বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে
১০ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১০ পিএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৪ এএম
গত চার দশক ধরে ঢাকার যানজট নিরসনে নানাবিধ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে সরকার। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেশকিছু ফ্লাইওভার নির্মান করেও তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে এবং নিচের রাস্তাগুলোতে যানজট লেগেই থাকছে। এমনকি ফ্লাইওভারের উপরেও দীর্ঘ যানজটের চিত্র প্রায়শ: দেখা যাচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে নতুন প্রত্যাশার কথা বলা হচ্ছে। আদতে এসবেও যে যানজট নিরসন হবে তা নিয়ে আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় যানবাহনের সংখ্যার তুলনায় অপ্রশস্ত রাস্তা এবং গণপরিবহণের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার অভ্যন্তরে থাকা আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালগুলোর অবস্থান ও এসব টার্মিনাল পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা এবং শহরের বিভিন্ন রাস্তায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টার ও স্ট্যান্ডগুলোও এ ক্ষেত্রে বড় ভ’মিকা পালন করছে। এহেন বাস্তবতায় ঢাকার অভ্যন্তরে থাকা বাস টার্মিনালগুলোকে স্থানান্তর করে ঢাকার চারটি প্রবেশ মুখের বাইরে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিক সিদ্ধান্তে ঢাকার চারটি প্রধান আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে নারায়নগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজের ওপারে, কেরানিগঞ্জে, হেমায়েতপুর ও উত্তরার দিয়াবাড়িতে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই সাথে বাস টার্মিনালগুলোর কাছাকাছি ৮টি স্থানে বাস ডিপো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, এ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কাঁচপুরে নতুন বাস টার্মিনাল নির্মান কাজের উদ্বোধন করেছেন।
ঢাকার যানজট নিরসনে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালগুলো শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ ইতিবাচক। গত চল্লিশ বছর ধরে ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধন, যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এ সময়ে শহরে ব্যক্তিগত গাড়ী ও গণপরিবহনের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়লেও বাস টার্মিনাল ও ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোনো প্রকল্প বা অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। যানজট নিরসনে বিশেষজ্ঞদের প্রণীত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনাকে (এসটিপি) পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র ফ্লাইওভারের মত অবকাঠামোর দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়ার কারণেই ঢাকার যানজট নিরসনে সফলতা আসেনি। প্রায় দুই দশক আগে একটি বিশেষজ্ঞ দলের গবেষণায় একটি সমন্বিত এসটিপি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছিল। ২০০৫ সালে ৭০ টি পলিসি ও ১০ টি প্রস্তাবাকারে ২০ বছর মেয়াদী এসটিপি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রকাশ করা হলেও পরবর্তী সরকার তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেয়ায় যানজট নিরসনের উদ্যোগগুলো তেমন কাজে আসেনি। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে প্রণীত এসটিপি বাস্তবায়নের বদলে ভুল পথে নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণেই ঢাকার যানজট বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
প্রাথমিকভাবে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ বিঘা জমির উপর কাঁচপুরে নতুন টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন যানজট নিরসনে একটি কার্যকর পদক্ষেপের শুরু হিসেবে গণ্য করছেন নগর কর্তৃপক্ষ। এটি বাস্তবায়িত হলে সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালিসহ এ অংশের ১৬ জেলায় চলাচলকারী ১১হাজার বাস আর ঢাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। এর ফলে ঢাকার যানজট ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। একইভাবে কেরানিগঞ্জ, দিয়াবাড়ী এবং হেমায়েতপুরে নতুন আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল স্থাপনের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার আন্ত:জেলা বাস শহরে প্রবেশ না করলে ঢাকার যানজট উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এখন আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত সায়েদাবাদ, গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালগুলোর উপযুক্ত সংস্কার ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে সিটি বাস টার্মিনাল ও পরিবহন ডিপো বা পুল হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। আগামী অক্টোবর নাগাদ দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্টোরেলের যাতায়াত শুরু হতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মতিঝিলে একটি পরিকল্পিত-আধুনিক নতুন সিটি ট্রান্সপোর্ট হাব গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। শত শত গণপরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত স্থান বরাদ্দ নিশ্চিত করতে আধুনিক বহুতল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যানজট নিরসনে এ ধরণের জরুরি ও কৌশলগত প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নারী পুলিশের দিকে তাকিয়ে আসামির হাসি, নেটদুনিয়ায় তোলপাড়
জার্মানির ক্রিসমাস মার্কেটে হামলায় ৯ বছরের শিশুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া
স্ত্রী-কন্যাসহ সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭
রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ
ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা
উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন
ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা
উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক