জোরজবরদস্তির রাজনীতিতে অসহায় সাধারণ মানুষ
৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
সাধারণ মানুষ এখন মহাবিপদে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয় কমে যাওয়া, প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে না পারা, বেকারত্ব ইত্যাদি অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালকদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। মানুষ যে অসহনীয় কষ্ট ও টানাপড়েনের মধ্যে আছে, সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই। সব মনোযোগ নির্বাচনের দিকে। সেটি কিভাবে হবে, কেমন করে হবে এবং কিভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যাবেÑএসবই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সংকটের দিকে মনোযোগ নেই। সরকার উন্নয়নের কথা বললেও সাধারণ মানুষ সে উন্নয়নের কতটুকু সুফল পেয়েছে, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। দেশে যে উন্নয়ন হয়নি, তা নয়। তবে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের চেয়ে কংক্রিট বা মন্যুমেন্টাল উন্নয়ন বেশি হয়েছে। এগুলো দৃশ্যমান। যা দৃশ্যমান নয়, তা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কষ্টকর জীবন। এটা উপলব্ধির বিষয়। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছে। যা কিনতে চায়, তা কিনতে পারছে না। সাধ্যে কুলাচ্ছে না। সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাদের বলতে শোনা যায়, কিভাবে বাঁচব? তাদের এই উচ্চারণ সরকারের কাছে কতটা পৌঁছায়, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের যৌক্তিক কারণ রয়েছে। পৌঁছলে অন্তত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জীবনযাপনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ থাকত। বাজারে লুটেরা সিন্ডিকেট লুটপাট করে নিলেও সরকার তাদের প্রতিহত করতে পারছে না। বরং তাদের পক্ষে কথা বলতে শোনা যায়। বলা হয়, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পণ্যের সরবরাহ তারা বন্ধ করে দেবে। এ ধরনের কথা বলে সিন্ডিকেটকে আরও বেপরোয়া করে তোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে অসহায়ত্বের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধী রাজনীতি দমনের মাধ্যমে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক ও ভয় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কে, কখন হয়রানির মধ্যে পড়ে, এমন এক পরিবেশ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এ যেন সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত উক্তির মতো ‘মাইট ম্যাইকস রাইট’। অর্থাৎ শক্তি দিয়ে সবকিছু গ্রহণযোগ্য করা।
দুই.
বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ টেনে ক্ষমতাসীন দল আগামী নির্বাচন তার অধীনে করার কথা ক্রমাগত বলে যাচ্ছে। কূটনীতিকদের সাথে যখন মিটিং করে তখন তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের দেশে কিভাবে নির্বাচন হয়। কূটনীতিকরা কি জবাব দেয়, তা জানা যায় না। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হয়। সেখানে আমাদের দেশের মতো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না বলে বিরোধীদলগুলো আন্দোলন করে না। এর কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে, সেসব দেশে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধীদলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা আছে। সেখানে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দল চাইলেও নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আমাদের দেশে কি এমন পরিবেশ ও পরিস্থতি রয়েছে? সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে গড়ে তোলা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং যে ক্ষমতায় থাকে সে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে, এমন আস্থা কি সৃষ্টি করা হয়েছে? আস্থায় নেয়ার মতো কি কোনো নির্বাচন করার নজির সৃষ্টি করেছে? করেনি। তার বড় উদাহরণ ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। এমতাবস্থায়, আবারও সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন করা ও গণতান্ত্রিক বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত? ক্ষমতাসীনদের আচার-আচরণে মনে হওয়া স্বাভাবিক, বিরোধীদলের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা, সুসম্পর্ক ও মতৈক্যের প্রয়োজন নেই, তারা একাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে। এ ধরনের মনোভাব নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সম্ভব নয়। কখনো প্রতিষ্ঠিত হয়না, কোনো দেশে হয়নি, হতেও পারে না। গণতন্ত্রের রীতি-নীতিই হচ্ছে, সব দলের রাজনৈতিক অধিকার, পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস এবং সমঝোতা নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রপরিচালক হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিরোধীদলের আস্থা অর্জন করা। এতে ছলচাতুরির কোনো জায়গা নেই। দেশের মানুষ দেখছে, ক্ষমতাসীনদল কিভাবে দোর্দ- প্রতাপও দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিরোধীদলকে কোনঠাসা করে চলেছে। অস্তিত্ব হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনদল যতই সুন্দর কথা ও সদিচ্ছা প্রকাশ করুক না কেন, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় তার উপর বিরোধীদলের আস্থা রাখা বা তার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। বিরোধীদল যদি এখন ক্ষমতায় থাকত এবং অনুরূপ আচরণ করত, তাহলে ক্ষমতাসীনদল কি নির্বাচনে যেত? যেত না। অতীতেও যায়নি।
প্রাচীণকালে গ্রীসের এথেন্সে যখন থার্টি টাইরেন্টস বা ৩০ জনের স্বৈরশাসন চলছিল, তখন সক্রেটিস নির্ভয়ে তাদের ক্রমাগত সমালোচনা করেছিলেন, এমনকি মৃত্যুদ-ের মুখেও সমালোচনা বন্ধ করেননি। এতে স্বৈরশাসকরা চিন্তিত ও বিচলিত হয়েছিলেন। তখন তাকে তাদের সামনে হাজির করা হয়। তাকে বলা হয়, শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার পরামর্শ দিতে। জবাবে সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘যেখানে নিজেই বুঝতে পারছি না, কিভাবে আমার জীবন পরিচালনা করব, সেখানে জনসাধারণ কিভাবে জীবনযাপন করবে, তা কী করে বলব!’ সক্রেটিসের এ কথার মর্মার্থ স্বৈরশাসকরা বুঝেছিলেন। আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন দল যে বোঝে না, তা মনে করার কারণ নেই। সে যথেষ্টই বোঝে এবং নিজেরটাই বোঝে। শুধু জনগণের স্বার্থ বোঝার ভান করে। তাকে ক্ষমতার মোহ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তার কাছে জনগণ নয়, ক্ষমতাই মুখ্য। তার বোধ-বুদ্ধি চাঙ্গা করার জন্য সক্রেটিসের মতো উচিৎ কথা যে কিছু সচেতন রাজনৈতিক বিশ্লেষক-পর্যবেক্ষক এবং বিদ্বৎ সমাজ বলছে না, তা নয়। ক্রমাগত পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি ও টেলিভিশন টকশোতে বলেছেন এবং বলছেন। এসব কথা ক্ষমতাসীনদের ভাল লাগে না। উল্টো তাদেরকে তীব্র কটাক্ষ করা হয়। ক্ষমতাসীনরা মনে করে, তাদের সমালোচনা করা মানে বিরোধীদলের পক্ষে কথা বলা। তারা সরকারের ভাল চায় না। সরকারের ভাল কাজ চোখে পড়ে না। সমস্যা হচ্ছে, সমস্যা যখন তীব্র এবং জনগণের ভোটের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার আকাক্সক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে, তখন ভাল কাজও গ্রহণযোগ্যতা পায় না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও অনেক উন্নয়ন করেছিলেন, তবে জনগণ তার জোর করে ক্ষমতায় থাকা পছন্দ করেনি বলে তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। তখন তার ভাল কাজের চেয়ে গণতন্ত্রহীণতা ও ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার বিষয়টিই বড় হয়ে দেখা দেয়। তার উন্নয়নের বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠেনি।
তিন.
নব্বইয়ের পর থেকে যতগুলো সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে, দেখা গেছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন জনআকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থতার জন্য জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। তাদের বিদায় খুব একটা সুখকর হয়নি। ক্ষমতার শেষ দিকে হরতাল-অবরোধ এবং তা প্রতিহত করতে গিয়ে দেশের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। মানুষ মরেছে, রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। বলা যায়, মানুষের মৃত্যু ও সম্পদ ধ্বংসের পথ ধরে এক দল ক্ষমতা ছেড়েছে, অন্যদল ক্ষমতাসীন হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের প্রাণহানি ও রাষ্ট্রের সম্পদ বিনষ্টের পথ ধরে ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার অপসংস্কৃতি বন্ধ হয়নি। কবে বন্ধ হবে, তা অনিশ্চিত। যে দল ক্ষমতায় থাকে তারা মনে করে, তারাই আজীবন ক্ষমতায় থাকবে, আর কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। যেমনটি এ সময়ে দেখা যাচ্ছে। সে এতটাই ক্ষমতান্ধ যে, দেশে বিরোধীদল বলে কিছু থাকুক, তা চায় না। গণতন্ত্রের কথা বললেও তাতে যে বিরোধীদল সহায়ক শক্তি বা ছায়া সরকার হতে পারে, তা মনে না করে পথের কাঁটা মনে করা হচ্ছে। অথচ যে ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির কথা তথা ব্রিটেনের গণতন্ত্রের উদাহরণ দেয়া হয়, সেখানে যে বিরোধীদলের শক্তিশালী ছায়া সরকার রয়েছে, যারা সরকারকে গাইড করে, তা বলে না। আমাদের দেশে বিরোধীদলকে মূল্যায়ণ করা হচ্ছে, শত্রু ও দেশবিরোধী হিসেবে। ফলে তাদের কিভাবে নির্মূল করা যায়, ক্ষমতাসীনদলের মধ্যে এ মনোভাব প্রবল। তার কথা-বার্তা এবং বডিল্যাংগুয়েজ সবসময়ই আক্রমণাত্মক। বিষয়টি এমন, বিরোধীদলকে দুই আঙ্গুলে পিঁষে ফেলতে পারলে স্বস্তি পাওয়া যেত। বিরোধীদলের প্রতি ক্ষমতাসীনদের এমন হিংসা-প্রতিহিংসামূলক মনোভাব ও দমন-পীড়ন এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত। ঘরে কিংবা বাইরে থাকা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের এই বৈরি আচরণের কারণেই বিরোধীদল মনে করে এবং মনে করা স্বাভাবিক, ক্ষমতায় যেতে না পারলে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। ফলে বাধ্য হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের সামনে আন্দোলন-সংগ্রাম করা ছাড়া বিকল্প নেই। এর ফলে, দেশ অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়া এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি থাকা স্বাভাবিক। পারস্পরিক প্রতিহিংসার রাজনীতির মাধ্যমে জনসাধারণকে আতঙ্কে রাখার অধিকার রাজনৈতিক দলগুলোর আছে কিনা, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। স্বাধীন দেশে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য মানুষের জীবন বিপন্ন করার এই রাজনৈতিক কর্মকা- কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বলা বাহুল্য, মানুষের কাছে জীবনের চেয়েও স্বাধীনতার মূল্য অনেক বেশি। ’৭১-এ স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে তা প্রমাণ করেছে। তাদের জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, তা উপভোগ করার জন্য, পুনরায় জীবন দেয়ার জন্য নয়। জনগণের নামে গোষ্ঠীগত রাজনৈতিক স্বার্থে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য মানুষকে জিম্মি বা জীবন দিতে হবে কেন? রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলকে এর জবাব দিতে হবে। এ প্রশ্নেরও জবাব দিতে হবে, যে সংঘাত চলছে, তাতে যে মানুষগুলো জীবন দিয়েছে, তার দায় কে নেবে?
ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, ‘তোমার মতের সাথে একমত না হতে পারি, তবে তোমার মত প্রতিষ্ঠায় আমি জীবন দিতে পারি।’ এর মাধ্যমে বিরোধীমত ও পথের প্রতি ক্ষমতাবান বা ক্ষমতাসীনদের গণতান্ত্রিক আচরণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি, দল এবং গোষ্ঠীর আদর্শ বা দর্শন, যাই থাকুক না কেন, তার প্রতি শ্রদ্ধাপোষণের কথা বলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্যের আদর্শ ও দর্শন যতই অপছন্দ হোক, গণতান্ত্রিক আচরণের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি আদর্শিক দায়িত্ব। সক্রেটিসের যখন বিচার চলছিল, তখন তিনি কোর্টে বলেছিলেন, ‘যদি কেউ তার আদর্শ থেকে সরে আসে, তবে তা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মৃত্যু ভয়ে একজন সৈনিকের পালিয়ে আসার মতো। এটা কাপুরুষতা ছাড়া কিছুই নয়।’ অর্থাৎ আদর্শবান ব্যক্তির কাছে তার জীবনের চেয়েও আদর্শ মূল্যবান। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ তাদের কর্মকা-ের মধ্যে খুব একটা প্রতিফলিত হতে দেখা যায় না। তাদের আদর্শের চেতনা হচ্ছে, যেকোনভাবে ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়া। এটা সমস্যা নয়। রাজনীতির লক্ষ্যই হচ্ছে, ক্ষমতাকামী হয়ে মানুষের কল্যাণ করা। তবে তা আদর্শিক চেতনাকে বাদ দিয়ে নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রায়ই বলেন, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যে আদর্শ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, তা থেকে তাদের বিচ্যুতি ঘটেছে। এই বিচ্যুতির কারণেই একে অপরের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবর্তে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে জড়িয়েছে। দেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা যেমন চলমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ, তেমনি সুষ্ঠু রাজনীতিহীন দেশও চায় না।
চার.
আমাদের দেশের মানুষের চেতনায় রাজনীতি ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তারা রাজনীতি ধারণ করে, তর্কবিতর্ক করে, এ নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করে। সমস্যা হচ্ছে, বিগত একদশকের বেশি সময় ধরে মানুষের এই রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যকে ধুলিস্যাত করে দেয়া হয়েছে। তারা ভোট দিতে পারেনি, স্বতঃস্ফূর্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পায়নি। তাদেরকে এক প্রকার বিরাজনীতিকরণের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বহুমতকে একরৈখিক করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকলেও তা চাপা দিয়ে রেখেছে। এখন আলাপ দূরে থাক, তাদের পেট চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসংখ্য মানুষের মুখের হাসি ও স্বপ্ন উবে গেছে। জীবন বাঁচাতে নিরন্তর সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে না পেরে কষ্ট বুকে চেপে রয়েছে। কত মানুষ বেকার হয়েছে, কর্মচ্যুত হয়েছে, স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে! সাধারণ মানুষের দুঃখের চাদরে ঢাকা জীবন নিয়ে রাষ্ট্রপরিচালকরা খুব একটা ভাবেন বলে মনে হয় না। মানুষের কষ্টকর জীবনের চেয়ে ক্ষমতায় থাকা তাদের কাছে একমাত্র এজেন্ডা হয়ে আছে। মুখে মুখে জনগণ তাদের সাথে আছে বলে প্রতিনিয়ত কথা বলছে। জনগণ তাদের সাথে আছে কিনা, তা পরীক্ষা দিতে নারাজ। জনগণের রাজনীতিকে ক্ষমতায় থাকার রাজনীতিতে পরিণত করা হয়েছে। এটা যে দেশ ও জনগণের জন্য কত ক্ষতিকর, তা বুঝেও না বোঝার ভান করে আছে। এই ভান আত্মঘাতী ছাড়া কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে আমেরিকান রাষ্ট্রনায়ক ও বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের একটি উক্তি প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘ক্ষুদ্র ও সাময়িক স্বার্থের কারণে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় করণীয় যারা বিসর্জন দেয়, তারা কখনোই স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য নয়।’
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিকে ৭৬ দিনের ছুটির তালিকা প্রকাশ
খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে ট্রেন জাহানাবাদ
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন
আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং এর হামলায় আহত ৩
মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হলেন সরওয়ার আলম
তোমাদের হাতে উড়তে থাকবে সমৃদ্ধ স্বনির্ভর বাংলাদেশের বিজয় কেতন - সাভার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোঃ মঈন খান