ইসলামবিদ্বেষী জোরাম : যিনি ইসলামেই খুঁজে পেলেন শান্তি
০২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
ইসলাম প্রশ্নে একগুয়ে কুসংস্কার লালন পশ্চিমা মনের দীর্ঘস্থায়ী এক অসুখ। এই কুসংস্কার বহু শতাব্দীর রক্তাক্ত সংঘাত, যুদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারাবাহিকতা তৈরি করেছে। বর্তমানে তা সভ্যতার সংঘাত এবং ওয়ার অন টেররের উপর ভর করে মিডিয়ার কল্যাণে নতুন মাত্রা ও চরিত্র লাভ করেছে। এর একদিকে আছে পশ্চিমের ইসলাম বিরোধী অনড় মনোভাব, অপরদিকে কিছু পথভ্রান্ত মুসলিমের হটকারী আচরণ। এই দ্বিবিধ সংকট পশ্চিমা দুনিয়ার বিপুল সংখ্যক মানুষকে করে তুলছে ইসলামের প্রতি আক্রোশে অন্ধ। এমনই এক অন্ধ মানুষ হয়ে উঠেছিলেন নেদারল্যান্ডের অধিবাসী জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন। একজন উদার সংস্কারপন্থী খ্রিস্টান হিসাবে বেড়ে উঠা জোরাম ভিইউ বিশ্ববিদ্যালয় আমস্টারডাম থেকে ধর্মবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। আমস্টারডামে ১৯৭৯ সালে যখন তার জন্ম হয়, সে বছরই আমেরিকার সহায়তায় আল কায়েদার জন্ম হয়েছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তার পতনের পূর্বমুহূর্ত পার করছে।
১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে ন্যাটো জোটের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তখন জোটের মহাসচিব স্পষ্ট বলেছিলেন, এখনো ইসলামী হুমকি রয়ে গেছে, যার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। স্নায়ুযুদ্ধের পরের পৃথিবী কেমন হবে, তা নিয়ে চলে বিচার-বিশ্লেষণ। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল হান্টিংটন হাজির হন তার ‘সভ্যতার সংঘাত’ তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৯৩ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালে প্রকাশিত হয় তার ‘ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনস’ নামক নিবন্ধ। তার দাবি হলো, আগামী পৃথিবীর দ্বন্দ্ব-সংঘাত কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ বা অর্থনৈতিক কারণে হবে না, বরং এর কারণ হবে সংস্কৃতি ও ধর্ম, যেখানে পশ্চিমের প্রধান প্রতিপক্ষ ইসলাম। প্রথমে এ তত্ত্ব নজরে পড়েনি তেমন। কিন্তু ১৯৯৮ সালের তানজানিয়া ও কেনিয়ার মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা এবং অবশেষে ২০০১ সালের টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা হান্টিংটনের এ তত্ত্বকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশে দেশে পররাষ্ট্রনীতির তাবিজ হতে থাকে এই তত্ত্ব। ইসলামভীতি লাভ করে চরম আকার। ন্যাটো জোট বর্বর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। বলাবাহুল্য, পশ্চিমা মিডিয়ার ভাষায় সেই প্রতিপক্ষ হলো ইসলামী সন্ত্রাস।
এই যে যুদ্ধ, এর প্রধান একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠলো ইউরোপে বসবাসরত মুসলিমদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও পরিচয়। একদিকে মাদ্রিদ রেলস্টেশনে হামলা, বেসলান স্কুলে হামলা, লন্ডন সাবওয়েতে বোমা বিস্ফোরণের পেছনে কিছু মুসলিম নাম সামনে চলে আসে, অপরদিকে তাদের আচরণ দিয়ে ইসলামকে উপস্থাপন করতে থাকে মিডিয়া। ইসলামোফোবিয়া এই পরিস্থিতির ভেতরে তীব্রভাবে মাথা তুলতে থাকে। নেদারল্যান্ড হয়ে উঠে ইসলামোফোবিয়ার এক উত্তপ্ত কড়াই।
জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন ইসলামকে বর্বরতার জন্য দায়ী করতে করতে রাজনীতিতে জড়ান। ২০০৬ সালের মার্চে পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম এন্ড ডেমোক্রেসির পক্ষে পৌর কাউন্সিলের সদস্য মনোনীত হন। ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ফ্ল্যাভালেন্ড রাজ্যের প্রাদেশিক সদস্য হন ২০১১ সালে। একজন আইনপ্রণেতা হিসেবে তিনি বরাবরই সংসদে ছিলেন সোচ্চার। প্রথমে ফ্রিডম পার্টির হয়ে এবং ২০১৪ সালে নিজে দল গঠন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত দলের নাম ছিলো ফর দ্য নেদারল্যান্ড। অভিবাসী মুসলমানদের ধর্মপালন ও বিশ্বাস ছিলো তার সমালোচনার কেন্দ্রে। কুরআন, ইসলাম, মহানবী (সা.) ও মুসলিম সংস্কৃতি তার বিরতিহীন বিরুদ্ধবাদী প্রচারণার শিকার ছিলো। তিনি কি নাস্তিক ছিলেন? না, লুথারিয়ান খ্রিস্টীয় ঈশ্বরে তার বিশ্বাস ছিলো অক্ষুণœ। ঈশ্বর মরে গেছেন, এমন প্রচারণা তাকে অবিশ্বাসী বানাতে পারেনি। তার বিশ্বাস ছিলো, ইসলাম পশ্চিমা সংস্কৃতির জন্য ক্রমবর্ধমান এমন এক হুমকি, যাকে মোকাবেলা করতে কোনো বিলম্বই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি প্রতিনিয়ত আরো বেশি ইসলামফোব হতে চেয়েছেন। সেই চাওয়ার ভেতর থেকে জন্ম নেয় একটি গ্রন্থ রচনার ইচ্ছা।
গ্রন্থটি ইসলামের বিরুদ্ধে মানুষকে বিষিয়ে তুলবে, এটা ছিলো পরিকল্পনা। সঠিক বিষয় জানতে বিখ্যাত স্কলার অধ্যাপক আবদুল হাকিম মুরাদের শরণাপন্ন হলেন তিনি। তার ধারণা ছিল, ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত হওয়ায় হয়ত তিনি তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। কিন্তু মুরাদের সুন্দর উত্তর শুনে মুগ্ধ হন জোরাম। তার পরামর্শে ইসলাম প্রশ্নে কেবল পশ্চিমা গ্রন্থপাঠের বদলে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম সূত্র থেকেও গ্রন্থপাঠ করেন জেরোম। নবীজীবনীও অধ্যয়ন করেন ।
পড়াশোনার এই ধারা যতোই এগিয়ে চললো, ততই তার মোলাকাত হলো এমন এক ইসলামের সাথে, যা তার সাবেক অনুভবের একেবারে বিপরীত। জোরাম ইসলামের যে বিষয়কে যেভাবে জানেন বলে ভাবতেন, সেসব ভাবনা প্রতিদিন ভেঙ্গে পড়ছিলো। ইসলামের কালো দিকের অনুসন্ধানগুলো বাস্তব তত্ত্ব ও তথ্যের বিচারে আলোময় দিক হয়ে উঠছিলো। তার সমালোচনামূলক লক্ষ্যের ঠিক বিপরীত উপসংহারের দিকে তাকে টেনে নিচ্ছিলো তার অধ্যয়ন। ফলে তিনি গ্রন্থটি লিখবেন কি না, সেই দ্বিধায় পড়ে গেলেন। কিন্তু শেষ অবধি পরম সত্যকে অনুসন্ধানের আকুতি তাকে বই রচনায় অনুপ্রাণিত করে।
একত্ববাদের প্রতি তার ঝোঁক এবং দৃঢ় বিশ্বাস তাকে ইসলামের কাছাকাছি নিয়ে আসে। এখানেই তিনি অবলোকন করেন প্রকৃত তাওহিদ-একত্ববাদ। গবেষণাটি দ্রুতই তাকে ইসলামের পথে পরিচালিত করে। কিন্তু ইসলামের কতটা কাছাকাছি যাওয়া যায়? এটা তো সেই ইসলাম, যাকে তিনি এতোকাল ঘৃণা করে এসেছেন। এই পরিস্থিতিতে জোরামকে সাহায্য করলো একটি ঘটনা। তার ভাষায়: ইসলামকে সত্য জানলেও আমি তা গ্রহণ করতে পারছিলাম না। কিন্তু তখনই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। অস্বাভাবিক মনে হলেও তা সত্য ছিল। একদিন বইয়ের তাকে বই রাখতে গেলে সেখান থেকে কিছু বই নিচে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়া বইগুলোর মধ্যে পবিত্র কোরআনেরও একটি কপি ছিল। আর আমার বৃদ্ধাঙ্গুল ছিল কোরআনের একটি আয়াতের ওপর। তা ছিল আল্লাহর এই কথা, ‘তোমাদের চোখ তো অন্ধ হয়নি, বরং তোমাদের বক্ষে থাকা অন্তর অন্ধ হয়ে পড়েছে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৪৬)।
না। এরপর আর হৃদয়ের চোখ বন্ধ রাখা যায় না। জোরাম সত্যের অবলোকনে এগিয়ে চলেন। আল কুরআন তাকে দেয় উজ্জ্বল উন্মোচন। তার খ্রিস্টান মন বাইবেলে যে একক ও এক ইলাহের উল্লেখ দেখেছে, সেই আল্লাহই কি আল কুরআনে উচ্চারিত? এ প্রশ্ন তাকে তাড়িত করে। অবশেষে এরও অবসান হয়।
জোরাম তাঁর রূপান্তরকে বাইবেলের সল-এর সাথে তুলনা করেন, যে কিনা একজন নিবেদিতপ্রাণ ইহুদি হিসেবে খ্রিস্টবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু অলৌকিকভাবেই তিনি দামেস্কের পথে সল থেকে পল হয়ে যান। যিশুখ্রিস্টকে আলিঙ্গন করে তিনি খ্রিস্টবাদের মহারক্ষাকর্তায় পরিণত হন।
জোরাম মহানবী (সা.) এর মহিমা, সত্য ও আদর্শকে অস্বীকারের মধ্য দিয়েই বড় হয়েছেন। কিন্তু জ্ঞানীয়ভাবে তিনি যখন মহানবীর (সা.) প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, পশ্চিমা বয়ানসমূহের অসার স্থাপনা একে একে ভেঙ্গে পড়লো তার মন থেকে। তিনি আবিষ্কার করলেন সেই মহামানবকে, যার সুসংবাদ রয়েছে বাইবেলের পাতায়। তাঁর জীবনে তিনি দেখলেন সেই মহিমা, যা কেবল নবীর পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব। মক্কা বিজয়ে তার নজিরবিহীন ক্ষমা কোনো নেতা, বিজেতা বা মানবীয় প্রবৃত্তির কোনো মনীষার কথা বলে না, বলে কেবল আল্লাহর প্রেরিত পুরুষের কথা, নবী ও রাসুলের কথা।
জোরামের এই যাত্রার অনুপম ও সরল বয়ান উঠে এসেছে তার Apostate: From Christianity to Islam in Times of Secularisation and Terror গ্রন্থে, জানুয়ারি ২০১৯ এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ভূমিকা, ১২টি অধ্যায় ও একটি চমকপ্রদ উপসংহার বইটিকে আকার দিয়েছে। শেষে রয়েছে গ্রন্থপঞ্জী ও শব্দকোষ।
ভূমিকায় গ্রন্থের পরিপ্রেক্ষিত বয়ান করে জোরাম হাজির করেন খোদাতত্ত্বের আলাপ। নিটশে বলেছিলেন, ঈশ্বর মারা গেছেন। খ্রিস্টীয় বিশ্বাস থেকে জোরামের প্রজন্ম বহুদূরে অবস্থান নিয়েছে। ট্রিনিটি তার খোদাতালাশকে প্রশান্তি দিচ্ছিলো না। কিন্তু ইসলামের খোদাবিশ্বাস কীভাবে সত্য, বাস্তবতা ও নিশ্চয়তাকে আলিঙ্গন করে, জোরাম তা দেখান আত্মকথনের ধারাভাষ্যে। এরই সাথে হাজির করেন পরকাল বিষয়ক যুক্তি-তর্ক ও ইসলামের অবস্থান। প্রথম পাঁচ অধ্যায় বিভিন্ন শিরোনামে এ বিষয়কে বয়ান করেছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম অধ্যায় সরাসরি রেসালাতকে ব্যাখ্যা করে। বাইবেলীয় অর্থে মহানবী (সা.) কীভাবে আল্লাহর বাণীবাহক, ওল্ড টেস্টামেন্টে মহানবী (সা.) বিষয়ক সুসংবাদ ও তার বাস্তবায়ন, মহানবীর বাণীর মহিমা ইত্যাদি প্রসঙ্গে তিনি প্রজ্ঞার বিস্তার করেন। অষ্টম অধ্যায় বিতর্কিত এবং পশ্চিমের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ আলাপসমূহকে সামনে আনে। যেমন ইসলাম ও নারী বিষয়ক তর্ক, বাইবেলের সাথে তুলনামূলক একটি অবলোকন সহকারে আলোচনা, যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়া না হওয়ার বিশ্বাস, হযরত আয়শা (রা.)কে মহানবীর (সা.) বিয়ে, স্বধর্মত্যাগীদের বিধান ইত্যাদি। নবম অধ্যায় তদন্ত করেছে মহানবী (সা.) কী আচরণ করেছেন ইহুদিদের সাথে এবং ইসলাম কীভাবে জিম্মি ও অমুসলিমদের দেখে ও দেখায়। দশম অধ্যায় আল কুরআনের ওহিগত সত্যকে আয়নার সামনে আনে। তার পাঠগত নিশ্চয়তা, তার অবিকৃত যথার্থতা, তার বৈশিষ্ট্যসূচক স্বাতন্ত্র, বাইবেলীয় সমস্যায় সে কীভাবে সমাধান হয়ে উঠে, কীভাবে আল কুরআন বাইবেলের সংশয় থেকে ঊর্ধ্বে, জোরাম তা ব্যাখ্যা করেন মনোজ্ঞ ভাষায়। একাদশ অধ্যায়ের শিরোনাম ওয়াহহাবি ভ্রান্তি। যেখানে ইসলামকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রকল্প হিসেবে দেখানো, আক্ষরিকতাবাদ, চরমপন্থা, জবরদস্তি ইত্যাদি উপাদানকে প্রত্যাখ্যান করার ইসলামী ভাষ্য বিবৃত। সাথে সাথে ঐতিহ্যগত মাযহাবসমূহ কীভাবে ব্যক্তিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক মাহাত্ম্যের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়, তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন জোরাম। দ্বাদশ অধ্যায় তার গোটা জার্নির পরিণতির বিবরণ। এই জার্নিতে তিনি ইসলামের পশ্চিমা সমালোচক এবং মুসলিম চরমপন্থীদের ভাষ্যসমূহ থেকে ইসলামকে তার প্রকৃত চিত্র ও চরিত্রে আবিষ্কার করেন। এই ধারায় যেসব উপলব্ধি, বিভূতি ও প্রজ্ঞানের সমাহার তার জীবনকে নতুন এক দৃষ্টিকোণ উপহার দেয়, সেগুলোকে তিনি যৌক্তিক আত্মকথনের বয়নে বয়ান করেছেন। এবার এর ফলাফল ঘোষণা করেন ইসলামে সমর্পণের মধ্য দিয়ে। জোরামের ভাষায়: খ্রিস্টবাদে যে শূন্যতায় আমি ভুগছিলাম, ইসলাম তা পূর্ণ করে দেয়। মুহম্মদ (সা.) সম্পর্কে ব্যক্তিগত অনুসন্ধানকর্মের উপসংহার টানতে চাই এভাবে যে, তিনি সত্যিই নবি হিসেবে কাজ করে গেছেন, কেননা তিনি একজন নবিই ।
জোরাম ইসলাম গ্রহণ করেন। উপসংহারে সেই মুহূর্তটা অনবদ্য বিবৃতিতে ভাস্বর। ঘরের সুখকর পরিবেশে ক্ষুদ্র একদল লোকের সাথে এক চমৎকার নৈশভোজ শেষে জোরামের শাহাদাত পাঠের ঘটনাটি ঘটে। হযরত মুসা ও ঈসা (আ.) যে খোদার কথা বলে গেছেন, কুরআন সেই খোদারই কালাম এবং মুহম্মদ (সা.) নিঃসন্দেহে বাইবেলে উল্লিখিত নবিগণের পরম্পরায় উপযুক্ত ও মানানসই যথার্থ শেষ নবি, এই বিশ্বাসকে মনে রেখে তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। জোরামের ভাষায়: শাহাদাত ঘোষণার পর কিন্তু স্বর্ণবর্ষণ হয়নি কিংবা সচরাচর থেকে ভিন্নভাবে তারকাদের ঝলকানিও আমি দেখিনি। অবশ্য, আমি নির্দিষ্ট একটা ব্যক্তিগত আনন্দ ও শান্তির পরশ লক্ষ করেছি।
তিনি অবশ্য আনন্দ ও শান্তি পেলেন। কিন্তু নেদারল্যান্ডে বয়ে যাচ্ছিলো ঝড়। যে ইসলামোফোবিয়ার প্রধান প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন জোরাম, সেই ইসলামের একজন অনুসারী হিসেবে তাকে দেখে বিস্মিত, স্তম্বিত ও প্রতিক্রিয়ামুখর ছিলো তার চারপাশ। অবশ্য পরিবার দেখিয়েছিলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া। স্ত্রী সমর্থন করেছিলেন ইসলামকে। জোরামের সাবেক সহকর্মী, বিখ্যাত ইসলামফোব গির্ট ওয়াইল্ডার্স বলেছিলেন, ভ্যান ক্লাভেরেনের ধর্মান্তর কল্পনাও করতে পারিনি। কোনো নিরামিষ যদি কসাইখানায় চাকরি গ্রহণ করে, ব্যাপারটা তেমনই। জোরামের ভাষায়: আমার ঘটনা প্রকাশের পর সবাই আমাকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। মূলত সারা জীবন আমি যে বিদ্বেষ ছড়িয়েছি তাই আমার কাছে ফিরে আসে। তা ছিল আমার পাপের ফল। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের কৃতকাজের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।’ (সুরা রুম, আয়াত : ৪১)।
জোরামকে আকর্ষণ করেছিলো ইসলামের সহজ-সরলতা। তাত্ত্বিক দিকের বাইরে মৌলিক ঈমানে তিনি দেখেন সরলতা এবং ইসলামের আচার-প্রথায় দেখেন পবিত্রতা, যা তাকে অবিভূত করেছিলো ব্যাপকভাবে, মানসিক স্তরেও একটি প্রশান্তিকে তিনি উদযাপন করছিলেন।
জোরাম ভ্যান ক্লাভেরেনের এ গ্রন্থ হতাশার বিপরীতে আশাবাদের জয় ঘোষণা করে। মিথ্যা যে কোনোভাবেই সত্যের শক্তিকে পরাভূত করতে পারে না, সেই সত্যের উচ্চারণ করে আরেকবার। সত্যের যন্ত্রণাদায়ক জার্নির লিখিত দলিল এই গ্রন্থ, যার মধ্য দিয়ে জোরামের শক্তিশালী চরিত্রেরই প্রকাশ ঘটে। এই গ্রন্থ মানবপ্রকৃতি ও পরিবর্তনের সম্ভাবনার প্রতি আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরো সুদৃঢ় করে। এই পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে সত্যের প্রতি সহজাত আকুতি। একে যদি যথাযথভাবে পথ দেখানো যায়, তাহলে অসম্ভবের বুক চিরেও জন্ম নিতে পারে সোনালি সম্ভাবনা। যে জোরাম ইসলামকে দুনিয়ার সকল সমস্যার জন্য দায়ী মনে করে তার উচ্ছেদে সচেষ্ট ছিলেন, তিনিই শেষ অবধি ইসলামেই খুঁজে পেলেন মুক্তি, প্রশান্তি ও সমাধান।
লেখক : কবি, গবেষক
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে