সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৮ পিএম | আপডেট: ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:১০ এএম

ভোটারবিহীন এবং স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন না হওয়ার যে অপসংস্কৃতি, তা জনগণের কখনোই কাম্য নয়। অথচ, দেশে বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে দুটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, তা তাই হয়েছে বলে এখন প্রতিষ্ঠিত। এভাবে যে নির্বাচন করা যায়, তা আসলে দেশের মানুষ কখনো কল্পনা করতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হওয়ার এক বিরল ঘটনার পর ২০১৮ সালে ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিত নির্বাচনের নজির বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। আর ঘটবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। অন্তত গণতন্ত্রকামী দেশ হলে, তা ঘটবে না বলে ধরে নেয়া যায়। উল্লেখিত দুটি নির্বাচন বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এ দুটি নির্বাচনের কথা মানুষ কোনোদিনই বিস্মৃত হবে না। সাধারণত মানুষ বিরল সব ঘটনার প্রতি আগ্রহী হয় বেশি এবং তা মনে রাখে। প্রশ্ন আসতে পারে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ঘটনা এর আগেও আমাদের দেশে কোনো কোনো আসনে হয়েছে, তাহলে তা বিরল হবে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠনের মতো নির্বাচন হয়নি। এদিক থেকে ৫ জানুয়ারির বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন বিশ্বে বিরল হয়ে আছে। তবে বিনাভোটে দেশে সরকার আসার ঘটনা রয়েছে। সামরিক শাসন যখন এসেছে তখন ভোট ছাড়াই এসেছে। দেশের ক্রান্তিকাল কিংবা অন্যকোনো ছুঁতোয় এসেছে। আবার এ ধরনের সরকারও যে ভিন্নভাবে আসতে পারে, তা কখনো ধারণা করা যায়নি, যেমনটি ঘটেছিল ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ক্ষেত্রে। এ ধরনের সরকার যে সিভিল শাসনকে সামনে রেখে পেছনে থেকে কাজ করতে পারে, তা মানুষ আগে দেখেনি। ফলে ওয়ান-ইলেভেন সরকার ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন একটি অভিজ্ঞতা। সামনে জনগণের জন্য আরও বিস্ময়কর কোনো ঘটনা অপেক্ষা করছে কিনা, তা নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না।

দুই.
অনেকেই বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার আর সামরিক শাসকের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার চেষ্টা করেন। সামরিক শাসকও বিনাভোটে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে, এটা সবার জানা। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আচরণের দিক থেকে বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার সামরিক শাসকের চেয়ে কোনো অংশে কম ভয়ংকর নয়। এর কারণ হচ্ছে, এ ধরনের সরকারের সামনে সাংবিধানিক বৈধতার ছুঁতা থাকে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে তারা একধরনের স্বৈরশাসন কায়েম করে। এতে জনমতের তোয়াক্কা না থাকলেও সাংবিধানিক ও আইনগত বৈধতা থাকে। এ ধরনের সরকারকে ‘হাইব্রিড’ বলা হয়, যেখানে গণতন্ত্র এবং মানুষের কথা বলার অধিকার বা বাকস্বাধীনত সংকুচিত থাকে। এ ধরনের সরকার ভয়ংকরও হয়ে উঠতে পারে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরে এ ধরনের সরকার একসময় থাকলেও সুশাসনের কারণে তাদের জনগণ মেনে নিয়েছিল। কারণ, তারা জনগণের কল্যাণের কাজটি ঠিকমতো করাতে তাদের প্রতি তেমন অসন্তোষ ছিল না। দেশ দুটি ব্যাপক উন্নতি করে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা দৃশ্যমান নয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়, এখানে উন্নয়নের নামে বিরোধীদলের রাজনীতি খর্ব করা হলেও অর্থনীতি সুদৃঢ় ভিত্তি পায়নি। বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখলেই তা বোঝা যায়। যে উন্নয়ন হয়েছে, তাকে অনেকে ‘মেকআপ উন্নয়ন’ বলে থাকে। মেকআপ করলে যেমন কিছু সময়ের জন্য যে কাউকে সুন্দর দেখা যায়, আবার ধুয়ে ফেললে তার আসল চেহারা বের হয়ে আসে। এ ধরনের উন্নয়ন আমাদের দেশে হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। ফলে দেশের সাধারণ মানুষকে এখন দুর্গতির মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। একটি শ্রেণীর ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সিংহভাগ মানুষ বিপাকে পড়েছে। ‘মেকআপ উন্নয়ন’ করতে গিয়ে সরকার গণতন্ত্রকে সংকুচিত করেছে। বিরোধীদলকে দমনের প্রচেষ্টা চালিয়ে কোনঠাসা করেছে। এখন যদিও জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপের কারণে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। নানা ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে। সামরিক শাসক যেহেতু বৈধভাবে ক্ষমতায় আসে না, তাই তাকে কঠোর হস্তে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সে নিপীড়ন-নির্যাতন চালালেও, তারা মনে করে এটা সে করবে, এটা জানা কথা। তবে আমাদের দেশে সামরিক সরকারের সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে-ময়দানে নামতে পেরেছে এবং আন্দোলন সংগ্রাম করতে পেরেছে। স্বৈরশাসক নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও, তাতে আন্দোলন থামানো যায়নি। তবে সাংবিধানিকভাবে বৈধ সরকার যখন নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং তা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ ও বিরোধীদলগুলো হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে এবং পাচ্ছে। মাঠে নামলেই তারা সহিংসতা করবে, এ অজুহাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, গণতন্ত্রের দাবীদার বিনাভোটে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে স্বৈর সরকারের মতো আচরণ করার অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিনাভোটে সরকার গঠনের যে থিওরি ভারত দিয়েছে বলে প্রচলিত রয়েছে, সেই ভারতেরই কলামিস্ট রামচন্দ্র গুহ ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রভাবশালী পত্রিকা টেলিগ্রাফ-এ একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন। উপসম্পাদকীয়তে বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছিলেন। নিবন্ধের এক জায়গায় তিনি লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণটি হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের যথেষ্ট জায়গা দিতে না চাওয়া। কিন্তু এখন নিয়তির পরিহাস হলো, সেই আওয়ামী লীগই এখন বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ উপসম্পাদকীয়র আরেক অংশে রামচন্দ্র লিখেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং তার উপদেষ্টারা ভাল করবেন, যদি তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসন কায়েম করা অতীতের সরকারগুলোর ইতিহাসের সাথে নিজেদেরকে পরিচিত করান। নাৎসীরা মাত্র ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল, অথচ তাদের সমর্থকদের হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালে, ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তানের পিপলস পার্টি এবং শ্রীলংকার ফ্রিডম পার্টিÑসবাই একদল শাসিত রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু কেউই কয়েক বছরের বেশি টিকেনি। সে জন্যই একদলীয় রাষ্ট্রের ভাগ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে সময়টা তারা ক্ষমতায় থাকে, তখন ব্যাপক বিনাশ সাধন করে।’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে তার বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে চলমান। তবে দলকানা লোক বাদে সাধারণ মানুষ এ ধরনের শাসনের ধরন বুঝলেও, তাদের বলার মতো কোনো সুযোগ বা প্ল্যাটফর্ম নেই। বিরোধীদল যে বলবে, তাদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে যে, তাদের পক্ষে রাজনীতি করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যদিও এখন তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কতটা সফল হবে, তা নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যম যে সরকারের সমালোচনা করবে, সেই সুযোগও সীমিত। এগুলোর কোনো কোনোটি হয় সেল্ফ সেন্সরশিপের মাধ্যমে চলছে, নতুবা সরকারের স্তাবক হয়ে চলছে। এক্ষেত্রে একটি স্তাবক শ্রেণীও সৃষ্টি হয়েছে। সরকারও চায় এ শ্রেণী শুধু তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক। হচ্ছেও তাই। অধিকাংশ টেলিভিশন টক শো দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন বিদেশি পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ ও তার সরকারের সমালোচনা করা হয়, তখন সাধারণ মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। ভিনদেশি খবরের উপর এ ধরনের নির্ভরশীলতা স্বৈরশাসকের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, দেশের গণমাধ্যমের চেয়ে মানুষ বিবিসি বা বিদেশের অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এর কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সঠিক খবর দিলে একমাত্র এই মাধ্যমগুলোই দিতে পারে।

তিন.
জনসাধারণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়ার মধ্যে যে সম্মান ও গৌরব থাকে, বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে তা থাকে না। যারা বিনাভোটে নির্বাচিত হন, তাদের আত্মসম্মানের যেমন হানি হয়, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও তাদের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। কারণ, জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই প্রার্থীর আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, সততা, নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা, একাগ্রতাসহ তিনি যে একজন জনদরদী ও ভাল মানুষ, এ বিষয়টির পরীক্ষা হয়। বিজয়ী হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, যিনি বিজয়ী হয়েছেন তিনি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ পরীক্ষা ছাড়া যিনি নির্বাচিত হন, দেখা গেছে, তাদের কেউ কেউ জনসাধারণের সাথে এমন আচরণ করেন যে, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়। আমরা ইতোমধ্যে অনেক এমপির ক্ষেত্রে এমন আচরণ দেখেছি। অনেক আসনের এমপিকে গডফাদার হিসেবেও কেউ কেউ আখ্যায়িত করেছে। তারা নিজ এলাকায় স্বৈরশাসকের মতোই আচরণ করে থাকে কিংবা এলাকার খোঁজ-খবর নেন না। এর কারণ হচ্ছে, তারা জনগণের প্রত্যক্ষ ও স্বতঃস্ফূর্ত ভোটে নির্বাচিত হননি। ফলে জনগণের প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভব করেন না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিনাভোটে নির্বাচিত সরকারের প্রধান ভরসা হয়ে থাকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ব্যবহার করেই তার বিরুদ্ধমতকে দমন করা হয়, যাতে বিরোধিতা করতে না পারে। এই নজির ইতোমধ্যে দেশের মানুষ দেখেছে। এখন সময় কিছুটা পরিবর্তনের দিকে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এতদিন বিরোধীদলগুলো এবং সাধারণ মানুষ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বললেও, সরকার তা আমলে নেয়নি। তার মতো করে নির্বাচন করে গেছে। এমন একটা অপসংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে যে, সরকারি দলের নমিনেশন পাওয়া মানেই সোনার হাস হাতে পাওয়া। বিজয় সুনিশ্চিত। লোক দেখানো একটি নির্বাচন হবে যেখানে সরকারি দলের কিংবা নমিনেশন না পেয়ে হতাশ হওয়া বিদ্রোহী প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। বিষয়টি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হলে ‘ঘরের ছেলে’ বলে তাকে পুনরায় দলে নেয়া হয়। এখন এ ধরনের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিদেশীরা কথা বলছে। তারা কূটনৈতিক ভাষায় বলে দিচ্ছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। এতে সরকার বেশ চাপে পড়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। কারণ, প্রভাবশালী দেশগুলো যখন জোর দিয়ে বলে তখন সরকারকে চাপে পড়তে হয় এজন্য যে, দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সিংহভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, ধার-দেনা, রেমিট্যান্সের বিষয়গুলো জড়িয়ে রয়েছে। তাদের কথা না শুনলে বা তাদের কনভিন্স করতে না পারলে, দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মহাবিপদে পড়তে হবে। ইতোমধ্যে যে বিপদে পড়েনি, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর স্যাংশন দিয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য আলাদাভাবে ভিসানীতি দিয়েছে। এতে সরকারের নীতিনির্ধারকসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো তার সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করে। ফলে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক অধিকার যথাযথভাবে প্রতিপালিত না হয়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে দেশের জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।

চার.
অনেকেই বলে থাকেন, বিগত একদশকে রাজনীতি ও ভোটদানের প্রতি সাধারণ মানুষকে অনীহার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তারা এ কথাও বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সংস্কৃতি বিনষ্ট করা হয়েছে। দেশে শাসক দল ছাড়া বিরোধীদলের রাজনীতি করার সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধীদলকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অথচ এই ক্ষমতাসীন দল যখন ২০০৯ সালের সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে, তখনও বিরোধীদলের স্বাভাবিক রাজনীতি করার অবারিত সুযোগ ছিল। তারা মিছিল-মিটিং করতে পারত। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর সে সুযোগ কমে গেছে এবং বিরোধীদলের কর্মকা- ঘরবন্দি করে ফেলা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ও ভিসানীতির কারণে বিরোধীদলগুলো কিছুটা হলেও তাদের রাজনীতি করতে পারছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কি লাভ হয়েছে? বরং দেশের বদনাম হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক সরকার নেই, অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে, এমন বদনামের শিকার হতে হয়েছে। এসবের পেছনে যে, বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার ও কর্তৃত্ববাদ রয়েছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। গণতন্ত্র কখনোই এ ধরনের পরিস্থিতি সমর্থন করে না। অস্বীকারের উপায় নেই, বিরোধীদল যেমন রাজনৈতিক বন্ধ্যাত্বর মধ্যে আটকে পড়েছে, তেমনি ক্ষমতাসীন দলও বিনাভোটের অপবাদের মধ্যে আটকে রয়েছে। এই দুই ক্ষেত্র থেকে বের হয়ে আসার পথ তৈরি করা এখন সময়ের দাবী। ক্ষমতাসীদলের নীতিনির্ধারকদের এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। বিনাভোট, রাতের ভোট কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোট থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হবে। এর অন্যকোনো বিকল্প নেই।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ
বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আরও

আরও পড়ুন

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ

আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!

আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!

ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ

তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী

তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী

গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ

গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ

সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ