কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খরা ও পানির অভাবে এবার আমন চাষে প্রায় দুই সপ্তাহ দেরি হয়েছে। সাধারণত আষাঢ়ে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়। তারপর শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপন করা হয়। এজন্য জমিতে পানির প্রয়োজন হয়। পানির জোগান আসে বৃষ্টি ও গভীর নলকূপ থেকে। কৃষকরা সাধারণত বৃষ্টির প্রত্যাশা করে। নলকূপের মাধ্যমে পানি তুলতে গেলে খরচ বেড়ে যায়। এবার ভাদ্রের প্রায় দুই সপ্তাহ খরা চলায় আমন চাষ ব্যাহত হয়। দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে অনেক কৃষক নলকূপের মাধ্যমে জমিতে পানি দিয়ে চাষ শুরু করে। বেশিরভাগ কৃষকই তা করতে পারেনি। আমন চাষের জন্য ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন হয়। এবার ভাদ্রের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়ে। আশার কথা হচ্ছে, দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের অনেক কৃষক আমন চাষ শুরু করে। আবার অনেক এলাকায় বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা চাষ করতে পারছে না। এর মূল কারণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন। বেশ কয়েক বছর ধরে আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এ বছর সরকার ৫৬.৫৯ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৬৩ লাখ টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে বৃষ্টি ও পানি সংকটের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এদিকে চাষের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, তা শেষ হয়নি। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৭২ ভাগ জমিতে চাষের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যদিও কৃষি বিভাগ আশা করছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো চাষ সম্পন্ন হবে। এই বিলম্ব লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। একদিকে, যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়া, অন্যদিকে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়ায় শঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তিস্তা এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে সংশ্লিষ্ট এলাকার চাষের জমি তলিয়ে যাবে। এতে বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হুমকির মুখে পড়তে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমরা খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও বছরে লাখ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়। এবার ভারত চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। মিয়ানমারও সীমিত করেছে। এ প্রেক্ষিতে, খাদ্য নিয়ে আমাদের সংশয় জাগা স্বাভাবিক। ভারত ও মিয়ানমার চাল রফতানি বন্ধ এবং সীমিত করার কারণ, তাদের দেশে খাদ্য সংকট যাতে না দেখা দেয়, সে ব্যাপারে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) কয়েক মাস ধরে বলে আসছে, জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়ার কারণে আগামীতে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হবে, যাতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। খাদ্যের উচ্চমূল্যসহ কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এ পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে খাদ্য উৎপাদনের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য কৃষিবিদরা তাকিদ দিয়েছেন। কৃষি খাতের সব ধরনের পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য তারা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরাই অবদান রাখছে। তারা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে পিছপা হয় না। নিজস্ব উদ্যোগ ও উদ্যমে ফসল ফলিয়ে থাকে। এবার রোপা আমন চাষে পানি সংকটের কারণে কৃষকরা যে সংকটে পড়েছে, তা দুঃশ্চিন্তার বিষয়। এখনও যেসব এলকায় বৃষ্টি হচ্ছে না, কিংবা পানি সংকট রয়েছে, সেসব এলাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে, যাতে কৃষকরা আমন চাষ করতে পারে।

দেশে খরা ও বন্যা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই বিরূপ আচরণ মাথায় রেখে কিভাবে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা এখন থেকেই করতে হবে। কৃষকদের পাশে সরকারকে দাঁড়াতে হবে। তারা যাতে বিরূপ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে আবাদ অব্যাহত রাখতে পারে, এজন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা করতে হবে। সামনে শীত মৌসুম। শরতে কৃষকরা শীতের আগাম শাক-সবজি ফলাতে শুরু করে। পেঁয়াজসহ রবিশস্য চাষের প্রস্তুতি নেয়। কৃষকরা যাতে সময়মতো এসব ফসল ফলাতে পারে, এখন থেকেই সরকারকে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং সংকট মোকাবেলায় কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে তৎপর হতে হবে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস চলছে। এর অন্যতম কারণ, বাজার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এমতাবস্থায়, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ও খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেশে গভীর সংকটের আলামত দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে যেমন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তেমনি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা জোরদার করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ
বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আরও

আরও পড়ুন

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত

পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ

পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ

ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি

ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি

এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!

আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!

ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু

ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র

মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র

স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?

স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?

চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১

চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১

পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি

পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি

যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত

যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত

১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান

১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান

জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত