রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোনো খেলা কাম্য নয়
২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের ‘ক্র্যাক ডাউনে’র কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দেয়। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধদের হামলা, খুন, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া ও উচ্ছেদ করা নিয়ে সে সময় সারাবিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘ, ওআইসিসহ পুরো পশ্চিমাবিশ্ব তীব্র নিন্দা জানায়। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করা শুরু করে। তবে যতই দিন যাচ্ছে, এ সহযোগিতার পরিমাণ করে আসছে। ফলে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার খরচ এবং ভরণপোষণের চাপ বাংলাদেশের ওপর বাড়ছে। শুধু এই চাপ নয়, একশ্রেণীর রোহিঙ্গার বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার চাপও পড়ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। গত ছয় বছরে হত্যার শিকার হয়েছে ১৭৬ জন। এছাড়া অন্যান্য অপরাধপ্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য এটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ছয় বছর ধরে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমার সরকারের বহু আলোচনা হলেও একজন রোহিঙ্গাও ফেরত পাঠানো যায়নি। চীনের উদ্যোগে পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে ১১৭৪ জন রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও মিয়ানমার সরকারকে দায়ী করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারে তাদের জন্য বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পাশাপাশি এ কথাও বলছে, মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার এলে সেখানে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এটা যে একটা দীর্ঘ এবং কালক্ষেপণমূলক প্রক্রিয়া তাতে সন্দেহ নেই। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুরু করে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। তারা মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা ফেরত নিতে বাধ্য করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য বেশিরভাগ আর্থিক সহায়তা দিলেও চীনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এ প্রেক্ষাপটে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি গভীর ভূরাজনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলো রাশিয়া এবং চীনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রচ্ছন্ন প্রভাব রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ওপর পড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি ভূরাজনৈতিক একটি ইস্যুতে পরিণত হতে যাচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাবিশ্ব ইউক্রেনের নাগরিকদের নিয়ে যত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে, রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে তার ১০ ভাগও করছে না। তারা আর্থিক সহায়তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সে আর্থিক সাহায্যও ধীরে ধীরে কমে আসছে। ওআইসির ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রশ্নবোধক। রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও স্বদেশে পুর্নবাসনের ক্ষেত্রে ওআইসি’র যে অপরিহার্য নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, তা এতটুকু পালন করছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বললেও কম বলা হয়। উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না, ক্যাম্পে বসবাস করা অনেকটা জেলে বন্দি থাকার মতো। এখানে বসবাসকারিদের নাগরিক সুবিধা ও মুক্ত চলাচল থেকে বঞ্চিত হয়। রোহিঙ্গারা যে ক্যাম্পে বসবাস করছে তাদের ভবিষ্যৎ কি? তাদের ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। এরকম বন্দিদশা থেকে সেখানে বসবাসকারিদের মধ্যে হতাশা জন্ম নেয়া স্বাভাবিক। হতাশা থেকে কারো কারো মধ্যে ক্ষোভ ও ক্রোধ জন্ম নেয়। এ থেকে অনেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠে। রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণীর মধ্যে এ প্রবণতা দেখা দেয়ায় বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে।
আমরা বহুবার বলেছি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশটি যদি আন্তরিকভাবে সমস্যা সমধানের উদ্যোগ নেয়, তাহলে দ্রুত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারবে। কারণ, চীনের সাথে মিয়ানমারের যেমন ভাল সম্পর্ক রয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের সাথেও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চীনের সততা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা যথেষ্ট। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো রোহিঙ্গাদের আর্থিক বিভিন্ন সহযোগিতা করছে। কিন্তু তা তারা অনন্তকাল করবে না। কাজেই, রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধান হতে হবে। এ সংকট নিয়ে বিশ্বের পরস্পরবিরোধী চক্রের কোনো খেলা বাংলাদেশ দেখতে চায় না। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি চীন ও তাদের মিত্রদেশগুলোকেও বুঝতে হবে। তাদের মধ্যকার ¯œায়ুযুদ্ধে বাংলাদেশ ‘প্লে গ্রাউন্ড’ ও ‘ব্যাটল গ্রাউন্ডে’ পরিণত হোক তা কাম্য নয়। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সাথে বৈঠক করেছেন। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানা যায়। আমরা মনে করি, চীনকে শুধু কথা বললে হবে না, বাস্তবে এর কার্যকারিতা দেখাতে হবে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে যে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এক্ষেত্রে তাদেরকে কাউন্সিলিংয়ের আওতায় আনা জরুরি। ধর্মীয় শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং ধৈর্য্য ধারণের মতো নৈতিক গুণাবলী তাদের মধ্যে সম্প্রসারিত করা গেলে, অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিকে ৭৬ দিনের ছুটির তালিকা প্রকাশ
খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে ট্রেন জাহানাবাদ
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন
আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং এর হামলায় আহত ৩
মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হলেন সরওয়ার আলম
তোমাদের হাতে উড়তে থাকবে সমৃদ্ধ স্বনির্ভর বাংলাদেশের বিজয় কেতন - সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোঃ মঈন খান
দৌলতপুরে পুলিশের মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান : গ্রেফতার-২