প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অব্যবস্থাপনা ও অপচয়
০৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২১ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থের অপচয় ও অব্যবস্থাপনার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় হওয়া অপসংস্কৃতি নতুন নয়। এমন কোনো প্রকল্প নেই যেখানে এ ধরনের আর্থিক অপচয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। গতকাল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাণী সম্পদ ও দুগ্ধশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৪,২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি কয়েক বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমবর্ধমান লাইভস্টক খাতের আধুনিকায়নে সরকারি সহায়তার অংশ হিসেবে গৃহিত এলডিডিপি (লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরী ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্পের জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ২৬ ধরণের আধুনিক কৃষি ও ডেইরী শিল্প যন্ত্রপাতি ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমদানিকৃত এসব যন্ত্রপাতি প্রান্তিক খামারিদের সহায়তার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও এগুলো পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল না থাকায় বছরের পর বছর ধরে অব্যবহৃত ও বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে অনেক আগেই সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন বিভাগের (আইএমইডি) পক্ষ থেকে মূল্যায়ণ জরিপ প্রকাশিত হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেয়া হয়নি। প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে আমদানিকৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে ২০২১ সালে সারাদেশে ৩৬০টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন, ৪৬৫টি ডিপ ফ্রিজার এবং ১৫০০টি ক্রিম সেপারেটর মেশিন স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহ করা হলেও এসব যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় বিপুল অংকের টাকায় কেনা আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রাণী সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো কাজে আসছে না।
সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় কৃষি ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন অন্যতম অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত। পোল্ট্রিখাতটি পুরোপুরি সাধারণ মানুষের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে। খাতটি প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। গরুর গোশত, দুধ, মুরগী, ডিম দেশের সাধারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। জিডিপিতে প্রাণী সম্পদ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গরুর লাম্পি রোগসহ ফার্মের মুরগীর বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। খামারিদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জামাদি ও কিটের প্রয়োজন। অথচ আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হলেও তা অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। সাধারণ মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ ও প্রাপ্যতা বৃদ্ধির উদ্যোগ হিসেবে বিগত দশকের শুরুতে (২০১৩-১৪) গৃহিত প্রকল্পের আশাব্যঞ্জক সাফল্যের আলোকে এ খাতের বিপলু সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। তার অংশ হিসেবে গড়ে ৩০ জন ডেয়ারি ও পোল্ট্রি খামারীকে সদস্য করে সারাদেশে সাড়ে ৫ হাজার কৃষিভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল প্রাণীসম্পদ বিভাগ। প্রকল্পের সামগ্রিক বাস্তবায়ন চলতি বছরের মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৭ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে বলে আইএমইডি’র পক্ষ থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্তে¡ও দক্ষ অপারেটরের অভাবে চালানো ও সরবরাহ করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব যন্ত্রপাতি কেনার আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় এগুলো চালানো যাবে কিনা কিংবা প্রশিক্ষণের কথা বিবেচনায় নেয়নি কেন? কেন এসব যন্ত্রপাতি কিনে ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে?
এলডিডিপি প্রকল্পের অর্থায়নে সরাসরি বিশ্বব্যাংক জড়িত থাকায় দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে দুর্নীতি ও অব্যবস্থা নিরসনে বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ ও নজরদারির কারণে প্রাণীসম্পদ উন্নয়নের এই প্রকল্পটির সামগ্রিক অবস্থা স্বচ্ছভাবে মূল্যায়নের আওতায় এলে এর নানা রকম গলদ ধরা পড়ে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্প যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হলেও এসব যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে খামারি ও উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ না থাকা বিস্ময়কর। এ ধরনের ক্ষতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়ার পর তা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তার যথাযথ সমীক্ষা থাকা উচিৎ ছিল। এসব বিবেচনা না করে এসব মূল্যবান যন্ত্রপাতি এনে অপারেট করার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে ফেলে রাখা বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা অত্যুক্তি নয়। অপরিকল্পিত ও অবিবেচনাপ্রসূত এমন প্রকল্প হাতে নিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির জন্য দায়িত্ব প্রাপ্তদের জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। প্রকল্প পরিচালক সারাদেশে সাড়ে ৫ হাজার খামারী সমবায় গঠন, ১৫০০ ক্রিম সেপারেটর মেশিন খামারিদের মধ্যে বন্টন করেছেন এবং খামারি ও কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যর্থতার কথা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। এ প্রেক্ষিতে, যেসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে, এর দায় তাদের ওপর বর্তায়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপ্রাপ্ত একটি প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পর আধুনিক যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্র অর্জনের সম্ভাবনা ছিল, তা আদতে কোনো কাজে আসেনি। পোল্ট্রিশিল্পের উন্নয়নের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এ খাতের অব্যবস্থাপনা ও ব্যর্থতাসমূহ দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। পাশাপাশি এ ধরনের অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা
উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক