মহামারি আকারে দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গুজ্বর

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৯ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫৮ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় দেড় হাজারের বেশি রোগী ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে গতকাল ইনকিলাবে খবর প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১৫৩৩ জন ডেঙ্গুরোগীর মধ্যে একদিনে রেকর্ড ১৩ জন মারা গেছে। এটি শুধু হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান। ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দেয়ায় হাসপাতালে অনেক রোগী ঠাঁই পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দরিদ্র রোগীদের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে গেছে। বিশেষত রাজধানী ও বিভাগীয় শহরের অনেক বাইরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা ডেঙ্গু পরীক্ষা ও জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার প্রধান হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকটা করোনা মহামারিকালীন বাস্তবতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দক্ষিণ ঢাকার করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালটিতে নতুন কয়েকটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি কলেরা ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড ও ডরমেটরিসহ সর্বত্র সিট ফেলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যে হারে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে অন্যান্য সব বিশেষায়িত হাসপাতালেও ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য বিশেষ বাড়তি উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা সাধারণত আগস্ট মাসকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির মাস হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। এবার জুন-জুলাই মাস থেকেই ডেঙ্গুরোগে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ডেঙ্গুজ্বরের মূল উৎস এডিস মশা দমনের মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পন্থা থাকলেও এ বিষয়ে গণমাধ্যমে যথেষ্ট লেখালেখি হলেও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশে স্থানীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে না পারার কারণেই ডেঙ্গু এখন মহামারী রূপ নিতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র সরকারি বা স্থানীয় প্রশাসনের সীমিত উদ্যোগে সারাদেশে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ সম্ভব নয়। সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের দায় ও ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। তাদের উপর দায় চাপিয়ে বসে থাকারও কোনো সুযোগ নেই। এডিস মশার লার্ভা উৎপাদনকারী পরিবেশ ও অপরিচ্ছন্নতা দূর করার ক্ষেত্রে সামাজিক সচেতনতা এবং সামাজিক-পারিবারিক উদ্যোগ প্রয়োজন। ইতিপূর্বে আর কখনো ডেঙ্গু এমনভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়নি। সেইসাথে এবার ডেঙ্গুর ধরনও অনেক বেশি বিপজ্জনক বলে জানাচ্ছেন ডাক্তার ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক কয়েক দশকের মধ্যে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু সংক্রমণে সর্বোচ্চ রেকর্ড এক লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সরকারি হিসেবে সে বছর ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গত বছর ৬২ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৮২ জনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। চলতি বছর আগস্ট মাস শুরুর আগেই ইতোমধ্যে সরকারি হিসেবে ২৪ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবস্থা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে।

ডেঙ্গুজ্বরের কারণ ও উৎস সবারই জানা। সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা কোনো কঠিন কাজ নয়। মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বছরে শত শত কোটি টাকা খরচ করে থাকে। এ খরচের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই বললেই চলে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, শুধুমাত্র সরকার বা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে প্রতিটি ঘরের কোণে বা বাড়ির বাইরে জমে থাকা পানিতে কিংবা ড্রেনে এডিস মশার লার্ভা দমন কিংবা ঘরে ঘরে মশারি টানিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। এটি নিজেদেরই করতে হবে। তবে উন্মুক্ত নর্দমা, জলাধার, পরিত্যক্ত স্থানের পরিচ্ছন্নতা ও স্যুয়ারেজ সিস্টেমকে সচল রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের। এখন আমরা এক জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন। এখন হাসপাতালে ক্রমবর্ধন ডেঙ্গু রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। কোনো কোনো পরিবারে দু’তিনজন সদস্য ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় হাসপাতালে যাচ্ছে। জ্বরের শুরুতেই যে কোনো স্থানে ডেঙ্গু ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। দরিদ্র-স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে কিংবা স্বল্প খরচে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু মহামারি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, সেই লক্ষ্যে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার প্রশাসনের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা মসজিদ-মন্দিরসহ সব সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে হবে। ডেঙ্গু ও এডিস মশা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন ও সতর্ক করতে মসজিদের ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে ডেঙ্গু মহামারী মোকাবেলা করার কোনো বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ
বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আরও

আরও পড়ুন

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

বিহারীরা কেমন আছে

বিহারীরা কেমন আছে

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার

ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার