সর্বগ্রাসী দূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তন। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবিদ, পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল আন্দোলন করছে। বায়ুম-লের উঞ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, যার অন্যতম প্রবল খরা, তাপমাত্রা, শৈত্যপ্রবাহ, বন্যা, ঝড় ইত্যাদি। তাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। গত ১৮ মে, ২৩ প্রকাশিত ‘সায়েন্স ম্যাগাজিন’র তথ্য মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নব্বই দশকের গোঁড়ার দিক থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি বড় হ্রদ ও জলাধার সংকুচিত হয়েছে। হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে সাগর-মহাসাগরের উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জলবায়ু সংকটের প্রভাব, পানি সংকট ও টেকসই চাষাবাদের অভাব কৃষিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ফলে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে পারে। উপরন্তু নানা ধরনের ব্যাধি বেড়েছে। তন্মধ্যে করোনা মহামারি অন্যতম। করোনার দাপট পুনরায় বাড়ছে। বর্তমান আক্রান্তের ৮০ শতাংশের শরীরে নতুন স্ট্রেন ইজি.৫-র উপস্থিতি মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও কানাডায় এটা বেড়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে হু। সংস্থাটির ইতোপূর্বের তথ্যানুসারে, বায়ু দূষণের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে। তাই বায়ুম-লের তাপমাত্রা রোধ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় বায়ুম-লের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তৎপ্রেক্ষিতে বহু দেশ বায়ু দূষণ হ্রাস করার রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। অনেক দেশ বায়ু দূষণ কমানো শুরু করেছে। বহু দেশ কার্বন ট্যাক্স চালু করেছে।উপরন্তু কপ ২৬তম সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংসকারী পদক্ষেপ শূন্যে নামিয়ে আনতে বিশ্বনেতারা ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া, গত মার্চে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের জন্য দায়ী রাষ্ট্রগুলোর আইনগত বাধ্যবাধকতার বিষয়ে পরামর্শমূলক মতামত দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে অনুরোধ করে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সর্বোপরি কপ ২৭তম সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণের তহবিল গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত গরীব দেশগুলোকে তা থেকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ উক্ত ক্ষতিপূরণের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য যত চেষ্টা করছে, নিজ দেশের দূষণ বন্ধ করার জন্য তত চেষ্টা করছে না! তাই ক্রমান্বয়ে সব ধরনের দূষণের মাত্রা বাড়তে বাড়তে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফলে প্রায়ই প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। আইএফআরসি গত ৯ আগস্ট বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এল নিনোর সমস্যা যুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়েছে। এল নিনোর কারণে এ বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। বাংলাদেশে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হু। উপরন্তু এডিস মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস ও মশা রোধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে হু।

বাংলাদেশে ভয়াবহ দূষণের অন্যতম হচ্ছে: বায়ু দূষণ, নদী দূষণ, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি। এসবের জন্য প্রধানত দায়ী কল-কারখানা, ইটভাটা ও যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া, নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষুদ্র কণা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আগত বায়ু দূষণ ও বর্জ্য, উচ্চ শব্দ, পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক ব্যবহার, শিল্প ও ই-বর্জ্য ইত্যাদি। বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব শিল্প ও স্থাপনার সনদ দেয়।তন্মধ্যে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) অন্যতম। এই সংস্থা ‘লিড’ (লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন) নামে পরিবেশবান্ধব শিল্প ও স্থাপনার সনদ দেয়, যা পেতে সংস্থাটির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত ৯টি শর্ত পালন করতে হয় এবং যার মোট পয়েন্ট ১১০। তন্মধ্যে পয়েন্ট ৮০-এর ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি থেকে গত ৭ আগস্ট নতুন করে দুটি কারখানা সনদ পেয়েছে। ফলে উক্ত সংস্থা থেকে বাংলাদেশের সনদ পাওয়া মোট শিল্পের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০০টি। তন্মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম, ১১৩ গোল্ড, ১০ সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড। এদের অধিকাংশই পোশাক ও বস্ত্র কারখানার। অথচ, বাংলাদেশে অসংখ্য শিল্প ও স্থাপনা রয়েছে। এসবের মধ্যে যারা ইউএসজিবিসির সনদ পায়নি তারা পরিবেশ বিধ্বংসী!

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার দেশের ৫৬টি প্রধান নদীর ওপর গবেষণা করে সম্প্রতি বলেছে, ৫৬টি নদীতেই সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি দূষণের অস্তিত্ব মিলেছে, তবে তুলনামূলক বেশি দূষিত নদী লবণদহ, হাঁড়িধোয়া ও সুতাং। ২০২১ সালে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন মতে, প্রতিদিন ঢাকা সিটি করপোরেশন ৬,৪৬৪ টন বর্জ্য সংগ্রহ করে। এর ১০% প্লাস্টিক, যার ১২% খাল ও নদীতে এবং ৩% ড্রেনে ফেলা হয়। ফলে এসব মজে যাচ্ছে। বর্তমানে বর্জ্যের পরিমাণ আরো বেড়েছে। গত ১১ জুলাই, ২৩ প্রকাশিত সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণ তীব্রতর হচ্ছে। বিশেষ করে, বড় শহরগুলোতে ওই দূষণ মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। ঢাকাসহ বড় শহরে হু’র মানমাত্রার তুলনায় ১৬ গুণ বেশি বায়ুদূষণ হচ্ছে। অন্যদিকে, ২০০৫ সালে ঢাকায় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৯ কেজি ২০০ গ্রাম, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২২ কেজি ২৫০ গ্রাম। ব্যবহার হওয়া এসব প্লাস্টিকের বড় অংশই প্রকৃতিতে জমা হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হচ্ছে। আবার দেশের উপকূলীয় নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে, ৩৯% ও রূপসা নদীতে প্রায় ৩২%।বিশ্বের যে ২০টি দেশে ব্যবহার করা প্লাস্টিক সামগ্রী সবচেয়ে বেশি অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফেলে দেওয়া হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ দশম। উপরন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও প্রতিনিয়তই বর্জ্য ও দূষণ আসছে। গত আগস্ট,২২ প্রকাশিত এসডোর তথ্য মতে, বাংলাদেশের আন্ত সীমান্ত নদীগুলো প্রতিদিন প্রায় ১৫,৩৪৫ টন একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য বহন করে। তন্মধ্যে ২,৫১৯ টন ভারত ও ২৮৪ টন মিয়ানমারের। প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে প্রায় ২৬,৩৭,১৭৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। দেশ-বিদেশের এসব প্লাস্টিক দেশের মাটি, পানি, মাছ ও উদ্ভিদের ক্ষতি এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে নিত্য নতুন ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা গত ২২ মে বলেছে, গত ৫০ বছরে চরম আবহাওয়া, জলবায়ু ও নিরাপদ পানি সংক্রান্ত ঘটনার কারণে বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তাই ওয়ান টাইম ব্যবহৃত ও ননরিসাইক্লিং প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এসব অনেক দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশবাদী সংগঠন-গ্রিনপিস সম্প্রতি বলেছে, পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক তার ভার্জিন উপাদানের চেয়েও বেশি বিষাক্ত। স্মরণীয় যে, প্লাস্টিক শুধুমাত্র প্রকৃতিরই ক্ষতি করছে না, সেই সঙ্গে মানুষ ও প্রাণীকূলেরও ক্ষতি করছে। এর ক্ষুদ্র কণা খাদ্যচক্রের সাথে মিশে মানুষের শরীরে ঢুকে নানা জটিল ব্যাধি সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানীরা মাছ ও মায়ের দুধেও প্লাস্টিকের কণা পেয়েছেন।

গত ৩ জুন এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, প্রতিবছর দেশে সৃষ্টি হচ্ছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য। সেই হিসাবে ২০২৫ সাল নাগাদ কোটি টনের ই-বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ। দেশে মিথেন গ্যাসেরও প্রকোপ ব্যাপক। গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারের তথ্য মতে, বিশ্বের ৬১টি শহরের মিথেন গ্যাস নির্গত হওয়া তালিকায় ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়,করাচী প্রথম। মিথেন গ্যাস সৃষ্টির পেছনে গ্যাস-সংযোগের ছিদ্র, বর্জ্য ও বর্জ্য মিশ্রিত পানির ভূমিকা রয়েছে। মিথেন গ্যাসের কারণে শহরের বাতাস বিপজ্জনক হওয়া ছাড়াও তাপমাত্রাও বাড়াচ্ছে। ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছ এবং শহরের অধিবাসীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের সমস্যা বাড়ছে। গৃহস্থালি, দোকান ও বাজারের বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে যত্রতত্র পড়ে থাকে, যার বিরাট অংশ পানি, ড্রেন ও জমিতে পতিত হয়ে সংকট সৃষ্টি করছে। যেটুকু বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে, তা ফেলে দেওয়া হচ্ছে শহরের উপকণ্ঠে। সেখান থেকেও পানি ও জমিতে পতিত হচ্ছে। বাকীগুলো সেখান থেকে পচে-গলে ব্যাপক দুর্গন্ধ সৃষ্টি করছে। বর্জ্য থেকে সার ও বিদ্যুৎ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার অগ্রগতি নগণ্য! শিল্প বর্জ্য ও পয়োঃবর্জ্যও পানিতে পতিত হয়ে ব্যাপক দূষণ সৃষ্টি করছে।

২০০২ সালে দেশে পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ফলে উক্ত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ হয়েছিল, যার সুফল সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর শিথিলতার কারণে পুনরায় পলিথিনের শপিং ব্যাগের যাত্রা শুরু হয় এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহৃত হতে থাকে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। পলিথিনের ব্যাগ অপচনশীল। তাই খাল-বিল, নদী, হাওর-বাওর, পুকুর, ড্রেন ইত্যাদিতে পতিত হচ্ছে। ফলে সেসব মজে যাচ্ছে। উপরন্তু পলিথিনের স্তূপের কারণে সংস্কারেও ব্যাঘাত ঘটছে! সর্বোপরি পলিথিন মাটিতে পতিত হয়ে মাটির উর্বরা শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে।

গত ২৮ মার্চ প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের ১০টি সর্বাধিক বায়ু দূষণ শহরের মধ্যে নয়টিই দক্ষিণ এশিয়াতে এবং ঢাকা এদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে মোট অকাল মৃত্যুর ২০ শতাংশর জন্যই দায়ী বায়ু দূষণ। অন্যদিকে, বৈশ্বিক নীতি অনুযায়ী প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতিটি দেশের ২৫% বনাঞ্চল থাকা দরকার। কিন্তু দেশে প্রয়োজনের এক তৃতীয়াংশও বনাঞ্চল নেই। যেটুকু আছে, তাও উজাড় হয়ে যাচ্ছে। নতুন বৃক্ষ রোপণও কম। গত এপ্রিলে প্রণীত ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদিত এক আইনে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যে কোম্পানি বন উজাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তার পণ্য আমদানি ও বিক্রির অনুমতি দেবে না ইইউ। উচ্চ শব্দের কারণে মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাসসহ নানা ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। শিল্প, যানবাহন ও ইটভাটার কালো ধোঁয়া, নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষুদ্র কণা, জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাপক ব্যবহার ইত্যাদি কারণে বায়ু দূষণ বাড়ছে। এসব দূষণ রোধ করার তেমন উদ্যোগ নেই। ২০ বছরের পুরনো বাস ও ২৫ বছরের পুরনো ট্রাক নিষিদ্ধ করার পর তা পুনরায় স্থগিত করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিকের চাপের কারণে! এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।

পরিশেষে বলতে হয়, সার্বিকভাবে দেশের পরিবেশের মারাত্মক অবনতি হয়েছে। তবুও প্রতিকারের কোন লক্ষণ নেই। এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স-২০২০ অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণ রোধে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬২তম।বর্তমান অবস্থাও তথৈবচ! ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।২০২২ সালে প্রকাশিত ল্যানসেটের প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে ২০০০-০৪ সালের তুলনায় ২০১৭-২০২২ সময়কালে অতি তাপমাত্রার কারণে মৃত্যু বেড়েছে ১৪৮%।

দূষণের কারণে জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। তাই সব ধরণের দূষণ বন্ধ করা জরুরি। সে জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস, সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্টকে দূষণমুক্তকরণ, সব শিল্পে ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক,পুরনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ,পলিথিনের শপিং ব্যাগ তৈরি ও ব্যবহার বন্ধ, বাতিলকৃত প্লাস্টিক পণ্য সংরক্ষণ করে তা প্লাস্টিক খেকো অণুজীব দিয়ে ধ্বংস, পশ্চিমা দেশগুলোর ন্যায় রিসাইক্লিং কংক্রিট ব্যবহার বৃদ্ধি,সব বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য থেকে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সব সেকেলে ইটভাটা বন্ধ, নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে পড়া বন্ধ, সব ধরণের উচ্চ সাউন্ড বন্ধ এবং বৈশ্বিক নীতি অনুযায়ী বনাঞ্চল সৃষ্টি ও তা রক্ষা করা আবশ্যক।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ
বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আরও

আরও পড়ুন

সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে

সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে

আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক

আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক

সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল  ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা

সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল  ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা

সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু

সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু

রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা

রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা

আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন

আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন

নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের  মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার

নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের  মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার

মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে

মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে

চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ

চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ

বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু

বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু

বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন  করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস

বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস

সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

সিরিয়ার নেতার সঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান

আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন

আরাফাত রহমান কোকো ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে উদ্দীপন যুব সংঘ চ্যাম্পিয়ন

সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল

সাতক্ষীরার নলতায় চার দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন, ক্যাম্পাসের নাম বদল

অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ

অর্থনৈতিক সংকটে আফগান রুটি, ঐতিহ্য ও জীবনের অংশ

আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে  অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা

আশুগঞ্জে গ্যারেজ মালিককে হত্যা করে  অটোরিকশা নিয়ে পালিয়েছে দুর্বৃত্তরা

উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের

উত্তরপ্রদেশে ৩ খলিস্তানি বিদ্রোহীকে গুলি করে হত্যা পুলিশের

শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার

শিবালয়ের যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হুমকিতে বৈদ্যুতিক টাওয়ার

হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম

হিলিতে কমেছে আলু পেঁয়াজের দাম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ১,১০০ হতাহতের শিকার : সিউল