ধ দুষ্টচক্র জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যেভাবেই হোক সউদী আরবে বসবাস ও কর্মরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখলে তাকে নিরুৎসাহিত করার কোনো কারণ থাকতে পারেনা। তবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবর্তন ও প্রত্যাবাসনসহ তাদের নাগরিকত্বের স্থায়ী সমাধানের ইস্যুটিকে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। সউদী প্রবাসি রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বিশেষ বাংলাদেশী পাসপোর্ট বা পরিচয়পত্র ইস্যুর বিষয়টি যেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মূল ইস্যুটিকে কোনোভাবে দুর্বল বা প্রশ্নবিদ্ধ না করে, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশেষ ভূমিকার পাশাপাশি সউদী আরব ও চীনের ভূমিকা সবচেয়ে ফলপ্রসু হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সউদী আরব ও বাংলাদেশের যৌথ তৎপরতা ছাড়াও সম্ভাব্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অংশগ্রহণ ও মতামত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যায় না। সাময়িক ও মানবিক বিবেচনায় সউদী প্রবাসি রোহিঙ্গাদের বিশেষ বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইস্যুর বিষয়টি যেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক