অব্যাহত খরায় খাদ্যোৎপাদন ব্যহত হওয়ার শঙ্কা
৩১ জুলাই ২০২৩, ০৯:০০ পিএম | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম
এই মধ্য শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা নেই। অব্যাহত খরায় মাঠঘাট চৌচির। চাষাবাদ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এখন জমি তৈরি ও আমনের চারা লাগানোর সময়। পানির অভাবে কোনোটাই সম্ভব হচ্ছে না। জমি ভিজিয়ে চাষের উপযোগী করার জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন। জমি প্রস্তুত হলেই কেবল চারা লাগানো সম্ভব। বৃষ্টির আশায় বসে থাকলে আমনের আবাদ পিছিয়ে যাবে। এতে উৎপাদন মার খেতে পারে। উৎপাদন মার খাওয়ার অর্থ, খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। এটা কাম্য হতে পারে না। সুতরাং, যে কোনো মূল্যে আমন আবাদ যথাসময়ে হতে হবে এবং আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বজায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে সেচের কোনো বিকল্প নেই। সেচের প্রধান উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। দুইভাবে আমনের আবাদ হয়ে থাকে। প্রথমত: সেচের মাধ্যমে, দ্বিতীয়ত বৃষ্টির পানির মাধ্যমে। বৃষ্টিনির্ভর খেতেও এবার খরার কারণে সেচ দিতে হবে। এতে সেচের খরচ বাড়বে, যা যুক্ত হবে উৎপাদন খরচের সঙ্গে। দেশের উত্তরাঞ্চলে অনাবৃষ্টি ও খরার প্রকোপ বেশি। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে আমন আবাদে বিঘাপ্রতি ২০০০ টাকা খরচ হয়। এবার সেচের কারণে আরো ৫০০ টাকা বেশি পড়বে। এতে উৎপাদন খরচ এবং চাল-ধানের মূল্য বাড়বে। কৃষকের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তির সংকট বৃদ্ধি পাবে। এ গেলো একদিক। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানি আরো বেশি পরিমাণে তোলা হলে পানির স্তর অধিক নিচে চলে যাবে, যা প্রাকৃতিক স্থিতিস্থাপকতা বেশি মাত্রায় ক্ষুণœ করবে। সারাদেশেই, বিশেষেত উত্তরাঞ্চলে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। ভূউপরোস্ত পানির প্রাকৃতিক উৎস নদী-খাল-বিল-পুকুর ইত্যাদিতে পানির ভয়াবহ অভাব দেখা দিয়েছে। গাছপালা, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর তার বিরূপ প্রভাব পতিত হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, পানযোগ্য পানির অভাবও দিন দিন বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হলে ভূগর্ভে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, বর্ষায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে সেই শূন্যতা পূরণ হয়ে যায়। অথচ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিতকারণে বৃষ্টিপাত আগের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে। যেমন, এবারের বর্ষার দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও খুব অল্প পরিমাণেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। খরার প্রকোপ গ্রীষ্মকালের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ভূগর্ভে পানির শূন্যস্থান দীর্ঘদিন শূন্য থাকলে ভূমিধস বা ভূবিপর্যয় দেখা দেয়া অসম্ভব নয়। একথা নতুন করে উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে বা আরো প্রভাব পড়ার আশংকা বিদ্যমান আছে, এমন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রকৃতি-পরিবেশের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য এখানে দ্রæত পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। শীতের সময় শীতের দেখা না পাওয়া, বর্ষায় তীব্র দাবদাহের সঙ্গে অনাবৃষ্টি ইত্যাদি এর উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। বিশেষজ্ঞ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে অন্যান্য পরিবর্তনের সঙ্গে আশংকিত মাত্রায় বরফগলন, সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়-জলোচ্ছ¡াস, বান-বন্যা, অনাবৃষ্টি-খরা, দাবদাহ, ভূমিকম্প ইত্যাদি বাড়ছে। বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল এক সময় সাগরগর্ভে হারিয়ে যাবে এবং কোটি কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে বলে ইতোমধ্যে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাব থেকে বলতে গেলে কোনো দেশই মুক্ত নেই। এ প্রভাব কোনো দেশে কম, কোনো দেশে বেশিÑ এই যা প্রভেদ। এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে প্রকৃতির যে রুদ্রক্রুব্ধ রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করছি, অতীতে সেটা কল্পনাও করা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তনই যে এর মূলে, বিশেষজ্ঞ-বিজ্ঞানীদের মধ্যে তাতে কোনো দ্বিমত নেই। এবার বিশ্বজুড়ে খাদ্যোৎপাদন হ্রাস এবং বিভিন্ন দেশে খাদ্যাভাব, এমন কি কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে খাদ্যাভাব বা প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে বলে সরকার বড়গলা করে দাবি করলেও চাল-গমের আমদানি কিন্তু বন্ধ হয়নি। এবছরও প্রচুর চাল ভারত থেকে আমদানি করতে হয়েছে। চাল-আটার দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় নেই। এরই মধ্যে ভারত চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। গমের আমদানি নিয়েও নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশে খাদ্য সংকট বা খাদ্যের দাম আরো বাড়তে পারে।
সামগ্রিক অবস্থার এই প্রেক্ষাপটে আমাদের খাদ্যোৎপাদন বাড়াতেই হবে। দেশে ডলারসংকট যেভাবে বাড়ছে। তাতে বিশ্ববাজারে খাদ্য থাকলেও আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। মনে আছে অনেকের, এক সময় বিশ্বে খাদ্য সংকট এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে, অর্থ থাকা সত্তে¡ও শত চেষ্টায়ও আমরা খাদ্য আমদানি করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই খাদ্য নিয়ে কোনো ঝুঁকিই নেয়া যাবে না। খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে যেভাবে সম্ভব। অনাবৃষ্টি ও খরায় আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার যে-আশংকা দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মেগা প্রকল্পের জয়গান গেয়ে দিন পার করার সময় এখন আর নেই। মেগা প্রকল্প অধিকাংশই অবকাঠামোকেন্দ্রিক। এসব যাতায়াতের সুবিধা দিতে পারে, জীবনযাত্রায় সহজতা আনতে পারে। কিন্তু খাদ্যের সংস্থান করতে পারে না, যার ওপর মানুষের জীবনধারণ ও বেঁচে থাকা নির্ভর করে। আজকে আবাদি জমি যদি পড়ে থাকে, তবে মানুষের খাদ্যে টান পড়বে। গবাদি পশুসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নাজুক পরিস্থিতি নেমে আসবে। তাই সরকারকে আবাদ-উৎপাদনের দিকে অধিক নজর দিতে হবে। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা তাদের নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরাজমান ও আশংকিত প্রতিক্রিয়া মোকাবিলার যথোপযুক্ত উদ্যোগ ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ডেল্টা প্লানে প্রাকৃতিক, পরিবেশিক ও আর্থিক উন্নয়নের একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এনিয়ে কথা যথেষ্টই হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। সরকারকে এ প্লান বাস্তবায়নে দ্রæত উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে