জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনকর সঙ্গত পর্যায়ে কমাতে হবে
২৭ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনকর দ্বিগুণ করায় রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে ফ্ল্যাট, জমি ও প্লট বিক্রী কমেছে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শুধু তাই নয়, এখাত থেকে আয়কর আদায় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমেছে। বর্তমানে জমি নিবন্ধনে চুক্তিমূল্যের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ কর দিতে হয়। এর ফলে জমির মূল্য আরো নাগালের বাইরে চলে গেছে। অন্যদিকে ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটার ৮০০ টাকা বা চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশের বেশি কর দিতে হয়। খবরে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা শহরের আশ-পাশে বিভিন্ন প্রকল্পে জমি ও প্লট বেশি বিক্রী হয়। পক্ষান্তরে ঢাকার গুলশান-বনানী, ধানম-ী, বারিধারা, উত্তরা প্রভৃতি এলাকায় ফ্ল্যাট বেশি বিক্রী হয়। রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সূত্রমতে, প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহর ও তার আশপাশের এলাকায় বিক্রী হয় ৮ হাজার। বর্তমানে ফ্ল্যাট নিবন্ধন ও হস্তান্তর বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, নিবন্ধনকর বৃদ্ধির পর ফ্ল্যাট নিবন্ধন নেই। ফ্ল্যাট হস্তান্তরেও ধস নেমেছে। বলা বাহুল্য, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমির নিবন্ধনকর যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, তাতে জমি বেচা-কেনার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। যারা জমি বেচতে বা কিনতে চায় তারা উভয়ই বিপাকে পড়েছে। এর বিরূপ প্রভাব ফ্ল্যাট নিবন্ধন ও হস্তান্তরে পড়েছে। জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রীতে যারা মধ্যস্থতা করার কাজ করে, তারা তাদের আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যায় পতিত হয়েছে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা বিশাল অংকের বিনিয়োগ করে ব্যবসায়ে ভয়াবহ মন্দা পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। ওদিকে এনবিআর আয় বাড়ানোর জন্য নিবন্ধনকর বাড়িয়েছে। অথচ, আয় না বেড়ে কমেছে। জানা গেছে, রাজধানী ও তার আশপাশে ১৭টি নিবন্ধন কার্যালয়ে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন করা হয়। দেখা গেছে, ওই ১৭টি নিবন্ধন কার্যালয়ে জুলাই মাসে মাত্র ৩২ কোটি টাকা নিবন্ধনকর পাওয়া গেছে। অথচ, ২০২২ সালের জুলাই মাসে পাওয়া গিয়েছিল ১০৩ কোটি টাকা। আরো উল্লেখ্য, এ বছর নিবন্ধনকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত এক মাস ও ২৪ দিনে আদায় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার সোয়া ২ শতাংশ মাত্র।
এনবিআর’র আশার গুড়ে বালি। এক্ষেত্রে একটা বড় রকমের ধাক্কা তার জন্য অপেক্ষা করছে বলে অনেকের ধারণা। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, কিছু আয় বাড়ানোর জন্য এনবিআর রিয়েল এস্টেটের মতো একটা বিশাল খাতে বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা তৈরি করেছে। এখাতের ব্যবসায়ীদের হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগই কেবল নেই, একই সঙ্গে এর পশ্চাৎ বা সহযোগী শিল্পেও ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। রড, সিমেন্ট, ইট, বালু ইত্যাদি ছাড়া কোনো নির্মাণই সম্ভব নয়। এসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে গোটা নির্মাণ খাতই রয়েছে গভীর সংকটে। সেই সংকটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনকর বৃদ্ধিজনিত সংকট। জমি-ফ্ল্যাট বিক্রী বা হস্তান্তর কমে গেলে রড, সিমেন্ট, ইট, বালু ইত্যাদি শিল্প ও ব্যবসায়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। নির্মাণ খাতে লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে। এর পশ্চাৎ বা সহযোগী শিল্প-ব্যবসায়ে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। নির্মাণখাতে মন্দা দেখা দেয়ার প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের একটা বড় অংশ কাজ হারাবে। এমনিতে বেকারের সংখ্যা বিপুল। তাদের সঙ্গে এরাও বেকারের খাতায় নাম লেখাবে। একই কারণে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এসবের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়বে অর্থনীতিতে। অর্থনীতির অবস্থা এমনিতেই নাজুক। বিনিয়োগ, উৎপাদন, উন্নয়ন বিঘিœত হলে তা আরো নাজুক হয়ে পড়বে। ডলার সংকট, টাকার মূল্যমান হ্রাস, ব্যাংক ব্যবস্থার নানা সূচকে অবনমন ইতোমধ্যেই মারাত্মক উদ্বেগের কারণে পরিণত হয়েছে। কীভাবে অর্থনীতির উদ্ধার হতে পারে, কীভাবে জনজীবনে মূল্যস্ফীতির প্রভাব হ্রাস পেতে পারে, কীভাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষের জীবনকে স্বস্তিকর করা যেতে পারে, সরকারের সেদিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া দরকার। জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধনকর বৃদ্ধিতে নির্মাণখাতে যে অচলতা ও ধীরতা নেমে এসেছে তা দূর করতে ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্মরণ করা যেতে পারে, রিয়েল এস্টেট খাতে ধস ও বিপর্যয়ের কারণে ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার শিকার হয়েছিল। এর প্রভাবে পশ্চিমা অর্থনীতিও মন্দাক্রান্ত হয়ে পড়েছিল। সেই মন্দা কাটাতে অনেক কাঠখড় ব্যয় করতে হয়েছিল। চীনের অর্থনীতিতে ইদানিং যে ভাটার টান পরিলক্ষিত হচ্ছে, পর্যবেক্ষকদের মতে, তারও অন্যতম কারণ রিয়েল এস্টেট খাতে সৃষ্ট সংকট। বিষয়টি আমাদের এবং যে কোনো দেশের খেয়াল রাখা প্রয়োজন। নির্মাণ খাতের সঙ্গে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের ওতপ্রোত সম্পর্ক। একারণেই এ খাতের বিপর্যয় অন্যান্য খাতকেও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। গোটা অর্থনীতিকে বিপন্ন-বিপর্যস্ত করে তোলে। ইনকিলাবের খবরে জানা গেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এনবিআর’র তরফে নাকি ভূমি উন্নয়ন কর কমানোর জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। নিবন্ধনকর কমানোর বিষয়ে এনবিআর স্বয়ং কী ভাবছে, তা কিন্তু জানা যায়নি। পর্যবেক্ষকদের অভিমত, জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধনকর কমিয়ে যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে স্থির করা অত্যাবশ্যক। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হওয়া জরুরি। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত হবে। সংকট বিস্তৃত ও ছড়িয়ে পড়ার আগেই সমাধান করা দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরিচায়ক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিকে ৭৬ দিনের ছুটির তালিকা প্রকাশ
খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে ট্রেন জাহানাবাদ
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন
আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং এর হামলায় আহত ৩
মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হলেন সরওয়ার আলম