বিদ্যুতে উন্নতি না অবনতি?
১৯ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
এ যুগে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গেই বিদ্যুতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বর্তমানে উন্নতির মাপকাঠির মধ্যে মাথাপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহারকে অন্যতম হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। কারণ, বিদ্যুৎ থেকেও নেই! উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাঁচামাল ও বিতরণ ব্যবস্থা চাহিদা মাফিক না থাকায় প্লান্ট বন্ধ রেখে ব্যাপক লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়া ছাড়াও উৎপাদন খাতের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ হারিকেন, কূপি, মোমবাতি ও ক্যাপটিভ পাওয়ারনির্ভর হচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে, মানুষ কঠোর সমালোচনা করছে সরকারকে। জাপার মহাসচিব গত ১০ জুলাই বলেন, ‘আ’লীগের শাসনামলে ১২ বছরে কুইক রেন্টালের নামে বিদ্যুৎ খাতে ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়। অথচ, দেশবাসী লোডশেডিংয়ে নাকাল। ৯০ হাজার কোটি টাকায় ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বললেও আমরা পাই ৬ হাজার মেগাওয়াট, যেখানে চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তাই বড় বড় জেলা শহরে দিনের মধ্যে কয়েকবার লোডশেডিং হয়। গ্রামের মানুষ দিনের ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পায় না।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই দিনই বলেন, ‘তাহলে সব বন্ধ করে দেই। আবার অন্ধকারে ফিরে যাই’। না, মানুষ অতীতের মতো লোডশেডিংয়ে ফিরে যেতে চায় না। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের সময়ে বিদ্যুতের উন্নতির নামে চাহিদার দ্বিগুণের বেশি উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি, নজিরবিহীন বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান, বিনা টেন্ডারে দলীয় লোকদের প্লান্ট তৈরির অনুমোদন, সরকারি প্লান্টের চেয়ে আইপিপি ও ভাড়ার প্লান্টের অত্যধিক মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ে বেশি গুরুত্বারোপ, দেশীয় গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব না দিয়ে অত্যধিক মূল্যে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করে ব্যবহার, ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি, লোকসান, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতি না করায় ব্যাপক লোডশেডিং ইত্যাদিও চায় না মানুষ। এটা শুধু সাধারণ মানুষেরই কথা নয়, এটা আইএমইডিরও অভিমত।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের সারাংশ হচ্ছে, ‘২০১৩ সাল থেকে নেওয়া ৬৭টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি হতাশাজনক। ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন মাত্র ১০%। প্রথম বছরে কোনো প্রকল্পেরই অগ্রগতি হয়নি। অন্তত ১০টি প্রকল্প আছে, যেখানে টাকা খরচের তুলনায় বাস্তব অগ্রগতি কম হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ না হওয়ায় ব্যয় যেমন বাড়ে, তেমনি জনগণ যথাযথ সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। দেশে বিদ্যুতের বর্তমান ইন্সটল ক্যাপাসিটি ২৪,২৬৩ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ বাদে), যার ৪৪% অব্যবহৃত থাকছে। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ সক্ষমতায় যুক্ত হবে আরো ১৪.৫ হাজার মেগাওয়াট। ফলে তখন মোট সক্ষমতা তৈরি হবে ৩৮,৭০০ মেগাওয়াটের অধিক, যার ৬০% অব্যবহৃত থাকবে। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে গড়ে ১৩.৫ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ গ্যাস ও কয়লা সংকট। বিপিডিবি ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ১,১৬,৫৩২ কোটি টাকা। এর আগের ১২ বছরে সংস্থাটি লোকসান দিয়েছে ১,০৫,৪১৯ কোটি টাকা। এই লোকসানের অন্যতম কারণ ক্যাপাসিটি চার্জ। ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার ব্যয় হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জের এই মডেল কোনোভাবেই টেকসই নয়। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদ্যুতের সিস্টেম লস দাঁড়ায় ৮.৭৩%, যা দেশে সর্বোচ্চ ৩% থাকতে পারে। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে স্থানভেদে ২৫-৫০% বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা রাখা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্নভাবে এক-চতুর্থাংশ বা অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনার নিশ্চয়তাও দিয়েছে সরকার। ইউনিট প্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ, স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি ক্রয়, সহজে ব্যাংকের ঋণ প্রাপ্তি এবং শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা বন্ধ করা না হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তহবিল সংকটের সমাধান হবে না। মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন দপ্তরের কারিগরি জ্ঞানহীন, অভিজ্ঞতাহীন একদল দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপকদের কারণে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত অযোগ্য সরবরাহকারীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।দেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আইএমইডির প্রতিবেদনের সঙ্গে তিনি একমত নন এবং বিভিন্ন সমালোচকদের লেখার অংশ ভুলভাবে এর মধ্যে এসেছে। তারা সেটি সংশোধন করে আসল প্রতিবেদন তৈরি করছেন। কিন্তু বিবিসি বলেছে, পরিকল্পনামন্ত্রী আইএমইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করলেও তাতে তথ্য সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংক, বিআইপিপিএ, পাওয়ার ডিভিশন, সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা, আইএমইডির বিভিন্ন সমীক্ষা ও পরিদর্শন প্রতিবেদনকে। দ্বিতীয়ত: গত জুনে সিপিডি বলেছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত শ্বেতহস্তীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তৃতীযত: অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত, দেশের বিদ্যুৎ খাতের সংকট থেকে বিপিডিবির শিগগিরই বেরিয়ে আসার পথ নেই।কারণ, ক্যাপাসিটি চার্জ, অতিরিক্ত সক্ষমতা এবং উৎপাদন ব্যয়ে ভঙ্গুর দশা তৈরি হয়েছে সংস্থাটির আর্থিক কার্যক্রমে। তবে, পাওয়ার সেলের কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ‘ব্যয় কমাতে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে নতুন করে ক্রয় চুক্তিতে না যাওয়ার কথা ভাবছে সরকার। আবার বিদ্যুৎ ক্রয়ের নতুন চুক্তিগুলো করা হচ্ছে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে। ফলে এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ আর থাকছে না। তাই খরচ কমে আসছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সিস্টেম লস ও কার্যকারিতা কম এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়াসহ নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো হচ্ছে’।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী গত ১৫ জুন জাতীয় সংসদে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭,৩৬১ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত গত ১৯ এপ্রিল ২০২৩ সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৫,৬৪৮ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট ও প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩,২৬৮ মেগাওয়াট। সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনায় উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে গত দেড় দশকে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছে। যদিও এ ব্যয় সমসক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয়ের বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অন্তত ৫-৭ বিলিয়ন ডলার বেশি।যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুই গবেষক কুমার বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও মঞ্জুর মোরশেদ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিগত দশকের মূলধনি ব্যয় নিয়ে এক গবেষণা রিপোর্টে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জ্বালানি তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কিলোওয়াট প্রতি মূলধনি ব্যয় বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি। গ্যাস টারবাইন প্রযুক্তিতে চালিত প্রাকৃতিক গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিলোওয়াট প্রতি মূলধনি ব্যয়ের বৈশ্বিক গড় ৫৫১ ডলার, যা বাংলাদেশে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে ১,১৭৭ ডলার ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে ৮১৯ ডলার। উপরন্তু বিশ্ব পরমাণু সংস্থার মতে, যাবতীয় সুদ বাদ দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কিলোওয়াট প্রতি মূলধনি ব্যয়ের পরিমাণ ৫,৮৩০ ডলার আর একই নির্মাতার ভারতে নির্মীয়মাণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিলোওয়াট প্রতি মূলধনি ব্যয়ের পরিমাণ ১,৬২৫ ডলার।
ঢাবির উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর সম্প্রতি এক দৈনিকে বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে আমরা কখনো এককভাবে, কখনো জয়েন্ট ভেঞ্চারে গিয়েছি। এসব অবকাঠামো করতে গিয়ে এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ হিসেবে আমরা অনেক ঋণ নিয়েছি। বাংলাদেশে শুধু যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূলধনি ব্যয় অনেক বেশি করা হয়েছে তা নয়, ভুল জ্বালানি পরিকল্পনার কারণেও এসব বিনিয়োগ বর্তমানে দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের বোঝা হয়ে রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ জানা সত্ত্বেও মধ্যম মেয়াদি যে পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল, সেটি করা হয়নি। তার খেসারত হিসেবে আমরা ডলার সংকটে পড়েছি।’ অন্য এক তথ্য মতে, দেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা। গত ২২ জুন এক সেমিনারে সিপিডি বলেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি করতে বর্তমানে বাংলাদেশকে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে। আর বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেছেন, ‘সরকার আমদানি-নির্ভর জ্বালানি নীতি অনুসরণ করায় ২০২৫ সালে এই ব্যয় ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।’
২০১৬ সালের বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০% নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়েছে তার অর্ধেকেরও কম! বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী গত ১৬ জুলাই বলেন, ‘নবায়নযোগ্য উৎস হতে ১,১৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৮২৫ মেগাওয়াটের কিছু বেশি বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।’ অথচ এসডিজির লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য টেকসই ‘ক্লিন এনার্জি’ নিশ্চিত করা। কিন্তু দেশে তা হবে না বলে অনুমেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর জন্য কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা হচ্ছে বহু দেশে।তবুও আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারখানার বিরাট অংশ কয়লাভিত্তিক। তাও আমদানিকৃত। অথচ দেশে আবিষ্কৃত কয়লা মজুদের পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টন বলে সম্প্রতি এক দৈনিকে প্রকাশ। কয়লা উত্তোলনের দিকে কোন ভ্রক্ষেপ নেই। এমনকি ২০০৮ সালে প্রণীত কয়লা নীতির খসড়াও চূড়ান্ত করা হয়নি। গ্যাসের ক্ষেত্রেও তাই। গ্যাসের মজুদ প্রায় শেষ হয়ে এলেও গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব না দিয়ে অধিক মূল্যে এলএনজি আমদানিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সঞ্চালন ও বিতরণ উন্নয়নে তত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে তা পূর্বাবস্থাতেই রয়েছে। মানুষ চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এছাড়া, প্লান্টও বসিয়ে রেখে বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। আইপিপি ও ভাড়ার বিদ্যুৎ ক্রয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় (মোট খরচের প্রায় ৭০%) লোকসান বেড়েই চলেছে। লোকসান কমানোর জন্য বর্তমান সরকারের সময়ে এ পর্যন্ত ১৬ বার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়েছে। যেমন: ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের মূল্য ছিল ২০১০ সালে ৩.৭৬ টাকা, বর্তমানে ৭.৪৯ টাকা। উপরন্তু সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা দিয়ে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৩’ বিল,গত ২৯ জানুয়ারি। অন্যদিকে, সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিল বকেয়া রয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। আবার বিপিডিবি কাছে বেসরকারি কোম্পানির পাওনা আছে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিদ্যুৎ খাতে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে ২০১০ সালে, যা কার্যকর থাকবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের বিদ্যুতের মূল্য সর্বাধিক হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা এটা বাতিল করার জন্য বারবার বলার পরও এর চুক্তি পুনঃনবায়ন করা হয়েছে সম্প্রতি। ভারতের আদানির গোড্ডা প্লান্টের ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ের জন্য ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তি করা হয়েছে ২০২১ সালে, যার ইউনিট প্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ ৩.২৬ টাকা। অথচ বাংলাদেশে একই ধরনের প্ল্যান্টের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ ২.৮৩ টাকা। প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের অগ্রগতি সামান্য! অর্থাৎ বর্তমান সরকারের সময়ে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বাড়লেও তা ভুল নীতি ও ব্যাপক দুর্নীতির কারণে গলার ফাঁসে পরিণত হয়েছে, যা সহসাই দূর হবে না!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ