ভারতের স্বার্থরক্ষার নীতি থেকে সরে আসতে হবে
১৫ আগস্ট ২০২৩, ০৯:০৮ পিএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কটি যে একপাক্ষিকে পরিণত হয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ভারতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে সরকার যেভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে এবং যেসব বিশেষণে আখ্যায়িত করে, তা বিশ্বে বিরল। ‘স্বর্ণ শিখরে’, ‘রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ’, ‘স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক’ এমন আরও অনেক বিশেষণে সরকারের তরফ থেকে ভারতের সাথের সম্পর্ককে মূল্যায়িত করা হয়। ভারতও এমন কথার সুযোগে তার সুবিধার ষোলআনা বাংলাদেশ থেকে আদায় করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। ভারতের কাছ থেকে আমাদের যে ন্যায্য পাওনা এবং দাবী তার কিছুই আদায় করা যায়নি। ভারত এমনই যে, তার চাওয়া এবং আবদারের জোয়ারে আমাদের চাওয়াগুলো ভেসে যায়। তাতে চাওয়ার মতো কোনো সময় ও সুযোগ দেয়া হয় না। ভারতের সাথে এমনই সম্পর্ক যে, সে চাহিবা মাত্র আমাদের দিতে হবে, বিনিময়ে কিছু পাওয়া যাবে না। এমন ভারসাম্যহীন সম্পর্ক বিশ্বের আর কোনো দেশে আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। ভারত একে একে তার চাহিদার ট্রানজিট, যা কিনা একান্তই তার স্বার্থের অনুকূলে তা আদায় করে নিয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে প্রধান চারটি ট্রানজিট রুট অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ সরকার। এতে ত্রিপুরার বাণিজ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে উচ্ছ্বাস ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন। বিশ্লেষকরা এ ধরনের ট্রানজিটকে একতরফা এবং ভারতের অসীম লাভের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরসহ চারটি ট্রানজিট রুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, আমদানি-রফতানি চালানের ফি, শুল্ক, মাশুল, ভাড়া ইত্যাদি ডলারে হওয়ার কথা থাকলেও তা নির্ধারণ করা হয়েছে টাকার মাধ্যমে, তাও মুমুলী মূল্যে। অথচ ডলারে নির্ধারণ করা উচিৎ ছিল এবং তা করলে বাংলাদেশ লাভবান হতো। শুধু এই ট্রানজিটই নয়, ভারতের সাথে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বিশাল সুবিধা থেকে শুরু করে তার এমন কোনো চাওয়া নেই যা পূরণ করা হয়নি এবং হচ্ছে না।
বাংলাদেশের কাছে ভারত যা চেয়েছে, তার সবই সে পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কয়েক মাস আগে খোলাখুলিভাবেই এ কথা বলেছেন। যখন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন, তখন তার চেয়ে সত্য আর কিছু হতে পারে না। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে, বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, আমাদের প্রাপ্তির খাতা শূন্য। আমাদের মূল চাওয়াগুলোর তালিকাও খুব ছোট। প্রথমত তিস্তার চুক্তি। এ চুক্তিটি চূড়ান্ত করেও শেষ পর্যন্ত ভারত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির উছিলায় তা থেকে পিছিয়ে যায়। বহুবার তাকিদ দেয়া হলেও করব-করছি বলে আজ পর্যন্ত তা করেনি। অন্যান্য নদ-নদীর ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি অনেক দূরের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক পাখির মতো বাংলাদেশী হত্যা বন্ধে ভারত বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা তো করেইনি, উল্টো বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। এমন বিপজ্জনক সীমান্ত নিয়ে কিভাবে চমৎকার বন্ধুত্বের কথা বলা হয়, সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রানজিটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল, নেপাল ও ভুটানের সাথে পণ্যের আমদানি-রফতানি ও বিদ্যুৎ আমদানির জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুঁড়ি সংলগ্ন ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চিকেননেক বা করিডোর ব্যবহারের সুযোগ। এতে ভারতসহ চারটি দেশই উপকৃত হতো। এই করিডোর ব্যবহারের অঙ্গীকার করেও ভারত তা ঝুলিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের এই চাওয়াটুকুও ভারত পূরণ করছে না। অথচ বাংলাদেশের বন্দর ও সড়ক পথ ব্যবহার করে এককভাবে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে, যাতে ভারতের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। ভারতের রেমিট্যান্স আরোহনের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভারতের প্রায় দশ লাখ মানুষ গার্মেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত। এতে বছরে দশ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশ থেকে ভারত আহরণ করে। এছাড়া বর্তমানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ভারতের পণ্য যত সহজে বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার পায়, বাংলাদেশের পণ্য সেখানে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও রফতানির জন্য বহুভাবে দেন-দরবার করেও তা আদায় করা যাচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের সাথে ভারতের স্বার্থে যখনই কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে, তখন তা সাথে সাথে বাংলাদেশ সমাধান করে দিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের কূটনীতিকে অত্যন্ত দুর্বল বা নতজানু বলে আখ্যায়িত করেছেন। ভারত যেখানে তার চাহিদা কড়ায়গ-ায় আদায় করে নিচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ সরকার তার ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারছে না। অথচ ভারতের অধীনস্থ এক অঙ্গরাজ্য আরেক অঙ্গরাজ্য থেকে কোনো সুবিধা চাইতে গেলে বাংলাদেশের মতো চাহিবা মাত্র পেয়ে যায় না। সেখানে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারও তা দিতে পারে না। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির যে কথা বলেছে, তা থেকে প্রমাণিত হয়, কেন্দ্রীয় সরকার তার অঙ্গরাজ্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের সাথে অনন্য উচ্চতার সুসম্পর্ককে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশ দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে ভারতের অঙ্গরাজ্যের চেয়েও দুর্বল ভূমিকা পালন করছে, যা দক্ষ কূটনীতির সাথে যায় না। বাংলাদেশের ন্যায্য দাবী ও স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারকে এখন জোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। ভারতের একতরফা স্বার্থ রক্ষা কিংবা চাওয়া মাত্র দিয়ে দেয়ার নীতি থেকে সরে এসে ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ
আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
সৈয়দপুরে সাদপন্থি তাবলীগ জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা ফুয়াদ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার কারাগারে
বাংলাদেশে আইওটি ইকোসিস্টেম উন্মোচন করেছে ওয়ানপ্লাস
শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতা ছড়ালো ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে
আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক
সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা
সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু
রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা
আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন
নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার
মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে
চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ
বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু
বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস
সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান
আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন