অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি
১৫ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক নেতিবাচক। অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমানের সংকটের তিনটি কারণ চিহ্নিত করে বলেছেন, এসব কারণে সামনে দেশ বড় ধরনের চাপ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কারণ তিনটির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট, দ্বিতীয়টি সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, তৃতীয়টি শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানো। তারা এটাও বলেছেন, সাম্প্রতিককালে আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। নির্বাচনী বছর হওয়ায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও রয়েছে। এসব কারণে সামনের সময়ে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। অর্থনীতি প্রচ- চাপে পড়বে। এই চাপ এবং সংকট মোকাবেলায় সরকার কতটা সফল হতে পারবে, সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারলে অর্থনীতি গভীর খাদের কিনারে গিয়ে দাঁড়াবে।
অর্থনৈতিক স্থিতি ও গতিশীলতা দেশের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ স্থিতি ধরে রাখার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে সাধারণত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। বিরোধীদলের নানা দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার এবং তা দমনে সরকারের পদক্ষেপ রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়। আগামী নির্বাচনের বেশি দেরি নেই। বিরোধীদলগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ নানা দাবী নিয়ে আন্দোলনের মাঠে রয়েছে। সরকার তাদের এসব দাবি আমলে নিচ্ছে না। এ নিয়ে বিদেশীদের দেনদরবারও কম হচ্ছে না। তারা বেশ তৎপর রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে, রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও বিরোধীদলগুলো নিজ নিজ অবস্থানে অটল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত ও সংঘাতময় হয়ে উঠতে পারে। তাতে চলমান অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট আকার নিতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন চরমভাবে ব্যহত হয়। বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে গিয়েছে। করোনার ধাক্কায় অর্থনীতি থমকে গেলেও তা সামলে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে দিয়েছে। উন্নত বিশ্বসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার কবলে রয়েছে। তবে উন্নত দেশগুলো দ্রুত তাদের জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটানো এবং জনঅসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সেখানে জনগণ অনেকাংশে স্বস্তিতে রয়েছে। এমনিতেই আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাসহ নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে। তার উপর রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য তাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। আয় দিয়ে ব্যয় সংকুলান করতে পারছে না। পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে সরকার বারবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কথা বললেও সাধারণ মানুষের কাছে তা বিশ্বাসযোগ্যতা পাচ্ছে না। অন্যদিকে, খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী বাজার সিন্ডিকেটের কথা বলেছেন। এই সিন্ডিকেটের কারণেই নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এই বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেত। এক্ষেত্রে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে পড়ায় তাদের মনে সীমাহীন ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে এবং মৌলিক চাহিদা মেটাতে না পারলে এমনিতেই তাদের মনে ক্ষোভ-অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে, রাজনৈতিক দলের সরকারবিরোধিতার প্রয়োজন পড়ে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং যেকোনো সময় তার বিস্ফোরণ ঘটে। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির সংকট এখন দৃশ্যমান। ডলার সংকটের পাশাপাশি রিজার্ভ বিগত বছরগুলোর মধ্যে সর্বনি¤œ অবস্থায় রয়েছে। ডলার সংকটের কারণে সরকার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। আমদানি ব্যয় মিটানোর মতো সক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভে টান ধরেছে। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অর্থনীতি ও উৎপাদন খাতে ঋণাত্বক ভাব দেখা দিয়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি এখন প্রবল চাপে রয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ চাপ আরও তীব্র হয়ে উঠবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার এখন অর্থনৈতিক মন্দা ও চ্যালেঞ্জ সামাল দেয়ার চেয়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশি মনোযোগী। নির্বাচনী বছরে নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে মতবিরোধ ও আন্দোলন হওয়া স্বাভাবিক। যেহেতু আগামী নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, তাই সরকারের উচিৎ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। শুধু নির্বাচন কিভাবে হবে এদিকে মনোযোগ দিলে হবে না। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন স্বস্তিদায়ক করার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধ কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায়, সেই পদক্ষেপও নিতে হবে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিবেশ সংঘাতময় হয়ে উঠলে সাধারণ মানুষ আরও কষ্টে নিপতিত হবে। সরকারকে এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে, সরকার ও বিরোধীদলকে দেশের মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। এটা যদি মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সে রাজনীতি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। কাজেই, দেশের অর্থনীতি ও মানুষের সার্বিক কল্যাণে সরকার এবং বিরোধীদলের উচিত, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিবেশ যাতে অস্থির ও সংঘাতময় হয়ে না উঠে, তা নিশ্চিত করা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক