অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া কবে স্বাভাবিক হবে?
০৫ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
একটি শিশুর জন্মের পর তার যাবতীয় তথ্য, যেমন পিতা-মাতার নাম, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, জন্মস্থান উল্লেখ করে প্রত্যেকের ইউনিক নাম্বার সম্বলিত একটি সনদ দেওয়া হয়, যাকে জন্মসনদ বা জন্মনিবন্ধন সনদ বলা হয়ে থাকে। যেকোন ডিজিটাল দেশের প্রধান শর্ত অনলাইনে যাবতীয় জীবনবৃত্তান্ত দিয়ে জন্মনিবন্ধন। কেননা এর ফলে একটি শিশু জন্মের সাথে সাথে তার যাবতীয় তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে। শিশুটি বেড়ে ওঠার সঙ্গে তার যাবতীয় প্রয়োজন, যেমন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির তথ্য, পাসপোর্ট করার তথ্য, জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার তথ্য, পেশাজীবনের তথ্যসহ অন্যান্য যাবতীয় তথ্য সহজে এবং মুহূর্তের মধ্যেই পেয়ে যাওয়ার সহজ পথ তৈরি হচ্ছে। উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত দেশে এগুলো প্রতিটি শিশুজন্মের পরপরই তার যাবতীয় জীবনবৃত্তান্ত অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। কাগজের স্তূপ ঘেঁটে তথ্য বের করার ঝামেলা এড়াতেই ডিজিটাল তথা অনলাইননির্ভর সেবা প্রদানে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, যেটা বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমাদের দেশে এই ডিজিটাল পদ্ধতি থেকে ততটা সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সার্ভারে সমস্যা, ইন্টারনেট নেই, ইন্টারনেটের স্পীড কম, ঘুষবাণিজ্যসহ নানান তালবাহানায় জনগণের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি সেবায়। যেটা কিনা ডিজিটাল তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রধান ইন্ডিকেটর হওয়া উচিৎ ছিল সেখানে ডিজিটাল সেবার মান নিয়ে জনগণের সন্তুষ্টের প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।
কিছুদিন যাবৎ বহুজনের থেকে অনুরোধ আসছে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে তারা নানাধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং সেটা কেন হচ্ছেন বা তার সমাধান নিয়ে লেখার জন্য। এরপর অনলাইন ঘেঁটে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটু খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পরবর্তীতে জানতে পারলাম, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সেবা নেওয়া লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে অনলাইনে জন্ম কিংবা মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সার্ভার সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত এই সুযোগ চালু করা হবে না। এখানে উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ গত ৭ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে একটি সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা ওই সময় ওয়েবসাইটটির নাম প্রকাশ করেনি। পরে তারা অন্য একটি প্রতিবেদনে জানায়, সংস্থাটি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়। অবশ্য তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থার মহাপরিচালককে প্রধান করে ত্বরিৎ গতিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, যেটার প্রতিবেদন ও দ্রুত দাখিল করা হয়। যেখানে বলা হয়, কারিগরি ত্রুটি ও দক্ষ লোকের অভাবে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয় থেকে তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। কারিগরি ত্রুটির কারণেই তথ্য উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল। সংস্থাটি সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ করলেও তাদের দক্ষ লোকবল ছিল না। একজন প্রোগ্রামার ও প্রয়োজনে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে লোক এনে কাজ করানো হতো। এ ছাড়া যে প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সফটওয়্যার বানানো হয়েছিল, তাদের কাছ থেকে সবকিছু ভালোভাবে বুঝেও নেওয়া হয়নি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে যে ঘটনা উঠে এসেছে, সেটা যথেষ্ট সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টিকে আদৌ হালকাভাবে নেওয়ার মত বিষয় নয়। তবে এটা জোর গলায় বলা যায়, এমন ঘটনা দেশের বহু সরকারি সেবায় বিদ্যমান আছে।
প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্রের দিকে একটু নজর দিতে চাই। দেশের সকল সেবা জাতীয় পরিচয়পত্রনির্ভর। একজন নাগরিকের পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কর প্রদানের সময় টিন সনদ খোলা, মোবাইলের সিমকার্ড নিবন্ধন বা নতুন সিমকার্ড ক্রয়, ব্যাঙ্কে হিসাব, নগদ বা বিকাশ হিসাব খোলাসহ নানাবিধ কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের দরকার পড়ে। এছাড়াও যেকোন ধরনের বিল প্রদান, যেমন বিদ্যুৎ বিল, টেলিফোন বিল, গ্যাস বিল প্রদানে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। সকল দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র একটি অতীব দরকারি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে। কিন্তু এই জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল নেই, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অল্প কিছু তথ্য সংবলিত জাতীয় পরিচয়পত্রের নিজের নাম, না হলে পিতা-মাতার নাম, অথবা ঠিকানায় ভুল আছে। যে ভুলগুলো হওয়ার প্রধান কারণ ছিল তথ্য আহরণের সময় অস্থায়ীভাবে অদক্ষ লোক বা ডাটা এন্ট্রি অফিসার নিয়োগ। যে ভুলের জন্য জনগণের কোনরকম দায় ছিল না। কিন্তু পরক্ষণে যখন জনগণ এই ভুল সংশোধনের চেষ্টা করেছে তখন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বা বর্তমানেও হচ্ছে।
প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় যে ভুলগুলো ছিল পরবর্তীতে যখন সেগুলো ডিজিটাল করা হয়েছে সেখানে ভুলের সংশোধনীর কোন সুযোগ না রেখে সরাসরি একই তথ্যের ভিত্তিতে ডিজিটাল কার্ড প্রিন্ট দিয়ে জনগণকে দেওয়া হয়। ভুলের বিষয়ে জনগণ অভিযোগ করলে তাদেরকে ভুল সংশোধনের জন্য পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়। এই আবেদন করতে বলা মানেই জনগণ আবারও হয়রানি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডিজিটাল পরিচয়পত্র ইস্যু করার পূর্বে বা প্রিন্ট দেওয়ার পূর্বে ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাচারের মাধ্যমে জনগণকে ভুল সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্যোগে, দক্ষ তথ্য গ্রহণকারী লোক নিয়োগের মাধ্যমে জনগণের থেকে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করার দরকার ছিল। এরপর ভুলগুলো শুধরে সঠিক পরিচয়পত্র প্রিন্ট দেওয়া উচিত ছিল। যেখানে পরিচয়পত্রের সাথে সংযুক্ত ছবি অবশ্যই হালনাগাদ করা উচিত। কেননা, ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পূর্বের জাতীয় পরিচয়পত্রের মধ্যে কম করে হলেও ১৫ বছর সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। তাহলে দেশের নাগরিকের ১৫ বছর আগের ছবি এবং ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে সংযুক্ত ছবি যদি একই হয় তাহলে সেই ছবির সাথে বর্তমান ছবির মিল খুঁজে পাওয়া একটু মুশকিল। এসকল অসঙ্গতি দূর করে পরেই ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র প্রিন্ট তথা বিতরন করা করার দরকার ছিল। কিন্তু সেরকম কোন পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নেওয়া হয়নি।
অধিকাংশ মানুষের ভিতর ক্ষোভ আছে যে, জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবির সাথে নিজের ছবির সাথে কোন মিল নেই। নি¤œ মানের ওয়েব ক্যামেরা এবং অদক্ষ ডাটা এন্ট্রি লোক নিয়োগের কারণে এধরণের অসঙ্গতি খেয়াল করা যায়। এগুলোর হালনাগাদ তথা সুষ্ঠু সমাধান ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদানের আগেই করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনকিছু না করে ডিজিটাল পরিচয়পত্র বিতরন প্রায় শেষের দিকে। এখন জনগণ পুনরায় ভুল সংশোধনী করতে গেলে পুনরায় পরিচয়পত্র প্রিন্ট দিতে হবে যেখানে সরকারের বাড়তি একটা ব্যয়ের ব্যাপার আছে। সেইসাথে জনগণের অহেতুক হয়রানি তো আছেই। তবে একটু সদিচ্ছা থাকলেই এই বাড়তি ব্যয় সামাল দেওয়া যেত। তাছাড়া যে ভুলে জনগণের কোন হাত ছিলনা সেই ভুলের দায় কেন জনগণ নেবে, সেই বিষয়ে ও প্রশ্ন থেকে যায়। তাই জাতীয় পর্যায়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর আগে পরে কোনধরনের সুবিধা বা অসুবিধা হতে পারে তার বিস্তর গবেষণা করে তবেই এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের অহেতুক খরচের বোঝা যেমন বাড়বে না ঠিক তেমনি জনগণ ও অহেতুক হয়রানি থেকে রেহাই পাবে।
তথ্য ফাঁসের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, এই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহের সময় কি যথেষ্ট দক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল? এখানে যে তথ্য ফাঁস হবে না সেই বিষয়ে কতটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যায়? কিছুদিন আগে আমার নিজ উপজেলায় জাতীয় পরিচয়পত্রের ডিজিটাল কপি আনতে যাই। সেখানে দেখলাম, একজন মহিলা ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে আসা ব্যক্তিদের ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিচয়পত্র দিচ্ছেন। দেখেই বুঝলাম, এই মহিলা উপজেলা নির্বাচন অফিসের স্থায়ী পদে চাকরি করেন এমন কেউ নন। তারপরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম উপজেলা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে সাময়িক নিয়োগপ্রাপ্ত এমন বহু ডাটা এন্ট্রি অফিসার আছে। তাদের কাজের দক্ষতা অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যে যত বেশি লোকের ডাটা ইনপুট দিতে পারবেন তিনি তত বেশি টাকা পাবেন। অর্থাৎ সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব ডাটা এন্ট্রি অফিসারের জনগণের সেবা দেওয়ার মাথাপিছু হিসাব অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
ঠিক একই কাজ করা হয়েছিল জন্মনিবন্ধনের সময়ে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, জন্মের ২০ বছর পরে এসে ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধায়নে জন্ম সনদ ইস্যু করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ তখন নিজ উদ্যোগে প্রিন্ট কপিতে জন্ম নিবন্ধনকারীর যাবতীয় তথ্য হাতে লিখে একটি জন্মসনদ প্রদান করেছিল। সে নিবন্ধনের হাতের লেখা দেখে আমি আজও অবাক হই। নিবন্ধন কপির পাশাপাশি একটি খাতায় নিবন্ধন কারীর তথ্য লিখতে হয়। যিনি লিখেছিলেন তিনি প্রতিটি সনদ লেখার জন্য মাথাপিছু নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পেয়েছিলেন। ফলে যিনি লিখেছেন তিনি কোনকিছুর দিকে নজর না দিয়ে শুধুমাত্র সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। কেননা সংখ্যা যত বেশি হবে আয় তত বেশি হবে। পক্ষান্তরে স্বাভাবিকভাবেই হাতের লেখার সৌন্দর্য লোপ এবং ভুলের পরিমাণ ও তত বেশি হবে। পরবর্তীতে অবশ্য সেই নিবন্ধন বাতিল করে অনলাইননির্ভর প্রিন্ট কপি দেওয়া হয়েছে, যেটা করতে গিয়েও জনগণ সহ্য করেছেন সীমাহীন ভোগান্তি। কিছুদিন পরে যদি প্রিন্ট কপিই দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল, তাহলে জরুরি ভিত্তিতে হাতে লেখা জন্মসনদ প্রদানের কি দরকার ছিল, সেটা ভাববার বিষয়।
বারবার এসব সনদ প্রদানে ভুলভ্রান্তির ঝামেলা আছে। কিন্তু ভুল যারই হোক ভোগান্তি কিন্তু সাধারন জনগণের পোহাতে হবে, এটা নিশ্চিত। অথচ এই ভুলের মাত্রা কমিয়ে জনগণের সঠিক তথ্য ইনপুটের মাধ্যমে নির্ভুল জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার সুযোগ ছিল। সেখানে শুধুমাত্র দরকার ছিল একটা নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটের। দেশের প্রতিটি নাগরিকের সেখানে নিজস্ব ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করে পরিবারের যারা নির্ভরযোগ্য সদস্য (নির্দিষ্ট সংখ্যক) তাদেরসহ নিজের যাবতীয় তথ্য ইনপুট করার সুযোগ থাকবে। ছবি থেকে শুরু করে সকল তথ্য যেখানে হালনাগাদের সুযোগ থাকবে। জনগণ তথ্য ইনপুট দেওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভেরিফিকেশন টিমের লোকজন সেগুলো ভেরিফাই করে চূড়ান্ত করার জন্য আবারো স্ব স্ব ব্যক্তির অনুমতি চাইবে। আবেদিত ব্যক্তির চাহিদানুযায়ী তথ্য সংযোজিত হলে সেটি চূড়ান্তভাবে প্রিন্ট করার জন্য বলতে পারেন। তাহলে সেখানে ভুল্ভ্রান্তি থাকার সম্ভবনা একেবারেই থাকবে না বলে আশা করা যায়। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত নিয়মে কর্তৃপক্ষ ভুল করে জনগণের উপর সকল দায় চাপিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা ঘটে। যেটা আদৌ জনগণবান্ধব নয়।
তার সাথে তথ্য ফাঁসের ঘটনা তো আছেই। বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগের। চীন পৃথিবীর সর্বাধিক জনগোষ্ঠীর একটি দেশ। সেখানে আমাদের দেশের প্রায় ১০ গুণ জনগণের বসবাস। কিন্তু তাদের একটাই পরিচয়পত্র। যেটা নির্ভুল এবং সকল কিছুর সাথে সংযুক্ত। কিন্তু আমাদের দেশে পরিচয়পত্রের কোন শেষ নেই। জন্মনিবন্ধন (প্রথমে হাতেলেখা পরে ডিজিটাল), জাতীয় পরিচয়পত্র (প্রথমে প্রিন্ট করা পরে ডিজিটাল), দাপ্তরিক পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যবসায়িক লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, টিন সনদ আরও কতকিছু আছে। যেখানে এতকিছু থাকবে সেখানে ঝামেলা নিশ্চিত। যেটা আমাদের জনগণ অহরহ পোহাচ্ছে। কিন্তু উচিত ছিল প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি মাত্র নির্ভরযোগ্য পরিচয়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করা। যে পরিচয়পত্র প্রতিটি নাগরিক জন্মের সাথে সাথে পেয়ে যাবে। পরবর্তীতে যেখানে সকল তথ্য সময়ে সময়ে হালনাগাদ করে সকল সেক্টরে একই পরিচয়পত্র দিয়ে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
তথ্য ফাঁসের অভিযোগে বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে জন্মনিবন্ধনের আবেদনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পূর্বে যে কেউ অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের আবেদন করতে পারতেন এবং পরে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধের পর আবেদন ফরম নিয়ে জমা দিতেন সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয়ে। কিন্তু বর্তমানে কেউ অনলাইনে আবেদন করতে পারছেন না। আবেদনের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে অনুমোদিত ‘ইউজার নেম’ ও ‘পাসওয়ার্ড’ চাওয়া হচ্ছে, যা শুধু নিবন্ধকদের কাছে থাকে। কিন্তু যে শিশুটি মাত্র জন্মগ্রহণ করেছে তার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কিভাবে করা হবে সে বিষয়ে কিছুই বলা হইনি। কর্তৃপক্ষ বলছে কিছু কারণে সাময়িকভাবে অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু কবে আবার স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করেনি, যেটা জনগণের জন্য বড় একটা ভোগান্তিতে পরিনত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এই সমস্যার আশু সমাধান জনগণের একান্ত কাম্য।
লেখক. গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান, সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি
শুধু মুর্শিদাবাদ-মালদহ নয়, শিলিগুড়িও লক্ষ্যবস্তু , রাফালের আগমনে সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
হাসিনাকে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
আসাদের পতন, নিজের বেঁচে থাকার গল্প বললেন এক সিরিয়ান শরণার্থী
গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক
বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন
পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের
কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা
পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ
পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন