শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কাক্সিক্ষত নজির
১৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধিদলগুলো আনুষ্ঠানিক একদফা ঘোষণা উপলক্ষে যুগপৎ সমাবেশ ডেকেছিল গত বুধবার। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির সমাবেশটি ছিল স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ। এই সমাবেশের পাল্টা হিসেবে সরকারী দল আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়ায় ঢাকায় একটি সাংঘর্ষিক-উত্তপ্ত পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরত্বে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুইটি বড় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন ও নাগরিক সমাজে একটি আপাত: স্বস্তির আবহ তৈরী হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের একদফার পাল্টা আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশ থেকে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের একদফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে দুই শিবির সম্পুর্ণ বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করলেও সাম্প্রতিক অতীতের মত রাজপথে কোনো সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। একই দিনে দুই পক্ষের সমাবেশ করতে ডিএমপি একই ধরনের শর্ত দিলেও বিরোধিদলের সমাবেশের উপর পুলিশের উস্কানিমূলক আচরণ দেখা যায়নি। গত দেড় দশক ধরে বিরোধিদলের যে কোনো সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধার পাশাপাশি পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলো গণপরিবহন বন্ধ করে এক ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিল। দুই শিবির এক চরম উত্তেজনাকর বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও এবার তা দেখা যায়নি। রাজনীতিতে এ ধরণের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত থাকা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য।
এক-এগারো সরকারের সময় থেকে চলমান সময় পর্যন্ত বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা বাদ দিলে অতীতেও ঢাকায় পাশাপাশি অবস্থানে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলসমুহের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনেক নজির আছে। গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মত গণতান্ত্রিক অনুসঙ্গগুলো যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, অতীতে আর কখনো এমনটা হয়নি। এহেন বাস্তবতায় নির্বাচনের আগে বিদেশী উন্নয়ন সহযোগিরা দেশের নির্বাচন ও রাজনীতির উপর প্রভাব সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে। রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নিশ্চয়তা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী পরিবেশের অন্যতম পূর্বশর্ত। দেশের সাধারণ মানুষ একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ দেখতে চায়। একইভাবে পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগীরাও রাজনৈতিক সমঝোতা ও সরকারের প্রভাবমুক্ত জাতীয় নির্বাচনের জনআকাঙ্খাকে সমর্থন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা জানিয়েছে, তারা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন না দিয়ে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার লক্ষ্যও নির্বাচনে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অনুকুল ভূমিকা নিশ্চিত করা।
দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশে সম্পুর্ণ বিপরীতমুখী বার্তা ও আল্টিমেটাম পাওয়া গেলেও দীর্ঘদিন পর একই সময়ে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ সমাবেশের দৃষ্টান্ত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই পক্ষের বিপরীতমুখী অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গণ্য। অর্থনৈতিকভাবেও বাংলাদেশ পশ্চিমাদের দ্বারা প্রভাবিত পুঁজিবাদী মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করছে। আমাদের উন্নয়ন অংশীদারিত্ব, বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পশ্চিমা পরাশক্তি ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা রয়েছে। জনগণের প্রত্যাশিত গণতন্ত্র ও অবাধ নির্বাচন কোনো পরাশক্তির স্বার্থকে ক্ষুন্ন করেনা। এ ক্ষেত্রে পরাশক্তি সমুহের কূটনৈতিক রশি টানাটানির কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক-রাজনৈতিক সাম্য ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্খা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কমিটমেন্ট ও সাংবিধানিক অঙ্গিকার। নির্বাচনকালীন সরকারের ইস্যুতে অতীতের রাজনৈতিক মতৈক্য অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। কোনো বিদেশি শক্তির চাপে নয়, জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার খাতিরেই সরকারের প্রভাবমুক্ত, সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধী দলকে একটি সমঝোতায় আসতে হবে। বিপরীতমুখী অবস্থান ও ঘোষণা নিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অনেকগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে একটি ইতিবাচক বার্তা পাওয়া গেছে। সামনের দিনগুলোতে দুই পক্ষের দূরত্ব কমিয়ে আনতে চাইলে জনআকাঙ্খা ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক বাস্তবতা মূল্যায়ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমুহের নিরপেক্ষ ভূমিকার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সব পক্ষের সমঝোতা ও শুভ বুদ্ধির উদয় হলে দেশে একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন এবং জাতীয় রাজনীতির কুশীলবরা বুধবারের সমাবেশের মধ্য দিয়ে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। আমরা তাদের সবাইকে সাধুবাদ জানাই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক