শিল্পের অবস্থা শোচনীয়
০৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
বিশ্বায়নের শুরুতেই দেশের লাভজনক ভারি শিল্পগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে একের পর এক। এর মধ্যে রয়েছে পাট, বস্ত্র, সুতা, চিনি, কাপড়, কাগজ ইত্যাদি। ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্পেরও অর্ধেকের বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। সেকেলে যন্ত্রপাতি, অদক্ষ জনবল, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে এই শিল্পগুলোর এই পরিণতি হয়েছে! আধুনিকতার ধাক্কায় মৃৎ ও হস্ত শিল্পও প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। দেশের ব্লেড ও টিভি তৈরির কারখানারও অপমৃত্যু হয়েছে। গ্যাসের অভাবে সার কারখানাও বন্ধ রয়েছে। ফলে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করায় ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার সার আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ, এর অর্ধেক টাকা খরচ করে ওই পরিমাণ সার দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। এমনকি দেশে যে আটটি সার কারখানা আছে সেগুলো আধুনিকীকরণ করা হলে সারা বছরই উৎপাদন করে বছরে ৪০ লাখ টন সার উৎপাদন করা যেত। দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করা যেত। টিকে আছে ইস্পাত, রড, সিমেন্ট, চামড়া, ফার্নিচার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, আবাসন ইত্যাদি। চলতি অর্থবছরে জমি ও বাড়ি ক্রয়ের ফি অত্যধিক করায় রড ও সিমেন্টের খাত হুমকির মুখে পড়েছে। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প ভালভাবে চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে এ খাতের আয় বছরে ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার টার্গেট করা হয়েছে। চা শিল্পের অবস্থা ভালো। উপরন্তু চা এখন দিনাজপুরের সমতল ভূমিতেও চাষ হচ্ছে। তামাক শিল্পেরও অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। বিএটিবি ব্যাপক মুনাফা করছে। তবে, তামাক পণ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হচ্ছে। গার্মেন্ট ও লিংকেজ প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি থমকে গেছে। অ্যাকর্ড ও এলায়েন্সের পরিবেশ রক্ষা যাচাইয়ের কারণে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। উপরন্তু শিশু শ্রমিকদেরও গার্মেন্ট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যেসব গার্মেন্ট কারখানা টিকে আছে, তাদের উচ্চমূল্যের গার্মেন্ট তৈরির সক্ষমতা কম। মোট রফতানির ২০%। বর্তমান বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে পশ্চিমাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় গার্মেন্ট রফতানি নি¤œমুখী হয়েছে। ফলে দেশের রফতানি ও কর্মসংস্থানের প্রধান খাত গার্মেন্ট চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এ খাতে এখনো প্রায় ৪২ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত আছে, যার ৬০% প্রান্তিক নারী। কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক বান্ধব করা না হলে ইউরোপের জিএসপি প্লাস পাবে না বলে জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা উঠে গেলে জিএসপি প্লাস পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ইউরোপের দাবি মানলে নতুন করে অনেক গার্মেন্টসহ বহু কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তবুও তাদের দাবি না মেনে উপায় নেই। ওষুধ শিল্পের অবস্থা খুব ভালো। দেশের চাহিদার বিরাট অংশ পূরণ করে রফতানি হচ্ছে বহু দেশে। এলডিসি কান্ট্রি হিসাবে পেটেন্ট সুবিধা পাওয়ায় এটা হয়েছে। কিন্তু এলডিসি উত্তরণের পর পেটেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে চরম সংকটে পড়বে। পর্যটন শিল্পের অবস্থা নাজুক! মুন্ডি ইনডেক্স-২০২২ মতে, পর্যটন শিল্পে বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪১তম।
সরকারি সহায়তার অভাবে রাজশাহীর রেশমের সিল্ক কাপড় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন সম্ভাবনার হাতছানি দিয়েছে কলাগাছের সুতার কাপড়। কলাগাছের সুতার শাড়ি ‘কলাবতী শাড়ি’ খুবই আকর্ষণীয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পরিবেশ বান্ধব ও দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক এই বস্ত্রের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা যাত্রা করি ব্যাপক জাকজমকভাবে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার অপমৃত্যু ঘটে অবহেলার কারণে! যেমন: দেশের বিজ্ঞানীরা পাট থেকে পরিবেশ বান্ধব ব্যাগ ‘সোনালি ব্যাগ’ আবিষ্কার করেছেন। তা সরকারি পাটকলে উৎপাদনও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সরকারি সব পাটকল একযোগে বন্ধ করে দেওয়ায় সেই সোনালি ব্যাগ তৈরি বন্ধ হয়ে গেছে। উপরন্তু ভারতের কারণেও পাটশিল্পের ক্ষতি হচ্ছে! শ্রম প্রতিমন্ত্রী ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পাট পণ্য আমদানিতে উচ্চ হারের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারত। ফলে বাংলাদেশের পাটের ক্ষতি হচ্ছে’। ভারতের উক্ত শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে! ফলে বাংলাদেশের পাটখাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সোনালি ব্যাগ তৈরি বন্ধ হওয়ার সুযোগে পরিবেশ ধ্বংসকারী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহৃত হওয়ায় পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। দেশের প্লাস্টিক শিল্পেরও ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্লাস্টিকের কণা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে নানা ব্যাধি সৃষ্টি করছে। এছাড়া, অপচনশীল প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারণে সাগর, নদী, নালা, হাওর, পুকুর ইত্যাদি ভরাট হয়ে যাচ্ছে, যা পুনঃখননে চরম বিঘœ ঘটছে। মাটিরও উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। তাই পলিথিন ও ননরিসাইক্লিং প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে বহু দেশে। বাংলাদেশের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিশ্বের যে ২০টি দেশে ব্যবহার করা প্লাস্টিক সামগ্রী অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়, তন্মধ্যে বাংলাদেশ দশম। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কোনো মতে টিকে আছে। কিন্তু এ খাতের ৬৯% উদ্যোক্তার পরিচালনার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। দেশে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু এই যন্ত্র তৈরির কোনো শিল্প নেই দেশে। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণেরও তেমন শিল্প নেই। দেশে ব্যাপক মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে, যার অধিকাংশই এনড্রয়েট সেট। দেশের সব বয়সের মানুষ মোবাইলের প্রতি চরম আসক্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই মোবাইলের সব কোম্পানির মালিকনা এ দেশেরই ছিল। কিন্তু তা ধরে রাখতে পারেনি একটিমাত্র ছাড়া। উপরন্তু মোবাইল সেটও তৈরি হয় না এ দেশে।
আবাসিক এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা নিষিদ্ধ। তবুও দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের ৭২% আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। দেশে উৎপাদিত পণ্যের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। কিন্তু বিএসটিআইয়ের মান সনদ রয়েছে মাত্র ২২৯টির। ফলে দেশের অধিকাংশ পণ্যের মান খারাপ। মূল্যও বেশি। দেশে মাত্র ৬৪৫টি গ্রিন ফ্যাক্টরি আছে। বাকীগুলো পরিবেশ বিধ্বংসী। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেই অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠানের। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স-২০২০ মতে, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬২তম। দেশে প্রায় ৪২ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে। তন্মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। পশ্চিমা ক্রেতারা শিশু শ্রমিকদের বাদ দেওয়ার জন্য ব্যাপক চাপ দিচ্ছে। দেশের শ্রমিকের উৎপাদনশীলতার হার এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কম। দেশের লজিস্টিক সাপোর্টও দুর্বল। বিশ্ব ব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সূচক-২০২৩ মতে, ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৮তম। জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান বর্তমানে ৩৭.০৭%। ডিসিসিআই’র সভাপতি সম্প্রতি বলেছেন, দেশে দক্ষ কর্মীর অভাবে শিল্পখাতে অনেক বিদেশি কাজ করছে। তারা বছরে ৮-১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, গত বছর রেমিটেন্সের পরিমাণ হচ্ছে ২২ বিলিয়ন ডলার।
দেশের বেশিরভাগ শিল্প বন্ধ ও দুর্বল হওয়ায় অসংখ্য শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। নতুন শিল্পও তেমন হচ্ছে না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, বহু দেশে বিনিয়োগের রোড শো, সেমিনার ও সম্মেলন করার পরও বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিসিকের বেশিরভাগ প্লট পড়ে আছ। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিসিকের ৭৯টি শিল্প নগরী তৈরি হয়েছে। তন্মধ্যে কার্যকর রয়েছে মাত্র কয়েকটি। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও তৈরি করা হচ্ছে, যার অনেকগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিনিয়োগ নেই তেমন। বিনিয়োগের প্রস্তাব কিছু পাওয়া গেলেও তার সামান্যই বাস্তবায়িত হয়। পুঁজি বাজারেরও অবস্থা দুর্বল। ১৯৯৬ সালে মহাকেলেংকারী হওয়ার পর থেকে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে, যা পুনরুদ্ধার না হলে কোনো রোডশো ও সম্মেলন করেও লাভ হচ্ছে না। আঙ্কটাডের ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট-২০২৩’ মতে, বাংলাদেশে ২০২২ সালে এফডিআই এসেছে ৩৪৮ কোটি ডলার, যা গত ৩৩ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (২০১৮ সালে ছিল ৩৬১ কোটি ডলার)। উক্ত রিপোর্টে বাংলাদেশকে নন-ইনভেস্টমেন্ট গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ মূল্যায়ন রিপোর্ট-২০২৩ মতে, ‘নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়নের উপকরণ, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, শ্রম আইনের শিথিল প্রয়োগ এবং দুর্নীতি বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে’। দেশে কোনো গভীর সমুদ্র বন্দরও নেই, যা আছে তারও অবস্থা খারাপ। লয়েডস লিস্টের ‘ওয়ান হান্ড্রেড পোর্টস-২০২৩’ মতে, বাংলাদেশ ৬৭তম। এসব নেতিবাচক কারণে দেশীয় বিনিয়োগও আশানুরূপ নয়। জিডিপির ২২-২৪% চলছে বহুদিন যাবত। অথচ, এটা জিডিপির কমপক্ষে ৩০% হওয়া দরকার। অবশ্য, সম্প্রতি সরকারিভাবে অবকাঠামো খাতে অনেক বিনিয়োগ হয়েছে ও হচ্ছে বিপুল বিদেশি ঋণে। সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের ‘বেস্ট কান্ট্রি ফর এন্ট্রাপ্রেনারশিপ’ সূচক-২০২১ মতে, ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম, স্কোর ১২.৯৯ (উদ্ভাবনে ৪.৩৪ পয়েন্ট, প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় ৪.৮৯, শ্রম দক্ষতায় ২৩.০৫, অবকাঠামোয় ২০.৪৭, মূলধনে ৯৩.৬২ ও মুক্ত ব্যবসায় ১.০৭ পয়েন্ট। ফলে দেশ বিদেশি পণ্যনির্ভর হয়ে পড়েছে, যা আমদানি করে অত্যধিক মুনাফায় বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা। দেশের রফতানি মূলত গার্মেন্ট নির্ভর, যা মোট আয়ের ৮৪%। দেশের ব্যবসারও পরিবেশ ভালো নয়। ব্যবসা সহজীকরণ বৈশ্বিক সূচকে দেশের অবস্থান তলানিতে। সম্প্রতি টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট, আমদানি সীমিতকরণ, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঋণের প্রবাহে ভাটা ইত্যাদি কারণে ব্যবসা খাতে চরম মন্দা চলছে! দেশের অনেক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। দেশে শিল্পের কাংখিত উন্নতি না হওয়ায় বেকারত্বের হার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বেকারদের মধ্যে শিক্ষিতরাই বেশি। বেকাররা চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। অনেকেই বিপথে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগের ভালো সুযোগ না থাকায় অনেকেই বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে ও করছে, যার সিংহভাগ কালো টাকা। অথচ, জাতীয় বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পরও তা কাজে লাগেনি।
দেশে আইটি খাতের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে ২০১০ সালে, যার অধীনে হাই-টেক পার্ক, ১১০টি আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারসহ মোট ৯২টি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তন্মধ্যে হাই-টেক পার্কের সংখ্যা চার। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা শুরুতে আগ্রহ দেখালেও এখন তা কমে এসেছে। অথচ, ২০২৫ সালের মধ্যে আইটি খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের টার্গেট করা হয়েছে। দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তার অভাবে তা পূরণ হবে না। কারণ, ইউনিসেফের দ্য ওয়ার্ল্ড স্কিলস ক্লকের রিপোর্ট-২০২২ মতে, ‘বাংলাদেশের প্রায় ৮৫% তরুণের ডিজিটাল দক্ষতা নেই’। দেশে ইন্টারনেটেরও সমস্যা প্রকট। যেটুকু আছে তা মূলত শহরভিত্তিক। গতিও খুব কম, উগান্ডার নিচে! স্পেসএক্স বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট তারবিহীন সেবা সারাদেশে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে গত ২৭ জুলাই। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিরা তাদের ইন্টারনেট ও ডাউনলোড স্পিডের নমুনা দেখিয়েছেন সেদিন, যা প্রায় ৫০০ এমবিপিএসে পৌঁছেছিল। তবুও রেট বেশি ও দেশীয় ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের বাধার কারণে উক্ত প্রস্তাব গৃহীত হবে কি-না তা বলা কঠিন। প্রযুক্তি ব্যাপক সম্প্রসারিত হওয়ায় মানুষ প্রতিদ্বন্ধী হয়ে উঠছে বিশ্বব্যাপী। এআই চালিত কর্ম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবুও দেশে প্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম। গত ৭ মে প্রকাশিত এডিবির প্রতিবেদন মতে, ‘বাংলাদেশে উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার বস্ত্র খাতে- ৩.২৮%, চামড়া ও চামড়া জাত পণ্যে ০.৫৮%, বিমান পরিবহন, পরিবহন উপকরণ, নির্মাণ খাত, রবার ও প্লাস্টিক, রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্যের অবস্থা নাজুক। তবে কম্পিউটার সেবা ও তথ্য, টেলিযোগাযোগ ও কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক ও অপটিক্যাল উপকরণের অবস্থা ভালো’।
দেশকে ব্যবহার্য পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংভর, বেকারত্ব দূর ও কাক্সিক্ষত সার্বিক উন্নতি করতে হবে। সে জন্য সব বন্ধ শিল্প চালুসহ শিল্প খাতের উন্নতি দরকার। সে লক্ষ্যে যথাশিগগির সব শিল্পকে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর এবং পরিবেশ, নিরাপত্তা ও শ্রমিক বান্ধব, দক্ষ জনবলের ঘাটতি পূরণ ও ব্যবসার সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। নতুবা যেটুকু শিল্প আছে তাও বন্ধ হয়ে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঝিনাইদহে বেসিক জার্নালিজম বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ
বছরখানেক সময় পেলে সংস্কার কাজগুলো করে যাব : উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না আশাবাদ রিজভীর
আফগানিস্তানে ফের দূতাবাস চালু করছে সৌদি
হাজারো বিঘা জমিতে পুকুর খনন: ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র!
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু
হাসিনাকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী
গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক
বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন
পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া