ফ্লাইওভারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ক্রমবর্ধমান দু:সহ যানজটের বিড়ম্বনা লাঘবের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে গত দুই দশকে এক ডজনের বেশী বৃহদাকার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও প্রত্যাশিত যানজট নিরসন সম্ভব হয়নি। উপরন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একেকটি ফ্লাইওভার নানাবিধ নতুন নতুন নাগরিক সমস্যার জন্ম দিয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের বিভিন্ন ধাপে ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভুল নকশা ও অনিয়ম-দুর্নীতির যে সব অভিযোগ ইতিমধ্যে উঠেছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা তেমন দৃশ্যমান নয়। এক রিপোর্টে জানা যায়, ভারত, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ফ্লাইওভার নির্মাণে ২ থেকে ৬গুণ বেশী খরচ হয়েছে। এত বিপুল ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলোতে এখন নানাবিধ বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীরা। বিশেষত ঢাকার প্রায় প্রতিটি ফ্লাইওভার কোনো না কোনোভাবে নাগরিক বিড়ম্বনা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারে একটি ছিনতাইকারী চক্রকে ধরতে গিয়ে ফ্লাইওভারে এক ভয়ংকর সুড়ঙ্গ পথের সন্ধান পায় পুলিশ। এক ছিনতাইকারী আত্মরক্ষার জন্য লাফ দিতে গেলে আহত হওয়ার পর গোপন সড়ঙ্গপথের রহস্য ধরা পড়ে। সেই সুড়ঙ্গ আস্তানা থেকে তিন নারীসহ ছিনতাইকারী চক্রের মোট চার সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ঢাকার উড়াল সড়কের গোপন সুড়ঙ্গ আস্তানায় ছিনতাইকারী চক্রের নারী সদস্যদের ভয়ঙ্কর ফাঁদের তথ্য উঠে এসেছে। এই সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে দিনে রাতে যে কোনো সময়ে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেত এই চক্রের সদস্যরা। অনেক স্থানেই পর্যাপ্ত আলো এবং পুলিশের নিরাপত্তা নজরদারি না থাকায় এই ফ্লাইওভার রাতের বেলা অপরাধিদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়। ছিনতাই চক্রের সদস্য তরুনিরা কৌশলে গাড়ী কিংবা মোটর বাইকারদের থামিয়ে পথরোধ করার পর সুড়ঙ্গে ও নিচে থাকা পুরুষ ছিনতাইকারীরা মুহূর্তেই ঝোলানো বিশেষ রশি বেয়ে উপরে উঠে চাপাতি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে সুড়ঙ্গ পথে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেত। স্থানীয় জনসাধারণ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ধরে এভাবেই ফ্লাইওভারের বিশেষ স্থানগুলো যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক স্পট হয়ে উঠে। ফ্লাইওভারে বাইক দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে বেশকিছু প্রাণহানিও ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার জন্যও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের নাশকতামূলক কর্মকান্ডের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গত ৯ আগস্টে মগবাজার ফ্লাইওভারে জনৈক মোটর বাইকার তরুনি ছিনতাইকারীর ফাঁদে আক্রান্ত হওয়ার পর অপর দুই মোটরবাইক চালকের সাহসী ভ’মিকার কারণে পুলিশ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। হাতিরঝিল থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, রাজধানীতে সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্রের ৬ হাজারের অধিক সদস্যের একটি অংশ শহরের বিভিন্ন ফ্লাইওভারে তৎপর রয়েছে। তা ছাড়া ফøাইওভারের নিচে বিভিন্ন স্থানে মাদকসেবি ও অপরাধি চক্রের নিয়মিত আস্তানা এবং যত্রতত্র ময়লার ভাগাড় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে স্থানীয় চক্রের দখলবাজির কারণে নানাবিধ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে নাগরিকরা।
ভুল নকশা ও নির্মাণ ত্রুটি ধরা পড়ায় ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মালিবাগ- মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কয়েক বছর ধরে প্রলম্বিত হয়। এরপরও নির্মাণ ত্রুটি উত্তরণ করা সম্ভব হয়নি। ভুল নকশা এবং পর্যাপ্ত র্যাম্প না থাকায় ফ্লাইওভারের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী ওঠা-নামায় বিড়ম্বনা এবং প্রায়শ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্থাপত্য বিশেষজ্ঞরা মনে জানিয়েছেন। বাস্তবায়নের পর ভুল নকশা কিংবা নির্মাণ ক্রুটি নিয়ে তেমন কিছু করার না থাকলেও ফ্লাইওভারের উপরে প্রয়োজনীয় পুলিশি নজরদারি, পর্যাপ্ত ল্যাম্পপোষ্ট ও আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অসম্ভব নয়। ফ্লাইওভারের মত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর মধ্যে গোপন সুড়ঙ্গ, আস্তানায় বসে দিনের বেলায় মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপসহ ছিনতাই, ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড মাসের পর মাস ধরে চালিয়ে যাওয়ার বাস্তবতা থেকেই জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতার চিত্র ধরা পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর জননিরাপত্তা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার দায়িত্ব থাকলেও কার্যত আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল এজেন্ডাই হচ্ছে মিথ্যা মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় ও হয়রানি করা। শহরের মানুষ ঘরে-বাইরে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হলেও এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ’মিকা একেবারেই দায়সারা। শহরের ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে প্রতিদিন অনেক মানুষ ছিনতাই, পকেটমার, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টির হাতে সর্বস্ব হারাচ্ছে। কোন কোন স্পটে কোন কোন অপরাধিচক্র সক্রিয় আছে তা চিহ্নিত করে ধরা কিংবা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। বিশেষত ফ্লাইওভারগুলোর উপরে এবং নিচে সৃষ্ট নানামুখী বিড়ম্বনা ও অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। সেই সাথে এসব স্থানে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। যানজট ও জননিরাপত্তার মত ইস্যুগুলোকে পাশ কাটিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাদপন্থীদের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চা শ্রমিক গোপাল হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
ছাগলনাইয়ায় ফসলি জমির মাটি কাটায় দুইটি এক্সেভেটর জব্দ
আব্দুল্লাহ শফিকের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড
সৈয়দপুরে সাদপন্থি তাবলীগ জামায়াতের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ
স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা ফুয়াদ হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জেসমিন আক্তার কারাগারে
বাংলাদেশে আইওটি ইকোসিস্টেম উন্মোচন করেছে ওয়ানপ্লাস
শীতার্তদের মাঝে উষ্ণতা ছড়ালো ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সড়কে ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে গাড়ি চলবে ১০০ কি.মি গতিতে
আটঘরিয়ায় ঘন কুয়াশায় বিনা চাষে রসুনের জমি পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কৃষক
সীমান্তে বিজিবির গুলি ১৬ বস্তা ভারতীয় ফেনসিডিল ফেলে পালালো চোরাকারবারীরা
সখিপুরে পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু
রামগড়ে ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৪ লক্ষ টাকা জরিমানা
আমতলীর ইউএনও’র বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন
নবীনগর ও কসবায় বিভিন্ন রকমের মাদকসহ তিন যুবক গ্রেপ্তার
মণিপুর গৃহযুদ্ধে ইন্ধন দিচ্ছে মিয়ানমার, চাঞ্চল্যকর দাবি রিপোর্টে
চাঁদপুর মেঘনায় জাহাজে মিলল ৫ জনের মরদেহ
বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার ৭৮তম মাহফিল ও ইসলামী মহাসম্মেলন শুরু
বিনা খরচে কৃষকের দেড়’শ ধানের চারা রোপন করে দিল কালীগঞ্জ কৃষি আফিস