সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি?

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

১৫ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

সড়কে প্রাণহানি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনকার নিত্য নৈমিত্তিক খবরের সাথে গণমাধ্যমের একটি রুটিন খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে অহরহ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার খবর। কিন্তু এসব দুর্ঘটনা রোধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা কারও জানা নেই। ফলে দুর্ঘটনা আরও বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বিগত আট বছরের মধ্যে বিদায়ি ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার বিভিন্ন সংবাদ থেকে গৃহীত তথ্যে বলা হয়, ২০২২ সালে ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৯৫১ জন নিহত ও ১২,৩৫৬ জন আহত হয়েছে। এছাড়া একই সময়ে রেলপথে ৬০৬ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫৫০ জন। আহত হয়েছে ২০১ জন। নৌপথে ২৬২ দুর্ঘটনায় ৩৫৭ জন নিহত, ৩৫৭ জন আহত এবং ৭৪৩ জন নিখোঁজ হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে বিদায়ি বছরে ৭৬১৭টি দুর্ঘটনায় ১০,৮৫৮ জন নিহত এবং ১২,৮৭৫ জন আহত হয়েছে। সড়কে সংঘটিত এসব দুর্ঘটনার ৫২.৫৫ শতাংশই পথচারীকে চাপা দেওয়া, ২১.৬১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.৭৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এবং ৮.৬৩ শতাংশ অন্যান্য কারণে ঘটেছে। এছাড়া সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত গাড়ির মধ্যে ১৩.৯৫ শতাংশ বাস; ২৪.৫০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি; ৬.৯৫ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস; ৬.২২ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা; ২৮.৫৯ শতাংশ মোটরসাইকেল; ১১.৪২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক; ৮.৩২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এই পরিসংখ্যান থেকে এটা নিশ্চিত যে, সড়কে সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল ৪ চাকার যানবাহনের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এর বেশ কিছু কারণ আছে বলে মনে করা হয়। যেমন, দেশের মোটরসাইকেলচালকদের একটি বড় অংশ কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবক, সড়ক বা মহাসড়কে উঠলেই বা একটু ফাঁকা সড়ক পেলেই মোটরসাইকেলের গতি সর্বোচ্চ উঠানোর জন্য যাদের শরীরের রক্ত টগবগ করে। কোনরকম ব্যস্ততা না থাকার সত্ত্বেও তারা তাদের কারিশমা জাহির করার জন্য কখনো হেলেদুলে, কখনো বেপরোয়া গতিতে বীরদর্পে অন্যান্য পরিবহনকে অতিক্রম করে চলে যায়। এসব বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, দেশে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমূহ বিপদ জেনেও জনগণ মোটরসাইকেলের দিকে ঝুঁকছে। এর অবশ্য বেশ কিছু কারণ আছে। যেমন, দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে। মোটরসাইকেল ছোট যান হওয়ায় ট্রাফিক জ্যামের মধ্যেও ফাঁক ফোঁকর দিয়ে জ্যামকে টপকে যাওয়া যায়। এছাড়াও দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় শো-ডাউন, মিছিল, সমাবেশসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য মোটসাইকেল সংস্কৃতি চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও এই মোটরসাইকেল ব্যবহারের সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিশোর বা উঠতি বয়সের যুবকের মোটরসাইকেল ব্যবহারে নিজেদের সামাজিক স্ট্যাটাসকে বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করে। গ্রামে অনেকের ক্ষেত্রে এমনও দেখেছি, সংসারে অভাবের তাড়নায় ঠিকমত ঘরের ছাওনি নেই, অথচ বাড়ির ছেলের নামীদামী কোম্পানির উচ্চ কনফিগারেশনের মোটরসাইকেল ও স্মার্ট ফোন আছে। ছেলে মোটরসাইকেলের তেলের টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাবা-মায়ের প্রতি চড়াও হচ্ছে। বেছে নিচ্ছে চুরি, ছিনতাই, মাস্তানিসহ নানাধরনের খারাপ পথ। নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গ্রামের অলিগলিতে এধরনের দুর্ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সেগুলোর বেশিরভাগই গণমাধ্যমে আসে না। তবে আহতের চেয়ে নিহতের সংবাদই গণমাধ্যমে বেশি ফলাও করে প্রকাশিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় সামান্য বা গুরুত্বর আহত ঘটনা বেশিরভাগই চাপা রয়ে যায়। সে কারণে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও প্রকৃত তথ্যের চেয়ে অনেক কম তথ্য সংযোজিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। তবে প্রতিনিয়ত এধরনের দুর্ঘটনা এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, চলতি বছরের দুর্ঘটনা বিগত সব বছরের পরিসংখ্যানকে পেছনে ফেলে যাবে।

আমি একটু অবাকই হই যখন দেখি একই সড়কে (আমাদের দেশে যাকে মহাসড়ক বলি) একসাথে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা, লেগুনা, অটোভ্যানের পাশাপাশি দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত বিভিন্ন যানবাহন যেমন নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ নানা রকমের অনিরাপদ যানবাহন ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করে। যদিও এসব সড়ককে মহাসড়ক বলার পক্ষপাতি আমি না। কেননা, মহাসড়কের কোনরূপ ক্রাইটেরিয়া এসব কথিত মহাসড়ক ফুলফিল করে কিনা আমার জানা নেই। একটি মহাসড়ক হতে হবে নির্দিষ্ট লেনে বিভক্ত, যেসকল লেনের প্রত্যেকটিতে নির্দিষ্ট গতিসীমা থাকবে। যানবাহন সেসব গতিসীমা মানতে বাধ্য থাকবে। গতিসীমা লঙ্ঘনকারী অপরাধের ধরনের উপর তাৎক্ষণিক ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমলে নিয়ে জরিমানা বা প্রয়োজনে কঠিন শাস্তির বিধান থাকবে। মহাসড়কে চার চাকা ব্যতীত অন্য কোনরূপ যানবাহন প্রবেশের বিধান থাকবে না। মহাসড়কে চলাচলকারী সকল পরিবহনকে সার্বক্ষণিক গতিবিধি মনিটরিং করার জন্য নিযুক্ত থাকবে ক্যামেরা, স্পিডোমিটার, সেন্সরসহ আরও নানা ধরনের উন্নত ও অ্যাডভ্যান্সড ডিভাইস। মহসড়কে অবশ্যই জরুরি লেন থাকবে। যেখানে অ্যাম্বুলেন্সসহ অধিকতর ব্যস্ত পরিবহন দ্রুত গতিতে চলাচল করতে পারবে। মহাসড়কে প্রবেশে কিংবা বের হওয়ার জন্য নির্ধারিত টোলপ্লাজাগুলো থাকবে স্বয়ংক্রিয়। যেখানে যানবাহন কোনরকম থামার প্রয়োজন হবে না। টোলঘরে আসার বহুদূর থেকে পরিবহনসমূহের নাম্বার যাচাই করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেখানে টোল প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। হ্যাঁ, যেসব ইন্ডিকেটরের কথা এখানে উল্লেখ করলাম তার চেয়েও বহু বেশি ইন্ডিকেটর উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত দেশসমূহের মহাসড়কে আছে।

জোর গলায় বলা যায়, এসব কোনো ইন্ডিকেটর আমাদের দেশের মহাসড়কে নেই। এই আধুনিক যুগে এসেও আমাদের দেশে এখনো সেই মান্ধাতার আমলের চালুকরা পদ্ধতির মাধ্যমে টোল আদায়ের ব্যবস্থা আছে, যেখানে অহেতুক সময়ক্ষেপণ হয়। সে সময় পুষিয়ে নেওয়ার জন্য চালকেরা বেপরোয়া গতি বেছে নেয়। এখানে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে রাখি। কিছুদিন আগে অফিসিয়াল একটা জরুরি কাজে খুলনা গিয়েছিলাম। যাত্রাপথের শুরুই হল ট্র্যাফিক জ্যাম দিয়ে। এই জ্যাম আবার ফ্লাইওভারে ওঠার প্রবেশ মুখেই। সার্বিক অবস্থা ভেবে একটু অবাকই হলাম। ফ্লাইওভার মানুষ ব্যবহার করে তুলনামূলক দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেখানেই এত জ্যাম। পরে দেখলাম এই জ্যামের মূলবিন্দু টোল প্লাজায়। টোল দেওয়ার জায়গা থেকে ফ্লাইওভারে প্রবেশের প্রায় মাইল দেড়েক জায়গা জুড়ে এই দীর্ঘ যানজট, যে যানজটের কারণে পুরো ফ্লাইওভারের পরিবহনসহ ফ্লাইওভারের প্রবেশদ্বারের অনেক রাস্তা থমকে আছে। এই যানজট নিরসনে সকলে নির্বিকার। খুলনা থেকে ফেরার পথে দেখলাম, পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার প্রায় ২ কি.মি. জায়গা জুড়ে বিশালাকৃতির জ্যাম। রাত তখন দেড়টা বাজে। পরিবহন, মিনিবাস, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্সসহ সকল প্রকারের যানবাহন ঠাই দাঁড়িয়ে। জ্যামের কারণ একই। মান্ধাতার আমলের টোল নেওয়ার ব্যবস্থা। এভাবে অহেতুক কালক্ষেপণ সড়কে দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। কেননা, চালকেরা সর্বদা এই সময়কে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পরবর্তীতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ঘটে অহরহ দুর্ঘটনা।

মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে মহাসড়কের নিয়মনীতি সামান্য অনুসরণ করা হলেও, বাকি সড়ক নামে মহাসড়ক হলেও সেখানে একই সাথে সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, লেগুনা, নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, ট্রাক, বাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করছে। এসব সড়কে দূরপাল্লার পরিবহন কিংবা প্রাইভেটকারের গতিসীমা কখনো কখনো ঘণ্টায় ১০০ কি.মি. ছুঁইছুঁই করছে আবার কখনো বা সেটা অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর পরিবহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ সম্বলিত সাইনবোর্ড সাঁটা থাকলেও সেটা আদৌ তদারকি করা হয় কিনা এই সম্পর্কে অবগত নই। ফলে এক্সপ্রেসওয়েতেও দুর্ঘটনা থেমে নেই। সাম্প্রতিক সময়ে এক্সপ্রেসওয়েতে বারংবার ঘটে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনা, দূরপাল্লার পরিবহন দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির এবং হতাহতের ঘটনাগুলো এরই বহিঃপ্রকাশ। এক্সপ্রেসওয়েতে এ ধরনের দুর্ঘটনা অবশ্য বিশ্বের মধ্যে নজিরবিহীন। কিন্তু আমাদের দেশে অহরহ ঘটে যাচ্ছে শুধুমাত্র বেপরোয়া গতি এবং চালকের অসাবধানতার কারণে। যদি মহাসড়কে সাঁটা সাইনবোর্ডের সাথে গতির চলাচলকারী পরিবহনের গতি নির্ধারণের ব্যবস্থা থাকত এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তির আওতায় আনা যেত তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা বহুগুণে কমিয়ে আনা যেত বলে প্রতীয়মান হয়। ভাঙ্গা পার হয়ে খুলনার পথে সড়কে কোন রোড ডিভাইডার নেই, আবার কোন পরিবহন চলাচলের লেন অনুসরণ করেও চলছে না। ফলে দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে। কোন সড়কে যদি নির্ধারিত সীমার বাইরে গতি উঠানো হয় তাহলে সেখানে দুর্ঘটনা নিশ্চিত। আবার সেইসাথে যদি নিয়মের তোয়াক্কা না করে একই সড়কে উচ্চগতির দূরপাল্লার পরিবহন, বাস, ট্রাক চলাচল করে তাহলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটবে সেটাও নিশ্চিত।

এখানে এক্সপ্রেসওয়ের কথা উল্লেখ করলেও দেশের প্রতিটি মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে মর্মান্তিক সব দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন। তবে ইদানিং সংঘটিত রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এবং দূরপাল্লার পরিবহনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি দুর্ঘটনার খবরে বেশ চমকে উঠলাম। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব মিয়াপাড়া সড়কে মাটি কাটার ভেকু মেশিন বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ৪ জন। যশোর সদর উপজেলার লেবুতলা এলাকায় যশোর-মাগুরা মহাসড়কে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষে একই পরিবারের ৫ জনসহ মোট ৭ জন নিহত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা এখন প্রতিনিয়ত ঘটছে। সড়কে এভাবে মর্মান্তিক মৃত্যুই যেন আমাদের নিয়তি এখন। ফলে সড়কপথে ভ্রমণ করা হয়ে দাঁড়িয়েছে আতঙ্কের কারণ। চীনের চার বছরের প্রবাস জীবনে সড়ক দুর্ঘটনা কখনো চোখে পড়েনি। সেখানে মহাসড়ক মানেই মহাসড়ক। চার চাকার অনুমোদিত যানবাহন ব্যতীত সেখানে অন্য কোন পরিবহন প্রবেশের অনুমতি পায় না। যে মহাসড়কে গাড়ির গতিবেগ থাকে মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত গতির সমান। যেখানে চালক ইচ্ছা করলেই কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত গতিবেগের বাইরে মনগড়া গতিবেগ অনুসরণ করে গাড়ি চালাতে পারে না। গন্তব্যে পৌঁছাতে সেখানে কারও রেষারেষি নেই, নেই কোন প্রতিযোগিতা। ফলে সেখানে দুর্ঘটনাও নেই।

কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট পুরোপুরি ভিন্ন। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলেই সকলের মধ্যে ব্যাপক তাড়া লক্ষ করা যায়। দেশের রাস্তাঘাট উন্নত না হলেও আমাদের চালকদের গতির ক্ষেত্রে কোনরকম ছাড় নেই। রাস্তাঘাটের তোয়াক্কা না করে যে যার ইচ্ছামত গতি ওঠায় এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সড়ক দুর্ঘটনার নানাবিধ কারণের মধ্যে বেপরোয়া গতিই উল্লেখযোগ্য। তবে এর সাথে আরও যেসব কারণ বেশি দায়ী, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অদক্ষ চালক, চালকের ক্লান্তি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ির সড়ক মহাসড়কে চলাচল করা। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই দেশে ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তাই মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে বসে না থেকে গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

আমাদের দেশের আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলো অবকাঠামো এবং পরিবেশগতভাবে অনিরাপদ। কোথাও কোথাও দেখা যায় সড়কের সঙ্গে মানুষের ঘরবাড়ি এবং ঘরের দরজা খুললেই সড়ক। সড়ক, মহাসড়ক বা রেললাইনের পাশে এসব অব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনার মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে নির্ধারিত গতি বেঁধে দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। মহাসড়কে একই সাথে উচ্চগতির পরিবহন, যেমন বাস, মিনিবাস, ট্রাক, প্রাইভেটকারের সাথে দেশীয়ভাবে উদ্ভাবিত বিভিন্ন পরিবহন, যেমন অটোরিকশা-অটোভ্যান, নছিমন-করিমন-ভটভটিসহ নানা রকমের অনিরাপদ যানবাহন চলাচল বন্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল যানবাহনে প্রশিক্ষিত, প্রাপ্তবয়স্ক ও দক্ষ চালকের দ্বারা চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চিহ্নিত করে সেগুলোর রোড পারমিট বাতিল করে রাস্তায় চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসকল আইন আছে সেগুলো কাগজ-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে একযোগে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল কমানো সম্ভব হবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ
বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আরও

আরও পড়ুন

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক