আবহাওয়ার বিপর্যয় ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১৪ জুলাই ২০২৩, ০৭:৩৬ পিএম | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সময়-অসময়ে ঝড়-ঝঞ্ঝা, অনাবৃষ্টি, বন্যা, খরা, অস্বাভাবিক গরম ও শীত দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ এবং উপমহাদেশের দেশগুলো এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও জাপানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীর অনেক সড়ক ডুবে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ফ্লোরিডা, স্পেন এবং চীনে তীব্র তাপদাহ চলছে। বিশ্বের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপদাহ সৃষ্টি হচ্ছে। দাবানলে কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়তে থাকবে। তারা বলেছেন, অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি আবহাওয়াকে বিরূপ করে তুলছে।
প্রতিবছরই বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হচ্ছে। কোথাও ভয়াবহ বন্যা, আবার কোথাও তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খরা দেখা দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এর কারণ হিসেবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা বলছেন। উত্তর মেরুর বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশে বন্যা দেখা দিচ্ছে। বিশ্বে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ইতোমধ্যে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর উন্নত বিশ্বের দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয় নিয়ে সম্মেলন করলেও প্রতিকারের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশবিদরা বরাবরই জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে আসছে। কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে দেশগুলো তেমন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। কেবল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন দেশকে আর্থিক সহযোগিতা করা ছাড়া নিজেরা তেমন কিছু করছে না। আমাদের দেশেও বিগত কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ার বিরূপ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিবছরই দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চল বন্যাকবলিত হচ্ছে। এবারও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। এছাড়া নদ-নদীর ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে ফসলি জমি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদ-নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ অঞ্চলের প্রায় ৫০ ভাগ কৃষিজমি লবণাক্ততার শিকার হয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা কম-বেশি আঘাত হানে। এছাড়া, গ্রীষ্মের তীব্রতাপদাহ প্রতিবছর দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জলবায়ুর এই বিরূপ পরিবর্তনে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তার দৃশ্যমাণ উদ্যোগ খুব কম দেখা যায়। বরং পাহাড়, বনসহ পরিবেশ ধ্বংসের সব ধরনের অপকর্ম লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। অথচ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে খরা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলেও তারা খাদ্যসংকটে পড়ছে না। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো এ সংকটের মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘ আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আগামী কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট তীব্র হয়ে উঠতে পারে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বললেও, প্রতি বছরই চাল, ডাল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকি। দেশের প্রধান ফসল ধান উৎপাদনকারী হাওর অঞ্চল প্রায়ই বন্যাকবলিত হয়ে ডুবে যায়। এতে খাদ্যের বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়। বিশ্বে খাদ্যমূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যে ডলার সংকট এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, আমদানি কমিয়ে দিতে হয়েছে। রিজার্ভও বিগত বছরগুলোর চেয়ে সর্বনি¤œ অবস্থায় এসে ঠেকেছে। নিত্যপণ্যের দাম বহুদিন ধরেই আকাশছোঁয়া। ডলার সংকটের কারণে খাদ্য আমদানিও হ্রাস পাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেসব দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা হবে, সেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পেলে অর্থ দিয়েও তা পাওয়া যাবে না। তারা নিজের চাহিদা মেটাতে খাদ্য রফতানি বন্ধ করে দিতে পারে। এ প্রেক্ষিতে, জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক