ব্রিকসের সদস্যপদ বাংলাদেশ পেল না কেন?
২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৯:১৭ পিএম | আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩১ পিএম
ভেবেছিলাম, দেশের রাজনীতি বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে লিখবো। সরকারিভাবে আগস্ট মাস হলো শোকের মাস। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই যে, আগস্ট মাস শোকের মাস হওয়ায় বিএনপি এই মাসে বড় কোনো প্রোগ্রাম দেয়নি। সেজন্য আগস্ট মাসে তারা দু’চারটি প্রোগ্রাম যাই করেছে, সেগুলো বিগত ৮ মাস ধরে পালিত কর্মসূচিরই অনেকটা রিপিটেশন। তারপরেও এই মাসে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো নিয়েই লিখতে চেয়েছিলাম। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণে একটা খবরে এসে চোখ আটকে গেল। সেটি হলো, ব্রিকসের সম্প্রসারণ হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন এর আগে স্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন যে, আগস্ট মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকসের যে শীর্ষ বৈঠক হবে, সেখানে বাংলাদেশ ঐ সংস্থাটির সদস্য পদ পাবে। কথাটি তিনি অত্যন্ত জোর দিয়েই বলেছিলেন। তাই যখন দেখলাম যে, ব্রিকসের শীর্ষ বৈঠকে ৬টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তখন আমার প্রাথমিক ধারণা এই ছিল যে, বাংলাদেশ এর মধ্যে অবশ্যই আছে। ভালো করে পড়ে দেখি যে, না, বাংলাদেশের নাম নেই।
আমার এই দেখাটা অনেকটা পত্রপত্রিকায় বা নোটিশ বোর্ডে পরীক্ষার ফলাফল জানার মতো। আমরা দেখি যে আমার ক্যান্ডিডেটের যে রোল নাম্বার রয়েছে, সেই নাম্বারটি পত্রিকা বা নোটিশ বোর্ডে রয়েছে কিনা। থাকলে কোন ডিভিশনে পাশ করেছে। ফার্স্ট ডিভিশনে হলে আহ্লাদে আটখানা। সেকেন্ড ডিভিশন হলেও মোটামুটি খুশি। থার্ড ডিভিশন হলেও একেবারে অখুশি নই এই কারণে যে, অন্তত এক ক্লাস ওপরে তো ওঠা গেল। কিন্তু যদি নাম না থাকে তাহলে ভেউ ভেউ করে কান্না ছাড়া আর কিছু করা যায় না। আরো ভয় থাকে, বাড়ি ফিরলে আব্বা এই খারাপ রেজাল্ট শুনে যদি মার লাগায়!
সত্যি বলতে কি আমার অবস্থা হয়েছিল পরীক্ষায় ফেল করা ঐ ছাত্র বা তার গার্জিয়ানের মতো। কারণ, আমরা তো জানিই যে, ভারত আমাদের যে সে বন্ধু নয়। একেবারে রক্তের সম্পর্ক। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোমেন তো বলেই দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক ‘স্বামী-স্ত্রীর’ মতো। তো ব্রিকসের ৫ সদস্যের মধ্যে ভারত অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। ব্রিকসের নাম হয়েছে এই ভাবে: B তে Brazil, R তে Russia, I তে India, C তে China এবং S তে South Africa. পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী মহল দেশবাসীকে এমন একটি ধারণা দিয়েছিলেন যে, রাশিয়া, চীন এবং ভারত এই সরকারের বন্ধু। তারপর আর বাংলাদেশের সদস্য পদ আটকায় কে? অবশিষ্ট দুই সদস্য ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এক্ষেত্রে তেমন ইম্পরটেন্ট কোনো ফ্যাক্টর নয়।
কিন্তু বাস্তবে ঘটলো সম্পূর্ণ উল্টো। ব্রিকস সম্মেলন শুরু হওয়ার ২/৩ দিন আগে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এই মর্মে একটি খবর প্রচারিত হয়েছিল যে, এবারের সভায় নতুন কোনো সদস্য গ্রহণ করা হবে না। তেমন একটি ধারণা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনও দিয়েছিলেন। কিন্তু দিন শেষে দেখা গেল, ৬টি নতুন দেশকে সদস্য করা হয়েছে। এই দেশগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, আর্জেন্টিনা, মিশর এবং ইথিওপিয়া। খবরটি পড়ে তো আমার কাছে অবিশ^াস্য মনে হলো। ভাবলাম, পরের দিন ছাপা পত্রিকায় খবরটি দেখে নিজের কাছেই নিজে কনফার্মড হবো। শুক্রবারের পত্র পত্রিকাগুলোও যে শিরোনাম দিলো তা মোটামুটি এই রকম, ‘ব্রিকসে নতুন ৬ দেশ/ বাংলাদেশ নেই’। আরো অবাক ব্যাপার হলো এই যে, কেন বাংলাদেশ এবার সদস্য পদ পেল না তার কোনো কারণ বা ব্যাখ্যা কোনো পত্রিকা বা কোনো সরকারি অফিসার দেননি। তাই বলে তো গুজব বলুন, আর মতামত বলুন, সেগুলো তো আর থেমে থাকে না।
॥দুই॥
একাধিক বিদেশি মিডিয়া পড়ে বা শুনে জানা গেল যে, আমরা যা ধারণা করেছিলাম, বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। আমরা বলতে আমি সাধারণ মানুষের কথা বলছি। তারা ধারণা করেছিলেন যে, যেখানে ভারত আছে, সেখানে একজন সদস্য নেওয়া হলেও সেটি হবে বাংলাদেশ। কারণ, এর কয়েক দিন আগেই ভারতের এক শ্রেণীর গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ভারতীয় সমর্থনের কথা ফলাও করে ছাপা হয়েছে। যেসব পত্রিকা আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনের খবর দিয়েছে, সেগুলো হলো কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, আনন্দবাজারের সিস্টার কনসার্ন (একই মালিকানাধীন) ইংরেজি ডেইলি টেলিগ্রাফ, ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস, ইংরেজি দৈনিক দি হিন্দু এবং তার সিস্টার কনসার্ন পাক্ষিক/ মাসিক দি ফ্রন্টিয়ার্স।
আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে এত এত সমর্থন থাকার পরেও বিদেশি মাধ্যম থেকে জানা গেল যে, ভারতের বিরোধিতার কারণেই নাকি বাংলাদেশ এবার ব্রিকসের সদস্য পদ পায়নি। যখন আমার এই কলামটি প্রকাশিত হবে তখন অর্থাৎ মঙ্গলবারের মধ্যেই হয়তো এ সম্পর্কে ভেতরের খবর জানা যাবে। বিদেশি গণমাধ্যমে আরো বলা হয়েছে যে, যেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোহানেসবার্গ যান সেদিনই তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠিকে মিলিত হন। এই বৈঠকের খবর বাংলাদেশের প্রতিটি মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন, সেটি একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার এবং অন্য সকলের কাছে সন্তুষ্টির বিষয়। আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে দেশের মধ্যে আমাদের যতই মতভিন্নতা থাকুক না কেন, দেশের বাইরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। সকলে আশা করেছিলেন যে, এরপর ঐ জোহানেসবার্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যেও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকের কোনো খবর নাই। এটি অনেকটা ধাক্কা খাওয়ার মতো খবর। কেন মোদি-হাসিনা বৈঠক হলো না, সেটি বাংলাদেশের ঢাকায় বাস করা আমার মতো সাধারণ একজন কলামিস্টের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে এসব খবর তো চিরদিন চাপা থাকে না। ইতোমধ্যেই ২৫ আগস্ট শুক্রবার রাত পর্যন্ত ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কথাই বলা হচ্ছে। আমি একটি বিষয় নীতিগতভাবে মেনে চলি। কোনো একটি ঘটনা সরকারিভাবে বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সমর্থিত না হওয়া পর্যন্ত আমি সেই খবর নিয়ে কিছু লিখি না। আজকেও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম।
এক ধরনের মিডিয়াতে বলা হয়েছে যে, চীন এবং রাশিয়া বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু ব্রাজিল এবং ভারতের বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশ সদস্য পদ পায়নি। কোন কোন দেশ সমর্থন করেছে আর কোন কোন দেশ বিরোধিতা করেছে সেটির অথেন্টিসিটি না জানা পর্যন্ত আমি কোনো মন্তব্য করবো না।
॥তিন॥
তবে অন্তত দুটি বাংলা দৈনিকের এ সম্পর্কিত খবর আমার কাছে খুব একটা লজিক্যাল মনে হয়নি। খবরটি নি¤œরূপ: ব্রিকস সম্মেলনে আগত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং তাদের সফরসঙ্গীদের সম্মানার্থে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট গত ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার এক নৈশ ভোজের আয়োজন করেন। যথারীতি সকলেই সেখানে যোগদান করেন। খবরে বলা হয় যে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হেঁটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান এবং কুশল বিনিময় করেন। দুইটি পত্রিকা লিখেছে, এই কুশল বিনিময় ‘খুব সৌহার্দ্যপূর্ণ’ পরিবেশে অনুষ্টিত হয়। সিনিয়র সাংবাদিকরা বলছেন, কুশল বিনিময় নিজেই তো একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ বিষয়। সেটি আবার সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় কীভাবে? এ সম্পর্কে দৈনিক সমকাল যে সংবাদ প্রকাশ করেছে, সেটি নি¤েœ হুবহু তুলে দিলাম।
নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি- বাসস
ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বুধবার রাতে জোহানেসবার্গের গ্যালাঘের এস্টেট, মিড্রান্ডে তার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন। এই নৈশভোজেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশল বিনিময় হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কর্মব্যস্ততা সম্পর্কে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কয়েক গজ দূরে থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হেঁটে শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন এবং তারা কিছুক্ষণ পরস্পরের খোঁজ খবর নেন।’ নৈশভোজে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ড. মোমেন বলেন, ‘খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কুশল বিনিময় হয়েছে।’
এসম্পর্কে আজ আর বেশি কিছু লিখলাম না। এই খবরের ফলো আপের জন্য অনেকের সাথে আমিও অপেক্ষা করছি।
Email: [email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন