যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
২১ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
সারা পৃথিবীতে এখন গতি নিয়ে কথা হচ্ছে। জাতিসংঘ একটি সপ্তাহ পালন করেছে, সেখানে তাদের স্লোগান ছিলো, Kill Speed, Not Lives. মানে হচ্ছে, গতিকে মারো কিন্তু মানুষকে নয়। গতি খুবই বিপজ্জনক। আমরা বন্দুক বা রিভালভরের গুলির কথা বলি, এই গুলি কিন্তু খুব ছোটো। এটা যদি আস্তে করে কারও গায়ে ছুঁড়ে মারা যায়, তাতে কেউ আহত হবে না বা মারাও যাবে না। অথচ, ওই ছোটো গুলির জন্যই কিন্তু মানুষ মারা যায়। কেন মারা যায়? গতির কারণে। বন্দুক বা রিভালভারের থেকে যখন গুলিটি বের হয়, তখন এর গতি থাকে প্রচন্ড বেশি। এ কারণে এই ছোটো গুলিটির কারণে মানুষ আহত হয় বা মারা যায়। দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতি যখন ঘণ্টায় ১০০/১৫০/২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে, তখন আবহাওয়া অফিস মহাবিপদ সংকেত জারি করে। ঝড়ে বৃষ্টি আর বাতাস, এই দুইটির বেগের কারণে বিপদ সংকেত দেওয়া হয়। বৃষ্টি বা বাতাস লোহার কোনো বস্তু না। এরপরও এখানে এই বেগের কারণে মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়। এখন ভেবে দেখার বিষয়, সড়কে যখন লোহার একটি বস্তু অর্থাৎ একটি গাড়ি ১০০/১৫০ কি.মি বেগে চলে এবং এই বেগে যদি সে গাড়ি কাউকে আঘাত করে তাহলে কী অবস্থা দাঁড়ায়? সেখানে বাঁচার কিন্তু কোনো সম্ভবনাই থাকে না। এ কারণে বলা হচ্ছে, গতি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যায় এই গতির কারণে।
অতিরিক্ত গতিতে যখন কোনো গাড়ি চলাচল করে, তখন রাস্তার দুই পাশে কোনো কিছু ঠিকমতো দেখা যায় না। খুব দ্রুত পাশের বস্তুগুলো পার হয়ে যায়। যদি কোনো মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, সে তখন দৌড় দেবে, কি হাঁটবে এসব বিষয় কিন্তু ঠিকমতো লক্ষ করা যায় না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সরকারিভাবে যে আইন করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, বিআরটিএ গতি নির্ধারণ করবে। কেউ যদি গতি ভাইলেশন করে তাকে জরিমানা করা হবে। কিন্তু কোন সড়কে কত গতি, কোন গাড়ির কত গতি থাকবে বা থাকবে না এর কোনো গাইড লাইন সেখানে নেই। আমরা এই বিষয়ে সরকারের সাথে বিশেষ করে বিআরটিএ’র সাথে বসেছি। সরকার সকলকে নিয়ে বসে এই গাইড লাইন তৈরির কাজ করছে এবং এর দায়িত্ব বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কাছে দেওয়া হয়েছে। আমরাও তাদের সাথে কাজ করছি। সেইসাথে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচার) পক্ষ থেকে চালকদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বোঝাচ্ছি গতি আমাদের জন্য, সড়কের জন্য কতটা ক্ষতি করে। আমরা যদি গতিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে গাড়ি চালাতে পারি তাহলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।
দেশে এত অবকাঠামো হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে, এরপরও দুর্ঘটনারোধে কতটা উত্তরণ করতে পারছি? পারছি না। উন্নয়ন হলেও সুদূরপ্রসারী চিন্তা না থাকার কারণে উত্তরণ করতে পারছি না। সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে জাতিসংঘ যে ৫টি পিলারের কথা বলেছে তা মেনে সুইডেন তার দুর্ঘটনার হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে। কোনো কোনো দেশ ৯০ শতাংশ, কোনো দেশ ৮০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। আমরা কেন কমাতে পারছি না? কারণ হলো আমাদের প্রথম দিকে যে ধারণা, সেই ধারণাটাই ঠিকমতো ছিলো না। আমাদের ধারণা ছিলো, সড়ক দুর্ঘটনারোধে আমাদের করণীয় কিছু নেই। এটা আল্লাহর হাতে আছে। মানুষের ভাগ্যে লেখা থাকে দুর্ঘটনা। অনেকে বলে ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে’। এইজন্য অনেক সময় আমি বলি, আমরা একটি দেশ পেয়েছি কিন্তু দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা সে সময় আমাদের ছিলো না। যে কারণে সঠিক পরিকল্পনার অভাব ছিলো। সংসদেও বলতে শুনেছি, সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের কোনো হাত নেই। এটি আল্লাহর হাতে। এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়, আমাদের দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আসলে কখনো ছিলো না। আমরা এখনো শিখছি। এই শিখতে শিখতে মাঝখান থেকে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। আমাদের চিন্তা-চেতনার স্পিড এখনো বাড়েনি। আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি না।
এক সময় নবাবপুর রোড ছিলো একটু বড়ো। সেটা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছে। এত বড়ো রোড অযথা কেন করা হয়েছে। এ কারণে দেখা যাবে ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় সড়ক ছোটো ছোটো। কারণ, তখন তারা ভাবেনি আজ সড়কে ১০টা গাড়ি চলছে ১০ বছর পর কয়টা চলবে? সেই গাড়ি চলার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা আছে কি-না। এই যে সুদূর পরিকল্পনার দৃষ্টিটা যদি আমাদের না থাকে, তাহলে আমরা উন্নয়নের সেই জায়গাটায় পৌঁছতে পারবো না কখনোই।
সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা। জাতিসংঘ ঘোষিত সেইফটি সিস্টেম এপ্রোচ মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। এছাড়া এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা যদি অর্জন করতে হয় তাহলে জাতিসংঘের দেওয়া প্রথম ডিকেড ফেল করেছি, এখন দ্বিতীয় ডিকেডটি যেন আমরা ফেল না করি সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক যে ডিকেড ঘোষণা করা হয়েছে তা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। তার মধ্যে জাতিসংঘের দেওয়া ৫টি পিলার ও ৫টি রিক্স ফ্যাক্টর চিহ্নিত করা হয়েছে এই জায়গাগুলো ধরে ধরে কাজ করতে হবে। এর ভেতর পাইওরিটি দিতে হবে গতিকে। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরিকল্পনা তথা চিন্তার গতিকে দ্রুত বাড়াতে হবে এবং সড়কের গতিকে দ্রুত ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনতে হবে। গতিকে ম্যানেজম্যান্টের ভেতর রেখে পরিচালনা করতে হবে। এই চিন্তাগুলো এখন আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সড়কের বিভিন্ন রকম চরিত্র আছে। কোন সড়কে গাড়ি কত গতিতে চলবে, সেটি যেমন নির্ধারণ করতে হবে, তেমনি যানবাহনের প্রকারভেদে গতিও নির্ধারণ করে দিতে হবে। সড়কের ব্ল্যাকস্পট বা দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোকে ট্রিটমেন্টের আওতায় এনে সংশোধন করে যানবাহন যেন নির্বিঘেœ নিরাপদে সঠিক গতিতে চলতে পারে সে ব্যাবস্থা করে দিতে হবে। এটির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারে, এই বিষয়গুলো তুলে ধরে দেখিয়ে দিতে পারে, কিন্তু উন্নয়নের যে গতিতে বাংলাদেশ আছে, সে গতি ধরে রাখতে হলে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
কারণ, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বছরে যে জিডিপি ক্ষতি হয় তার পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই ৫০ হাজার কোটি টাকা যদি সড়কে ক্ষতি না হতো তাহলে দেশে আরও উন্নয়ন হতো, মানুষের জীবনমান আরো উন্নত হতো। সড়ক দুর্ঘটনাকে একারণে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনারোধে দ্রুত সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। গতি এখন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। পাশাপাশি গাড়ির ফিটনেস, চালকের দক্ষতা, মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহার, শিশুদের জন্য আসন ব্যবস্থাÑ এসব বিষয় নিয়েও কাজ করতে হবে। এ বিষয়গুলোতে সকলকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
লেখক: অভিনেতা ও নিরপাদ সড়ক চাই (নিসচা)’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক