শিক্ষিকা পেটানোর বিচার নিশ্চিত করতে হবে
২৪ আগস্ট ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৭ এএম
একজন শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে চুলের মুঠি ধরে বেধড়ক পিটিয়েছেন একজন অভিভাবক। গত মঙ্গলবার যশোরের মনিরামপুর পৌর এলাকার দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই অভিভাকের নাম মিজানুর রহমান, যিনি ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেনের ভাইপো। অকুস্থলে চাচাও উপস্থিত ছিলেন। তার সামনেই ভাইপো ওই শিক্ষিকাকে পেটান। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা হওয়ার কারণে তারা এতটা দুর্বিনীত আচরণ করেছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। কী ছিল শিক্ষিকার ‘অপরাধ’? মিজানুর রহমানের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রাফিকুল ইসলামকে শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত বেসিনে হাত ধুতে নিষেধ করেন ওই শিক্ষিকা। কোনো বিচারেই একে কেউ অপরাধ বলবেন না। সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম, বেসিন, টয়লেট ইত্যাদি আছে। সাধারণত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত ওয়াশরুম, বেসিন বা টয়লেট ব্যবহার করে না। এটা নিয়ম এবং শিক্ষাও বটে। শিক্ষিকা যদি ওই ছাত্রের শিক্ষকদের বেসিন ব্যবহার করতে নিষেধ করেন তবে নিয়মের পক্ষে এবং শিক্ষা দেয়ার জন্যই করেছেন। অথচ, এ জন্য তাকে চরমভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। লোকসমক্ষে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। চুল ধরে জুতা দিয়ে মারতে মারতে তাকে শ্রেণিকক্ষের বাইরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে তিনি রক্ষা পেয়েছেন। ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ অন্য অফিসাররা স্কুলে আসেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানান, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষকরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যথোচিত শাস্তি দাবি করেছেন। আদৌ এই ঘটনার উচিত শাস্তি হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, ঘটনার যিনি হোতা তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন। তাদের ইচ্ছাই আইন। তারা যাচ্ছে তাই করতে পারেন। এ জন্য তাদের শাস্তি হয় না, জবাবদিহি করতে হয় না। এটা সহজেই অনুমেয়, কতটা বেপরোয়া হলে পৌরসভার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাইপো একজন সম্মানিত স্কুল শিক্ষিকার গায়ে হাত তুলতে পারেন, প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে জুতাপেটা করতে পারেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠনের এক শ্রেণির নেতাকর্মী হাট-বাজার, সংঘ-সমিতি, মসজিদ-মাদরাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন। বিশেষ করে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের দৌর্দণ্ড প্রতাপ বিদ্যমান। তাদের অন্যায় দাবি, অত্যাচার-অনাচারে শিক্ষকরা ত্যক্ত-বিরক্ত, অতীষ্ঠ। তাদের দ্বারা শিক্ষকদের শারীরিকভাবে নাজেহাল হওয়ার ঘটনা এযাবৎ যে কত ঘটেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিছু একটা হলেই শিক্ষকদের অপমান ও মারপিট যেন অতি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরে ঘটা কয়েকটি ঘটনার কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ২২ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারধরের শিকার হন। অভিযুক্ত ব্যক্তি আওয়ামী লীগের একজন নেতা। সিসি ক্যামেরায় তার মারধরের ঘটনা ধরা পড়ে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা বাজারে কাঞ্চন জুটমিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের হাতে মারধোরের শিকার হন। ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলে দাওয়াত না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই নেতা প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে হাসপাতালবাসী করেন। গত ১০ জুলাই বরগুনার আমতলীতে হালিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মারধর করা হয়। যার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ, তিনি গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এরকম ঘটনা চলতি বছর আরো আছে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, অনেক ভিকটিম শিক্ষক অপমানজনক এ ধরনের ঘটনা আইনামলে আনতে চান না। অনেকে ভয়ে থানা বা আদালতের দ্বারস্থ হন না। শুধু এ বছরই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ রকম শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অথচ, তার উপযুক্ত প্রতিকার নেই। দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি হলে ঘটনার সংখ্যা কমতো বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।
শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরদণ্ড যাদের দ্বারা পালিত, বর্ধিত ও কার্যকর হয়, তারা হলেন শিক্ষক। শিক্ষকদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা মানুষ গড়ার কারিগর। তারা শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে মানুষ করে গড়ে তোলেন। এই ‘মানুষ শিক্ষার্থীরাই’ জাতির ভবিষ্যৎ। তারা সবচেয়ে বড় জাতীয়সম্পদ। আমাদের দেশে ও সমাজে এক সময় শিক্ষকদের উচ্চ মর্যাদা ছিলো। তারা সব মহলে নন্দিত ও সম্মানিত হতেন। মর্যাদা ও শ্রদ্ধার কারণে মেধাবী মানুষ অন্য পেশায় না গিয়ে তখন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতেন। এখন এ চিত্র বদলে গেছে। শিক্ষকদের সে সম্মান ও মর্যাদা নেই। তারা কখনো ক্ষমতাসীনদের হাতে, কখনো প্রভাবশালীদের হাতে, কখনো পুলিশের হাতে গো-পিটানির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক এবং জরুরি। জাতীয় কল্যাণের জন্যই শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষক নির্যাতন ও মারধরের ঘটনার তদন্ত বিচার হতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও প্রতিষ্ঠার যে ধারা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। সরকার মনিরামপুরের শিক্ষিকা নির্যাতনের দ্রুত বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে বলে আশা করি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: সিলেটে এড. এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিকে ৭৬ দিনের ছুটির তালিকা প্রকাশ
খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে ট্রেন জাহানাবাদ
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন
আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং এর হামলায় আহত ৩
মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হলেন সরওয়ার আলম
তোমাদের হাতে উড়তে থাকবে সমৃদ্ধ স্বনির্ভর বাংলাদেশের বিজয় কেতন - সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোঃ মঈন খান
দৌলতপুরে পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান : গ্রেফতার-২
ব্রাহ্মণপাড়ায় বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা
পাকিস্তানে সামরিক আদালতে ২৫ বেসামরিক ব্যক্তির সাজায় উদ্বিগ্ন ইইউ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে এনে সকল অপকর্মের বিচার করতে হবে : কাইয়ুম চৌধুরী