হরিয়ানায় হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গার শিকার মুসলমানরা
০২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
ভারতের রাজধানী দিল্লির লাগোয়া হরিয়ানা রাজ্যের নুহ জেলায় হিন্দুদের একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা ও অগ্নিসন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পূর্বে মনু মনসের নামের একজন উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর্মী গোরক্ষার নামে রাজস্থান জেলায় কয়েকজন মুসলমানকে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। সেই মুন মনসের আলোচ্য শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছে এই মর্মে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শোভাযাত্রায় কে বা কারা ইটপাটকেল ছোঁড়ার পর তা ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিণত হয়। উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদীদের হাতে মসজিদ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শত শত বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের শিকার হয়। আক্রমণকারীদের হাতে মসজিদের একজন ইমাম, নিরাপত্তারক্ষীসহ অন্তত ৫ জন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছে। বেছে বেছে মুসলমানদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করেছে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর না করায় নুহ জেলার পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম ও ফরিদাবাদেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে ১৪৪ ধারা জারি এবং গুজব রোধে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েও দাঙ্গা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর কাশ্মীর থেকে শুরু করে ভারতে মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলোতে হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম বিদ্বেষী আক্রমণ ক্রমশ জোরালো ও নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত বিজেপি শাসিত অঞ্চলগুলোতেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শিকার হচ্ছে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে হিন্দুত্ববাদী ও সরকারি বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকা- ও ক্রমবর্ধমান হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও মানবাধিকারের অবনতির বিষয়টি সারা বিশ্বে উলঙ্গভাবে ধরা পড়েছে। তবে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠি ও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জনগোষ্ঠি মুসলমানদের উপর বৈষম্য, নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনা কোনো আকস্মিক বা হঠাৎ সংঘটিত কোনো বিষয় নয়। মূলত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সাম্প্রদায়িক নীল নকশার আলোকে দিল্লির ক্ষমতাসীনদের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানরা ধারাবাহিকভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। ভারতের সেক্যুলার ভাবধারা এবং সব নাগরিকের সমঅধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে অগ্রাহ্য করে হিন্দুদের বিশেষ সুবিধা এবং মুসলমানদের নানাভাবে হেয় করার রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্য দিয়ে এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁচশ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে সেখানে রামমন্দির নির্মাণের সাম্প্রদায়িক প্রেক্ষাপট, গুজরাট দাঙ্গায় শত শত মুসলমান হত্যার মধ্য দিয়ে ভারতের হিন্দুত্ববাদের যে রাজনৈতিক উত্থান ঘটেছিল, তারই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও সাম্প্রদায়িক-রাজনৈতিক সহাবস্থানের বিপরীতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান পুরো উপমহাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ভারত সরকারের আধিপত্যবাদী নীতির বিরূপ প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতেও পড়ছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও পশ্চিমা দেশগুলো ভারতের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে মাঝে মধ্যে ক্ষীণস্বরে প্রশ্ন তুললেও মুসলমানদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের উপর তেমন কোনো চাপ দিতে দেখা যায় না। গণহত্যা বিষয়ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জেনোসাইড ওয়াচের পক্ষ থেকে ভারতে মুসলমান গণহত্যার ধারাবাহিক সুস্পষ্ট আলামত তুলে ধরা হলেও তা প্রতিরোধে ভারত সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। মণিপুরে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিডিয়া প্রশ্ন তুললেও এরচেয়ে ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য তাদের কণ্ঠ অনেকটাই ক্ষীণ। এমনকি ওআইসি, মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলমান দেশগুলোর ভূমিকাও যথার্থ নয়। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের নামে কোটি কোটি মুসলমানকে রাষ্ট্রহীন কিংবা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা, গো-রক্ষার নামে পৈশাচিকভাবে মুসলমান হত্যা, দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গায় শত শত ভারতীয় মুসলমানকে হত্যার পরও পশ্চিমা কিংবা মুসলমান দেশগুলোর পক্ষ থেকে ভারতের উপর জোরালো কোনো চাপ দিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশের শাসকরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দাওয়াত করে রাষ্ট্রীয় পদক ও সম্মানে ভূষিত করতেও দেখা গেছে। আশির দশকে উত্তর প্রদেশের মিরাটের মালিয়ানায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে এক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় একই পরিবারের ১১ জনসহ ৭২ জন মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছিল। নানা আদালত ঘুরে গত এপ্রিল মাসে সে মামলার রায়ে অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যায়। উত্তর প্রদেশ পুলিশের একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভুতি নারায়ণ রায় এ ঘটনাকে রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিবিসির কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, দলবাজ মিডিয়া, সর্বোপরি বিচার বিভাগের কাছেও ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হলো। যেখানে হিন্দুত্ববাদী নীতির প্রশ্নে সংখ্যালঘু মুসলমানরা রাষ্ট্রের সব রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেখানে পশ্চিমা বিশ্ব, ওআইসি ও বিশ্বসম্প্রদায়ের আর নিরব ভূমিকার সুযোগ নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ