চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়লেই কি সমস্যার সমাধান হবে?
২২ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধি না পেলে কোনো দেশে জনসংখ্যা বাড়তি বোঝা হিসেবে গণ্য হয়। ঠিক যেটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয়। দেশে প্রতিবছর লাখ লাখ গ্র্যাজুয়েট তৈরি হয়, কিন্তু তাদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ দেশে নেই। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সৃজন না হওয়ায় একদিকে যেমন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে এসব শিক্ষিতজন সমাজ ও পরিবারের বোঝা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। সীমিত সম্পদের এই দেশে একটা শিশুর জন্ম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন পর্যন্ত পিতা-মাতাকে অপরিসীম ত্যাগের পাশাপাশি পরিবারকে তার পেছনে অনেক সম্পদ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এত ত্যাগ-তিতিক্ষার পরেও যথোপযুক্ত কর্মসংস্থানে অভাবে উচ্চশিক্ষিতের একটা বড় অংশ আজ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে না। অনেক আশা ভরসা নিয়ে একজন শিক্ষিত ব্যক্তি যখন কর্মক্ষম মানুষে পরিণত হয়ে দেশের প্রচিলত নানান অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের মর্যাদা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ না পায় তখন একদিকে যেমন তারা হতাশায় ডুবে যায়, অন্যদিকে তারা পরিবার, সমাজ তথা দেশের বোঝায় পরিণত হয়। তাদেরকে বেকার হিসেবে গণ্য করা হয়। মেধা-মনন, দক্ষতাসহ সার্বিক দিক থেকে উপযুক্ত এসব তরতাজা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে অন্যের গলগ্রহ নিয়ে পরিবারের বোঝায় পরিণত হয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা বেকারের খাতায় নাম লেখায়।
আমাদের দেশের একজন শিক্ষার্থীর, দেশে প্রচলিত পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে তার লেখাপড়াজীবনের মহামূল্যবান সময়ের অনেকটা অপচয় হয়ে যায়। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে চাকরি পেতে অধিকাংশ শিক্ষিত ব্যক্তি নাকানি-চুবানি খায়। কেননা, দেশের রীতিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া ৩০ বছর, সেক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর শেষ করে গড়ে দেড় থেকে দুই বছর সময় থাকে সরকারি চাকরিতে আবেদনের। দেশের প্রচলিত পদ্ধতিগত ত্রুটি কিংবা সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর ক্ষতির দায় কেউ নিতে চায় না। বাধ্য হয়ে তারা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়লেই কি এই বেকারত্বের সমাধান হবে, না কি সেক্ষেত্রে আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, এমন প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান।
গুণগত ও মানসম্পন্ন গবেষণার অভাবে দেশে প্রকৃত বেকারের পরিসংখ্যান এখনো অনেকটা অজানাই রয়ে গেছে। পত্রপত্রিকায় বেকারত্বের যে প্রতিবেদন মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হয়, তা সচারাচর সাদামাটা এবং অসম্পূর্ণ। তাই বেকারত্বের সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে অনেকের ভিন্নমত রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু খবরের সূত্র ধরে বেকারত্বের পরিসংখ্যান খুঁজতে চেষ্টা করেছিলাম। ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ এই তিন মাস সময়ে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে। জরিপ অনুসারে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের বেকারের সংখ্যা ২৩ লাখ ২০ হাজার থেকে বেড়ে চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে এসে দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৯০ হাজার। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে বেকার বলতে মূলত তাদেরকেই বোঝানো হয়েছে, যারা গত ৭ দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কাজ করেনি, কিন্তু গত ৭ দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন। শ্রমশক্তি এই জরিপে আরও প্রকাশ করা হয় যে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। শ্রমশক্তির এই জরিপে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা নিয়ে কোন সুস্পষ্ট প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক জরিপ বলছে, দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা এত আধিক্যের কারণ হিসেবে টিআইবি’র ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, উদ্বেগের বিষয় হলো, শিক্ষিত বেকারের এই সমস্যাটি ক্রমান্বয়ে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ তো নেই, বরং সবচেয়ে আতঙ্কজনক বিষয় হচ্ছে দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যাকে অস্বীকার করা বা প্রকাশ না করার প্রচেষ্টা। বিষয়গুলো সত্যিই খুবই হতাশাজনক।
শিক্ষিত বেকার বাড়ার অনেকগুলো কারণ আছে যার মধ্যে কর্মমুখী শিক্ষার অভাব অন্যতম। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে কর্মক্ষেত্রের তেমন কোন যোগসূত্র নেই। ফলে ভালো ফল করেও অনেকেই কর্মক্ষেত্রে যোগদানের সুযোগ পায় না। আবার চাকরিপ্রাপ্ত অনেকেরই তাদের লেখাপড়ার সাথে কর্মক্ষেত্রের কোনরূপ মিল নেই। এমন বহু উদাহরণ আছে যে, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়া করে বিসিএস দিয়ে প্রশাসন ক্যাডার বা পুলিশ ক্যাডারে চাকরি করছে। এ ধরনের ব্যবস্থা একটি দেশের জন্য কখনো সুফল বয়ে আনেনা। এছাড়াও আমাদের সমাজে একটা গদবাঁধা নিয়ম আছে যে, ছেলেমেয়ে শিক্ষিত করে তাদের সরকারি চাকরি পেতে হবে। সকল বাবা মায়ের স্বপ্ন তাদের সন্তান উচ্চশিক্ষিত হবে, ভালো ডিগ্রিধারী হবে, উচ্চপদে চাকরি করবে। এ কারণে সকলে উচ্চশিক্ষিত হবার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। কিন্তু সেই উচ্চশিক্ষার মান অনুযায়ী দেশে উচ্চমানের কর্মসংস্থান নেই। ফলে তৈরি হচ্ছে শিক্ষিত বেকার।
শিক্ষিত বেকার বাড়ার আরেকটি কারণ হলো, সেশনজট। দেশে প্রচলিত পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়াজীবনের মহামূল্যবান সময়ের অনেকটা অপচয় হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, একজন শিক্ষার্থী ১৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার কথা ১৮ বছর বয়সে। এরপর ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) ২২ বছর এবং পরবর্তী ১ বছর অর্থাৎ ২৩ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও, চাকরির জন্য প্রত্যেকের ৭ বছর সময় হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে শিক্ষার্থীদের যে সময় নষ্ট হয়, সেই সময় কি আদৌ এই ৩০ বছর সময়ের মধ্যে ধরা হয় কিনা এই প্রশ্ন সবার মুখে। বর্তমানে স্নাতকোত্তর শেষ করতে কারও কারও ২৬ থেকে ২৮ বছর লেগে যায়। ২৮ বছর বয়সে লেখাপড়া শেষ করে বের হয়ে চাকরি পেতে হিমশিম খেলেও পদ্ধতিগত ত্রুটি বা সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর এই ক্ষতির দায় কেউ নিতে নারাজ।
আমাদের দেশে যে হারে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও পরীক্ষায় পাশের হার বাড়ছে সেই হিসেবে শিক্ষিতদের মধ্যে মেধার বিস্তার হচ্ছেনা। শুধুমাত্র পাশের হার কিংবা ভালো ফলাফলের হার বাড়ালে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট সহ সম্ভাব্য যেসব ক্ষতির আশঙ্কা করা হয় বর্তমানে সেগুলো হচ্ছে। এ উপমহাদেশে এমন সময়ও ছিল, যখন এন্ট্রান্স (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় পাস করলেও এলাকাবাসী দেখতে ভিড় জমাত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তো ছিল বিরাট ব্যাপার। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ১০টি। সে সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে ক্যারিয়ার গঠনে এক ধরনের মোটামুটি মাপের নিশ্চয়তা ছিল। এখন দেশে মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ৫৮টি এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১১১টি। প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার কথা। কিন্তু গ্র্যাজুয়েট তৈরি হওয়ার তুলনায় চাকরির ক্ষেত্র বাড়েনি। তাহলে শিক্ষিত বেকার বাড়ানোই কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল! বর্তমানে দেশে ১০ লাখের উপরে গ্রাজুয়েট বেকার বসে আছে। তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র সরকার ঠিক করতে পারেনি। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সের কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই। বাইরের দেশে পদ্ধতিগত বা সেশনজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীদের বছরের পর বছর আটকে থাকার মত উদ্ভট ঝামেলাও নেই। তাই যথাসময়ে শিক্ষাজীবনের পাঠ চুকিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট সময় হাতে থাকে। আবার, কর্মক্ষেত্রের প্রাচুর্য অত্যাধিক হওয়ায় সেখানে শিক্ষিত বেকার খুঁজে পাওয়া যায়না। কিন্তু আমরা এই সবগুলো ইন্ডিকেটর থেকে বেশ পিছিয়ে। আর সেজন্য ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
বেকারত্ব কোন একটা জাতির জন্য অভিশাপস্বরূপ। এই সমস্যা সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে একযোগে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন এবং পাশের হার না বাড়িয়ে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। যেখানে শুধুমাত্র ভালো ফলাফলের দিকে জোর না দিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে দক্ষ এবং মেধাবী করে গড়ে তোলায় হবে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও গদবাঁধা নিয়মনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষেত্র অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র পছন্দ করার মনমানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। লেখাপড়া শেষ করে সরকারি চাকরিই একমাত্র অবলম্বন এই মানসিকতা শিক্ষার্থীদের মন থেকে পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে হবে। এ উদ্দেশ্যে, সরকারকে দেশে মানসম্মত ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। বাইরের উন্নত দেশসমূহে সরকারি চাকরির আশায় কেউ বসে থাকে না। সকলে যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রাইভেট চাকরিতে যোগদান করে। শিক্ষার্থীদের এমন মানসিকতা তৈরি করতে হবে যে, শিক্ষিত বেকার হয়ে থাকার চেয়ে প্রাইভেট চাকরিতে যোগদান কোন অংশে সম্মানহানিকর নয়। এছাড়াও নিজেদের যেকোন সময়ে যেকোন বিরূপ পরিস্থিতির সামলানোর জন্য প্রস্তুত করতে হবে। বাড়তি জনসংখ্যাকে বোঝা হিসেবে না নিয়ে যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত করে অর্থনীতিকে আরও মজবুত ও বেগবান করা যেতে পারে।
বেকারত্বকে দেশের যুবসমাজ ইচ্ছা করলেই দূর করতে পারে। এজন্য যুবসমাজকে লেখাপড়া শেষ করে একটি সরকারি চাকরি পাওয়াটাই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য, এমন চিন্তা চেতনাকে দূর করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই লেখাপড়া শেষ করে বড় মানের একটা সরকারি চাকরি করবে এই ধ্যান ধারণা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে। কিন্তু দিন শেষে যখন চাকরি হাতে এসে ধরা দেয় না তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে। তাই শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে ছত্রাবস্থা থেকেই মানসিকভাবে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি করা উচিত। লেখাপড়ার পাশপাশি বিভিন্ন ধরনের কাজের উপর উপযুক্ত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে, যাতে দিন শেষে চাকরি না পেলেও নিজের অর্জিত দক্ষতা ও জ্ঞান দিয়ে নিজেই নিজের আত্মকর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা যায়। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে মনে রাখতে হবে, প্রতিযোগিতার বাজারে নিজিকে টিকিয়ে রাখার যে ধৈর্য এবং ত্যাগ তিতিক্ষা সহ্য করা লাগে তার চেয়ে অনেক কম শ্রমে ভালো মানের উদ্যোক্তা হওয়া যায়। স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হয়েও বেশি অর্থ প্রতিপত্তি তৈরি করা যায়, এমনকি সামাজিক যশ মান ও পাওয়া যায়। দেশের যুবসমাজের প্রত্যেকে স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। যুবশক্তিকে যথোপযুক্ত শ্রমে নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে কৃষিকাজ, মৎস্য চাষ, পশু পালন, কৃষি খামার, দুগ্ধ খামার ইত্যাদি কাজে নিজেদের উৎসাহী করে গড়ে তোলার মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
সবাইকে অনুধাবন করতে হবে যে, বেকার সমস্যা আমাদের জাতীয় একটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। এই সমস্যা সমাধানে সর্বপ্রথমে বিদ্যমান সমাজ কাঠামোর সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণা করে, যুগাপোযোগী শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। দেশে শিল্প-কলকারখানা স্থাপন করে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। শ্রমের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্পের উন্নয়ন করতে হবে। সরকারি চাকরির মানসিকতা পরিহার করে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজের প্রতি তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নারীশিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। দেশের শিক্ষিত যুব সমাজকে গ্রামমুখী করে গড়ে তোলার লক্ষ্য স্থির করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ওপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র প্রস্তুত করে সেখানে যুবশক্তিকে নিয়োগ করতে হবে। উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের বেকারত্ব ঘোচাতে ফলপ্রসূ অবদান রাখতে পারে। অন্যদিকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার পথ উন্মুক্ত করতে হবে। বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা গড়ে তুলে দক্ষ, অদক্ষ তরুণ-তরুণীদের সেখানে কাজে লাগাতে হবে। তবেই দেশ থেকে বেকারত্ব দূর হতে পারে, অন্যাথায় এই সমস্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা