হাওরে শিক্ষার্থী গ্রেফতার প্রসঙ্গে
০১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, তারা ছাত্র শিবিরের কর্মী। হাওরে ভ্রমণরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করার কারণ হিসেবে নাশকতার প্রয়াসে একত্রিত হওয়ার সন্দেহের কথা বলেছে পুলিশ। বলা বাহুল্য, পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে নাশকতা কিংবা সন্ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সংগঠিত হওয়ার অভিযোগ একটি অপসংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে পুলিশ বা র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান ও সহযোগিদের হামলার অভিযোগের ক্ষেত্রেও তা দেখা গেছে। এসব সন্দেহ ও অভিযোগ সাধারণ মানুষের কাছে খুব একটা বিশ্বাসযোগ্যতা পায়না। বিশেষত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশের এলিটফোর্সকে ব্যবহার করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়ায় বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ ধরণের বাস্তবতা, দেশের ভাবমর্যাদা বিনষ্ট ও বিব্রতকর বিষয়। হাওরে বেড়াতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক হতেই পারে। যদি তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে এবং বেআইনী কর্মকা-ে জড়িত না থাকে, তাহলে তাদের আটক-গ্রেফতার সমর্থনযোগ্য নয়।
বর্ষার এ সময়ে ভ্রমণ পিপাসুরা কক্সবাজার, কুয়াকাটার চেয়ে দেশের হাওরাঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভীড় করে। দেশের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীরাও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেখানে সন্দেহ বশত কাউকে গ্রেফতার কিংবা আটক করার আইনগত ক্ষমতা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে। তবে তার আগে নিশ্চিত হওয়া বাঞ্চনীয়। সন্দেহ বা অভিযোগের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-প্রমাণ কারো বিরুদ্ধে পাওয়া গেলে তা আইনগত প্রক্রিয়ায় বিচারের আওতায় আনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। তা নাহলে, বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে জানমালের ক্ষতিসাধন এবং সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সন্দেহজনক অভিযোগের কথা বলেছে স্থানীয় পুলিশ। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলো যখন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে, তখন পুরনো গতানুগতিক অভিযোগ সামনে রেখে পর্যটনকেন্দ্রে পুলিশি অভিযানের নামে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরণের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠা অস্বাভাবিক নয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ধরনের আতঙ্ক ছড়ানো কাম্য হতে পারে না। এমনিতেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতিসংঘ, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট, অ্যামনেস্টিসহ পশ্চিমা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রখর নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে বারবার সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। পুলিশের মতো দেশের অন্যকোনো বাহিনীর প্রতি তাদের এ ধরনের আহ্বান নেই। ফলে শুধু পুলিশের প্রতি অভিযোগ উত্থাপন একশ্রেণীর অতিউৎসাহী পুলিশের কারণে হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এতে বিশ্বে দেশের বদনাম হচ্ছে।
গতকাল প্রকাশিত দেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জাতিসংঘের নতুন সতর্ক বার্তা দিয়েছে। সভা-সমাবেশের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোটিয়ার ক্লেমো ভউলের একটি টুইট বার্তায় বাংলাদেশে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ প্রসঙ্গে এই বার্তা দেয়া হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাজনৈতিক বিক্ষোভ দমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আগ্নেয়া¯্র ও বুলেট ব্যবহার না করার কথা বলেছে। এ প্রেক্ষিতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংযত আচরণ করা উচিৎ। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীতে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ বেড়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অনেক আভিযোগ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর অতিউৎসাহী সদস্য রাজনৈতিক দমন-পীড়নে যত বেশি সক্রিয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে ততটাই উদাসীন। এতে পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে, যা কাম্য হতে পারে না। বুয়েটসহ অন্য যে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত তথ্য থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কোনো সমস্যা নেই। তবে তা যদি শুধু সন্দেহের বশবর্তীতে হয়ে থাকে কিংবা বিশেষ রাজনৈতিক দলের ট্যাগ লাগানোর জন্য করা হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থীরা বলেছে, কেন তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তা তারা জানে না। এ প্রেক্ষিতে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করা জরুরি। রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার ও মামলায় যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা