দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে
২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৪১ পিএম | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
দেশের সাধারণ মানুষ পণ্যমূল্য ও বেকারত্ব বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে! অনেকেই ধার-দেনা ও সম্পদ বিক্রি করে চলছে! বিবিএস’র খানা আয় ও ব্যয় জরিপ-২০২২ মতে, ‘দেশের ৩৭% পরিবার ধার করে জীবন যাপন করছে। ধারের পরিমাণও বেড়েছে। পরিবারপ্রতি গড় ঋণের পরিমাণ ২০২২ সালে হয়েছে ৭০,৫০৬ টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ৩৭,৭৪৩ টাকা’। অভাবের কারণে সঞ্চয়পত্রের বেশিরভাগ গ্রাহক ভেঙ্গে ফেলেছে। নতুন খোলার সংখ্যাও কম। অসংখ্য মানুষ খাদ্য ও অন্য ব্যয়ও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে পুষ্টিহীনতা বাড়ছে! বিশ্বব্যাংকের ‘অ্যাটলাস অব সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ‘স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনতে পারে না, এমন মানুষের দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ষষ্ঠ। বাংলাদেশে এখন ১২.১০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে পারে না। সে সামর্থ্য তাদের নেই’। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলেছে, ‘দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ঝুঁকি’। বাংলাদেশে এখন মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০%, যা দেউলিয়া হওয়া দেশ শ্রীলংকায় ৫%। বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির জন্য ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধকে দায়ী করছে সরকার। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য নয়! যেমন: আলু, কাঁচামরিচ, পিয়াজ, মাছ-মাংস, তরকারি, চাল ইত্যাদি। এসব দেশীয় পণ্য। তবুও মূল্য অস্বাভাবিক হয়েছে সিন্ডিকেট ও সরকারি তদারকির অভাবে। অন্যদিকে, বিভিন্ন সামাজিক আর্থিক খাতের প্রতারণার শিকার হয়ে অসংখ্য মানুষ ফতুর হচ্ছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার নেই!
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ ঋণের ভারে ন্যুজ্ব হয়ে পড়েছে, যা থেকে নিস্তার নেই এ শতাব্দীতে। রিজার্ভের পরিমাণ আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার ব্যাপক টাকা ছাপিয়ে কোনো মতে চলছে। ব্যাংক ও শেয়ার বাজারের অবস্থা নাজুক। বলা বাহুল্য, দেশে গভীর অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জনমনে চরম অসন্তোষ এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। আইএমএফ সম্প্রতি বলেছে, ‘বাংলাদেশে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২৩ সালে চলতি মূল্যে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার কমে মোট জিডিপির আকার হবে ৪২৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে ছিল ৪৬০ বিলিয়ন ডলার (স্থির মূল্যে ও ভিত্তি বছর ২০১৫-১৬ ধরে)। মাথাপিছু জিডিপির আকার কমে ২,৪৬৯.৫৮ ডলার হবে, যা ২০২২ সালে ছিল ২,৭৩০.৮৫ ডলার। অথচ এ বছর বৈশ্বিক জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৩%। এমনকি, ভারত ও নেপালসহ এশিয়ার বেশকিছু দেশেরও জিডিপি বাড়বে এ বছর’। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সংকুচনমূলক আর্থিক ও মুদ্রানীতির কারণে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের শিল্প উৎপাদন ও ভোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া, টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়নও (গত দুই বছরে ২৭%) ডলারের হিসাবে অর্থনীতির আকারকে কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মূলত বিনিময় হারের প্রভাবের কারণে আইএমএফ ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশের জিডিপি কমতে পারে বলে প্রক্ষেপণ করেছে। ফলে জিডিপির বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়ে যেতে পারে’।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী গত ১৬ আগস্ট দেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৩.১৪ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের মতো (এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রীলংকা থেকে সম্প্রতি আসা ৫০ মিলিয়ন ডলার)। উপরন্তু আকুর দেনা আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করতে হবে গত জুলাই-আগস্টের। তখন রিজার্ভ আরও কমে যাবে। আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার পাওয়ার পরও রিজার্ভের পতন হয়েছে! উক্ত ঋণ না পেলে রিজার্ভের অবস্থা আরো খারাপ হতো! অথচ ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে কমতে কমতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে! তবুও এখানেই শেষ নয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেছেন, ‘এই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই’। অবশ্য অনেকের অভিমত: সরকার কিছু ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এমনকি কতিপয় ক্ষেত্রে জরিমানা দিয়েও সময় বাড়ানো যায় কি-না তা নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই এলএনজি আমদানির বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের ঋণে জরিমানা দিয়ে রিশিডিউল করা হয়েছে। যে ক্ষেত্রে এসব হবে না, সে ক্ষেত্রে নতুন করে ঋণ নিয়ে পুরাতন ঋণ পরিশোধ করা হবে। হ্যাঁ, তা হতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিপত্তি হচ্ছে, মুডিস ইনভেস্টর ও এসএন্ডপি গ্লোবাল বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে সম্প্রতি। ফলে নতুন ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। দ্বিতীয়ত: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ও বিভিন্ন দেশের সুদহার ১-৫% বেড়েছে। অন্যদিকে, আমদানিতে ব্যাপক কঠোরতা আরোপ করার পরও গত অর্থবছরে বাণিজ্য ভারসাম্যে ১,৭১৫ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়েছে। উপরন্তু বাণিজ্য ও রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধি কমছে। এছাড়া, রেমিটেন্স যা আসে তার প্রায় অর্ধেক চলে যায় এ দেশে কর্মরত বিদেশিদের মাধ্যমে। উপরন্তু বিদেশে চিকিৎসার কারণেও অনেক ডলার ব্যয় হয়। ফলে ডলার ও রিজার্ভের সংকট সহসাই দূর হবে না। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি হুমায়ুন রশিদ সম্প্রতি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করা জরুরি’।
দেশের অর্থনীতিতে বড় সংকট হচ্ছে সরকারের ঋণ। গত ২১ আগস্টে খবরে প্রকাশ, ‘বর্তমানে সরকারের মোট ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ১৬৭ বিলিয়ন ডলারে (এর মধ্যে ৯৫.০৭ বিলিয়ন ডলার অভ্যন্তরীণ ও ৭১.৯৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক)। ফলে ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখন ৪২.১% (২০১৪ সালে ছিল ২৮.৭%)’। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি ঋণে বেশ কিছু প্রকল্প আছে, যাতে অতিরিক্ত খরচ করা হয়েছে। ঋণ নিয়ে ‘লুটপাট’ করা হয়েছে। তার মাশুল গুণতে হবে দেশকে। অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেছেন, ‘ঋণ নেয়া হয়েছে বড় বড় প্রকল্পে। সেখানে বাস্তবায়নের সময় বাড়ানো হয়েছে। ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ঋণও বেশি নেয়া হয়েছে। এখানে লুটপাট হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প থেকে বড় ধরনের মার্জিন কর্তাব্যক্তিরা নিয়েছে। ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’ যেমন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ১২ বিলিয়ন ডলার রাশিয়ান ঋণ নেয়া হয়েছে। এর উৎপাদন ক্ষমতা ২,৪০০ মেগওয়াট। অথচ, ভারতের তামিলনাড়ুতে ছয় বিলিয়ন ডলার দিয়ে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি প্রকল্প করা হয়েছে’। দেশে কর জিডিপির হার ৮-৯%। কর-জিডিপির চার গুণেরও বেশি এখন ঋণ-জিডিপির অনুপাত। এটাকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে অভিহিত করেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। সরকারের দীর্ঘমেয়াদী ঋণের চেয়ে স্বল্পমেয়াদী ঋণের সুদ বেশি। তবুও স্বল্পমেয়াদী ঋণের পরিমাণ অনেক।
সরকারের গৃহীত ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে! ইআরডির তথ্য মতে,‘বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০১ কোটি ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭৪ কোটি ডলার, চলতি অর্থবছরে ৩২৮ কোটি ডলার, ২০২৯-৩০ অর্থবছরে হবে ৫১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ যদি আর কোনো ঋণ না-ও নেয়, তবুও ২০৬২ সাল পর্যন্ত ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হবে’। কিন্তু এ বিপুল অর্থ কীভাবে পরিশোধ হবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবুও সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়েই চলেছে। খবরে প্রকাশ, দেশের জন্য পাইপলাইনে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি ডলার আছে। তাই গৃহীত সব ঋণ পরিশোধ চলতি শতাব্দীতেও শেষ হবে না! অবশ্য, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, ‘ঋণ পরিশোধ নিয়ে চিন্তা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে অর্থ এনে সেটা অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করেনি। সে কারণে ঋণ পরিশোধ নিয়ে চাপ বা উদ্বেগের কিছু নেই। পদ্মাসেতুর মতো কিছু কিছু প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যেই অর্থ আসতে শুরু করেছে। আর ঋণের চুক্তিতেও অনেক করণীয় পদক্ষেপের সুযোগ থাকে। এখন দরকার হলে কোথায় ঋণ পুনর্বিন্যাস করতে হবে বা কীভাবে করতে হবে সেটি নিয়ে সরকার সচেতন ও অবগত’। হ্যাঁ, কিছু মেগা প্রকল্পের রিটার্ন খুব ভালো। যেমন: পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল ইত্যাদি। কিন্তু বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের রিটার্ন ভেরি শ্লো। তাই সেসব প্রকল্পের আয় দিয়ে ব্যয় তুলে নেওয়া বহু সময়ের ব্যাপার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০২২ মতে, ‘২০২২ সালের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২০,৬৪৯ কোটি টাকা, পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২,১২,৭৮০ কোটি টাকা, মামলায় আটকা আছে ১ লাখ কোটি টাকা ও ৬৫,৩২১ কোটি টাকা ঋণ অবলোপন করা হয়েছে’। এসবকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করার পক্ষে আইএমএফ। সেটা হলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার হবে প্রায় ২৫%, যা ভারতে ৫%। অন্য এক খবরে প্রকাশ, ব্যাংক থেকে নেয়া পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। তবে পরিচালকদের নিজের নাম ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া এ ঋণের চেয়েও বেনামি ঋণ বেশি। আবার পরিচালকদের নেয়া ঋণই দফায় দফায় পুনঃ তফসিল করছে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৯% মন্দ ঋণ। বিশ্বব্যাংকের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল তদারকির কারণেই বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। টিআইবি বলেছে, ‘ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে ভুয়া ঋণ’। কিন্তু আইএমএফ ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১০% ও রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার রাখার শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উক্ত প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে মাত্র ৫.৭%, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি (আমানত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২০২১ সালে ১০%,২০১২ সালে ২০.২% ও ২০১৩ সালে ১৬.০৮%)। আমানতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ায় ২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে মূলধন রাখার হার ছিল ১১.৮৩%, যা শ্রীলংকার ১৫.৩%, ভারতের ১৬% ও পাকিস্তানের ১৬.৬%। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আস্থাহীনতার কারণেই আমানত কমছে। অন্যদিকে, হুন্ডি-হাওলার বাজার দাঁড়িয়েছে এখন ৩০-৩৫ বিলিয়ন ডলারের অধিক। এছাড়া, বছরে প্রায় ২০-২১ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার হচ্ছে। শেয়ার কেলেংকারীর পর থেকে পুঁজিবাজার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি! বিদেশি অনুদান হ্রাস ও এনজিও ব্যুরোর অর্থ ছাড়ে গড়িমসির কারণে দেশের এনজিওগুলোরও কর্ম সংকুচিত হচ্ছে! অনুকূল পরিবেশের অভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও আশানুরূপ নয়! ফলে বেকারত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পেঁৗঁছেছে। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও ব্যাপক! বিআইডিএস’র জরিপ রিপোর্ট-২০২২ মতে, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩৪% ও স্নাতক পর্যায়ে ৩৭%। বেকাররা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। অনেকেই বিপথে ধাবিত হয়েছে!
বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮৮% বেসরকারি খাতের। যার কর্মকা-ে এখন অধোগতি চলছে ঋণ হ্রাস, আমদানিতে ব্যাপক কৃচ্ছ্রতার কারণে কাঁচামালের সংকট এবং জ্বালানির সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে! ফলে কর জিডিপির হার বাড়ানো কঠিন! আয় বৈষম্যও ব্যাপক! বিবিএস’র খানা জরিপ রিপোর্ট-২০২২ মতে, দেশে এখন গিনি সহগের মান দশমিক ৪৯৯ পয়েন্ট (যা ছিল ১৯৭৩ সালে ০.৩৬,১৯৮৮ সালে ০.৩৭ ও ২০১০ সালে ০.৪৫৮), যেটি দশমিক ৫০০ পেরোলেই বিপদসীমার উপরে যাবে। ২০২২ সালে দেশের মোট আয়ের ৪০.৯২% শীর্ষ ১০ ধনীর হাতে, আর সবচেয়ে গরিব ১০% মানুষের আয় মোট আয়ের ১.৩১%। সম্প্রতি দেশে দারিদ্র হ্রাসের গতি কমেছে! ফলে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। গত ১২ জুলাই ইরান বেতারে প্রকাশ, ‘বাংলাদেশে এখন শিশুশ্রমজীবীর সংখ্যা ৭৯ লাখ (৬৪ লাখ গ্রামাঞ্চলে ও ১৫ লাখ শহরে)। তন্মধ্যে ৪৫ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত’। দেশে আঞ্চলিক বৈষম্যও ব্যাপক!
সার্বিক বিবেচনায় দেশের অর্থনীতি গভীর সংকটে। জাপার চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের উপ-নেতা জিএম কাদের, এমপি গত ১৭ আগস্ট বলেছেন, ‘দুর্নীতি এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলছে। গ্রাম-গঞ্জ আজ মাদকে সয়লাব। সরকার দেশের অর্থনীতি নষ্ট করে দিয়েছে’। বিশেষজ্ঞদের অভিমত: বিপুল ঋণের অর্থে স্বল্প সময়ে বহু বড় প্রকল্প গ্রহণ, বেশিরভাগ প্রকল্পের নির্মাণের সময় ও অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি, অউৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, মান খারাপ হওয়ায় একই কাজ বারবার করা, ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নিয়ম-শৃঙ্খলার অভাব, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এবং সর্বত্রই সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবেই দেশের অর্থনীতিতে গভীর সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত