ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যু : আরো সতর্কতা জরুরি

Daily Inqilab ডা. মোহাম্মদ হাসান জাফরী

১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম

ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশক নিধন, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস সহ নানাবিধ কর্মসূচির পাশাপাশি এখন আমাদের সময় সচেতনতার, না হলে চরম বিপর্যয়ে পড়বে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

ডেঙ্গুজ্বরের জন্য দায়ী ফ্ল্যাভিভাইরাসগণের অন্তর্ভুক্ত ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গি ভাইরাস। এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসসহ ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক। এই ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ পাওয়া গিয়েছে, যাদের প্রত্যেকেই রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। জীবাণুবাহী এডিস মশা কাউকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ায় তাহলে সেই মশা ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এই জীবাণুবাহী মশাটি যখন অপর কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় তখন তার দেহে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে খুব সহজে একজন থেকে অপরের দেহে এ রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ৩ ধরনের ডেঙ্গু হতে দেখা যায়, ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।

সাধারণত ভাইরাস জ্বরের যে লক্ষণ, তার সবই ডেঙ্গুজ্বরে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ হচ্ছে, সারা শরীরের মাংসপেশিতে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যথা, জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময়ে এলার্জি বা ঘামাচির মতো সারা শরীরে লালচে দানা দেখা যায়। এ জ্বর কম বা বেশি উভয়ই হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। খাবারে অরুচি ও বমি বমি ভাব হয়। সাধারণত জ্বর ৩-৪ দিন পর ভালো হয়ে যায়, তবে রক্তের প্লেটিলেট কমতে থাকে। কখনো মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে আবার জ্বর আসে এবং শরীরে র‌্যাশ দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রচ- মাথা ব্যথার সঙ্গে শরীরেও প্রচ- ব্যথা অনুভূত হয় এবং জ্বর থাকে। কখনো চোখের পিছনে ব্যথা অনুভব করে। যাদের বেশি জ্বর থাকে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে যেমন চামড়ার নিচ, নাক, মুখ, দাঁত ও মাড়ি, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, কফ, বমি ও পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে আবার রোগীর রক্তনালী থেকে প্লাজমা লিকেজের কারণে বুকে ও পেটে পানি জমতে পারে। পানি শূন্যতা বেশি হওয়ায় প্রসাবের পরিমাণ কমে যেতে পারে, অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ প্রায় কাছাকাছি হলেও কিছু পার্থক্য আছে। চিকুনগুনিয়াতে র‌্যাশ সাধারণত ১-২ দিনেই দেখা যায়। এখানে মাংসপেশী বা পিঠ ব্যাথার তুলনায় অস্থিসন্ধি, হাতের আঙ্গুল এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা বেশি অনুভূত হয়। তবে চোখের পিছনে ব্যাথা, রক্তক্ষরণ, প্লাটিলেট কমে যাওয়া, শক এগুলো হয় না বললেই চলে। চিকুনগুনিয়া সাধারণত দ্বিতীয় বার হয় না তবে ডেঙ্গু দ্বিতীয় বার হলে জটিলতা আরো বেড়ে যায় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। সাধারণত বর্ষাকালে শহর এলাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ লক্ষ করা যায়।
খুবই সাধারণ কিছু নিয়মকানুন, যা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সবসময় সকলের সচেতনতার জন্য সরকার কর্তৃক প্রচারিত হয় এগুলো মেনে চলে আমরা ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়াসহ নতুনভাবে এ রোগের জীবাণুবাহী মশার যাতে আরো প্রসার না ঘটে সেজন্য সকলকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাসার পাশে, ছাদে, পরিত্যক্ত জিনিসের ভেতর, ফুলের টব, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, বাথরুম ইত্যাদি জায়গায় যেন পানি না জমে থাকে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অন্তত ৩ দিনে ১ বার এসব জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। সরকার এবং সিটি কর্পোরেশন এই করোনা মহামারীর মধ্যেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করছেন। এছাড়া জলাশয়, নর্দমা, রাস্তার পাশের গর্ত এগুলো ও পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে আমাদের সকলকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হতে হবে। বাসাবাড়ি এবং উল্লেখিত স্থানসমূহ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এডিস মশা সকালে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়, তাই এ সকল সময়ে বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। সর্বোপরি ঢাকা শহরের সকল শিক্ষিত জনসাধারণ আমরা কমবেশি সবাই এ বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই রাজধানীবাসী এ রোগ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্ষাকাল এবং এর পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্ক না থাকলে তা আমাদের জন্য বিশাল বিপদ ডেকে আনতে পারে। ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ না থাকলে শুধু সরকারের চেষ্টায় ডেঙ্গু মোকাবেলা সম্ভব হবে না। তাই সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

লেখক: চিকিৎসক


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ
বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আরও

আরও পড়ুন

গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক

গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক

বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'

বঙ্গতে আসছে 'ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ'

সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন

সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন

পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের

পানামা খাল দখলের হুমকি ট্রাম্পের, ভর্ৎসনা পানামার প্রেসিডেন্টের

কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

কুমিল্লায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা

পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ

পাবনা-৩ এলাকায় অ্যাডভোকেট রবিউলের গণসংযোগ ও কম্বল বিতরণ

পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পান্থকুঞ্জ ও আনোয়ারা পার্ক নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়

নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়

জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া

জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭

নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭

রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ

রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ

ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা

ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল