ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ
২১ জুলাই ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
এডিস ইজিপ্টি (Aedes Aegypti) নামক মশার কামড়ে ডেঙ্গু (উবহমঁব) জ্বরের উৎপত্তি হয়। উপক্রান্তীয় এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম-প্রধান দেশে ডেঙ্গু এবং ডেঙ্গু জ্বর অত্যন্ত সাধারণ ভেক্টর-বাহিত ভাইরাসঘটিত রোগ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। তবে বর্তমানে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। চীনা চিকিৎসা বিশ্বকোষে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দে এ রোগকে পানিবাহিত বিষ (Water Poison) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া ১৭৭৯-৮০ সালে আফ্রিকা, এশিয়া ও আমেরিকায় এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন। ১৯৫৩ সালে থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে এটি মহামারীর রূপ নেয়। বাংলাদেশে ২০০০ সালের দিকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা যায়। কিন্তু ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেশে ছড়িয়েছে ২০১৯ সালে। ২০২১ ও ২০২২ সালেও অতিমারী করোনার সাথে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। এ বছর ইতোমধ্যেই অল্পসময়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সকল রেকর্ডকে অতিক্রম করেছে।
এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ে এ রোগ হয়ে থাকে। DEN-1, DEN-2, DEN-3 I DEN-4 ভাইরাস থেকে ডেঙ্গু ছড়ায়। এই চারটি ভাইরাসকেই সিরোটাইপ বলা হয়, কারণ এই চারটি ভাইরাস পৃথক পৃথকভাবে অ্যান্টিবডিকে প্রভাবিত করে। এমনকি যে কোনো ব্যক্তি পৃথক পৃথক কামড়ের দ্বারাও ৪বার পর্যন্ত ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এডিস নামে মশাগুলো অন্যান্য মশার চেয়ে তুলনামুলক বড় এবং গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে। এরা বৃষ্টি-পরবর্তী সময়ে যে কোনো জলাবদ্ধ এলাকায় বংশবিস্তার করে। তাছাড়া ঘরে রাখা টব বা ফুলদানির পানিতেও এরা বংশবিস্তার করে। এদের ডিম ফোটার জন্য পানির প্রয়োজন হয় বলে শুকনো মওসুমে এ মশা কমে যায়। যেকোনো এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু জ্বর হয় না, যেসব মশা জীবাণু বহন করে শুধু সেসব মশার কামড় থেকেই ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।
দিন যতই যাচ্ছে, ততই ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। তাই সাধারণ ভাইরাল জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুকে গুলিয়ে ফেলে অবহেলা করে অনেক সময় রোগীর গুরুতর সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে, সেই ব্যক্তি ৩ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে, সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে। তাই দু’দিনের বেশি জ্বর হলে নিজেরা চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
উপমহাদেশে প্রধানত প্রাক-গ্রীষ্ম এবং বর্ষা সময় এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত (বিশেষ করে গ্রীষ্ম এবং বর্ষার সময়টাতেই) ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। শীতকালে এই জ্বর হয় না বললেই চলে। শীতে লার্ভা অবস্থায় ডেঙ্গু মশা অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে। বর্ষার শুরুতেই সেগুলো থেকে নতুন করে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহিত মশা বিস্তার লাভ করে। সাধারণত শহর অঞ্চলে অভিজাত এলাকায় বড় বড় দালান কোটায় এই মশার প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই ডেঙ্গু জ্বরেও এই এলাকার বাসিন্দারা বেশি আক্রান্ত হয়। বস্তিতে বা গ্রামে বসবাসরত লোকজন তুলনামূলক কমই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।
ডেঙ্গু জ্বর মৃদু ও গুরুতর উভয় ধরনের হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে এর লক্ষণও পৃথক পৃথক হয়ে থাকে। অল্প বয়স্ক ও কিশোরাবস্থায় মৃদু ডেঙ্গু হলে এর কোনো লক্ষণ ধরা পড়ে না। সংক্রমিত হওয়ার ৪ থেকে ৭ দিন পর ডেঙ্গুর লক্ষণ প্রকাশ্যে আসে। এ সময় তীব্র জ্বর থাকে। তবে বর্তমান সময়ে ডেঙ্গুর উপসর্গের ধরণ পাল্টে গেছে। এখনকার ডেঙ্গুতে যেসব উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা হলোÑ হঠাৎ জ্বর আসা আবার জ্বর না থাকা, কাশি, হাত-পায়ের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, অরুচি, অসহ্য পেট ব্যথা, চোখ ব্যথা, গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, শরীরে র্যাশ ওঠা, চুলকানি, দাঁতের মাড়ি দিয়ে, নাক দিয়ে কিংবা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, প্র¯্রাব কম হওয়া, দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া, মস্তিস্কে প্রদাহ, হাত-পা ফুলে যাওয়া, দেহে পানি আসা, পাতলা পায়খানাসহ রক্তের প্লাটিলেটও কমে যাওয়া।
ডেঙ্গু জ্বর প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকেÑ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার (Classical Dengue Fever) এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (Classical Dengue Fever)। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচ- ব্যথা হয়ে থাকে। জ্বর ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে থাকে। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমড়, পিঠসহ অস্থি-সন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা এতো তীব্র হয় যে মনে হয় বুঝি হাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’। তাছাড়া জ্বর শুরু হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ, যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়। সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায় এবং কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এর ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসে। একে ‘বাই ফেজিক ফিভার’ বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারÑ অবস্থাটাই সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরো যে সমস্যাগুলো হয় তা হলোÑ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়, যেমন: চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে রক্তবমি, পায়খানার সাথে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাহিরে রক্তক্ষরণ, মহিলাদের বেলায় অসময়ে ঋতু¯্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো (Dengue Shock Syndrom) ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের সাথে সার্কুলেটরী ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম হয়। ডেঙ্গু শক্ সিনড্রোম থেকে মানবদেহে পানি শূণ্যতা তৈরি হয়। নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয় এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়। শরীর ঠা-া হয়ে যায় ও শ্বাসপ্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে। প্র¯্রাব কমে যায়। রোগী অস্থির হয়ে ওঠে। হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। তখন সময় নষ্ট না করে হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত। চিকিৎসকের মতে, ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের কোষগুলি পানিশূন্য হয়ে পড়ে। এই সময়ে শরীরে পর্যাপ্ত পানির জোগান দিতে হবে। এই সময়ে পানি পানের পাশাপাশি ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ, লিকার চা বেশি করে ডায়েটে রাখতে হবে। শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবারÑ ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়।
ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করলে ভাইরাসগুলো রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট ধ্বংস করতে পারে। প্লাটিলেটের অভাব হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তপাত হতে পারে। এর পাশাপাশি ভাইরাসের কারণে রক্তনালী থেকে রক্তরস বা প্লাজমা বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীরে মোট রক্তের পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত ঘন হয়ে যায়। সেই সাথে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় খুব অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে।
আগে চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিলÑ এডিস মশা সূর্য ওঠার সময় বা সূর্য ডোবার সময় কামড় দিলে ডেঙ্গু হয়। সে হিসেবে দিনের বেলায় মশারি ব্যবহার করতে, এমনকি ফুলহাতা পোশাক পরতে পরামর্শ দেয়া হতো। আবার কোনো কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানীর অভিমত হলোÑ ডেঙ্গু মশা সবচেয়ে বেশি দুপুরের বেলায় কামড়ায়। সূর্যোদয়ের দু’ঘণ্টা পর থেকে সূর্যাস্তের এক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ডেঙ্গু মশা সক্রিয় থাকে। আবার রাতের বেলা যে সমস্ত অঞ্চলে উজ্জ্বল আলো, সেখানেও ডেঙ্গু মশা সক্রিয় থাকে। অফিস, মল, ইন্ডোর অডিটরিয়াম ও স্টেডিয়ামের ভিতরে ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। কারণ এখানে সব সময় উজ্জ্বল কৃত্রিম আলো ব্যবহৃত হয় এবং প্রাকৃতিক রশ্মি প্রবেশ করতে পারে না। কীটতত্ত্ববিদদের সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, ২৪ ঘণ্টাই এডিস মশা কামড়ায়। তবে রাতের কামড়ানোর হার কিছুটা কম থাকে, ঘর আলোকিত থাকলে রাতেও কামড়াতে পারে। মোটকথা, বদলে গেছে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার আচরণ। ডেঙ্গু এখন সারা বছরের অসুখ হয়ে গেছে। তবে এ মশা দ্বারা রোগ বিস্তারের আরেকটি অবাক হওয়ার মতো তথ্য হলোÑ সাধারণত দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়ায় এবং ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ হয় দিনের বেলায়। তবে এই মশা আসলে ঠিক কোন সময় কামড়ায় এ নিয়ে এখনো যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।
ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। শরীরে তীব্র ব্যথা, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, গায়ে র্যাশ ওঠা বা লালচে দানা আসা ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। এছাড়া রোগীর বমি বমি ভাব, অরুচি, ডায়রিয়া, দাঁতের মাড়ি বা নাক বা মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হওয়া, গলা ব্যথা, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়াÑ এসবও ডেঙ্গুর লক্ষণ। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর শুরু হয়। তাই দুই-তিন দিনের বেশি জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ল্যাবরেটরি টেস্টে ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও রোগীকে বাড়িতে রেখে শুশ্রুষা করা যেতে পারে। তবে কিছু উপসর্গ দেখা দিলেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে যে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে সেগুলো হলোÑ ১. পেটে ব্যথা। ২. প্র¯্রাবের সঙ্গে রক্তপাত। ডেঙ্গুর সংক্রমণ হলে রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট কমে যেতে শুরু করে। আর এ কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে হেমারেজ অর্থাৎ রক্তক্ষরণ হয়। মাড়ি ও নাক থেকেও হতে পারে রক্তপাত। ৩. সারাদিনে যে পরিমাণ প্র¯্রাব হতো, তার পরিমাণ কমে যাওয়া। ৪. শ্বাসকষ্ট ৫. ত্বকে লাল লাল র্যাশ ইত্যাদি।
ডেঙ্গু জ্বরে একেবারে শুরু থেকেই চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। চিকিৎসায় বিলম্ব হলে জীবন সংশয়ের কারণ হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর প্রধান কারণ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে দেরি করে আসা। তাই এই মৌসুমে জ্বর হলে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়া জরুরি। ডেঙ্গু জ্বর হলে ওষুধ হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। অনেকে না জেনে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকে, যার ফলে শরীর থেকে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা বাড়ে। তাই এ সময় ব্যথানাশক ঔষধ সেবন না করাই উত্তম।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় পেঁপে পাতার রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। এভাবে এটি ডেঙ্গুর ফলে সৃষ্ট রক্তক্ষরণ সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো রোগের চিকিৎসায় যেকোনো ধরনের ঔষধ ব্যবহারের আগে সেই ওষধটিকে বেশ কয়েকটি ধাপের বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ পাড়ি দিতে হয়। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পেঁপে পাতার সম্ভাব্য উপকারিতা দেখা গিয়েছে। তবে এসব গবেষণায় ব্যবহৃত পেঁপে পাতার রস তৈরির কাঁচামাল, প্রক্রিয়া ও আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। ঠিক কোন পরিমাণে, কত দিন ধরে এবং কোন ধরনের গাছের পাতার রসে উপকার পাওয়া যেতে পারে সেই বিষয়ে এখনো অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তাই ডেঙ্গুর চিকিৎসায় পেঁপে পাতার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ মেনে চলা এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বাঞ্চনীয়।
পরিশেষে বলা যায় যে, ডেঙ্গু জ্বর যেহেতু মশার কামড়ে বিস্তার লাভ করে তাই এ রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো সংক্রমিত মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এর জন্য মশার বংশ বিস্তারের সব রকম পরিবেশ সমূলে ধ্বংস করতে হবে। বাড়ির চারপাশে ও ছাদে পানি জমতে না দেয়া। বাড়ির বাইরে বের হলে লম্বা হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট এবং পায়ে মোজা পড়ে পুরো শরীর ঢেকে রাখার চেষ্টা করা। সন্ধ্যার আগেই ঘরের জানালা ও দরজা লাগিয়ে দেয়া। দিনে এবং রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা। সাধারণত পড়ে থাকা গাড়ির পুরনো টায়ার, ফুলের টব, নারিকেলের পরিত্যক্ত খোসা, কোমল পানীয়ের পরিত্যক্ত ক্যান ও প্লাস্টিকের কৌটায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে; এগুলোতে বৃষ্টির পানি জমতে না দেয়া। একুরিয়াম, রিফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের নিচেও পানি জমতে না দেয়া। বাড়িতে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্য সদস্যদের মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও সহ. অধ্যাপক, শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজ, শেরপুর
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক