বেশি করে গাছ লাগাতে হবে
১৪ জুলাই ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
বাংলাদেশের গ্রাম ও শহরের পরিবেশের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য সকলেরই জানা আছে। তারপর দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে যাচ্ছে। সুজলা-সুফলা, শস্যা-শ্যামলা, লতা-পাতা ও গাছ-গাছড়ায় অপরূপ সুন্দর সাজে আমাদের এই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য আজ রূপকথার গল্পের মতো মনে হয়। এ দেশের প্রতিটি গ্রাম ছিল সবুজে ঘেরা, ছিল বটবৃক্ষ, হিজল, শিমুল, তমাল, মৌ, কৃষ্ণচুড়া, ছিল সারি সারি তাল, নারিকেল ও খেজুর গাছ, বাঁশের ঝাড় এবং বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ-গাছড়া ও লতাপাতা। গ্রাম-বাংলার গাছে গাছে, বনে জঙ্গলে বাস করত বিভিন্ন প্রজাতির বন্য পশুপাখি। এরাও পরিবেশের অঙ্গ। কয়েক দশক আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে কতোটা ব্যবধান তা ভাবতেও কষ্ট হয়। বিদেশি পর্যটকগণ এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং তারা গ্রামবাংলাকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ দান বলে বর্ণনা করেছেন। অথচ, এ দেশের গ্রাম-গঞ্জ, শহর আজ বৃক্ষহীন, সবুজহীন মরুভূমির মতো মলিন।
আমাদের পরিবেশ প্রতিনিয়তই শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, পানিদূষণে দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয় এবং এইদিনে কর্তৃপক্ষ সুন্দর সুন্দর স্লোগান বের করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তা যথাযথ প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন হয় না বলেই আজ এ দেশের পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। এ জন্য শুধু সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা যাবে না। পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সেভাবে কাজ করতে হবে।
শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ রোধে সবাইকে বিশেষ করে গাড়ির মালিকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন, গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে এবং গাড়ির কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়া বন্ধ করতে হবে জরুরিভাবে। পুরাতন টেম্পু, বেবি টেক্সী, মিনি বাস, ট্রাক এবং প্রাইভেট কারগুলো সঠিকভাবে মেরামত ও ভালো পার্টস না লাগানোর জন্য অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত করে এবং বিকট শব্দ করে চলে। এতে যাত্রীদের যে কী পরিমাণ কষ্ট সহ্য করতে হয়, তা বলে বুঝানো যাবে না। সভা, সম্মিলন ও বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তির জন্য মাইকিং করা হয়, বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও চায়ের দোকানেও খুব জোরে শব্দ করে মাইক, ক্যাসেট প্লেয়ার ও স্পিকারসেট ও সাউন্ডক্স বাজানো হয়। এতে হয়তো কিছুক্ষণ কিছুসংখ্যক লোক আনন্দিত হচ্ছে কিন্তু তাদের অসচেতনতার কারণে অন্য আরেকজনের যে কতো বড় ক্ষতি হচ্ছে, তা তারা চিন্তা করেন না, রোগী ও শিশুদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হয়। এসব কারণে দিনের পর দিন আমাদের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা, মল-মুত্র ত্যাগ করা, কৃষি খামারে নি¤œমানের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগে এবং মিল কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য, যখন- তখন আগুন জ্বালিয়ে কোনো কিছু পোড়ানোর ফলে বাতাস ও পানি অহরহ দূষিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যদি সচেতন হতো তা হলে এভাবে পরিবেশ দূষিত হতো না।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর আছে। এসবের পানি দিন দিন দূষিত হচ্ছে জনগণের সচেতনতার অভাবে। বর্তমানে কর্তৃপক্ষ কিছুটা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা এখনো ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি। কারণ, গণমাধ্যমে যে পরিমাণ প্রচার হওয়া দরকার সে পরিমাণ হয় না। জনগণকে অনুকূল পরিবেশের সুবিধা বোঝাতে হবে এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ গঠনের জন্য প্রথমত জনগণকে শিক্ষিত করতে হবে এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য শিক্ষার উপকরণ সহজলভ্য করা দরকার। দ্বিতীয়ত, দারিদ্র্য দূর করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প হাতে নিতে হবে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এবং এর সাথে নি¤œ আয়ের লোকজনের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, কর্তৃপক্ষকে প্রত্যক্ষ পরিদর্শনের মাধ্যমে কল-কারখানা স্থাপনের অনুমতি দিতে হবে। চতুর্থত জ্বালানির জন্য মূল্যবান গাছপালা না কেটে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত করতে হবে।
অশিক্ষা ও কুসংস্কার অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে খাদ্য সমস্যা, বেকার সমস্যা ও দারিদ্র্যের সৃষ্টি। এ দারিদ্র্য থেকে আবাসন সমস্যা এবং এই আবাসন সমস্যা থেকে বস্তি সমস্যা। এ বস্তিই হচ্ছে বিভিন্ন অপকর্মের আস্তানা। বস্তি সমস্যা ও কল-কারখানার ধোঁয়া-বর্জ্য থেকে বায়ু ও পানি দূষিত হয়, যা সর্বস্তরের জনগণের এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ।
বাংলাদেশের মৌসুমী জলবায়ু ও ষড়ঋতুর দেশ, প্রতিটি ঋতুতেই কমবেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু কয়েক বছর থেকে দেখা যায়, বর্ষাঋতুতে প্রচুর বৃষ্টি হয় না, সে বৃষ্টি হয় শরৎ ঋতুতে অথবা অন্য সময়ে। দেশে প্রচুর পরিমাণ গাছপালা না থাকার কারণে অনাবৃষ্টি ও অসময়ে বৃষ্টি হয় এবং এই বৃষ্টির পানি থেকে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন, খরা, অনাবৃষ্টি ও ভূমিকম্প প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আপন ইচ্ছায় যখন তখন হয়ে থাকে। এগুলো হওয়ার প্রধান ও প্রথম কারণই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে আবহাওয়া ও জলবায়ুর মিল না হওয়ার জন্য অর্থাৎ ব্যাপক তারতম্যের জন্য। আর দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে: পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছ না থাকার কারণে। আবার যে পরিমাণ গাছ আছে সেগুলোও অবৈধভাবে কেটে পরিবেশকে হালকা করা হচ্ছে। গাছ না থাকার জন্য ভূমির ব্যাপক ক্ষয় হয়, যেমন-বাতাসে ধুলার পরিমাণ বাড়ে, বৃষ্টির পানির সাথে মাটি ধুয়ে নদী-নালা, খাল-বিল, সাগর-সমুদ্রর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে নদী তার নাব্য হারিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। গাছ না থাকায় জলবায়ুতে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দু‘মেরুর জমাট বরফগুলো গলে নদ-নদী ও সমুদ্রের পানির পরিমাণ বাড়ছে। এতে বাংলাদেশের মতো নিচু দেশগুলোর জন্য ভয়ঙ্কর সমস্যার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এসব বিপদজনক সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য পরিবেশকে সুস্থ, সুন্দর ও অনুকূল করতে হবে। এ জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে।
ফুলকে সবাই ভালবাসে, ফুল সুন্দরের প্রতীক এবং ফুল অর্থনৈতিক উন্নতির চাবিও বটে। ফুল মানুষের শরীর ও মন দুটোই প্রফুল্ল করে একসময়। এ দেশে কতো জানা-অজানা নামের ফুল ফুটতো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ বর্তমানে সব ধরনের ফুল চোখে পড়ে না। আগের মতো গ্রামের বাড়ির সামনে ফুল বাগান দেখা যায় না। পথের দু’ধারে আর বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে না। ফুলের মতো কাঠের ও ফুলের গাছও অর্থের সংস্থান করে দেয়। তারপরও আমরা গাছ না লাগিয়ে দেশটাকে মরুভূমির দিকে ঠেলে দিচ্ছি। সরকার প্রতি বছর বৃক্ষ রোপণ সপ্তাহ পালন করে কয়েক বছর হলো জুন-জুলাই মানে বৃক্ষের চারা বিনামূল্যে ও সহজমূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন। গাছ লাগানোর জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রচার মাধ্যমগুলো বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করে। তারপরও আমাদের বোধোদয় হচ্ছে না। ভাওয়াল ও মেহগনির বাগানের মূল্যবান গাছ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও সিলেট সুন্দরবনের বহু মূল্যবান গাছ, বন্যপ্রাণী (যা আমাদের জাতীয় সম্পদ) অর্থলোভী এক শ্রেণীর মানুষ দিনের পর দিন অবৈধভাবে পাচার করছে। এদের প্রতিরোধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষসহ সকল শ্রেণীর জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশকে আগের মতো সবুজ-শ্যামল ও সুন্দর করার জন্য দেশের প্রতিটি এলাকায় খালি ও পতিত জায়গায়, রাস্তার পাশে, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, মাদরাসা-মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অনাবাদী জমিতে যত বেশি সম্ভব বড় আকারের গাছের চরা রোপণ করে তা পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বড় করে তুলতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী