সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন মত প্রকাশে বাধা না হয়
২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০২ পিএম | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার এবার বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) পরিবর্তন করে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে নতুন আইন করতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য সরকার ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও সমালোচিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন’ বদলে সংসদে পাশ করেছিল ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’। এবারও নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আইন পরিবর্তন করার মধ্যে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলার মতো সময় এখনও আসেনি। তবে মূলত দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মধ্যে সরকার আইন পরিবর্তনের এই কাজটি হাতে নিয়েছে, যাতে করে সরকারের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় এবং একটি আপাত ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশে এই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাধা হয়ে দাঁড়াবে কি না বা স্বাধীন সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিক বা প্রচার মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করবে কি না, তা নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে বিজ্ঞজনদের মনে। কেননা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের কারণে জাতিসংঘ এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা আইনটির যেসব ধারা বাতিল ও সংশোধনের দাবি করে আসছিল, সেগুলোর প্রায় সবই বহাল থাকছে নতুন আইনে। পত্রিকান্তরে জানা যায়, ৬টি অজামিনযোগ্য এবং ১০টি জামিনযোগ্য ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে যে নতুন আইন করা হচ্ছে তাতেও ৬০টি ধারা থাকছে এবং ৬টি ধারা অজামিনযোগ্যও রাখা হয়েছে। অর্থাৎ নাম পাল্টালেও এ আইনের কাঠামোগত পরিবর্তন তেমন হচ্ছে না।
নতুন আইনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না আসায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মনে আইনটি নিয়ে সংশয়-সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। মুক্তমত প্রকাশে বাধা এবং বিরোধীমত দমনে পূর্বের ন্যায় নতুন আইনটিও যে অপব্যবহার হবে না তার ব্যাপারে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। আর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের আগে অংশীজনের মতামত বিবেচনায় আনার যে প্রয়োনীয়তা ও আবশ্যকতা ছিল তাও সরকার উপেক্ষা করেছে। অন্যদিকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সরিয়ে নিচ্ছে এমন কথা অবশ্য মানতে নারাজ সরকার সংশ্লিষ্টরা। তাদের কথা অপরাধের ধরন বদলিয়েছে, এ ছাড়া অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় হয়েছে ব্যাপক। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে মাত্র। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাইবার অপরাধ বেড়ে গেছে, তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির অনেকগুলো ধারাকে সংযুক্ত করে নতুন আইনটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার সংশ্লিষ্টরা। আমরাও চাই, নতুন আইনটি যেন সাইবার অবকাঠামোর নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকে এবং কোনভাবেই যেন ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত না হয়। ইতমধ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ যেন কোনভাবেই স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ারে পরিণত না হয়।
অপরদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাদ দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘বাংলাদেশ সরকারকে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে যেন পুরাতন আইনের দমনমূলক বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা না হয়। এছাড়া নতুন আইনটি পাশ হওয়ার আগে সব অংশীদার যেন প্রস্তাবিত এই আইন খুঁটিয়ে দেখে এবং তা নিয়ে মতামত প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়। এর বিধানগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।’ সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ নামে নতুন আইনে মোটেও সবার উদ্বেগের জায়াটিকে পুরোপুরি প্রশমন করা হয়নি। ‘মানহানি’ মামলা কর্তৃত্ববাদী ধারায় ক্ষমতাসীনদের বিরাট একটি অস্ত্র। এ জন্য যার সম্মান গেল তার কোনো ধরনের সম্মতির প্রয়োজন হয় না। যে কেউ তার প্রিয় নেতার মানহানি হয়েছে মর্মে মামলা রুজু করতে পারে। সাংবাদিক কিংবা সম্পাদক অথবা অন্য যে কোনো ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে যে কেউ এ মামলা ঠুকে দিতে পারে, যা অতীতে অহরহ হয়েছে। নতুন আইনেও সেটি থেকে গেছে। আইনের ধারাটি সংশোধন করে যদি এরকম করা হতো যে, যিনি মানহানির শিকার হবেন কেবল তিনিই মামলা করতে পারবেন, তাহলে অধিক যুক্তিযুক্ত হতো এবং বিচারব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে এই আইনের অপব্যবহার কম হতো। নতুন আইনের খসড়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানহানির মামলায় আগে জামিনঅযোগ্য জেল ও জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইনে জেলের বিধানটি বাদ দিয়ে শুধু জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাবিত আইনে অনেকগুলো ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামিনঅযোগ্য ছিল। এ ছাড়াও বিভিন্ন আপরাধের জন্য শাস্তি কমানো হয়েছে।
আশা করছি, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ মত প্রকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বা কারো কণ্ঠরোধ করবে না। আইনের যথাযথ প্রয়োজন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও নজর দেয়া সরকারের দায়িত্ব। সার্বিক বিষয় সামনে রেখে আইনের সংশোধন, পরিবর্তন বা সংস্কার হোক, এটিই কাম্য। দেশে মত প্রকাশ ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যে বিচ্যুতি ঘটেছে সেটি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকলের একযোগে কাজ করা উচিত। দেশের গণতন্ত্রে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা প্রতিবিধান করার জন্য যুগোপযোগী আইন যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আইনের যথোপযুক্ত ব্যবহার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
লেখক: প্রবাসী প্রাবন্ধিক
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের ইত্তেফাক মোড়ে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি-র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিকে ৭৬ দিনের ছুটির তালিকা প্রকাশ
খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে ট্রেন জাহানাবাদ
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন