ইলিশ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে
২২ জুলাই ২০২৩, ০৭:৫০ পিএম | আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের তরফে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ নেয়ার ফলে সামগ্রিকভাবে উৎপাদন বাড়লেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতি বছরই উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার কমছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার প্রধান কারণ জাটকা নিধন। উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে দেশ ৫৮ হাজার টন পূর্ণবর্ধিত ইলিশ থেকে বঞ্চিত হয়েছে শুধুমাত্র জাটকা নিধনের কারণে। এছাড়া মা ইলিশ যখন সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে, তখন ‘গিলনেট’ ব্যবহার করার ফলেও অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। মা ইলিশের অবাধে নদীতে এসে ডিম ছাড়া এবং জাটকা বা ছোট ইলিশ নিধন বন্ধ করে পূর্ণবর্ধিত ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সরকারিভাবে বছরে দু’বার ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। প্রথম দফায় মার্চের ১ তারিখ থেকে দু’ মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয় ইলিশ আহরণ। আর দ্বিতীয় দফায় অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে ২২ দিন বন্ধ রাখা হয়। প্রথম দফায় দু’মাস বন্ধ রাখা হয়, যাতে মাছের ছানা বড় হতে পারে। আর দ্বিতীয় দফায় ২২ দিন বন্ধ রাখা হয়, যাতে ইলিশ ও অন্যান্য মা মাছ নির্বিঘেœ ডিম ছাড়তে পারে। বলা বাহুল্য, এই ব্যবস্থায় ইলিশের সামগ্রিক উৎপাদন বেড়েছে। তবে গত কয়েক বছরে উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কমার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। জাটকা নিধন কিংবা গিলনেট ব্যবহার এর উল্লেখযোগ্য কারণ বলে বর্ণিত হলেও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, জলবায়ুর পরিবর্তন, বিশেষ করে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং নদনদীর নাব্য কমে যাওয়া এর জন্য কম দায়ী নয়। এ বছর ইলিশ আহরণ একেবারেই কম। অন্যান্য বছর জুন-জুলাই মাসে বাজারে ইলিশের প্রাচুর্য লক্ষ করা গেলেও এবার তার ব্যতিক্রম প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। ইলিশ তেমন মিলছে না কোথাও। পক্ষান্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে কি ইলিশ তার অবস্থান ও গতিপথ পরিবর্তন করছে? এ নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন, যদিও এ ধরনের গবেষণার ধারা আমাদের দেশে অত্যন্ত ক্ষীণ। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইলিশের ওপর ধারাবাহিক ও ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা জরুরি। এই শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা নেই। অভিজ্ঞজনদের ধারণা, বৃষ্টি হলে ও নদনদী পানিতে ভরে গেলে ইলিশ ধরা পড়বে, বাজারেও ইলিশের দেখা মিলবে।
সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ উঠে যাচ্ছে। উপকূলীয় জেলে পল্লীগুলোতে ইতোমধ্যেই প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। মহাজনরা প্রস্তুত ট্রলার নিয়ে, জেলেরাও প্রস্তুত মাছ ধরার জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে। এতদিন এই দিনটির জন্যই তারা অপেক্ষায় ছিল। আজ থেকে শুরু হবে মৎস্যশিকার। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশের জেলেদের জন্য মৎস্যশিকার বন্ধ থাকলেও ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের জেলেদের জন্য সাগর ছিল উন্মুক্ত। তারা ইচ্ছেমত মৎস্যশিকার করেছে, এমনকি বাংলাদেশের পানিসীমানায় অনুপ্রবেশ ও মৎস্যশিকার বন্ধ করা যায়নি। সরকার কিংবা কোস্ট গার্ড পানিসীমা সুরক্ষায় সফল হতে পারেনি। এই ব্যর্থতা আমরা বরাবরই লক্ষ করে আসছি। বিদেশি মৎস্যশিকারীরা সব সময় বাংলাদেশের পানিসীমায় ঢুকে মৎস্যশিকার করে নিয়ে যায়। কখনো কখনো দস্যুতা করে। বাংলাদেশি জেলেদের জাল ও সরঞ্জাম ছিনতাই থেকে শুরু করে মৎস্য লুট এমনকি হত্যাকা- পর্যন্ত ঘটায়। মৎস্যক্ষেত্র নষ্ট বা ধ্বংস করে। এই হানাদারি, ক্ষতিসাধন ও নাশকতা বন্ধ করার বিকল্প নেই। আমরা এর আগেও বলেছি, সাগরে যেহেতু বিভিন্ন দেশের সুনির্দিষ্ট অধিকার ও অংশীদারিত্ব রয়েছে, সুতরাং কোনো একটি দেশের পক্ষে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করলে পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দেশেরও এগিয়ে আসা এবং সমন্বিত কার্যব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিষয়টি নিয়ে ভারত-মিয়ানমার প্রভৃতি দেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়া দরকার। সাগরের সার্বিক নিরাপত্তা ও সম্পদ সুরক্ষার জন্য এর আবশ্যকতা প্রশ্নাতীত। যতদিন এমন ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততদিন আমাদের কোস্ট গার্ডকে সাগরে সদা তৎপর রাখতে হবে, সাগরসীমার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করতে চাই, সাগরে মৎস্যশিকার উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে অন্যান্য মাছের সঙ্গে ইলিশের আহরণ বাড়বে।
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। আরো কিছু দেশেও ইলিশ আহরণ-উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে ইলিশ উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ সর্বশীর্ষে। গুণগত মানের দিক থেকে বাংলাদেশের ইলিশ শ্রেষ্ঠতম। ইলিশের জন্য বাংলাদেশ বা বাংলাদেশিরা গর্ব করে থাকে সঙ্গতকারণেই। মৎস্যখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে উল্লেখযোগ্য। এফএও’র ‘দ্যা স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২২’-এর প্রতিবেদন মতে, বৈশ্বিক মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট অবস্থান রয়েছে। স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে তার অবস্থান তৃতীয়, চাষেও তৃতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম এবং সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষ ২৫ দেশের মধ্যে ২৫তম। ইলিশ, চিংড়ি এবং কিছু সামুদ্রিক মাছ বাংলাদেশ রফতানি করে। পরিমাণে বেশি না হলেও মাছ তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য। মাছ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সে সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। মাছ দেশের মানুষের জন্য আমিষের প্রধান উৎস। উচ্চ দামের বিভিন্ন রকমের গোশত কেনার সামর্থ্য অধিকাংশ মানুষের নেই। মাছই তাদের কাছে সব। আবার ইলিশ, চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছ রফতানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বছরে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে মৎস্যখাতের উন্নয়ন ও বিকাশে আরো বিভিন্ন ধরনের বড় ও ব্যাপকভিত্তিক প্রকল্প বা কর্মসূচি নিতে হবে। ইলিশের ব্যাপারে উচ্চতর গবেষণা যেমন দরকার, তেমনি জাটকা ও মা মাছ ধরার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শতভাগ কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেরা যাতে যথোপযুক্ত খাদ্য ও পণ্য সহায়তা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। চোরা মৎস্যশিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ছাড়াও সাগরসীমার নিরাপত্তা নিরঙ্কুশ করতে হবে। এসব ব্যবস্থায় ইলিশসহ মৎস্য উৎপাদন আশানুরূপ বাড়বে বলে আশা করা যায়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা