পরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে
২০ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫৯ পিএম | আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে অন্যান্য খাতের মতো গণপরিবহণে চলছে নৈরাজ্য। সরকার ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও মানছে না অনেক বাসমালিক। সারাদেশে অধিকাংশ গণপরিবহণ নিজের ইচ্ছামতো ভাড়া নিচ্ছে। এতে বাড়তি অর্থ ব্যয়, হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। কখনো কখনো ভাড়া নিয়ে বাগ্বিত-ায় জড়াচ্ছে যাত্রীরা। রাজধানীতে ওয়েবিল ও চেকার বহাল রেখে একই গন্তব্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাসগুলোর সুপারভাইজাররা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। এমনকি একই বাস কোম্পানির স্টাফ একই গন্তব্যের জন্য আলাদা ভাড়া আদায় করছে। বাস মালিকদের নির্দেশেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানান একাধিক বাসচালক। রাজধানীতে বিভিন্ন রুটের বাসে ব্যবহৃত ওয়েবিল প্রথা বাতিল ঘোষণা করা হলেও তা মানছে না পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। পাশাপাশি স্টপেজ বাদেও খোলা থাকছে বাসের দরজা, চলছে যাত্রী ওঠা-নামা। অনেক বাসে ভাড়ার নতুন চার্ট থাকলেও ইচ্ছেমতো বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে তদারকির দাবি তাদের। এদিকে ওয়েবিল ব্যবস্থায়, বাসে উঠে পরের স্টপেজে নামলেও পরবর্তী ওয়েবিলের স্থান পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয় যাত্রীদের।
গণপরিবহণে বাড়তি ভাড়া আদায় ও অন্যান্য অনিয়ম বন্ধে বিআরটিএ ও পরিবহণ মালিক সমিতির ৯টি ভিজিলেন্স টিম কাজ করার কথা থাকলে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না রাজধানীসহ সারাদেশে। এ সব অভিযোগ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ অকপটে স্বীকারও করে। যেসব বাসমালিক ওয়েবিল-চেকার পদ্ধতি বাতিল করেছে, তারা আগে থেকে কম টাকা জমা পাচ্ছে। সে কারণে অনেকেই এখনো ওয়েবিল-চেকার পদ্ধতি বহাল রেখেছে বলে জানা যায়। যাত্রীদের অভিযোগ, ভাড়া নিয়ে ওদের সঙ্গে তর্ক করে কোনো লাভ হয় না। তারা কারো কথা শোনে না। বাস্তবে যাত্রীগণ ওদের কাছে জিম্মি।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করার কথা থাকলেও রুটে ভাড়ার বিষয়ে কাউকে তদারকি করতে দেখা যায় না।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে অন্তত ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে পণ্য পরিবহণের ভাড়া। ডিজেলের দর সাড়ে ৪২ শতাংশ বাড়লেও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপ মালিক-চালকরা তার চেয়ে বেশি ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা করছে। গত বছর ৫ আগস্টে সরকার জ্বালানি তেলের দর পুনর্নির্ধারণ করে। প্রতি লিটার ডিজেলের দর করা হয় ১১৪ টাকা, আগে যা ছিল ৮০ টাকা। ৫০ শতাংশ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় যে পণ্য পরিবহণে আগে যেখানে ১০ হাজার টাকা গুনতে হতো, এখন দিতে হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। অতীতে যে হারে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেই হারে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এবারও তাই করা হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম একটি রিটার্ন ট্রিপে ডিজেল লাগে ১৫০ লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে এক ট্রিপের ডিজেলের জন্য ৫ হাজার ১০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে জীবনযাত্রার খরচও বেড়েছে। সেই খরচ ভাড়া থেকেই তুলতে হচ্ছে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে আগে ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে এক ট্রিপের ভাড়া ছিল ১৪ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এখন ডিজেলের জন্য ৫ হাজার ১০০ টাকা অতিরিক্ত গেলেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৭ হাজার টাকা। পরিবহণ সেক্টরের জন্য করা আইন তারা মানে না। সারাদেশের গণপরিবহণ ও ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের জন্য নির্ধারিত ভাড়া তালিকা কোথাও মানা হয় না। চট্টগ্রামের প্রতিটি রুটে ঈদ যাত্রার সময় দ্বিগুণ তিনগুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিআরটিএ গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রামের সব রুটের জন্য সেখানে ভাড়ার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বাস্তবে সেই নির্দেশনা গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক কেউই মানেনি। চট্টগ্রাম সিটির মধ্যে যেসব পরিবহণ যাত্রীদের জন্য ব্যবহার হয় তারা কোনো সময় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না।
সিএনজি টেক্সির মিটার ব্যবহার হয় না। তারা গলাকাটা ভাড়া আদায় করছে যাত্রীদের থেকে। অনেকের গাড়ির কোনো ডকুমেন্ট সঠিকভাবে পাওয়া যাবে না। তবুও তারা ট্রাফিক পুলিশের স্লিপ নিয়ে এসব গাড়ি রাস্তায় চালাচ্ছে। এক রুটের গাড়ি আরেকটি রুটে চালাতেও দেখা যায়। তবুও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। দিনের বেলায় সিটি এলাকায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চললেও কোনো বাধা তাদের পেতে হয় না। মোটামোটিভাবে বলা যায়, পরিবহণ সেক্টরের নৈরাজ্য অব্যাহত আছে। রাস্তায় অথবা কাউন্টার স্টপেজে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যায় না। চট্টগ্রামের একেখান মোড়, অলংকার মোড়, জিইসি গরীবুল্লাহ শাহ মাজার , বহদ্দার হাট, নতুন ব্রিজ ইত্যাদি এলাকায় নানা কোম্পানির গণপরিবহণের বাস সব সময় রাস্তা দখল করে জনভোগান্তি তৈরি করে। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ট্রাফিক পুলিশ দেখা গেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। কাউন্টার থেকে রাস্তায় এসে পরিবহণ সেক্টরের লোকজন যাত্রীদের টানা হেচড়া করে তাদের গাড়িতে তুলতে চায়। এক কথায় নৈরাজ্যের শেষ নাই পরিবহণ সেক্টরে। কঠোর হস্তে এ নৈরাজ্য বন্ধ করে সারাদেশের যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া ও তাদের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ জরুরি।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক