জনপ্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক দলের ঐতিহাসিক দায়
০১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বন্ধ্যাত্বের পরিসীমা উত্তীর্ণ হয়ে একটি অনিবার্য পরিসমাপ্তির দিকে যাত্রা শুরু করেছে। আগামি নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মত মৌলিক ইস্যুগুলোর কাক্সিক্ষত উন্নয়নের লক্ষ্যে ইউরোপ-আমেরিকান প্রতিনিধিদের সিরিজ বৈঠকের সময় থেকেই দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো একদফার দাবীতে রাজধানীতে সিরিজ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে চলেছে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়ায় এসব অহিংস কর্মসূচিতে জনতার বাঁধভাঙ্গা ঢল সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের একদফার আন্দোলন এখন বিশ্ব মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হচ্ছে। তবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত দেশের মিডিয়াগুলো এখনো হাইব্রিড রিজিমের ক্রীড়ণকের মতই আচরণ করছে। এক দশক আগে শাহবাগ চত্ত্বরে গণজাগরণ মঞ্চ নামের একটি নাটক চলেছিল দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যাবজ্জীবন শাস্তি পাওয়া কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জড়ো হওয়া শাহবাগের কতিপয় ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-তরুণের ডাকা এই সমাবেশ কিভাবে বিশাল জনসমাবেশে পরিনত হল, দেশের প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেল এবং প্রিন্ট মিডিয়া দিনের পর দিন এই সমাবেশকে প্রধান শিরোনাম করেছে, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে লাইভ প্রোগ্রাম করেছে। বেশকিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সমাবেশে হাজার হাজার বিরানির প্যাকেট, শুকনো খাবার, পানীয় সরবরাহ করেছে। েেসই মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারের রাজকীয় জৌলুস-নিরাপত্তার বহর ছিল মন্ত্রী-এমপি, রাজা-বাদশাদের মতো। এই সমাবেশের দাবি বাস্তবায়ন করতে আমাদের জাতীয় সংসদ বিদ্যমান আইন বদল করে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া কাদের মোল্লার শাস্তিকে মৃত্যুদ-ে পরিনত করা হয়েছিল। এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনে যাদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতারা দিনের পর দিন বৈঠক করেছেন, তাদেরকেই যুদ্ধাপরাধীর তকমা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদ- দিয়ে রায় কার্যকর করার পর শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বেলুন খুব দ্রুত চুপসে যায়। সারাবিশ্বের আহ্বান-উদ্বেগ উপেক্ষা করে জামায়াত-বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতাদের চিরস্থায়ীভাবে সরিয়ে দিতে গণজাগরণ মঞ্চের হাইপ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়ে থাকতে পারে। লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার পর সেই মঞ্চের নেতাকর্মীদের এখন আর কোথাও দেখা যায়না। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ এখনো দেশের যুব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে টিকে আছে। শাহবাগী নাস্তিকদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা তৌহিদী জনতার অরাজনৈতিক মঞ্চ হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক কিছু দাবিকে সামনে রেখে শাপলা চত্বরে একটি সমাবেশ ডাকার পর তাদের প্রধান নেতা শফী হুজুরকে আটকে রাখার প্রতিবাদে তারা শাপলা চত্বরে অবস্থান করছিল। সেই অবস্থানকে ছত্রভঙ্গ করতে মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর অভিযান দেশের ইতিহাসে এক বড় কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল। হেফাজতের শত শত নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ, হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার-হয়রানির পরও এক সময় হেফাজত নেতাদের সাথে সরকারের গোপন সন্ধির অভিযোগ উঠেছিল। সেই হেফাজতে ইসলাম এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে না থাকলেও শাহাবাগী গণজাগরণ মঞ্চের মত তারা বিলীন হয়ে যায়নি। দেশি-বিদেশি অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে ও মদতে কৃত্রিম গণজাগরণ সময়ের ঢেউয়ে বালির বাঁধের মতো মিলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। তবে মানুষের প্রত্যাশার জায়গা থেকে জেগে ওঠা যেকোনো রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগ্রাম চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত থেমে যায়না।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক আন্দোলনের লক্ষ্যের সাথে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষার বিষয় জড়িয়ে আছে। এ ধরনের আন্দোলনের সাথে রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। দুটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবণতা এবং রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা বিনষ্টের মাধ্যমে মূলত রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাকেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলেও রাষ্ট্র মেরামতের সার্বজনীন দাবিকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতা ছাড়া স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেই সামন্ত যুগে ইউরোপে ফরাসি বিল্পব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিভিল ওয়ার ও শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছিল, উপনিবেশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের উপমহাদেশের মানুষই একই রকম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উত্তরাধিকারের প্রত্যাশা করেছিল। বৃটিশদের ধারাবাহিকতায় সাত দশক ধরে ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনেকটাই অটুট থাকলেও হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক ধারা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। হিন্দুত্ববাদের অখ- ভারতের চেতনা পুরো উপমহাদেশের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করার কারণে যে অবিশ্বাস-অনাস্থার জন্ম দিয়েছে, তা পুরো উপমহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত তার চারপাশে বশংবদ সরকার দেখতে চায়। ভারত প্রতিবেশীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বললেও স্বাধীনচেতা জনগণ কোনো অধীনতামূলক মিত্রতাকে সমর্থন করে না। গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন দেশ গঠণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারত নিজের স্বার্থে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও তারা শুরু থেকেই বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের জনপ্রত্যাশার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। বাংলাদেশে গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন না ঘটা, ভোটারবিহীন ও নিশিরাতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিল ভারত। চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব এবং বৈশ্বিক-আঞ্চলিক ভূরাজনৈকি বাস্তবতায় বাংলাদেশের নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে ভারতের মতামত ও সিদ্ধান্তকে মূল্য দিয়ে পশ্চিমাদের নীরবতা কিংবা নিস্ক্রীয় ভূমিকা আজকের পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী। দেশের সরকার বা বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে পশ্চিমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তাগিদ না থাকলেও তারা এখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সপক্ষে স্বপ্রণোদিত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
আমাদের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পূর্ব-পশ্চিমের কোনো দেশের হস্তক্ষেপ, কিংবা নাক গলানো এ দেশের মানুষ সমর্থন করেনা। একটি রাজনৈতিক পক্ষ যখন একটি বিশেষ আঞ্চলিক শক্তির সমর্থন নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে পদদলিত করতে থাকে, তখন অন্যপক্ষ আরেকটি শক্তির সাহায্য-সমর্থন প্রত্যাশা করতেই পারে। তবে ইতিমধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা দিলেও পশ্চিমা শক্তির মূল কুশীলব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের নিশ্চয়তা ছাড়া এখানে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এ কারণেই তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে যে সংস্থার সদস্য, দল কিংবা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসানীতিসহ আরো কিছু নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। পশ্চিমা নীতি কৌশল, নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে দেখা যাচ্ছে। জুলাই মাসের শুরু থেকে ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামতে দেখা যাচ্ছে। বিএনপি’র সমাবেশের সাথে পাল্লা দিতে একই দিনে সরকারী দলের পাল্টা সমাবেশের ডাক দিলেও সেসব সমাবেশের প্রতি সাধারণ মানুষের তো বটেই, আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদেরও তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। গত তিন সপ্তাহে বেশ কয়েকটি পাল্টাপাল্টি সমাবেশের আকৃতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করলে পার্থক্যটা সহজেই ধরা পড়ে। অথচ গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অনেকে শত শত কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। কমিশন বাণিজ্য, ভূমিদস্যুতা, দখলবাজি, কন্ট্রাক্টরী, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত হয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এ সময় তারা টাকা দিয়েও দলীয় সমাবেশে লোক আনতে পারছে না। ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লাখো মানুষের জন¯্রােত তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। প্রতিটা সমাবেশ নিয়ে পুলিশের নাটকীয় ভূমিকা, অত:পর আওয়ামী লীগের পাল্টা সমাবেশ এবং হামলা-মামলার পুরনো অপসংস্কৃতি ছড়িয়েও রাজপথে বিরোধীদলের দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। প্রচুর অর্থ, রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ক্ষমতা, পুলিশের অস্ত্র এবং হামলা-মামলার ভয়ভীতির পরও মানুষকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এটাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রকৃতি ও প্রবণতা। রাস্তা, ব্রীজ ও দালান কোঠার উন্নয়নের চেয়ে এ দেশের মানুষ তার রাজনৈতিক অধিকার, ন্যায়বিচার , আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ভোটাধিকারের নিশ্চয়তাকেই বেশী মূল্যবান মনে করে।
বাংলাদেশের প্রধান দু-তিনটি রাজনৈতিক দলের কোনোটিই ভূঁইফোড় দল নয়। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা এবং ক্ষমতার পালাবদলের মধ্য দিয়ে এসব দল এবং দলের নেতারা মানুষের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে। একেকটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন দল এবং দলের নেতৃত্বের সেইসব ঐতিহাসিক ভূমিকারই প্রতিফলন ঘটে থাকে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী, এক সময়ের তুমুল প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল মুসলীম লীগ এখন প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে একদলীয় বাকশালের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা সেই সাহসী জাসদ এখন মৃতপ্রায়। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জাতির ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠির ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত ও নির্ধারিত হয়ে থাকে। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ আজ জাতির এই সন্ধিক্ষণে চরম পরীক্ষার সম্মুখীন। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম এবং ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গণতান্ত্রিক ভারসাম্য তৈরী করেছিল তা সত্যিই ইতিবাচক ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ধারাবাহিকভাবে দ্বিদলীয় রাজনৈতিক বৃত্ত ও ক্ষমতার পালাবদলের মধ্য দিয়ে ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাংলাদেশেও তেমন একটি ব্যবস্থা গড়ে ওঠা সম্ভব। ওয়েস্ট মিনিস্টার টাইপের বহুদলীয় পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার কারণে জোটবদ্ধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব কিংবা জাতীয় সংসদে ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে। বহুমতের সহবস্থানের বদলে প্রতিপক্ষকে চিরতরে নির্মূলের রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের এন্টাগনিজম ও নির্মূলের রাজনীতি দেশের গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছে। জনগণের আকাক্সক্ষা ও মতামতের তোয়াক্কা না করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর ক্ষমতার স্টীমরোলার চালিয়ে একপাক্ষিক-একদলীয় নির্বাচন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে গিয়ে একদিকে নিজেদের জনসমর্থন ও রাজনৈতিক-আদর্শিক ভিত্তিকে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তুলেছে, অন্যদিকে জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রতিটি রাষ্ট্রীয়-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে এসব প্রতিষ্ঠানকে জনগনের কাছে আস্থাহীন, নির্ভরতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিনত করা হয়েছে।
দেশের প্রধান বাণিজ্য-উন্নয়ন অংশীদার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত চাপ, সেই সাথে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জানবাজ আন্দোলনকে শ্রেফ পুলিশি শক্তি দিয়ে ঠেকিয়ে আরেকটি যেনতেন নির্বাচনের দিকে ধাবিত হওয়া ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল। ভূরাজনৈতিক দাবাখেলায় লিপ্ত পরাশক্তিগুলো নিজ দেশে গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাধীনে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সক্ষম হলেও আমাদের মত দেশে গণতন্ত্রহীনতার সুযোগে তারা বশংবদ স্বৈরশাসক বসাতেই বেশি উৎসাহী। অতীতের অভিজ্ঞতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের কাছে এ ক্ষেত্রে অভিন্ন ভূমিকা দেখা গেছে। উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার কিংবা ভেনিজুয়েলায় যেমন রাশিয়া-চীনের প্রভাব দেখা যায়, একইভাবে মিশরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সিসি আল ফাত্তাহর স্বৈরশাসন কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের জনপ্রত্যাশার বদলে বশংবদ রাজতান্ত্রিক পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কোনো গোপণ বিষয় নয়। বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতায় পশ্চিমা দেশগুলো কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে না গিয়ে গণতন্ত্র ও জনগণের পক্ষে অবস্থান করছে। দেশের গণতন্ত্রের জন্য এই অবস্থান ইতিবাচক। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদল এবং বিদেশিদের চাপ উপেক্ষার ভান করে, প্রকারান্তরে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে, রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে, সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজেদের অধীনের আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছে। এহেন বাস্তবতায়, বিপুল জনসমর্থনপুষ্ট বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা সর্বশক্তি নিয়ে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে এক দফার আন্দোলন শুরু করেছে। তবে আভ্যন্তরীণ রাজনীতির বল এখনো ক্ষমতাসীন দলের হাতে আছে। দলটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে ইতিহাসের গতিপথ থেকে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াত্বের শিকার হয়ে কক্ষচ্যুত হয়ে পড়তে পারে।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা