ওষুধ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে
৩০ জুলাই ২০২৩, ০৯:১৯ পিএম | আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:২২ এএম
কিছুদিন ধরে বাবা আমাদের সাথে আছেন। বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা থাকায় চেকাপের জন্য গ্রামের বাড়ি থেকে ওনাকে নিয়ে আসি। গেল কিছুদিন বাবাকে ডাক্তার দেখানো, চেকাপ করানো নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার হয়েছে। বছর দশেক আগে বাবার হার্ট অ্যাটাক হলে রিং পরানো হয়। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে সামান্য জটিলতা ছাড়া বাবা একরকম সুস্থই বলা যায়। তবে নিয়মিত শারীরিক চেকাপসহ বেশ কিছু ওষুধ সেবন করা লাগে। ওষুধ কেনার এই কাজটা দৈনন্দিন বাজারের সাথে আমিই করে থাকি। বাসা থেকে অল্প হাঁটা দূরত্বে বাজার। বেশ পুরানো ঐ বাজারে সব মিলিয়ে গোটা ১৫ এর মতো ফার্মেসি আছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত ওষুধ সাপ্লাই দিতে প্রতিটি ফার্মেসিতে কমপক্ষে ৪/৫ জন ফার্মাসিস্ট নিয়োজিত আছে। পাইকারি, খুচরা সব ধরনের ওষুধ কেনা-বেচা হয় এসব ফার্মেসিতে। সবসময় এত বেশি ভিড় লেগে থাকে এসব ফার্মেসিতে সেটা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ ব্যতীত অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা অবধি ভিড় একেবারে তুঙ্গে থাকে। অনেক লম্বা সিরিয়াল পড়ে যায়। ওই ভিড়ের মধ্যে সবাই যার যার প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে ব্যস্ত থাকে। অন্য সবার মতো আমিও ফার্মেসিতে গিয়ে বাবার জন্য ওষুধ নিতে সিরিয়াল দিই। বেশ লম্বা সিরিয়াল। তবে ফার্মেসিতে নিয়োজিত ফার্মাসিস্টরা পরিচিত হওয়ায় একটু দ্রুতই আমার প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো দেওয়ার চেষ্টা করে। তারপরেও ১৫/২০ মিনিট সিরিয়ালে দাঁড়ানো লাগে।
এই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে আমি মোটেই বিরক্ত হই না। বরং ওষুধ কিনতে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করি। এসব ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা অধিকাংশ মানুষই গ্রামের স্থানীয় এবং সহজ সরল প্রকৃতির। চেহারায় বলে দেয়, বেশিরভাগ মানুষই বাড়ির ক্ষেত-খামারে খেটে অথবা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। অল্প বয়সী, মাঝ বয়সী, বয়স্ক সব ধরনের পুরুষ ও মহিলা এসব ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে আসে। এদের কেউ ওষুধ সেবনের পরে শেষ হয়ে যাওয়া ওষুধের খালি পাতা, কেউ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন, কেউ মোবাইলে প্রেসক্রিপশনের ছবি, আবার কেউ কোন রকম প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধের মুখস্থ নাম বলে ওষুধ নিচ্ছে। তবে সবার ওষুধের লিস্ট এত লম্বা থাকে যে, ফার্মেসিতে কর্মরত ফার্মাসিস্টরা ওষুধ ক্রেতাদের কাছে কতদিনের বা কতটাকার ওষুধ দেবে সেটা আগে থেকে শুনে নেয়। এরপর ওষুধ ক্রেতারা নিজের সঙ্গে থাকা টাকার পরিমাণ গুণে দেখে এবং টাকার সাথে মিলিয়ে ওষুধ কেনে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা ৫ থেকে ৭ দিনের ওষুধ নেয়। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সহজেই আঁচ করতে পারি, এই ৫-৭ দিনের ওষুধের দামে দিতেই তাদের মুখ শুকিয়ে যায়।
এটা হলো আমাদের দেশের গ্রাম থেকে গঞ্জের প্রতিটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তিদের অবস্থা। তবে দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বা মাথাপিছু আয় যে বেড়েছে সেটা ফার্মেসি, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আশপাশে ঘুরলে সহজেই বোঝা যায়। অধিকাংশ মানুষ জীবন বাঁচাতে কিংবা একটু সুস্থতার আশায় চিকিৎসার পেছনে তাদের আয়ের সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করে। অন্ততপক্ষে আমি ফার্মেসি কিংবা হাসপাতালে গেলে এ বিষয়গুলো খেয়াল করার চেষ্টা করি। ওষুধের ফার্মেসিতে এত বেশি ক্রেতার আনাগোনা যে কাউকে সহজেই বুঝিয়ে দেবে, দেশের মানুষের সুস্থতা সম্পর্কে। তবে আমার এই লেখা সেদিকে না গিয়ে একটু অন্য বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। আমার কৌতূহল জাগল এটা ভেবে যে, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন বা নির্দেশনা ব্যতিরেকে ফার্মেসি থেকে এতসব ওষুধ বিক্রি করছে, এটা ওষুধ সেবনকারীদের জন্য কতটুকু নিরাপদ! বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তির ওষুধের তালিকায় কিছু কমন ওষুধ, যেমন, গ্যাসের ওষুধ, প্যারাসিটামল, হার্টের অ্যাসপিরিন ও কোলেস্ট্রল কমানোর ওষুধ, মেট্রোনিডাজল, অ্যান্টিবায়োটিক ও ডায়াবেটিসের ওষুধ নজরে পড়ল। এরপর একটু জানতে চেষ্টা করি চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত, সামান্য শারীরিক সমস্যা হলেই সচারাচার আমরা যেসব ওষুধগুলো দেদারছে সেবন করি সেগুলোর শরীরের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে। যে বিষয়গুলো জানতে পারলাম তার সামান্য কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরছি।
দেশের ছোট বড় সব ধরনের মানুষের মধ্যে মুড়ি-মুড়কির মতো যে ওষুধটি খাওয়ার প্রবণতা আছে সেটি হলো গ্যাসের ওষুধ। বাজারে সাধারণত ওমিপ্রাজল বা ইসোমিপ্রাজল গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির ভিন্ন ভিন্ন নামের গ্যাসের ওষুধ পাওয়া যায়। পেটে কোনো সমস্যা হলেই মানুষজন চিকিৎসকদের কোনো রকম পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে গ্যাসের ওষুধ কিনে সেবন করেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, এই ওষুধটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে সেবনে তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাসের কষ্ট কমে ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। শরীরের আয়রন গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়, তখন শরীর প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি পায় না। এমতবস্থায় রোগীর শরীরে রক্তশূন্যতা তৈরি হয়। একনাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব ওষুধ সেবনে শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায়। তখন শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। শরীরে সংক্রমণ বেড়ে যায়। এছাড়া অ্যাসিডের অভাবে ক্যালসিয়াম দ্রবীভূত হয় না। ফলে হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়।
জ্বর, মাথা ব্যথা বা শরীর ব্যথার জন্য খুবই পরিচিত ওষুধ এসিটামিনোফেন বা প্যারাসিটামল। চিকিৎসকরা জ্বর বা শরীর ব্যথার কারণে রোগীকে প্যারাসিটামল দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন কোম্পানি এই গ্রুপের ওষুধকে নানা নামে বিক্রি করে থাকে। এই প্যারাসিটামল কখন, কীভাবে বা কতদিন সেবন করতে হবে চিকিৎসকরা সেটা প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করে দেন। কিন্তু অধিকাংশ রোগী জ্বর বা শরীর ব্যথা হলেই চিকিৎসকের কোনো পরামর্শ ছাড়াই হরহামেশা এটা ফার্মেসি থেকে নিজ উদ্যোগে কিনে সেবন করে থাকে। ফলে একসময় এটা কার্যক্ষমতা হারায় এবং সেইসাথে শরীরের নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, দীর্ঘদিন একটানা প্যারাসিটামল বা এসিটামিনোফেন সেবনে যকৃতের ক্ষতি হতে পারে।
অ্যাসপিরিন খুব দরকারি একটি ওষুধ। আবার একই সঙ্গে এটা বেশ বিপদজ্জনকও। হার্টের রোগীদের জন্য অ্যাসপিরিন অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ। তবে বয়স্করা, যাদের একই সাথে হার্টের অসুখ এবং ডায়াবেটিসসহ আরও জটিলতা আছে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অ্যাসপিরিন প্রেস্ক্রাইব করে থাকেন। অ্যাসপিরিন সেবনের পরে রোগীর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকগণ সেটাও পর্যবেক্ষণ করেন। কেননা, এই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ মাত্রাহীন ও অনিয়ন্ত্রিত সেবনের ফলে রোগীর খাদ্য থলি ছিঁড়ে যাওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়াসহ আরও জটিল সব উপসর্গ দেখা দেয়। তাই এই ধরনের ওষুধ ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া একেবারেই সেবন করা উচিত নয়।
গা হাত-পা ব্যথা বা মাথা ব্যথার জন্য অনেকে নানা ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে থাকে। বিশেষ করে পড়ে গিয়ে হালকা ব্যথা বা মোচকাজনিত ব্যথা পেলে রোগীরা নিজেই ফার্মেসি থেকে আইবুপ্রোফেন বা ডাইক্লোফিনাক জাতীয় ওষুধ কিনে সেবন করে। ব্যথানাশক ওষুধের ভয়ানক সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন, এটা পেটের সমস্যা তৈরি করে, অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে পাকস্থলীর ক্ষতি করে, রক্তক্ষরণও হতে পারে। কারও কারও ব্যথানাশক ওষুধ সেবনে হাতে-পায়ে পানি চলে আসে এবং ফুলে যায়। এসব ওষুধ দীর্ঘদিন সেবনে গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল ব্লিডিং হতে পারে। অনেকের হজম শক্তি কমে যায়, আলসার হয়, ওষুধে নেশাগ্রস্তও হয়ে পড়ে।
অ্যান্টিবায়োটিক জীবন রক্ষাকারী একটি ওষুধ। কিন্তু রোগীর রোগের ধরন নিরূপণ না করে যেমন চিকিৎসকদের কাউকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেস্ক্রাইব করা উচিত নয়, ঠিক তেমনি রোগীদেরও এই ওষুধ সেবনে যথেষ্ট নিয়ম কনুন মেনেই করা উচিত। প্রতিটা অ্যান্টিবায়োটিকের এক এক ধরনের কার্যক্ষমতা এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া আছে। এই ওষুধটি কখনোই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া দরকার সেটি হলো, প্রতিটি অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর শরীরে নির্দিষ্ট ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বলয় তৈরি করে। এজন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের সময় সঠিক ডোজ, সেবনের নির্দিষ্ট সময় ও পরিধি সবকিছুকে অত্যাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেবনে সময় ডোজ কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত বা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সেবন না করলে বা মাঝপথে বন্ধ করে দিলে রোগীর শরীরে ওই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। এটি এমন একটি সমস্যা যে বাকি জীবনে ঐ রোগীর শরীরে আর ঐ অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কাজ করবে না। সেক্ষেত্রে দেখা যায় একই অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকরা দিলেও সেটা ঐ রোগীর জন্য কোনো কাজ তো করছে না, বরং ক্ষতি হচ্ছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন শুরু বা বন্ধ করা কোনভাবেই উচিত নয়। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে যে কারো লুজ মোশন হতে পারে, পেট ব্যথা, ঝাপসা দেখার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে একটা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সঙ্গে অন্যান্য রোগের সম্পর্ক আছে। ফলে এ ধরনের ওষুধ প্রেস্ক্রাইব করার আগে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেক বিষয়াদি বিবেচনার দরকার পড়ে। কিন্তু ফার্মেসিতে কোনরকম ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই হরহামেশাই অ্যান্টিবায়োটিক বেচা বিক্রি চলছে। যদিও বাংলাদেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু কোথাও এই নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা সেটা কখনো তদারকি করা হয় না। যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিকের অনেক বেশি উপকারিতা এবং বিপরীতপক্ষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ রয়েছে সেজন্য, রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত রোগীর মুখের কথায় ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি কখনোই সমীচীন নয়।
বাংলাদেশের আরেকটি খুব কমন ওষুধ হলো মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধ। পেট একটু খারাপ হলেই আগে পরে কিছু না ভেবে এটা ফার্মেসি থেকে কিনে সেবন করে মানুষ। এই মেট্রোনিডাজলও এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরে র্যাশ ওঠার পাশাপাশি রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সেইসাথে রক্তক্ষরণ, পাইলসের সমস্যাসহ পেটে ব্যথার সমস্যা হতে পারে।
এসব ওষুধ ছাড়া আরও অনেক ধরনের ওষুধ আছে, যেগুলো বিক্রির সময় ফার্মেসির পক্ষ থেকে কোনরকম চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন চাওয়া হয় না। এমনকি ঘুমের ওষুধও প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হচ্ছে। বিষয়টি আমার কাছে আদৌ ভালো লাগেনি। চীনে থাকাকালীন দেখেছি, প্রেসক্রিপশন ছাড়া সেখানে ওষুধ ক্রয় করা কতটা কঠিন। এমনকি প্রেসক্রিপশন থাকলেও ফার্মেসি থেকে ওষুধ নেওয়া যায় না। একবার এমন হয়েছিল, পায়ের আঙ্গুলে ব্যবহারের জন্য একটা এন্টিফাঙ্গাল অয়েন্টমেন্ট দরকার ছিল। হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখানোর পরেই ওই অয়েন্টমেন্টটি প্রেস্ক্রাইব করেছিলেন। কিন্তু শেষ হয়ে যাওয়ায় আরেকটা দরকার পড়েছিল। প্রেসক্রিপশনে যেহেতু একটা ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা ছিল সেকারণে কোনো ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশনের বাইরে অয়েনমেন্টটি দিতে চায়নি। পূর্বে ব্যবহৃত অয়েনমেন্টের টিউব, প্রেসক্রিপশনসহ বেশ কয়েকটা ফার্মেসিতে কর্মরত ফার্মাসিস্টদের অনেকবার অনুরোধ করার পরেও কোনরকম কাজ হয়নি। কোনো উপায়ন্তু না পেয়ে পুনরায় একই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসককে অনুরোধ করলে উনি পুনরায় একই অয়েনমেন্ট প্রেস্ক্রাইব করার পরে সেটি নিতে পারি। এটা হলো চীনের চিকিৎসাসেবা বা ফার্মেসিগুলোর প্রকৃত অবস্থা। সেখানে আমাদের দেশে ফার্মেসিগুলো কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যে কাউকেই যেকোন ধরনের ওষুধ চাওয়ামাত্র দিয়ে দিচ্ছে। এখানে প্রেসক্রিপশন দেখার কোনো প্রয়োজন মনে করেন না ফার্মাসিস্টরা। বিষয়টি রোগ সারানোর চেয়ে রোগীকে আরও বেশি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে হলে, ওষুধ বিক্রির সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা বাঞ্ছনীয়। সেই নীতিমালা শুধুমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবিক প্রয়োগের দিকে জোর দিতে হবে। একজন ফার্মাসিস্টের প্রাথমিক ভূমিকা হলো চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীকে ঠিকমতো ওষুধ দেয়া। এটি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমাদের দেশের ফার্মেসিগুলো বি গ্রেডের ফার্মাসিস্টদের দ্বারা চালিত হয়, যাদের শিক্ষা এবং ওষুধ সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞানের অপ্রতুলতা রয়েছে। এটা নিশ্চিত, অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ বিতরণ বহু মানুষের প্রাণহানিসহ ব্যাপক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটাতে পারে। এরপরেও দেশে ওষুধ নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগই গৃহীত হয়নি। এর কারণ হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার কথাই উল্লেখ করা যায়। ওষুধ শিল্পে এসকল অসঙ্গতি দূর করতে, সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সুচিন্তিত মতামতের সমন্বয়ে, সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং সেগুলোর বাস্তবিক প্রয়োগের দিকে অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করার প্রয়োজন রয়েছে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজন ধারালো অস্ত্রাঘাতে হত্যা;আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ