ডাক্তারদের আচরণ বদলাতে হবে
১৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তাররা ভাতাবৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছেন। গত রোববার রাজধানীর শাহবাগে কর্মসূচি পালনকালে তারা পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলে দাবি তাদের। পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তাররা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। ট্রেনিংয়ের দুই থেকে পাঁচ বছর মেয়াদকালে তারা হাসপাতালের বাইরে কোনো সেবা দিতে পারেন না। এমতাবস্থায়, তারা ভাতা ৫০ হাজার টাকায় বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তাররা আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৮ জুলাই কাজ বন্ধ রাখেন। পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণঅনশন পালন করেন। এর আগে গত ১৩ জুন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। ইতোমধ্যে তারা স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। তাতে কাজ না হওয়ায় এই অবস্থান কর্মসূচি নেন তারা। এ কর্মসূচির কারণে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা যেমন দুর্ভোগে পড়ে, তেমনি সড়কেও যানজট তৈরি হয়। কর্মসূচি চলাকালেই বিকেলে ডাক্তারদের একটি প্রতিনিধিদল বিএসএমএমইউ’র উপার্চাযের সঙ্গে দেখা করে। উপাচার্য তাদের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা সড়ক ছাড়েন। পরে ভাতা ৫ হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা আসে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদের ভাতা ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করেছেন। এতেও বিষয়টির ফয়সালা হয়েছে, বলা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন জানিয়েছেন, ২০২০ সালেই ভাতা ৩০ হাজার টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ৩ বছর পর ভাতা ৫ হাজার টাকা বাড়ানো অযৌক্তিক। তিনি বলেছেন, ভাতা বাড়ানোর দাবিতে তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন এবং পরবর্তীতে নতুন কর্মসূচি দেবেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন গত রোববার এক আলোচনা সভায় বলেছেন, পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে বিএমএ একমত। তবে এটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। এ নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণের সমালোচনা করেন তিনি। বিএসএমএমইউ’র উপাচর্য বলেছেন, তাদের ভাতা বাড়ানোর কথা আমরাও বলেছি। ভাতা যে বাড়ানো উচিত, বলা বাহুল্য, এরপর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সেটা আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে যথাসময়ে হলে এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করার অধিকার স্বীকৃত হলেও ডাক্তাদের ধর্মঘট বা কর্মবিরতি সহজে কেউ মেনে নিতে পারে না। রোগীর চিকিৎসাসেবা যাদের পেশা, তাদের সর্বাবস্থায় সে সেবা দিয়ে যাওয়া উচিত। সবাই তাদের কাছে এটা কামনা করে। অন্য পেশা ও চিকিৎসা পেশার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যের বিষয়টি স্বীকার করেই কোনো শিক্ষার্থী চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণ করে এবং পেশা হিসাবে চিকিৎসা অবলম্বন করে। তাদের অধিকতর মানবিক ও সেবাপ্রবণ হতে হয়। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশের অধিকাংশ চিকিৎসক চিকিৎসাপেশা অবলম্বন করেন মানবসেবার জন্য নয়, অর্থ কামাই করার জন্য। এ পেশায় অর্থ কামাইয়ের সুযোগ অন্যান্য পেশার চেয়ে অনেক বেশি। বস্তুত পক্ষে এটাই এখন এ পেশার প্রধান আকর্ষণ। ভুল চিকিৎসা, অপচিকিৎসা, ক্লিনিকব্যবসা, কমিশনবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এখন অনেক ডাক্তার নামধারীদের বিরুদ্ধে। ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু এ দেশে সাধারণ ঘটনায় পরিণত হলেও এ জন্য কোনো ডাক্তারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তারা এক ধরনের দায়মুক্তি ভোগ করছেন। উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসাবিভ্রাট বা কোনো ডাক্তারের অমনোযোগ-অবহেলায় রোগীর ক্ষতি বা মৃত্যু হলে মামলা, বিচার, শাস্তি অবধারিত। আমাদের ডাক্তাররা তাদের কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় কারণে-অকারণে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন বা কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় রোগীরা অসহায় হয়ে পড়ে, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়, কখনো কখনো বিনা চিকিৎসায় মারাও যায়। এজন্য ডাক্তারদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না, শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না। ডাক্তারদের আচরণ যেমন হওয়ার কথা, আমাদের ডাক্তারদের একটা বড় অংশের মধ্যে তেমন আচরণ প্রত্যক্ষ করা যায় না। সহৃদয়, বিনয়ী, সহানুভূতিশীল, আন্তরিক, সদালাপী, মানবিক ও সেবাধর্মী হওয়া উচিত প্রতিটি ডাক্তারের আচরণ। এমন ডাক্তারের দেখা আমাদের দেশে কমই মেলে। শুধু ডাক্তারের আচরণ ও ব্যবহারের কারণে অনেক চিকিৎসাপ্রার্থী দেশে চিকিৎসা না নিয়ে বিদেশে চলে যায়।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ থাকলেও একথা অনস্বীকার্য, দেশের সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসাসেবা তাদের ওপর নির্ভর করেই চলছে। যাদের সামর্থ্য আছে, সুযোগ আছে তাদের পক্ষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষের সে সামর্থ্য ও সুযোগ নেই। দেশের বিদ্যমান চিকিৎসাব্যবস্থা, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকই তাদের ভরসা। চিকিৎসাব্যবস্থার প্রসার ও উন্নতিও ঘটছে দিনে দিনে। প্রায় সব ধরনের রোগের চিকিৎসা হচ্ছে দেশেই। দেশের ডাক্তাররাই সেটা করছেন। করোনা মোকাবিলায় ও চিকিৎসায় আমাদের ডাক্তাররা কী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন, আমাদের তা অজানা নেই। অনেক ডাক্তার চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। এখন ডেঙ্গু যে ভয়ংকররূপে আপতিত, তার চিকিৎসাও তো তারাই করছেন। দেশ থেকে কলেরা-ম্যালেরিয়া যে প্রায় বিদায় নিয়েছে, তার পেছনেও রয়েছে ডাক্তারদেরই অবদান। আমাদের ডাক্তারদের এত সাফল্য, কৃতিত্ব, ভূমিকা ও অবদান সত্তে¡ও বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন রয়েছে তাদের আচরণ নিয়ে। মানুষের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ-অসন্তোষ। ডাক্তারদের অর্থলিপ্সা, উদ্ধত ও কঠোর ব্যবহার, অমানবিক ও ক্রুর আচরণ সঙ্গতকারণেই পরিত্যাজ্য। এসব কারো পছন্দনীয় নয়। এ বিষয়টি আমাদের সকল ডাক্তারেরই মনে রাখা প্রয়োজন। যাদের মধ্যে এ ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা বদগুণ আছে, তাদের তা দূর করতে হবে। তাদের অধিকতর মানবিক ও সংবেদনশীল হতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক